সোমবার (২৩ জুন) রাতে কাতারের রাজধানী দোহার কাছে অবস্থিত আল উদেইদ ঘাঁটিতে হামলা চালায় ইরান। এই ঘাঁটি মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ডের বিমান অভিযানের সদর দপ্তর হিসেবে কাজ করে। এখানে প্রায় আট হাজার মার্কিন সেনা অবস্থান করেন।
এর আগে একাধিকবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইসরায়েল প্রকাশ্যেই ইরানে শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন এবং আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিইকে হত্যার বিষয়ে নানা ধরনের কথা বলেছে। রাশিয়া আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, এমন পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যকে আরও অস্থিতিশীল করতে পারে।
গত ১৩ জুন ইরানে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। পরে ইরানও পালটা হামলা চালাতে শুরু করে। এসব হামলায় দুই দেশেরই গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হতাহত হয়েছে বহু মানুষ। তবে ইসরায়েল সরকারিভাবে হতাহতের হালনাগাদ তথ্য খুব একটা প্রকাশ করছে না।
আত্মঘাতী এ বিস্ফোরণটি ঘটেছে দুইলা এলাকায় অবস্থিত মার এলিয়াস চার্চে। এ সময় চার্চটির ভেতরে লোকজন প্রার্থনা করছিল। সিরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এক ব্যক্তি প্রথমে চার্চে ঢুকে গুলিবর্ষণ করে এবং পরে নিজের শরীরে থাকা বিস্ফোরক ভেস্টের মাধ্যমে নিজেকে উড়িয়ে দেয়।
এদিকে ইরানের ওপর ইসরায়েল ও মার্কিন হামলাকে ‘একেবারেই বিনা উসকানিতে আগ্রাসন’ বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ইরানের জনগণকে সহায়তা দিতে রাশিয়া প্রস্তুত বলেও জানান তিনি।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচিকে ক্রেমলিনে স্বাগত জানিয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকের শুরুতে পুতিন বলেন, ‘ইরানি জনগণকে সহায়তা দিতে রাশিয়া প্রস্তুত।’
এই ঘোষণার পর পশ্চিমা বিশ্বে যেন আগুন ধরে গেল। ব্রিটেন ও ফ্রান্স মনে করল, তাদের অর্থনৈতিক ও সামরিক স্বার্থে আঘাত এসেছে। আর ইসরায়েল, যে তখন মিশরের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান দ্বন্দ্বে জড়িয়েছিল, এই সুযোগকে ব্যবহার করতে চাইল মিশরকে দুর্বল করে দিতে।
ইরান এই প্রণালীর উত্তর তীরে অবস্থিত। এর দক্ষিণ তীরে রয়েছে ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। হরমুজ প্রণালীর সবচেয়ে সংকীর্ণ অংশ মাত্র ২১ মাইল প্রশস্ত, যার মধ্যে দুটো পৃথক শিপিং লেন রয়েছে
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরান যদি হরমুজ প্রণালি বন্ধের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে, তাহলে শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, বরং পুরো বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে ভয়াবহ সংকট দেখা দিতে পারে। এ অবস্থায় চীনের কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
মার্কিন হামলার পর থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল যে, তেল সরবরাহে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কায় বাজারে তেলের দাম বাড়বে।এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রুট হরমুজ প্রণালি বন্ধের পক্ষে ভোট দিয়েছে ইরানের পার্লামেন্ট। তবে এই সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিত
মধ্যপ্রাচ্যে ‘দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে’ জড়ানোর ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো আগ্রহ নেই বলে জানিয়েছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক শান্তি নিশ্চিত করার জন্যই শনিবার রাতে ইরানে সীমিত পরিসরে হামলা চালানো হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় চালানো মার্কিন হামলাকে সমর্থন জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। সেইসঙ্গে চলমান উত্তেজনা হ্রাস এবং কূটনীতিতে ফিরে আসারও আহ্বান জানিয়েছে ক্যানবেরা। অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন।
ইরানের যুক্তরাষ্ট্রের হামলার একদিন পর ইরানে সরকার পরিবর্তনের বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ‘ইরানের বর্তমান সরকার যদি দেশটিকে আবার মহান করতে অক্ষম হয়, তাহলে সেখানে সরকার পরিবর্তন হবে না কেন?’
বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ হরমুজ প্রণালি বন্ধের অনুমোদন দিয়েছে ইরানের পার্লামেন্ট। রোববার (২২ জুন) দেশটির পার্লামেন্টে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এখন এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ।