শাহরিয়ার শরীফ
ঘোষণা দিয়েছিলেন আগেই। সেই ঘোষণারই বাস্তবায়ন করলেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী ও টেসলা-স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক। রাজনৈতিক দল গঠনের মাধ্যমে নামলেন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে নিজের শক্তি পরীক্ষায়। ‘আমেরিকা পার্টি’ নামের দল ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের দ্বিদলীয় ব্যবস্থাকে সরাসরি চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দিলেন মাস্ক।
শনিবার (৫ জুলাই) নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন বলে ঘোষণা দেন মাস্ক। জানান, তার দলের নাম ‘আমেরিকা পার্টি’। তবে এর নিবন্ধন, নেতৃত্ব বা সাংগঠনিক কাঠামো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেননি তিনি।
এক্সের ওই পোস্টে কেবল দল গঠনের নেপথ্যের কারণ সংক্ষেপে তুলে ধরেন ইলন মাস্ক। তিনি লিখেছেন, “আমরা এমন এক ব্যবস্থায় বাস করছি, যেখানে গণতন্ত্রের নামে অপচয় ও দুর্নীতির দৌরাত্ম্য চলছে। তাই আজ আমি ‘আমেরিকা পার্টি’ গঠনের ঘোষণা দিচ্ছি, আপনাদের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে।”
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ডেমোক্র্যাটিক ও রিপাবলিকান— এই দুই দলের বৃত্তে আবর্তিত হচ্ছে। তবে মাস্ক বলছেন, বাস্তবে এই দুই দল একে অন্যের পরিপূরক হয়ে উঠেছে। ‘তারা ভিন্ন পোশাক পরে একসঙ্গে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করছে— এটাই ইউনিপার্টি,’— বলেন মাস্ক।
ঘোষণার সঙ্গে মাস্ক এক প্রতীকী ছবিও পোস্ট করেন— দুই মাথাওয়ালা একটি সাপ। তার মতে, এটি বর্তমান রাজনৈতিক কাঠামোর প্রতীক, যেখানে দুটো দল থাকলেও আসলে কার্যত একই শক্তি দেশ পরিচালনা করছে। মাস্কের দাবি, দ্বিদলীয় রাজনৈতিক বৃত্ত থেকে মার্কিনিদের বের করে নিয়ে আসতেই কাজ করবে তার ‘আমেরিকা পার্টি’।
স্পেসএক্স, টেসলার মতো কোম্পানি দিয়ে গোটা বিশ্বে টেক জায়ান্ট হিসেবে সুপরিচিত হয়ে ওঠা ইলন মাস্কের বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের হয়ে উঠতে সময় লাগেনি। তবে এসব পরিচয়ের বাইরেও তার রাজনীতিতে আগ্রহের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এবারের নির্বাচনি প্রচারের সময়।
২০২৪ সালের এই নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছিলেন মাস্ক। এমনকি তার প্রচারে কোটি ডলার অনুদানও দিয়েছিলেন। বলা হয়ে থাকে, ট্রাম্পের নির্বাচনি তহবিলের সিংহ ভাগই ছিল মাস্কের অবদান।
কদিন আগেও ছিলেন ঘনিষ্ঠ মিত্র, এখন তারা ভিন্ন রাজনৈতিক পরিচয়ধারী। গত ১৪ মার্চে আলাপরত দুজন। ছবি: এএফপি
এই বিপুল অর্থ যে মাস্ক এমনি এমনি দেননি তা স্পষ্ট হয় ট্রাম্প নির্বাচনে জেতার পর তার প্রশাসন সাজানোর সময়। মাস্ককে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি’র প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন, যেটি সংক্ষেপে ‘ডোজ’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। মার্কিন প্রশাসনে এ ধরনের দপ্তর ছিল এটিই প্রথম।
ট্রাম্প-মাস্কের এই ‘সুসম্পর্ক’ অবশ্য বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ডোজের প্রধান হিসেবে মাস চারেক দায়িত্ব পালনের পরই ট্রাম্পের বাজেট বিল নিয়ে প্রকাশ্যে অসন্তোষ জানান মাস্ক। বলেন, এই বিল ঘাটতি বাড়াবে এবং ডোজের কাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। পরে ২৮ মে রাতে ‘স্পেশাল গভর্নমেন্ট এমপ্লয়ি’ হিসেবে তার মেয়াদ শেষ হওয়ায় আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।
