তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ বারবার স্বৈরাচারী শাসনের কবলে পড়েছে। দেশের মানুষ বুকের রক্ত দিয়ে স্বৈরাচারদের উৎখাত করেছে। নতুন কোনো ফ্যাসিবাদী, কর্তৃত্ববাদী, স্বৈরাচারী শাসন আমরা দেখতে চাই না। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার বারবার নানা আশঙ্কার জন্ম দিচ্ছে।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে প্রধান শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়া তিনটি রাজনৈতিক দলের দাবির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়েই প্রতিটি দলের কোনো না কোনো দাবি মেনে নিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা চূড়ান্ত করেছে সরকার। কিন্তু তাতে কি শেষ রক্ষা হলো?
দলটি জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও জুলাই সনদের জন্য যে গণভোটের প্রস্তাব করা হয়েছে তাকে ‘গোঁজামিলে পূর্ণ’ বলে অভিহিত করেছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে তার বাইরে যেকোনো প্রস্তাবই অনৈক্যের কারণ হতে পারে আশঙ্কা দলটির।
রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, জুলাই সনদে কিছুটা ঐক্য এলেও সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশে তার প্রতিফলন নেই। বিএনপির পক্ষ থেকে সরাসরি একে ‘অনৈক্য’ তৈরির প্রয়াস বলেই অভিহিত করা হয়েছে। বিশ্লেষকরাও বলছেন, সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ খুব বাস্তবসম্মত হয়নি।
‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যেসব সুপারিশ দিয়েছে তা নতুন সংকট করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট আয়োজনের ধারণাকেও অপ্রয়োজনীয় বলে অভিহিত করেছেন তিনি।
সভায় বলা হয়, একটি নবগঠিত রাজনৈতিক দলসহ ক্ষমতাসীন সরকারে থাকা যেকোনো রাজনৈতিক দলের পরামর্শক, পৃষ্ঠপোষক ও দলীয় পরিচয়ে পরিচিত ব্যক্তিদের পদত্যাগ করার মাধ্যমে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
এসময় তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ও জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে হলে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা জরুরি। তাহলেই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ও একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব হবে।
জুলাই সনদের প্রস্তাবে ৮৪টি বিষয়ে ঐকমত্য এসেছে বলা হলেও এর মধ্যে কেবল ১৭টি প্রস্তাবে পূর্ণ ঐকমত্য এসেছে। বাকি ৬৭টি প্রস্তাবেই কোনো না কোনো দলের দ্বিমত বা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ রয়ে গেছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে— জাতীয় ঐক্যের এই দলিল কতটা ঐক্য আনতে সক্ষম হলো দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে?
জুলাই সনদের জন্য দলগুলো বিভিন্ন ইস্যুতে ছাড় দিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছালেও এখনো ভিন্নমতও রয়ে গেছে। সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে যে গণভোটের সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তার সময়রেখা নিয়েও রয়েছে তীব্র মতপার্থক্য। এর মধ্যে অন্তত ছয়টি দল সুস্পষ্টভাবেই বলে দিয়েছে, তারা জুলাই সনদে সই করবে না। আরও কয়েকটি দলও নানা শর্ত আরোপ করেছে রেখেছে
আগামী শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) জুলাই সনদ সইয়ের কথা থাকলেও এতদিন ধরে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে আসা সব রাজনৈতিক দল এতে আসলেই সই করবে কি না, বুধবার (১৫ অক্টোবর) রাত পর্যন্ত তা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ত্রয়োদশ কংগ্রেসের মাধ্যমে সিপিবির এই নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। সারা দেশ থেকে আসা প্রতিনিধিদের ভোটে প্রথমে ৪৩ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয়। এরপর এই কমিটির সদস্যদের বৈঠকে নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক চূড়ান্ত করা হয়।
কাইয়ূমসহ অন্যদের আটকের পর সন্ত্রাস দমন আইনের ‘মিথ্যা মামলা’য় জড়ানো ও জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদও জানিয়েছে দলটি।
জাসদের বিবৃতিতে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তিকে সকল ধরনের মব ও ভিন্নমত দলনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবার আহ্বান জানানো হয়।
তিনি বলেন, জাতীয় সনদ হবে এমন এক সামাজিক চুক্তি, যা জনগণকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অংশীদারিত্বের নিশ্চয়তা দেবে। জনগণকে বাদ দিয়ে, তাদের আকাঙ্ক্ষা উপেক্ষা করে জাতীয় সনদ রচনা হলে তা টেকসই হবে না।
জাসদ নেতারা বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা যাবে না। তিনি এ দেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িয়ে রয়েছেন। তার মৃত্যুবার্ষিকীতে শোক দিবস পালনে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তাকে ম্লান করা যাবে না।
জাসদ বলছে, বঙ্গবন্ধু ও ফ্যাসিস্টে পরিণত হওয়া তার মেয়ে শেখ হাসিনাকে এক পাল্লায় মাপা হলে ফ্যাসিবাদ আড়ালে যাওয়ার সুযোগ পাবে।