ড. কামরুল হক
মুদ্রিত সংবাদপত্র পাঠক ধরে রাখতে পারছে না। মোবাইল ফোন কেড়ে নিচ্ছে মুদ্রিত সংবাদপত্রের পাঠক। মোবাইল ফোনে খবরের কাগজের অনলাইন সংস্করণ পড়তেই পাঠক বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এমন চিত্র উঠে এসেছে ‘গণমাধ্যম বিষয়ে জাতীয় জনমত জরিপ ২০২৫’-এ।
অনেক দিন ধরেই মুদ্রিত সংবাদপত্র পাঠক হারানো শঙ্কার মধ্যে আছে। অনলাইন নিউজ পোর্টালের দ্রুত বিকাশ এই শঙ্কা তৈরি করেছে। দেশব্যাপী পরিচালিত জরিপটি যেন এই শঙ্কাকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। জরিপ থেকে জানা যাচ্ছে, বেশির ভাগ পাঠকই এখন খবরের কাগজের অনলাইন সংস্করণ পড়েন এবং তা পড়েন মোবাইল ফোনে, যার পরিমাণ প্রায় ৬০ শতাংশ। আর মুদ্রিত সংবাদপত্র পড়েন প্রায় ৩৮ শতাংশ মানুষ।
মোবাইল ফোনে খবরের কাগজ পড়ার দিকে ঝুঁকে পড়ার কারণও রয়েছে। দ্রুত বাড়ছে মোবাইল ফোনের ব্যবহার। এই জরিপেও দেখা গেছে, ৮৮ শতাংশ মানুষ এখন মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। তারা শুধু যোগাযোগের কাজেই মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না, খবর দেখা কিংবা শোনার কাজেও ব্যবহার করে থাকেন।
মোবাইল ফোন তো সবার হাতের মধ্যেই থাকে। কোনো না কোনো কাজে দৃষ্টি থাকে মোবাইল ফোনের পর্দায়। মুদ্রিত খবরের কাগজের দিকে চোখ রাখার চেয়ে মোবাইল ফোনের পর্দায় খবরের কাগজে দৃষ্টিপাতই সহজ মনে হয় পাঠকের কাছে। সে জন্যই হয়তো মুদ্রিত সংবাদপত্র থেকে পাঠক মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জনমত জরিপটি পরিচালনা করেছে। ২০২৫ সালের ১ থেকে ৭ জানুয়ারি দেশের ৬৪ জেলায় এই জরিপ পরিচালনা করা হয়। জরিপে দেশের ৬৪ জেলার প্রতিটি থেকে দৈবচয়ন পদ্ধতিতে ৩৬টি করে ‘নমুনা এলাকা’ নির্বাচন করা হয়।
প্রতিটি নমুনা এলাকা থেকে নমুনায়নের মাধ্যমে নির্বাচিত ২০টি সাধারণ খানা (পরিবার) থেকে তথ্য সংগ্রহের পরিকল্পনা করেছিল পরিসংখ্যান ব্যুরো। তথ্য সংগ্রহের জন্য সারা দেশে পরিকল্পিত খানার সংখ্যা ছিল মোট ৪৬ হাজার ৮০টি। তবে সংগ্রহের সময় খানা সদস্যদের অনুপস্থিতি ও উত্তর দিতে অস্বীকৃতিসহ বিভিন্ন কারণে এক হাজার ৩৫টি খানা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। সে জন্য বাকি ৪৫ হাজার ৪৫টি খানা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। মতথ্য সংগ্রহের জন্য নির্বাচিত প্রতিটি খানা থেকে ১০ বছর ও তার বেশি বয়সী সব সদস্যের মধ্য থেকে ‘ক্রিশ গিল্ড’ পদ্ধতিতে একজন উত্তরদাতা নির্বাচন করা হয়।
পাঠক যে শুধু মুদ্রিত সংবাদপত্রের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন তাই না, মানুষের মধ্যে সংবাদপত্র পড়ার প্রবণতাই কমে যাচ্ছে। জরিপ থেকে জানা যাচ্ছে, ৭৩ শতাংশ মানুষ খবরের কাগজ পড়েনই না। নিয়মিত পড়েন মাত্র ৬ শতাংশের কিছু বেশি মানুষ। বেশির ভাগ মানুষ এখন আর খবরের কাগজ পড়ার প্রয়োজনই বোধ করেন না।
এর কারণটা বোধ হয় খুব সহজেই অনুমান করা যায়। খবরের কাগজ না পড়েও এখন খবর জানার অনেক মাধ্যম তো হাতের নাগালের মধ্যেই আছে। তবে প্রায় ১৬ শতাংশ মানুষ সময় পান না বলে খবরের কাগজ পড়েন না বলে জানিয়েছেন।