আলোচিত সেই বিলটি গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসে ট্রাম্পের সইয়ে পাস হয়েছে ‘বিগ বিউটিফুল বিল’ নামে। এই বিল কংগ্রেসে অনুমোদন পাওয়ার পরও সমালোচনা করেছেন মাস্ক। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এই বিল আমাদের ভবিষ্যৎকে বন্ধক রাখবে। এটা বাজেট না, এটা জাতীয় আত্মহত্যা।’ বিলটি পাস হওয়ার পরপরই ‘আমেরিকা পার্টি’র ঘোষণা দেন তিনি।
ইলন মাস্ক জানিয়েছেন, হুট করেই রাজনৈতিক দল গঠনের পথে হাঁটেননি তিনি। বরং জরিপ করে প্রথমে তিনি জেনেছেন, মার্কিন নাগরিকরা ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানের দ্বিদলীয় বৃত্ত থেকে বের হতে আগ্রহী। এরপরই তিনি দল গঠনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেন।
দল ঘোষণার একদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসে মাস্ক এক্সে একটি জরিপ চালান। প্রশ্ন ছিল, ‘আপনি কি ইউনিপার্টি (দুই দলের মিলিত আধিপত্য) থেকে মুক্তি চান?’ জরিপে অংশ নেন ১২ লাখের বেশি মানুষ, যার মধ্যে প্রায় ৬৭ শতাংশেরই উত্তর ছিল ‘হ্যাঁ’।
এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইলন মাস্ককে আলাদা করাই ছিল কঠিন। হয়তো ভবিষ্যতে ভোটের মাঠেও প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা যাবে দুজনকে। ছবি: এএফপি
এরপরই মাস্ক লেখেন, ‘দুই বনাম এক অনুপাতে আপনারা নতুন একটি রাজনৈতিক দল চেয়েছেন। আপনারা সেটাই এখন পাচ্ছেন।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন দল গঠন করলেও মাস্কের পরিকল্পনা প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে নয়, বরং ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের দিকে। তিনি চান কংগ্রেসের এমন কিছু আসনে তার দল প্রার্থী দিক যেখানে দুই প্রধান দলের প্রভাব সমান এবং আমেরিকা পার্টি ‘কিং-মেকার’ ভূমিকা রাখতে পারে।
মাস্ক লিখেছেন, “সিনেটে দুই-তিনটি এবং প্রতিনিধি পরিষদে ৮–১০টি আসন জিতলেই আমরাই হতে পারি যেকোনো আইনের ‘ডিসাইসিভ ভোট’। এটুকুই যথেষ্ট পরিবর্তন আনার জন্য।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মেরি বেনেট পলিটিকোকে বলেন, ‘মাস্ক যে ধরনের সংগঠন ও ক্যাম্পেইনিং করতে পারেন, তা যুক্তরাষ্ট্রে স্বতন্ত্র দলগুলোর জন্য নজিরবিহীন হতে পারে। তবে এটাও ঠিক, মার্কিন রাজনীতিতে বড় দুই দলকে টেক্কা দিতে চাইলে শুধুমাত্র অর্থ নয়, দরকার মাটির কাছের রাজনীতি।’
যুক্তরাষ্ট্রে তৃতীয় কোনো দলের প্রভাব পুরোপুরি অচেনা নয়। ১৯৯২ সালে ধনকুবের রস পেরট প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ১৯ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। এর ফলে রিপাবলিকান জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ পরাজিত হন এবং জয় পান বিল ক্লিনটন।
তবে ওই সময় পেরটের পেছনে এত প্রযুক্তি, প্ল্যাটফর্ম বা প্রচারযন্ত্র ছিল না, যা আজ ইলন মাস্কের হাতে রয়েছে। ফলে মাস্ক এখন পেরটের চাইতেও নির্বাচনে অনেক বেশি প্রভাব ফেলার মতো কলাকৌশল করার সুযোগ পাবেন।
ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, মাস্কের সম্পদের পরিমাণ ৪০৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি। তার হাতে রয়েছে নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম (এক্স), বিশ্বজোড়া পরিচিতি, এবং এমন একটি জনগোষ্ঠী যারা মূল ধারার রাজনীতিতে আস্থা হারাচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও দুজন দুজনকে কঠোর সমালোচনা করে থাকেন ট্রাম্প ও মাস্ক। তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরাও আলোচনার খোরাক পেয়ে যান। ছবি: পলিটিকো
