আ. ছালাম খান
ইসলামি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস ‘মহররম’। এটি ‘আশহুরে হুরুম’ বা সম্মানিত চার মাসের একটি, যার প্রতি আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.) বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। এ মাসের প্রথম ১০ দিন বিশেষভাবে ফজিলতপূর্ণ— রহমত, বরকত ও ইবাদতের উজ্জ্বল সুযোগ। ইতিহাস, আধ্যাত্মিকতা ও আত্মত্যাগের অপূর্ব মেলবন্ধনে মোড়ানো এ সময় আমাদের ঈমান, নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধকে নতুন করে জাগ্রত করার আহ্বান জানায়।
বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর জন্য এই ১০ দিন শুধু আবেগ নয়, আত্মশুদ্ধি ও আত্মজিজ্ঞাসারও উপলক্ষ্য। ইসলামি ইতিহাসে বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যেমন— আশুরা দিবস, তেমনিভাবে ইমাম হোসাইন (রা.)-এর শাহাদাত এ মাসকে দিয়েছে অমরতা।
প্রাক-ইসলামিক আরব সমাজে মহররম
আরবরা মহররমকে সম্মান করত। তারা এ মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ, খুন-খারাবি বন্ধ রাখত। ইসলামের আবির্ভাবের পরও এই সম্মান অক্ষুণ্ণ থাকে। কুরআনের সূরা তওবার ৩৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে— ‘আল্লাহর নিকট মাস গণনায় ১২ মাসই, যার মধ্যে চারটি সম্মানিত।’
আশুরার ঐতিহাসিক গুরুত্ব
মহররমের ১০ তারিখ, ‘আশুরা’ নামে পরিচিত। বহু নবীর জীবনে এ দিনে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে—
কারবালার মহাকাব্যিক অধ্যায়
১০ মহররম, ৬১ হিজরি। ইসলামের ইতিহাসে গভীর শোক ও গৌরবের দিন। ইয়াজিদের জুলুম ও অবিচারের বিরুদ্ধে সত্য ও ন্যায়ের পথে দাঁড়িয়েছিলেন রাসুল (সা.)-এর প্রিয় নাতি ইমাম হোসাইন (রা.)। পরিবারসহ তিনি কারবালার প্রান্তরে শাহাদাত বরণ করেন। এ ত্যাগ শুধু ইতিহাস নয়, ইসলামের আত্মা হয়ে চিরকাল মুসলমানদের কাছে সত্য ও প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে আছে।
কুরআন ও হাদিসের আলোকে
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন— ‘রমজান মাসের পর আল্লাহর কাছে সর্বাধিক ফজিলতপূর্ণ রোজা হচ্ছে মহররম মাসের রোজা।’ (সহীহ মুসলিম)
আবার আশুরার দিনে রোজা রাখার প্রসঙ্গে তিনি বলেন— আশা করি আল্লাহ তায়ালা এ রোজার মাধ্যমে অতীত এক বছরের গোনাহ মাফ করে দেবেন। (সহীহ মুসলিম)
আশুরার রোজা
রাসুল (সা.) ইহুদিদের আশুরার রোজা পালনের কথা শুনে বলেছিলেন— ‘তোমরা দশমের সঙ্গে নবম অথবা একাদশ মিলিয়ে রোজা রাখো, যেন ইহুদিদের থেকে ভিন্ন হওয়া যায়।’
মহররমের প্রথম ১০ দিনের করণীয় আমল
কারবালা: প্রতিরোধের শিক্ষা
ইমাম হোসাইন (রা.) কেবল একজন ব্যক্তি ছিলেন না, তিনি ছিলেন এক আদর্শ। ক্ষমতার লোভ, সত্যকে চাপা দেওয়া, ধর্মের নাম ভাঙিয়ে রাজনীতি করার বিরুদ্ধে তিনি একা দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁর ত্যাগ মুসলিম সমাজকে আজো শিক্ষা দেয়— বিপদের মধ্যেও ন্যায় পথ থেকে বিচ্যুতি নয়।
মহররম ও প্রতিবাদ সংস্কৃতি
আধুনিক পৃথিবীতে যখন অত্যাচার-দুর্নীতি ও অন্যায় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, তখন কারবালার চেতনা আমাদের শেখায়, ‘সত্য কথা বলো, যতই শক্তির বিরুদ্ধে হোক।’
মহররম আমাদের শুধু কান্না করতে শেখায় না, প্রতিবাদও করতে শেখায়।
আত্মশুদ্ধি ও ইবাদতের মাধ্যমে নিজেকে বদলে ফেলা
মহররম আত্মসমালোচনার মাস। নববর্ষের শুরুতেই আমাদের উচিত অভ্যন্তরীণ দূষণ দূর করা, অহংকার ও হিংসা দূর করা, হৃদয়কে পরিষ্কার করা।
আহলে বাইতের ভালোবাসা ও সম্মান