সংবাদপত্র যারা পড়েন তাদের বেশি আগ্রহ সংবাদপত্রের কোন অংশের প্রতি?— এমন প্রশ্ন সামনে আসতেই পারে। সংবাদপত্র কর্তৃপক্ষের জন্যও নিশ্চয়ই এ তথ্য জানা খুব জরুরি। কারণ এ তথ্যের ভিত্তিতে তারা পাঠকের মন ভরানোর চেষ্টা করতে পারবেন। খবরের ডালি সাজাতে পারবেন।
জরিপ বলছে, পাঠকের অগ্রাধিকারের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে দেশের খবর পড়ার প্রতি আগ্রহ। রাজনীতির খবর আর খেলার খবরের প্রতি পাঠকের ঝোঁকটাও তুলনামূলকভাবে বেশি। বিনোদনমূলক খবরও পাঠকদের বেশ টানে। বিদেশের খবরের প্রতিও রয়েছে কৌতূহল। শিক্ষাপাতার প্রতিও আগ্রহ রয়েছে। তবে সম্পাদকীয় ও মতামত খুব কম মানুষকেই আকৃষ্ট করে।
খবরের কাগজ পড়ার প্রতি আগ্রহ কমে গেলেও টেলিভিশন দেখার প্রতি মানুষের আগ্রহ কিন্তু খুব কমেছে বলা যাবে না। কারণ এখনো ৬৫ শতাংশের বেশি মানুষ টেলিভিশন দেখেন। আর টেলিভিশনে খবর দেখতে পছন্দ করেন প্রায় ৬৯ শতাংশ মানুষ। তবে রেডিও শোনার প্রতি আগ্রহ ব্যাপক হারে কমে গেছে। বেশির ভাগ মানুষ এখন আর রেডিও শোনেনই না। মাত্র ৬ শতাংশ মানুষের মধ্যে রেডিও শোনার অভ্যাস আছে।
অথচ দুই দশক আগেও রেডিওই ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী গণমাধ্যম। স্বাভাবিক সময়ে তো বটেই, জাতীয় দুর্যোগ কিংবা সংকটে রেডিওই ছিল মানুষের প্রধান ভরসা। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মানুষ রেডিওতে কান পেতে বসে থাকতেন। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের আগাম বার্তা তারা পেতেন মূলত রেডিও থেকেই। আবহওয়া দফতরের বিভিন্ন ঘোষণা পেতেন রেডিওর মাধ্যমে।
এখনো জাতীয় দুর্যোগ কিংবা সংকটে গণমাধ্যমের কাছেই তথ্য খোঁজে মানুষ। তবে এ ধরনের তথ্য খোঁজার জন্য রেডিওর ওপর আস্থা এখন নগণ্য মানুষের। ১ শতাংশেরও কম মানুষ দুর্যোগ-সংকটের তথ্য প্রথমে খোঁজেন রেডিওতে। মানুষের তুলনামূলকভাবে বেশি আস্থা টেলিভিশনের ওপর। ৩৫ শতাংশ মানুষ টেলিভিশন চ্যানেলে জাতীয় দুর্যোগ-সংকটের তথ্য প্রথম খোঁজেন।
তবে এ ধরনের তথ্য খোঁজার ক্ষেত্রে এখন সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর আস্থাশীল অনেক মানুষ। ২৮ শতাংশ মানুষ দুর্যোগ-সংকটে সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর নির্ভর করেন। রেডিওর মতো মুদ্রিত সংবাদপত্রও এ ক্ষেত্রে একেবারেই গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। ১ শতাংশের কিছু বেশি মানুষ জাতীয় দুর্যোগ-সংকটে মুদ্রিত সংবাদপত্রমুখী হন।
মানুষের কাছে মূলধারার গণমাধ্যম সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য মাধ্যম হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে মূলধারার গণমাধ্যমের পাশাপাশি খবরের জন্য সোশ্যাল মিডিয়াও এখন খবরের জন্য বিশ্বাসযোগ্য মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এর প্রতিফলন ঘটেছে জরিপে।
খবরের জন্য সবচেয়ে বেশি বিশ্বাসযোগ্য সোশ্যাল মিডিয়া এখন ফেসবুক। ৩১ শতাংশের বেশি মানুষের আস্থা ফেসবুকে। এরপরই আস্থা ইউটিউবে। ১৬ শতাংশের বেশি মানুষের কাছে খবরের জন্য বিশ্বাসযোগ্য মাধ্যম ইউটিউব।