এসব সত্ত্বেও মাস্কের সামনে চ্যালেঞ্জও কম নয়। কারণ জনসংযোগ যতই শক্তিশালী হোক, রাজনীতিতে সফল হতে হলে লাগবে সংগঠন, জনসম্পৃক্ততা ও স্থানীয় স্তরে বিশ্বাসযোগ্যতা— এমনটিই বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
রাজনৈতিক ভাষ্যকার জোনাথন ব্লেক নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, ‘মাস্কের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ সিরিয়াস। তবে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক কাঠামো এমনভাবে তৈরি যে বাইরে থেকে এসে অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা কাঠামো না বদলে তাতে টিকে থাকা কঠিন।’
ইলন মাস্ক ‘আমেরিকা পার্টি’র মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করতে চাইছেন— এটি স্পষ্ট। তবে তার এই চ্যালেঞ্জ প্রকৃতপক্ষে কতটা কার্যকর হবে, তা নির্ভর করছে সংগঠনের বাস্তবতা, রাজনৈতিক পরিবেশ ও ভোটারদের প্রত্যাশার ওপর।
এ মুহূর্তে শুধু এটুকু নিশ্চিত করে বলা যায়— যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে মাস্ক এখন আর শুধু একজন পর্যবেক্ষক নন, একজন খেলোয়াড়ও বটে।
ঘোষণা দিয়েছিলেন আগেই। সেই ঘোষণারই বাস্তবায়ন করলেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী ও টেসলা-স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক। রাজনৈতিক দল গঠনের মাধ্যমে নামলেন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে নিজের শক্তি পরীক্ষায়। ‘আমেরিকা পার্টি’ নামের দল ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের দ্বিদলীয় ব্যবস্থাকে সরাসরি চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দিলেন মাস্ক।
শনিবার (৫ জুলাই) নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন বলে ঘোষণা দেন মাস্ক। জানান, তার দলের নাম ‘আমেরিকা পার্টি’। তবে এর নিবন্ধন, নেতৃত্ব বা সাংগঠনিক কাঠামো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেননি তিনি।
এক্সের ওই পোস্টে কেবল দল গঠনের নেপথ্যের কারণ সংক্ষেপে তুলে ধরেন ইলন মাস্ক। তিনি লিখেছেন, “আমরা এমন এক ব্যবস্থায় বাস করছি, যেখানে গণতন্ত্রের নামে অপচয় ও দুর্নীতির দৌরাত্ম্য চলছে। তাই আজ আমি ‘আমেরিকা পার্টি’ গঠনের ঘোষণা দিচ্ছি, আপনাদের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে।”
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ডেমোক্র্যাটিক ও রিপাবলিকান— এই দুই দলের বৃত্তে আবর্তিত হচ্ছে। তবে মাস্ক বলছেন, বাস্তবে এই দুই দল একে অন্যের পরিপূরক হয়ে উঠেছে। ‘তারা ভিন্ন পোশাক পরে একসঙ্গে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করছে— এটাই ইউনিপার্টি,’— বলেন মাস্ক।
ঘোষণার সঙ্গে মাস্ক এক প্রতীকী ছবিও পোস্ট করেন— দুই মাথাওয়ালা একটি সাপ। তার মতে, এটি বর্তমান রাজনৈতিক কাঠামোর প্রতীক, যেখানে দুটো দল থাকলেও আসলে কার্যত একই শক্তি দেশ পরিচালনা করছে। মাস্কের দাবি, দ্বিদলীয় রাজনৈতিক বৃত্ত থেকে মার্কিনিদের বের করে নিয়ে আসতেই কাজ করবে তার ‘আমেরিকা পার্টি’।
স্পেসএক্স, টেসলার মতো কোম্পানি দিয়ে গোটা বিশ্বে টেক জায়ান্ট হিসেবে সুপরিচিত হয়ে ওঠা ইলন মাস্কের বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের হয়ে উঠতে সময় লাগেনি। তবে এসব পরিচয়ের বাইরেও তার রাজনীতিতে আগ্রহের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এবারের নির্বাচনি প্রচারের সময়।