ইমাম হোসাইন (রা.)-এর শাহাদাত শুধু শোক নয়, দায়িত্বের আহ্বান। রাসুল (সা.) বলতেন, ‘হোসাইন আমারই অংশ, আমি হোসাইনের অংশ।’ তাই তার প্রতি ভালোবাসা থাকা ঈমানের অংশ। আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসা মানেই হলো সত্য ও ন্যায়ের প্রতি অটল থাকা।
মহররম উপলক্ষে অনেক জায়গায় কিছু কুসংস্কার ও বেদআত প্রচলিত হয়ে গেছে, যেমন—
এসব ইসলাম স্বীকৃত নয়। আমাদের উচিত রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহ অনুযায়ী এ মাস পালন করা ইবাদত, রোজা, তওবা ও সৎকর্মের মাধ্যমে।
মহররমের গুরুত্ব ও শিক্ষা সমাজে ছড়িয়ে দিতে যেসব কাজ করা যায় সেগুলো হলো—
মহররম আমাদের জন্য কেবল একটি মাস নয়, এটি একটি চেতনা, একটি সংগ্রাম, একটি বোধ। সত্য ও ন্যায়ের পথে জীবন উৎসর্গের প্রতীক এই মাস। হোসাইন (রা.) আমাদের শেখান, সংখ্যায় বড় না হয়েও ন্যায়ের পথে অটল থাকা যায়, অন্যায়ের সামনে মাথা নত করা যায় না।
মহররমের প্রথম ১০ দিন আমাদের চিন্তা, চরিত্র ও কর্মে বিপ্লব ঘটাতে পারে, যদি আমরা তা বুঝে উপলব্ধি করি। এ মাসে কাঁদা উচিত, তবে নিজের গোনাহর জন্য। এ মাসে রোজা রাখা উচিত, তবে আত্মাকে খাঁটি করার জন্য। এ মাসে শোক করা উচিত, তবে সেই আদর্শের জন্য যা জীবনকে আলোকিত করে।
আসুন, মহররমের প্রথম ১০ দিনকে আত্মশুদ্ধি, ইবাদত, ত্যাগ ও নৈতিকতা অর্জনের ১০ দিন হিসেবে গ্রহণ করি। কারবালার ত্যাগ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রকে সত্য, শান্তি ও ইনসাফের পথে গড়ে তুলি।
লেখক: মহাপরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
ইসলামি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস ‘মহররম’। এটি ‘আশহুরে হুরুম’ বা সম্মানিত চার মাসের একটি, যার প্রতি আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.) বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। এ মাসের প্রথম ১০ দিন বিশেষভাবে ফজিলতপূর্ণ— রহমত, বরকত ও ইবাদতের উজ্জ্বল সুযোগ। ইতিহাস, আধ্যাত্মিকতা ও আত্মত্যাগের অপূর্ব মেলবন্ধনে মোড়ানো এ সময় আমাদের ঈমান, নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধকে নতুন করে জাগ্রত করার আহ্বান জানায়।
বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর জন্য এই ১০ দিন শুধু আবেগ নয়, আত্মশুদ্ধি ও আত্মজিজ্ঞাসারও উপলক্ষ্য। ইসলামি ইতিহাসে বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যেমন— আশুরা দিবস, তেমনিভাবে ইমাম হোসাইন (রা.)-এর শাহাদাত এ মাসকে দিয়েছে অমরতা।
প্রাক-ইসলামিক আরব সমাজে মহররম
আরবরা মহররমকে সম্মান করত। তারা এ মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ, খুন-খারাবি বন্ধ রাখত। ইসলামের আবির্ভাবের পরও এই সম্মান অক্ষুণ্ণ থাকে। কুরআনের সূরা তওবার ৩৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে— ‘আল্লাহর নিকট মাস গণনায় ১২ মাসই, যার মধ্যে চারটি সম্মানিত।’
আশুরার ঐতিহাসিক গুরুত্ব
মহররমের ১০ তারিখ, ‘আশুরা’ নামে পরিচিত। বহু নবীর জীবনে এ দিনে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে—
কারবালার মহাকাব্যিক অধ্যায়
১০ মহররম, ৬১ হিজরি। ইসলামের ইতিহাসে গভীর শোক ও গৌরবের দিন। ইয়াজিদের জুলুম ও অবিচারের বিরুদ্ধে সত্য ও ন্যায়ের পথে দাঁড়িয়েছিলেন রাসুল (সা.)-এর প্রিয় নাতি ইমাম হোসাইন (রা.)। পরিবারসহ তিনি কারবালার প্রান্তরে শাহাদাত বরণ করেন। এ ত্যাগ শুধু ইতিহাস নয়, ইসলামের আত্মা হয়ে চিরকাল মুসলমানদের কাছে সত্য ও প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে আছে।
কুরআন ও হাদিসের আলোকে
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন— ‘রমজান মাসের পর আল্লাহর কাছে সর্বাধিক ফজিলতপূর্ণ রোজা হচ্ছে মহররম মাসের রোজা।’ (সহীহ মুসলিম)
