মো. সিদ্দিকুর রহমান
শিক্ষিত জনগোষ্ঠী ছাড়া স্বনির্ভর জাতি গঠন সম্ভব নয়। সাধারণত বাংলাদেশের নিম্নমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত, উচ্চমধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্তদের সন্তানরা প্রায় সবাই শিক্ষিত। শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত কেবল নিম্নবিত্ত ও বিত্তহীন শ্রমিক, কৃষক, খেটে খাওয়া জনগণের সন্তানরা। কিন্তু সবার জন্য শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করা না গেলে জাতি তথা রাষ্ট্রের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব নয়।
এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই সবার জন্য শিক্ষার সুযোগ বিকশিত করা প্রয়োজন। স্বাধীনতার পর দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও সবার জন্য শিক্ষার সুযোগ পরিপূর্ণতা লাভ করেনি। বরং শিক্ষা বাণিজ্যিকীকরণ হয়ে গরিব মানুষগুলোকে এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। দেশের সরকার তথা কর্তাব্যক্তিরা জনগণকে বোঝাতে চাচ্ছেন, শিক্ষার উন্নয়ন করে তারা দেশকে স্বর্গ বানাচ্ছেন।
১৯৩৭ সালে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হয়ে গ্রামাঞ্চলের গরিব কৃষকসহ প্রজাদের সন্তানদের প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য ‘রুলার প্রাইমারি এডুকেশন অ্যাক্ট (Rural Primary Education Act, 1930)’ কার্যকর করেছিলেন। এতে প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক হয় এবং প্রাথমিক শিক্ষক সমাজ উপকৃত হয়। তখন অবিভক্ত বাংলার শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন স্যার আজিজুল হক। তিনি সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে ইংরেজির পরিবর্তে বাংলা, তথা মাতৃভাষায় শিক্ষাদান চালু করেন। এতে শিক্ষার আলো প্রজ্জ্বলিত হতে শুরু করে।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ হলেও সরকারগুলোর অনাদর ও অবহেলায় প্রাথমিক শিক্ষা তার কাঙ্ক্ষিত সুনাম নিয়ে জাতির মন জয় করতে পারেনি। সংকটের মধ্যে চলছে প্রাথমিক শিক্ষা। যেমন— ঘর আছে তো দরজা নেই, অর্থাৎ শিক্ষক আছে কিন্তু অবকাঠামো সুবিধা নেই। সব কিছু থাকলেও কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের পাঠদানের বাইরে নানা কাজে ব্যস্ত রাখে। ফলে শিক্ষকেরা পাঠদানে সময় দিতে পারেন না।
সীমাহীন অব্যবস্থাপনার মধ্যে পর্যুদস্ত আজও প্রাথমিক শিক্ষা। এ নাজুক অবস্থা চলতে চলতে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থা, স্যার আজিজুল হকের মাতৃভাষাভিত্তিক শিক্ষার উদ্যোগ এবং জাতীয়করণ করা প্রাথমিক শিক্ষার প্রতি সরকার কর্তৃপক্ষের সমস্যা দূর করতে বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গির কারণে প্রাথমিক শিক্ষার সুনাম তলানিতে পৌঁছেছে।
গাছের গোড়ায় পানি না দিয়ে, মানে সমস্যা সমাধান না করে মন্ত্রী, উপদেষ্টা, সচিব, নীতিনির্ধারকরা নিজেদের ত্রুটি না দেখে মাঠে-প্রান্তরে, সভা-সমাবেশে সর্বত্র নতুন সুরে গান গেয়ে বেড়াচ্ছেন— ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া হয় না’, ‘প্রাথমিক শিক্ষকরা লেখাপড়া করান না’। এ যেন সেই প্রবাদের পুনরাবৃত্তি— ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’।
স্বাধীনতার পর থেকে কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও পৃষ্ঠপোষকতায় শিশু শিক্ষায় বাণিজ্যিকীকরণ হয়েছে। পাড়ায়-পাড়ায়, আনাচে-কানাচে গড়ে উঠেছে বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন তথা হাইস্কুলের প্রাথমিক শাখা। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় প্রাথমিক শাখা খোলা হয়েছে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়গুলোতে। এতে একদিকে শিশু শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ হয়েছে, অন্যদিকে প্রশিক্ষণবিহীন শিক্ষকদের হাতে শিক্ষাদানের ফলে শিশুর মেধাবিকাশ বিঘ্নিত হচ্ছে।
আমাদের দেশের জনগণের শতকরা ৯৯ জন অভিভাবক ‘জ্ঞান অর্জন’ ও ‘ভালো ফল’-এর পার্থক্য বোঝেন না। তারা মনে করেন— ভালো ফলই জ্ঞান অর্জনের মাপকাঠি। বাস্তবে জ্ঞান অর্জন হলো শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য। শারীরিক ও মানসিক বিকাশের সঙ্গে জ্ঞানের পরিপূর্ণতা প্রয়োজন।