কোনো কিছু সম্পর্কে জানা বা শেখার জন্য এখন আর সংবাদপত্রকে খুব বেশি মানুষ বিশ্বাসযোগ্য মাধ্যম মনে করেন না। জ্ঞানার্জনের জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মকে মানুষ এখন বেশি গুরুত্ব দেন। এ ক্ষেত্রে ২৪ শতাংশের বেশি মানুষের আস্থা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে। মাত্র ৪ শতাংশ মানুষ জ্ঞানার্জনের জন্য খবরের কাগজকে বিশ্বাসযোগ্য মাধ্যম মনে করেন।
গণমাধ্যম নিয়ে আলোচনা করলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রশ্নটি বারবার আমাদের সামনে আসে। গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারলে দেশের মানুষ সত্য ও তথ্যভিত্তিক সংবাদ জানতে পারে না। বস্তুনিষ্ঠ খবর পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়।
কিন্তু দেশের মানুষের বড় অংশই মনে করেন, গণমাধ্যম পুরোপুরি স্বাধীন নয়। ১৫ শতাংশ মানুষের মতে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা একেবারেই নেই। গণমাধ্যম অনেকটা স্বাধীন মনে করেন ২৪ শতাংশ মানুষ। আর ২৩ শতাংশ মানুষের অভিমত, গণমাধ্যমের কিছুটা স্বাধীনতা আছে। পুরোপুরি স্বাধীনতা রয়েছে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন মাত্র ১৭ শতাংশ মানুষ।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা না থাকার কোনো না কোনো কারণ নিশ্চয়ই আছে। তা না হলে দেশের মানুষের বড় একটি অংশ কেন মনে করছেন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা একেবারেই নেই। কারণগুলো চিহ্নিতও হয়েছে। বেশ কয়েকটি সূচকের মাধ্যমে তা প্রকাশিত হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি মানুষ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা না থাকার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ৭৯ শতাংশ মানুষই মনে করেন, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের জন্য গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। ৭১ শতাংশ মানুষের ধারণা, সরকারি হস্তক্ষেপ এর কারণ। প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপকে কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ৫০ শতাংশ মানুষ। মালিকের ব্যবসায়িক স্বার্থকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য বাধা মনে করেন ২৪ শতাংশ মানুষ। বিজ্ঞাপনদাতার চাপকেও চিহ্নিত করেছেন ১২ শতাংশ মানুষ।
তবে গণমাধ্যমকর্মীরাও যে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য বাধা হতে পারে তা লক্ষণীয়। এক-তৃতীয়াংশ মানুষ মনে করেন, সাংবাদিকের ব্যক্তিগত স্বার্থ গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য অন্তরায়। তথ্যটি বেশ ইঙ্গিতপূর্ণ।
বলার অপেক্ষা রাখে না, বিজ্ঞানসম্মত এ জরিপে জাতীয় জনমতের প্রতিফলন ঘটেছে। এই জনমত দেশের গণমাধ্যম সম্পর্কে প্রচলিত অনেক ধারণা বদলে দেবে। নতুন সমীকরণ সামনে নিয়ে আসবে। নতুন মাত্রা যোগ করবে। গণমাধ্যম নিয়ে নতুন ভাবনাও তৈরি করবে।
তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার গণমাধ্যম জগতকে দ্রুত পাল্টে দিচ্ছে। বদলে দিচ্ছে সংবাদপত্রের পাঠক-চরিত্র। ঘুম থেকে উঠে এখন মানুষের প্রথম চোখ যায় মোবাইল ফোনের পর্দায়। মানুষ নতুন খবর খোঁজেন মোবাইল ফোনে। এমন এক সময় হয়তো আসবে, যখন মানুষ আর মুদ্রিত খবরের কাগজের খোঁজই করবে না। সকালে ধূমায়িত চায়ের পেয়ালার সঙ্গে খবরের কাগজ পড়ার সেই আমেজ হারিয়ে যাবে একেবারেই। অমসৃণ ধূসর কাগজে মুদ্রিত সংবাদপত্র অপসৃত হয়ে যাবে। ঠাই নেবে স্মৃতি আর বিস্মৃতির মাঝে।
লেখক: সাংবাদিক ও গণমাধ্যম গবেষক; সাবেক পরিচালক (গবেষণা ও তথ্য সংরক্ষণ), পিআইবি
মুদ্রিত সংবাদপত্র পাঠক ধরে রাখতে পারছে না। মোবাইল ফোন কেড়ে নিচ্ছে মুদ্রিত সংবাদপত্রের পাঠক। মোবাইল ফোনে খবরের কাগজের অনলাইন সংস্করণ পড়তেই পাঠক বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এমন চিত্র উঠে এসেছে ‘গণমাধ্যম বিষয়ে জাতীয় জনমত জরিপ ২০২৫’-এ।
অনেক দিন ধরেই মুদ্রিত সংবাদপত্র পাঠক হারানো শঙ্কার মধ্যে আছে। অনলাইন নিউজ পোর্টালের দ্রুত বিকাশ এই শঙ্কা তৈরি করেছে। দেশব্যাপী পরিচালিত জরিপটি যেন এই শঙ্কাকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। জরিপ থেকে জানা যাচ্ছে, বেশির ভাগ পাঠকই এখন খবরের কাগজের অনলাইন সংস্করণ পড়েন এবং তা পড়েন মোবাইল ফোনে, যার পরিমাণ প্রায় ৬০ শতাংশ। আর মুদ্রিত সংবাদপত্র পড়েন প্রায় ৩৮ শতাংশ মানুষ।
মোবাইল ফোনে খবরের কাগজ পড়ার দিকে ঝুঁকে পড়ার কারণও রয়েছে। দ্রুত বাড়ছে মোবাইল ফোনের ব্যবহার। এই জরিপেও দেখা গেছে, ৮৮ শতাংশ মানুষ এখন মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। তারা শুধু যোগাযোগের কাজেই মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না, খবর দেখা কিংবা শোনার কাজেও ব্যবহার করে থাকেন।
মোবাইল ফোন তো সবার হাতের মধ্যেই থাকে। কোনো না কোনো কাজে দৃষ্টি থাকে মোবাইল ফোনের পর্দায়। মুদ্রিত খবরের কাগজের দিকে চোখ রাখার চেয়ে মোবাইল ফোনের পর্দায় খবরের কাগজে দৃষ্টিপাতই সহজ মনে হয় পাঠকের কাছে। সে জন্যই হয়তো মুদ্রিত সংবাদপত্র থেকে পাঠক মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জনমত জরিপটি পরিচালনা করেছে। ২০২৫ সালের ১ থেকে ৭ জানুয়ারি দেশের ৬৪ জেলায় এই জরিপ পরিচালনা করা হয়। জরিপে দেশের ৬৪ জেলার প্রতিটি থেকে দৈবচয়ন পদ্ধতিতে ৩৬টি করে ‘নমুনা এলাকা’ নির্বাচন করা হয়।
প্রতিটি নমুনা এলাকা থেকে নমুনায়নের মাধ্যমে নির্বাচিত ২০টি সাধারণ খানা (পরিবার) থেকে তথ্য সংগ্রহের পরিকল্পনা করেছিল পরিসংখ্যান ব্যুরো। তথ্য সংগ্রহের জন্য সারা দেশে পরিকল্পিত খানার সংখ্যা ছিল মোট ৪৬ হাজার ৮০টি। তবে সংগ্রহের সময় খানা সদস্যদের অনুপস্থিতি ও উত্তর দিতে অস্বীকৃতিসহ বিভিন্ন কারণে এক হাজার ৩৫টি খানা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। সে জন্য বাকি ৪৫ হাজার ৪৫টি খানা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। মতথ্য সংগ্রহের জন্য নির্বাচিত প্রতিটি খানা থেকে ১০ বছর ও তার বেশি বয়সী সব সদস্যের মধ্য থেকে ‘ক্রিশ গিল্ড’ পদ্ধতিতে একজন উত্তরদাতা নির্বাচন করা হয়।
