জম্মু-কাশ্মিরে প্রাণঘাতী হামলার জেরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বাড়তে থাকা উত্তেজনা কমাতে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে ইরান। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাগচি এ প্রস্তাব দিয়ে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বোঝাপড়ার জন্য কূটনৈতিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
পাকিস্তানের সংসদ সদস্যরা বলছেন, তারা ২২ এপ্রিলের হামলার সঙ্গে পাকিস্তানকে যুক্ত করার যেকোনো ধরনের ‘অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন দাবি’ দৃঢ়তার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করছেন।
ভারতের জলশক্তিমন্ত্রী সিআর পাতিল বলেন, সরকার স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থার ওপর কাজ করছে, যেন পাকিস্তানে এক ফোঁটা পানিও না যায়। শিগগিরই নদীর প্রবাহ বন্ধ করতে ড্রেজিং কাজ সম্পন্ন হবে এবং প্রবাহ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হবে।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর তৎকালীন প্রধান ছিলেন জেনারেল পারভেজ মোশাররফ। তাঁর পরিকল্পনাই ছিল এই অনুপ্রবেশ। তারা ধারণা করেছিল, ভারত প্রথমে বুঝতেই পারবে না যে কারা পাহাড় দখল করেছে।
যুক্তরাজ্যের স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে খাজা আসিফ এ কথা বলেন। এ সময় তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে ‘যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত’ থাকতে বলা হয়েছে।
এই হামলা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতীয়রাই তীব্র ক্ষোভ জানাচ্ছেন। একই সঙ্গে তারা প্রশ্ন তুলেছেন গোয়েন্দা সংস্থা আর নিরাপত্তায় নিয়োজিতদের তৎপরতা নিয়েও। বলছেন, হামলার সময়ে নিরাপত্তা বাহিনী কোথায় ছিল!
কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত নতুন নয়। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর থেকেই কাশ্মীর অঞ্চলকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে তিনটি যুদ্ধ হয়েছে
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সিন্ধু নদীর পানিবণ্টন চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তানের পানির প্রবাহ বন্ধ বা ভিন্ন দিকে নিয়ে যাওয়ার যেকোনো প্রচেষ্টা করা হলে তা যুদ্ধের ঘোষণা হিসেবে বিবেচিত হবে।
পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে ইসাক দার বলেন, ভারতীয় কর্মকর্তাদের তলব করে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমার বাংলাদেশ সফর পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যেন আমরা কূটনৈতিক তৎপরতায় মনোযোগী হতে পারি।
কেবল এবারই নয়, গত সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতেই রয়েছে এই কাশ্মির। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ এবং পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের পর পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই ভূখণ্ড নিয়ে দুটি যুদ্ধ করেছে।
বিবৃতিতে ইসলামাবাদ ‘কঠোর ভাষায়’ ওই চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে। বিবৃতিতে বলা হয়, পানি বন্ধ বা অন্য দিকে প্রবাহিত করার যেকোনো প্রচেষ্টা ‘যুদ্ধের উসকানি’ হিসেবে বিবেচনা করবে পাকিস্তান। জাতীয় ক্ষমতার পূর্ণ শক্তি দিয়ে এর প্রতিক্রিয়া জানানো হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃতিতে।
ভারত-নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানির ঘটনার পর প্রতিবেশী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একের পর এক কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে নয়াদিল্লি। বুধবার ভারতের মন্ত্রিপরিষদের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) বৈঠকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্থলসীমান্ত বন্ধ, সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত ও
কাশ্মীরে হামলার ঘটনার পর থেকে ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছেছে। উভয় দেশই এ ঘটনার জেরে পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। এই জটিল পরিস্থিতির মধ্যেই মিসাইল উৎক্ষেপণের নোটিশ জারি করেছে পাকিস্তান।
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার পর সার্ক ভিসায় ভারতে অবস্থান করা পাকিস্তানিদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এছাড়া আগে ইস্যু করা ভিসাও এখন থেকে বাতিল বলে গণ্য হবে বলে জানানো হয়।
এই পাঁচটি সিদ্ধান্তের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য সিন্ধু জলচুক্তিটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এর আগে কখনো যুদ্ধের সময়ও এই চুক্তি রদ করা হয়নি। এবার চুক্তিটি স্থগিত করায় সিন্ধুসহ পাঞ্জাবের নদীগুলোর পানি পাকিস্তানে যাওয়া নিয়ে যে চুক্তি হয়েছি্ল, তা কার্যকর হবে না। এই নদীর পানি না পেলে পাকিস্তান বিপাকে পড়
পাকিস্তান-সমর্থিত উপজাতীয় বাহিনীর আক্রমণের মুখে, মহারাজা ভারতের সঙ্গে অন্তর্ভুক্তির চুক্তি (Instrument of Accession) স্বাক্ষর করেন।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পাকিস্তান। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, বাংলাদেশের সঙ্গে এই বৈঠকে দুই দেশের মধ্যেকার সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার অভিন্ন অঙ্গীকার প্রতিফলিত হয়েছে।