বেসরকারি শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোসহ সরকারি-বেসরকারি, উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শাখায় শিশু শিক্ষায় প্রশিক্ষণবিহীন শিক্ষক দ্বারা পাঠদান চলছে। ফলে তারা শিক্ষার্থীর জ্ঞান অর্জন তথা মেধাবিকাশের পরিবর্তে পরীক্ষায় ভালো ফলের ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। আমাদের সমাজের অভিভাবকরাও এর ব্যতিক্রম নন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বর্তমানে উচ্চশিক্ষিত ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। সেখানে মেধাবিকাশমুখী, শিক্ষার্থীর জ্ঞান অর্জনকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। অথচ সরকার ও নীতিনির্ধারকরা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শাখাকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে থাকেন। বছরের শেষ মাস থেকে ভর্তিসহ নানা কার্যক্রমে চলে তাদের তৎপরতা। অথচ সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেসব বিদ্যালয়ের সমস্যা নিয়ে ভাবার অবকাশ নেই।
আজ সময় এসেছে শিশু শিক্ষায় নিযুক্ত সব কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করার। এ ছাড়াও শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশে বিঘ্ন ঘটায়— এমন সবকিছু পাঠ্যপুস্তক থেকে মুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে।
শিক্ষার প্রথম স্তর হলো প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি। দ্বিতীয় স্তর নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি। বর্তমানে বহু উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান চলছে। শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থীর মেধার পরিপূর্ণ বিকাশের স্বার্থে সরকারি ও বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শাখা বিলোপ করা দরকার। অন্যদিকে গরিব মানুষের সন্তানদের অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে শিক্ষার প্রথম স্তর অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চালু করা প্রয়োজন। প্রাথমিক শিক্ষা আইন অনুযায়ী নির্ধারিত শ্রেণির বাইরে পাঠদান যথার্থ নয়। এতে শিক্ষায় বাণিজ্যিকীকরণ প্রসারিত হচ্ছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচিত অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চালু থাকা ৭২৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ করা থেকে সরে গিয়ে বিদ্যালয়গুলোর উন্নয়নের পৃষ্ঠপোষকতা করা। এতে এ দেশের গরিব মানুষের সন্তানদের অবৈতনিক শিক্ষা নিশ্চিত হবে। তা না হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি এ দেশের সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ও বিরূপ মনোভাব তৈরি হবে। এই ক্ষোভ হবে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণির লাখ লাখ শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক সমাজসহ জাতির।
শিক্ষা জনগণের মৌলিক চাহিদা। অবৈতনিক শিক্ষা সম্প্রসারণ করা দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলজনক। এনজিও দ্বারা পরিবেষ্টিত কনসালটেশন কমিটির ৭২৯টি অষ্টম শ্রেণির বিদ্যালয় বন্ধ করার পরামর্শ প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ। এতে গরিব মানুষের শিক্ষার অধিকারের সম্প্রসারণ ও প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের চ্যালেঞ্জের নির্দেশনা ভুক্তভোগীরা সহজে মেনে নেবেন না। এর বিরূপ পরিবেশের দায় বহন করতে হবে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ৭২৯টি বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির কার্যক্রম বন্ধের ষড়যন্ত্র থেকে বের হয়ে আসবেন, বরং বিদ্যালয়গুলোর উন্নয়নে পদক্ষেপ নেবেন, পাশাপাশি গরিব মানুষের সন্তানদের অবৈতনিক শিক্ষার অধিকার সম্প্রসারণের ব্যবস্থা নেবেন— এই প্রত্যাশা।
লেখক: সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি
শিক্ষিত জনগোষ্ঠী ছাড়া স্বনির্ভর জাতি গঠন সম্ভব নয়। সাধারণত বাংলাদেশের নিম্নমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত, উচ্চমধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্তদের সন্তানরা প্রায় সবাই শিক্ষিত। শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত কেবল নিম্নবিত্ত ও বিত্তহীন শ্রমিক, কৃষক, খেটে খাওয়া জনগণের সন্তানরা। কিন্তু সবার জন্য শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করা না গেলে জাতি তথা রাষ্ট্রের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব নয়।
এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই সবার জন্য শিক্ষার সুযোগ বিকশিত করা প্রয়োজন। স্বাধীনতার পর দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও সবার জন্য শিক্ষার সুযোগ পরিপূর্ণতা লাভ করেনি। বরং শিক্ষা বাণিজ্যিকীকরণ হয়ে গরিব মানুষগুলোকে এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। দেশের সরকার তথা কর্তাব্যক্তিরা জনগণকে বোঝাতে চাচ্ছেন, শিক্ষার উন্নয়ন করে তারা দেশকে স্বর্গ বানাচ্ছেন।
১৯৩৭ সালে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হয়ে গ্রামাঞ্চলের গরিব কৃষকসহ প্রজাদের সন্তানদের প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য ‘রুলার প্রাইমারি এডুকেশন অ্যাক্ট (Rural Primary Education Act, 1930)’ কার্যকর করেছিলেন। এতে প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক হয় এবং প্রাথমিক শিক্ষক সমাজ উপকৃত হয়। তখন অবিভক্ত বাংলার শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন স্যার আজিজুল হক। তিনি সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে ইংরেজির পরিবর্তে বাংলা, তথা মাতৃভাষায় শিক্ষাদান চালু করেন। এতে শিক্ষার আলো প্রজ্জ্বলিত হতে শুরু করে।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ হলেও সরকারগুলোর অনাদর ও অবহেলায় প্রাথমিক শিক্ষা তার কাঙ্ক্ষিত সুনাম নিয়ে জাতির মন জয় করতে পারেনি। সংকটের মধ্যে চলছে প্রাথমিক শিক্ষা। যেমন— ঘর আছে তো দরজা নেই, অর্থাৎ শিক্ষক আছে কিন্তু অবকাঠামো সুবিধা নেই। সব কিছু থাকলেও কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের পাঠদানের বাইরে নানা কাজে ব্যস্ত রাখে। ফলে শিক্ষকেরা পাঠদানে সময় দিতে পারেন না।
সীমাহীন অব্যবস্থাপনার মধ্যে পর্যুদস্ত আজও প্রাথমিক শিক্ষা। এ নাজুক অবস্থা চলতে চলতে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থা, স্যার আজিজুল হকের মাতৃভাষাভিত্তিক শিক্ষার উদ্যোগ এবং জাতীয়করণ করা প্রাথমিক শিক্ষার প্রতি সরকার কর্তৃপক্ষের সমস্যা দূর করতে বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গির কারণে প্রাথমিক শিক্ষার সুনাম তলানিতে পৌঁছেছে।
গাছের গোড়ায় পানি না দিয়ে, মানে সমস্যা সমাধান না করে মন্ত্রী, উপদেষ্টা, সচিব, নীতিনির্ধারকরা নিজেদের ত্রুটি না দেখে মাঠে-প্রান্তরে, সভা-সমাবেশে সর্বত্র নতুন সুরে গান গেয়ে বেড়াচ্ছেন— ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া হয় না’, ‘প্রাথমিক শিক্ষকরা লেখাপড়া করান না’। এ যেন সেই প্রবাদের পুনরাবৃত্তি— ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’।
স্বাধীনতার পর থেকে কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও পৃষ্ঠপোষকতায় শিশু শিক্ষায় বাণিজ্যিকীকরণ হয়েছে। পাড়ায়-পাড়ায়, আনাচে-কানাচে গড়ে উঠেছে বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন তথা হাইস্কুলের প্রাথমিক শাখা। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় প্রাথমিক শাখা খোলা হয়েছে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়গুলোতে। এতে একদিকে শিশু শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ হয়েছে, অন্যদিকে প্রশিক্ষণবিহীন শিক্ষকদের হাতে শিক্ষাদানের ফলে শিশুর মেধাবিকাশ বিঘ্নিত হচ্ছে।
আমাদের দেশের জনগণের শতকরা ৯৯ জন অভিভাবক ‘জ্ঞান অর্জন’ ও ‘ভালো ফল’-এর পার্থক্য বোঝেন না। তারা মনে করেন— ভালো ফলই জ্ঞান অর্জনের মাপকাঠি। বাস্তবে জ্ঞান অর্জন হলো শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য। শারীরিক ও মানসিক বিকাশের সঙ্গে জ্ঞানের পরিপূর্ণতা প্রয়োজন।
বেসরকারি শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোসহ সরকারি-বেসরকারি, উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শাখায় শিশু শিক্ষায় প্রশিক্ষণবিহীন শিক্ষক দ্বারা পাঠদান চলছে। ফলে তারা শিক্ষার্থীর জ্ঞান অর্জন তথা মেধাবিকাশের পরিবর্তে পরীক্ষায় ভালো ফলের ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। আমাদের সমাজের অভিভাবকরাও এর ব্যতিক্রম নন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বর্তমানে উচ্চশিক্ষিত ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। সেখানে মেধাবিকাশমুখী, শিক্ষার্থীর জ্ঞান অর্জনকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। অথচ সরকার ও নীতিনির্ধারকরা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শাখাকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে থাকেন। বছরের শেষ মাস থেকে ভর্তিসহ নানা কার্যক্রমে চলে তাদের তৎপরতা। অথচ সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেসব বিদ্যালয়ের সমস্যা নিয়ে ভাবার অবকাশ নেই।