পাঠক যে শুধু মুদ্রিত সংবাদপত্রের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন তাই না, মানুষের মধ্যে সংবাদপত্র পড়ার প্রবণতাই কমে যাচ্ছে। জরিপ থেকে জানা যাচ্ছে, ৭৩ শতাংশ মানুষ খবরের কাগজ পড়েনই না। নিয়মিত পড়েন মাত্র ৬ শতাংশের কিছু বেশি মানুষ। বেশির ভাগ মানুষ এখন আর খবরের কাগজ পড়ার প্রয়োজনই বোধ করেন না।
এর কারণটা বোধ হয় খুব সহজেই অনুমান করা যায়। খবরের কাগজ না পড়েও এখন খবর জানার অনেক মাধ্যম তো হাতের নাগালের মধ্যেই আছে। তবে প্রায় ১৬ শতাংশ মানুষ সময় পান না বলে খবরের কাগজ পড়েন না বলে জানিয়েছেন।
সংবাদপত্র যারা পড়েন তাদের বেশি আগ্রহ সংবাদপত্রের কোন অংশের প্রতি?— এমন প্রশ্ন সামনে আসতেই পারে। সংবাদপত্র কর্তৃপক্ষের জন্যও নিশ্চয়ই এ তথ্য জানা খুব জরুরি। কারণ এ তথ্যের ভিত্তিতে তারা পাঠকের মন ভরানোর চেষ্টা করতে পারবেন। খবরের ডালি সাজাতে পারবেন।
জরিপ বলছে, পাঠকের অগ্রাধিকারের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে দেশের খবর পড়ার প্রতি আগ্রহ। রাজনীতির খবর আর খেলার খবরের প্রতি পাঠকের ঝোঁকটাও তুলনামূলকভাবে বেশি। বিনোদনমূলক খবরও পাঠকদের বেশ টানে। বিদেশের খবরের প্রতিও রয়েছে কৌতূহল। শিক্ষাপাতার প্রতিও আগ্রহ রয়েছে। তবে সম্পাদকীয় ও মতামত খুব কম মানুষকেই আকৃষ্ট করে।
খবরের কাগজ পড়ার প্রতি আগ্রহ কমে গেলেও টেলিভিশন দেখার প্রতি মানুষের আগ্রহ কিন্তু খুব কমেছে বলা যাবে না। কারণ এখনো ৬৫ শতাংশের বেশি মানুষ টেলিভিশন দেখেন। আর টেলিভিশনে খবর দেখতে পছন্দ করেন প্রায় ৬৯ শতাংশ মানুষ। তবে রেডিও শোনার প্রতি আগ্রহ ব্যাপক হারে কমে গেছে। বেশির ভাগ মানুষ এখন আর রেডিও শোনেনই না। মাত্র ৬ শতাংশ মানুষের মধ্যে রেডিও শোনার অভ্যাস আছে।
অথচ দুই দশক আগেও রেডিওই ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী গণমাধ্যম। স্বাভাবিক সময়ে তো বটেই, জাতীয় দুর্যোগ কিংবা সংকটে রেডিওই ছিল মানুষের প্রধান ভরসা। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মানুষ রেডিওতে কান পেতে বসে থাকতেন। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের আগাম বার্তা তারা পেতেন মূলত রেডিও থেকেই। আবহওয়া দফতরের বিভিন্ন ঘোষণা পেতেন রেডিওর মাধ্যমে।
এখনো জাতীয় দুর্যোগ কিংবা সংকটে গণমাধ্যমের কাছেই তথ্য খোঁজে মানুষ। তবে এ ধরনের তথ্য খোঁজার জন্য রেডিওর ওপর আস্থা এখন নগণ্য মানুষের। ১ শতাংশেরও কম মানুষ দুর্যোগ-সংকটের তথ্য প্রথমে খোঁজেন রেডিওতে। মানুষের তুলনামূলকভাবে বেশি আস্থা টেলিভিশনের ওপর। ৩৫ শতাংশ মানুষ টেলিভিশন চ্যানেলে জাতীয় দুর্যোগ-সংকটের তথ্য প্রথম খোঁজেন।
তবে এ ধরনের তথ্য খোঁজার ক্ষেত্রে এখন সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর আস্থাশীল অনেক মানুষ। ২৮ শতাংশ মানুষ দুর্যোগ-সংকটে সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর নির্ভর করেন। রেডিওর মতো মুদ্রিত সংবাদপত্রও এ ক্ষেত্রে একেবারেই গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। ১ শতাংশের কিছু বেশি মানুষ জাতীয় দুর্যোগ-সংকটে মুদ্রিত সংবাদপত্রমুখী হন।