২০২৪ সালের এই নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছিলেন মাস্ক। এমনকি তার প্রচারে কোটি ডলার অনুদানও দিয়েছিলেন। বলা হয়ে থাকে, ট্রাম্পের নির্বাচনি তহবিলের সিংহ ভাগই ছিল মাস্কের অবদান।
কদিন আগেও ছিলেন ঘনিষ্ঠ মিত্র, এখন তারা ভিন্ন রাজনৈতিক পরিচয়ধারী। গত ১৪ মার্চে আলাপরত দুজন। ছবি: এএফপি
এই বিপুল অর্থ যে মাস্ক এমনি এমনি দেননি তা স্পষ্ট হয় ট্রাম্প নির্বাচনে জেতার পর তার প্রশাসন সাজানোর সময়। মাস্ককে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি’র প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন, যেটি সংক্ষেপে ‘ডোজ’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। মার্কিন প্রশাসনে এ ধরনের দপ্তর ছিল এটিই প্রথম।
ট্রাম্প-মাস্কের এই ‘সুসম্পর্ক’ অবশ্য বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ডোজের প্রধান হিসেবে মাস চারেক দায়িত্ব পালনের পরই ট্রাম্পের বাজেট বিল নিয়ে প্রকাশ্যে অসন্তোষ জানান মাস্ক। বলেন, এই বিল ঘাটতি বাড়াবে এবং ডোজের কাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। পরে ২৮ মে রাতে ‘স্পেশাল গভর্নমেন্ট এমপ্লয়ি’ হিসেবে তার মেয়াদ শেষ হওয়ায় আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।
আলোচিত সেই বিলটি গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসে ট্রাম্পের সইয়ে পাস হয়েছে ‘বিগ বিউটিফুল বিল’ নামে। এই বিল কংগ্রেসে অনুমোদন পাওয়ার পরও সমালোচনা করেছেন মাস্ক। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এই বিল আমাদের ভবিষ্যৎকে বন্ধক রাখবে। এটা বাজেট না, এটা জাতীয় আত্মহত্যা।’ বিলটি পাস হওয়ার পরপরই ‘আমেরিকা পার্টি’র ঘোষণা দেন তিনি।
ইলন মাস্ক জানিয়েছেন, হুট করেই রাজনৈতিক দল গঠনের পথে হাঁটেননি তিনি। বরং জরিপ করে প্রথমে তিনি জেনেছেন, মার্কিন নাগরিকরা ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানের দ্বিদলীয় বৃত্ত থেকে বের হতে আগ্রহী। এরপরই তিনি দল গঠনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেন।
দল ঘোষণার একদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসে মাস্ক এক্সে একটি জরিপ চালান। প্রশ্ন ছিল, ‘আপনি কি ইউনিপার্টি (দুই দলের মিলিত আধিপত্য) থেকে মুক্তি চান?’ জরিপে অংশ নেন ১২ লাখের বেশি মানুষ, যার মধ্যে প্রায় ৬৭ শতাংশেরই উত্তর ছিল ‘হ্যাঁ’।
এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইলন মাস্ককে আলাদা করাই ছিল কঠিন। হয়তো ভবিষ্যতে ভোটের মাঠেও প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা যাবে দুজনকে। ছবি: এএফপি
এরপরই মাস্ক লেখেন, ‘দুই বনাম এক অনুপাতে আপনারা নতুন একটি রাজনৈতিক দল চেয়েছেন। আপনারা সেটাই এখন পাচ্ছেন।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন দল গঠন করলেও মাস্কের পরিকল্পনা প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে নয়, বরং ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের দিকে। তিনি চান কংগ্রেসের এমন কিছু আসনে তার দল প্রার্থী দিক যেখানে দুই প্রধান দলের প্রভাব সমান এবং আমেরিকা পার্টি ‘কিং-মেকার’ ভূমিকা রাখতে পারে।
মাস্ক লিখেছেন, “সিনেটে দুই-তিনটি এবং প্রতিনিধি পরিষদে ৮–১০টি আসন জিতলেই আমরাই হতে পারি যেকোনো আইনের ‘ডিসাইসিভ ভোট’। এটুকুই যথেষ্ট পরিবর্তন আনার জন্য।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মেরি বেনেট পলিটিকোকে বলেন, ‘মাস্ক যে ধরনের সংগঠন ও ক্যাম্পেইনিং করতে পারেন, তা যুক্তরাষ্ট্রে স্বতন্ত্র দলগুলোর জন্য নজিরবিহীন হতে পারে। তবে এটাও ঠিক, মার্কিন রাজনীতিতে বড় দুই দলকে টেক্কা দিতে চাইলে শুধুমাত্র অর্থ নয়, দরকার মাটির কাছের রাজনীতি।’