আজ সময় এসেছে শিশু শিক্ষায় নিযুক্ত সব কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করার। এ ছাড়াও শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশে বিঘ্ন ঘটায়— এমন সবকিছু পাঠ্যপুস্তক থেকে মুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে।
শিক্ষার প্রথম স্তর হলো প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি। দ্বিতীয় স্তর নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি। বর্তমানে বহু উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান চলছে। শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থীর মেধার পরিপূর্ণ বিকাশের স্বার্থে সরকারি ও বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শাখা বিলোপ করা দরকার। অন্যদিকে গরিব মানুষের সন্তানদের অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে শিক্ষার প্রথম স্তর অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চালু করা প্রয়োজন। প্রাথমিক শিক্ষা আইন অনুযায়ী নির্ধারিত শ্রেণির বাইরে পাঠদান যথার্থ নয়। এতে শিক্ষায় বাণিজ্যিকীকরণ প্রসারিত হচ্ছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচিত অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চালু থাকা ৭২৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ করা থেকে সরে গিয়ে বিদ্যালয়গুলোর উন্নয়নের পৃষ্ঠপোষকতা করা। এতে এ দেশের গরিব মানুষের সন্তানদের অবৈতনিক শিক্ষা নিশ্চিত হবে। তা না হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি এ দেশের সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ও বিরূপ মনোভাব তৈরি হবে। এই ক্ষোভ হবে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণির লাখ লাখ শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক সমাজসহ জাতির।
শিক্ষা জনগণের মৌলিক চাহিদা। অবৈতনিক শিক্ষা সম্প্রসারণ করা দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলজনক। এনজিও দ্বারা পরিবেষ্টিত কনসালটেশন কমিটির ৭২৯টি অষ্টম শ্রেণির বিদ্যালয় বন্ধ করার পরামর্শ প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ। এতে গরিব মানুষের শিক্ষার অধিকারের সম্প্রসারণ ও প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের চ্যালেঞ্জের নির্দেশনা ভুক্তভোগীরা সহজে মেনে নেবেন না। এর বিরূপ পরিবেশের দায় বহন করতে হবে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ৭২৯টি বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির কার্যক্রম বন্ধের ষড়যন্ত্র থেকে বের হয়ে আসবেন, বরং বিদ্যালয়গুলোর উন্নয়নে পদক্ষেপ নেবেন, পাশাপাশি গরিব মানুষের সন্তানদের অবৈতনিক শিক্ষার অধিকার সম্প্রসারণের ব্যবস্থা নেবেন— এই প্রত্যাশা।
লেখক: সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি
এই সেপ্টেম্বরেই ১৫৮ বছরে পা দিলো সেই বই, যার নাম থেকে এই হেডলাইনের খেলা— কার্ল মার্ক্সের যুগান্তকারী গ্রন্থ ‘ডাস ক্যাপিটাল’।
১৮ দিন আগেএকটি জাতির উন্নয়নের ভিত্তি তার জনশক্তির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহারের উপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল দেশে, জনসংখ্যাগত স্থিতিশীলতা (Demographic Stability) অর্জন করা এখন আর কেবল জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের একটি কৌশল নয়, বরং এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং সুশাসনের এক অবিচ্ছেদ্য অং
১৮ দিন আগেরাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকায় ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা বিএনপির প্রতিপক্ষ এখন জামায়াতে ইসলামি। জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করা গেলে জামায়াত তখন বিএনপির শক্ত বা সবল প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে পারে। এমনকি অন্যান্য ইসলামি দলগুলো সঙ্গে নিয়ে জামায়াত দরকষাকষির সর্বোচ্চ জায়গায় পৌঁছাতে পারে।
১৯ দিন আগেঝিনাইদহের কৃষক শ্রী হরিপদ কাপালীর হাতে হরি ধানের আবিষ্কার দুই দশক আগে যার কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহনের সুযোগ হয়নি কেবল দারিদ্রতার কারনে। এখানে উল্লেখ্য যে হরিপদ কাপালী ১৯২২ সালে ঝিনাইদহ জেলার সদর উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন এবং ২০১৮ সালের ৬ই জুলাই নিজ শ্বশুরালয় আহসান নগর গ্রামে মৃত্
১৯ দিন আগে