মানুষের কাছে মূলধারার গণমাধ্যম সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য মাধ্যম হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে মূলধারার গণমাধ্যমের পাশাপাশি খবরের জন্য সোশ্যাল মিডিয়াও এখন খবরের জন্য বিশ্বাসযোগ্য মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এর প্রতিফলন ঘটেছে জরিপে।
খবরের জন্য সবচেয়ে বেশি বিশ্বাসযোগ্য সোশ্যাল মিডিয়া এখন ফেসবুক। ৩১ শতাংশের বেশি মানুষের আস্থা ফেসবুকে। এরপরই আস্থা ইউটিউবে। ১৬ শতাংশের বেশি মানুষের কাছে খবরের জন্য বিশ্বাসযোগ্য মাধ্যম ইউটিউব।
কোনো কিছু সম্পর্কে জানা বা শেখার জন্য এখন আর সংবাদপত্রকে খুব বেশি মানুষ বিশ্বাসযোগ্য মাধ্যম মনে করেন না। জ্ঞানার্জনের জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মকে মানুষ এখন বেশি গুরুত্ব দেন। এ ক্ষেত্রে ২৪ শতাংশের বেশি মানুষের আস্থা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে। মাত্র ৪ শতাংশ মানুষ জ্ঞানার্জনের জন্য খবরের কাগজকে বিশ্বাসযোগ্য মাধ্যম মনে করেন।
গণমাধ্যম নিয়ে আলোচনা করলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রশ্নটি বারবার আমাদের সামনে আসে। গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারলে দেশের মানুষ সত্য ও তথ্যভিত্তিক সংবাদ জানতে পারে না। বস্তুনিষ্ঠ খবর পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়।
কিন্তু দেশের মানুষের বড় অংশই মনে করেন, গণমাধ্যম পুরোপুরি স্বাধীন নয়। ১৫ শতাংশ মানুষের মতে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা একেবারেই নেই। গণমাধ্যম অনেকটা স্বাধীন মনে করেন ২৪ শতাংশ মানুষ। আর ২৩ শতাংশ মানুষের অভিমত, গণমাধ্যমের কিছুটা স্বাধীনতা আছে। পুরোপুরি স্বাধীনতা রয়েছে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন মাত্র ১৭ শতাংশ মানুষ।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা না থাকার কোনো না কোনো কারণ নিশ্চয়ই আছে। তা না হলে দেশের মানুষের বড় একটি অংশ কেন মনে করছেন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা একেবারেই নেই। কারণগুলো চিহ্নিতও হয়েছে। বেশ কয়েকটি সূচকের মাধ্যমে তা প্রকাশিত হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি মানুষ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা না থাকার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ৭৯ শতাংশ মানুষই মনে করেন, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের জন্য গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। ৭১ শতাংশ মানুষের ধারণা, সরকারি হস্তক্ষেপ এর কারণ। প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপকে কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ৫০ শতাংশ মানুষ। মালিকের ব্যবসায়িক স্বার্থকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য বাধা মনে করেন ২৪ শতাংশ মানুষ। বিজ্ঞাপনদাতার চাপকেও চিহ্নিত করেছেন ১২ শতাংশ মানুষ।