যুক্তরাষ্ট্রে তৃতীয় কোনো দলের প্রভাব পুরোপুরি অচেনা নয়। ১৯৯২ সালে ধনকুবের রস পেরট প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ১৯ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। এর ফলে রিপাবলিকান জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ পরাজিত হন এবং জয় পান বিল ক্লিনটন।
তবে ওই সময় পেরটের পেছনে এত প্রযুক্তি, প্ল্যাটফর্ম বা প্রচারযন্ত্র ছিল না, যা আজ ইলন মাস্কের হাতে রয়েছে। ফলে মাস্ক এখন পেরটের চাইতেও নির্বাচনে অনেক বেশি প্রভাব ফেলার মতো কলাকৌশল করার সুযোগ পাবেন।
ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, মাস্কের সম্পদের পরিমাণ ৪০৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি। তার হাতে রয়েছে নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম (এক্স), বিশ্বজোড়া পরিচিতি, এবং এমন একটি জনগোষ্ঠী যারা মূল ধারার রাজনীতিতে আস্থা হারাচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও দুজন দুজনকে কঠোর সমালোচনা করে থাকেন ট্রাম্প ও মাস্ক। তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরাও আলোচনার খোরাক পেয়ে যান। ছবি: পলিটিকো
এসব সত্ত্বেও মাস্কের সামনে চ্যালেঞ্জও কম নয়। কারণ জনসংযোগ যতই শক্তিশালী হোক, রাজনীতিতে সফল হতে হলে লাগবে সংগঠন, জনসম্পৃক্ততা ও স্থানীয় স্তরে বিশ্বাসযোগ্যতা— এমনটিই বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
রাজনৈতিক ভাষ্যকার জোনাথন ব্লেক নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, ‘মাস্কের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ সিরিয়াস। তবে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক কাঠামো এমনভাবে তৈরি যে বাইরে থেকে এসে অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা কাঠামো না বদলে তাতে টিকে থাকা কঠিন।’
ইলন মাস্ক ‘আমেরিকা পার্টি’র মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করতে চাইছেন— এটি স্পষ্ট। তবে তার এই চ্যালেঞ্জ প্রকৃতপক্ষে কতটা কার্যকর হবে, তা নির্ভর করছে সংগঠনের বাস্তবতা, রাজনৈতিক পরিবেশ ও ভোটারদের প্রত্যাশার ওপর।
এ মুহূর্তে শুধু এটুকু নিশ্চিত করে বলা যায়— যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে মাস্ক এখন আর শুধু একজন পর্যবেক্ষক নন, একজন খেলোয়াড়ও বটে।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি তৃতীয় কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করাটা একেবারেই হাস্যকর। যুক্তরাষ্ট্রে দুই দলের যে রাজনৈতিক কাঠামো, তা বহু বছর ধরেই আছে। তৃতীয় কোনো দল এখানে আনার চেষ্টা শুধু বিভ্রান্তি তৈরি করবে। তিনি (মাস্ক) চাইলে মজা করতে পারেন। তবে আমার মনে হয় এটি হাস্যকর।’
৬ ঘণ্টা আগেইয়েমেনের তিনটি বন্দর ও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে হুতিদের অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে দেশটির প্রধান বিদ্যুৎকেন্দ্র অচল হয়ে পড়েছে।
৯ ঘণ্টা আগেযুদ্ধের আগে হামাসের যে শক্তি ছিল তারা ফের সেই জায়গায় ফিরে গেছে বলে জানিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত ইসরায়েলি মেজর জেনারেল ইয়েজহাক ব্রিক। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) দাবি করছে, হামাসকে তারা প্রায় নির্মূল করেছে। তবে আইডিএফের দাবির উল্টোটা বললেন এই জেনারেল।
১ দিন আগেমাস্ক সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী না হলেও, তিনি প্রায়ই রিপাবলিকান দলঘেঁষা অবস্থান নেন।
১ দিন আগে