তবে গণমাধ্যমকর্মীরাও যে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য বাধা হতে পারে তা লক্ষণীয়। এক-তৃতীয়াংশ মানুষ মনে করেন, সাংবাদিকের ব্যক্তিগত স্বার্থ গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য অন্তরায়। তথ্যটি বেশ ইঙ্গিতপূর্ণ।
বলার অপেক্ষা রাখে না, বিজ্ঞানসম্মত এ জরিপে জাতীয় জনমতের প্রতিফলন ঘটেছে। এই জনমত দেশের গণমাধ্যম সম্পর্কে প্রচলিত অনেক ধারণা বদলে দেবে। নতুন সমীকরণ সামনে নিয়ে আসবে। নতুন মাত্রা যোগ করবে। গণমাধ্যম নিয়ে নতুন ভাবনাও তৈরি করবে।
তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার গণমাধ্যম জগতকে দ্রুত পাল্টে দিচ্ছে। বদলে দিচ্ছে সংবাদপত্রের পাঠক-চরিত্র। ঘুম থেকে উঠে এখন মানুষের প্রথম চোখ যায় মোবাইল ফোনের পর্দায়। মানুষ নতুন খবর খোঁজেন মোবাইল ফোনে। এমন এক সময় হয়তো আসবে, যখন মানুষ আর মুদ্রিত খবরের কাগজের খোঁজই করবে না। সকালে ধূমায়িত চায়ের পেয়ালার সঙ্গে খবরের কাগজ পড়ার সেই আমেজ হারিয়ে যাবে একেবারেই। অমসৃণ ধূসর কাগজে মুদ্রিত সংবাদপত্র অপসৃত হয়ে যাবে। ঠাই নেবে স্মৃতি আর বিস্মৃতির মাঝে।
লেখক: সাংবাদিক ও গণমাধ্যম গবেষক; সাবেক পরিচালক (গবেষণা ও তথ্য সংরক্ষণ), পিআইবি
একটি জাতির উন্নয়নের ভিত্তি তার জনশক্তির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহারের উপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল দেশে, জনসংখ্যাগত স্থিতিশীলতা (Demographic Stability) অর্জন করা এখন আর কেবল জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের একটি কৌশল নয়, বরং এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং সুশাসনের এক অবিচ্ছেদ্য অং
১৮ দিন আগেরাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকায় ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা বিএনপির প্রতিপক্ষ এখন জামায়াতে ইসলামি। জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করা গেলে জামায়াত তখন বিএনপির শক্ত বা সবল প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে পারে। এমনকি অন্যান্য ইসলামি দলগুলো সঙ্গে নিয়ে জামায়াত দরকষাকষির সর্বোচ্চ জায়গায় পৌঁছাতে পারে।
১৯ দিন আগেঝিনাইদহের কৃষক শ্রী হরিপদ কাপালীর হাতে হরি ধানের আবিষ্কার দুই দশক আগে যার কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহনের সুযোগ হয়নি কেবল দারিদ্রতার কারনে। এখানে উল্লেখ্য যে হরিপদ কাপালী ১৯২২ সালে ঝিনাইদহ জেলার সদর উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন এবং ২০১৮ সালের ৬ই জুলাই নিজ শ্বশুরালয় আহসান নগর গ্রামে মৃত্
১৯ দিন আগেগত বছরের জুনে ব্যাংক ঋণের সুদহার ছিল ৯ শতাংশ, যা বর্তমানে ১৪–১৫ শতাংশে পৌঁছেছে। শোনা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও এক দফা নীতি সুদহার বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে। এমন দফায় দফায় সুদহার বৃদ্ধির ফলে বড় প্রতিষ্ঠানও চাপে পড়তে পারে এবং বহু প্রতিষ্ঠান রুগ্ন তালিকাভুক্ত হবে। উল্লেখযোগ্য, ২০২০ সালের এপ্রিলে স
১৯ দিন আগে