আবার আশুরার দিনে রোজা রাখার প্রসঙ্গে তিনি বলেন— আশা করি আল্লাহ তায়ালা এ রোজার মাধ্যমে অতীত এক বছরের গোনাহ মাফ করে দেবেন। (সহীহ মুসলিম)
আশুরার রোজা
রাসুল (সা.) ইহুদিদের আশুরার রোজা পালনের কথা শুনে বলেছিলেন— ‘তোমরা দশমের সঙ্গে নবম অথবা একাদশ মিলিয়ে রোজা রাখো, যেন ইহুদিদের থেকে ভিন্ন হওয়া যায়।’
মহররমের প্রথম ১০ দিনের করণীয় আমল
কারবালা: প্রতিরোধের শিক্ষা
ইমাম হোসাইন (রা.) কেবল একজন ব্যক্তি ছিলেন না, তিনি ছিলেন এক আদর্শ। ক্ষমতার লোভ, সত্যকে চাপা দেওয়া, ধর্মের নাম ভাঙিয়ে রাজনীতি করার বিরুদ্ধে তিনি একা দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁর ত্যাগ মুসলিম সমাজকে আজো শিক্ষা দেয়— বিপদের মধ্যেও ন্যায় পথ থেকে বিচ্যুতি নয়।
মহররম ও প্রতিবাদ সংস্কৃতি
আধুনিক পৃথিবীতে যখন অত্যাচার-দুর্নীতি ও অন্যায় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, তখন কারবালার চেতনা আমাদের শেখায়, ‘সত্য কথা বলো, যতই শক্তির বিরুদ্ধে হোক।’
মহররম আমাদের শুধু কান্না করতে শেখায় না, প্রতিবাদও করতে শেখায়।
আত্মশুদ্ধি ও ইবাদতের মাধ্যমে নিজেকে বদলে ফেলা
মহররম আত্মসমালোচনার মাস। নববর্ষের শুরুতেই আমাদের উচিত অভ্যন্তরীণ দূষণ দূর করা, অহংকার ও হিংসা দূর করা, হৃদয়কে পরিষ্কার করা।
আহলে বাইতের ভালোবাসা ও সম্মান
ইমাম হোসাইন (রা.)-এর শাহাদাত শুধু শোক নয়, দায়িত্বের আহ্বান। রাসুল (সা.) বলতেন, ‘হোসাইন আমারই অংশ, আমি হোসাইনের অংশ।’ তাই তার প্রতি ভালোবাসা থাকা ঈমানের অংশ। আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসা মানেই হলো সত্য ও ন্যায়ের প্রতি অটল থাকা।
মহররম উপলক্ষে অনেক জায়গায় কিছু কুসংস্কার ও বেদআত প্রচলিত হয়ে গেছে, যেমন—
এসব ইসলাম স্বীকৃত নয়। আমাদের উচিত রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহ অনুযায়ী এ মাস পালন করা ইবাদত, রোজা, তওবা ও সৎকর্মের মাধ্যমে।
মহররমের গুরুত্ব ও শিক্ষা সমাজে ছড়িয়ে দিতে যেসব কাজ করা যায় সেগুলো হলো—
মহররম আমাদের জন্য কেবল একটি মাস নয়, এটি একটি চেতনা, একটি সংগ্রাম, একটি বোধ। সত্য ও ন্যায়ের পথে জীবন উৎসর্গের প্রতীক এই মাস। হোসাইন (রা.) আমাদের শেখান, সংখ্যায় বড় না হয়েও ন্যায়ের পথে অটল থাকা যায়, অন্যায়ের সামনে মাথা নত করা যায় না।
মহররমের প্রথম ১০ দিন আমাদের চিন্তা, চরিত্র ও কর্মে বিপ্লব ঘটাতে পারে, যদি আমরা তা বুঝে উপলব্ধি করি। এ মাসে কাঁদা উচিত, তবে নিজের গোনাহর জন্য। এ মাসে রোজা রাখা উচিত, তবে আত্মাকে খাঁটি করার জন্য। এ মাসে শোক করা উচিত, তবে সেই আদর্শের জন্য যা জীবনকে আলোকিত করে।
আসুন, মহররমের প্রথম ১০ দিনকে আত্মশুদ্ধি, ইবাদত, ত্যাগ ও নৈতিকতা অর্জনের ১০ দিন হিসেবে গ্রহণ করি। কারবালার ত্যাগ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রকে সত্য, শান্তি ও ইনসাফের পথে গড়ে তুলি।
লেখক: মহাপরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
স্লোগান বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক অবিছ্ছেদ্য অংশ। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে স্লোগানের ব্যবহার ছিল। “ব্রিটিশ হটাও, দেশ বাঁচাও”; “বিদেশি পণ্য বর্জন করো, দেশি পণ্য ব্যবহার করো”; “তুমি আমি স্বদেশি, স্বদেশি স্বদেশি” “আমরা লড়ব, আমরা জিতব” ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে এরূপ অনেক স্লোগানই রাজনৈতিক সচেতন
৪ দিন আগে২২ জুলাই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এ নিয়ে একটি প্রস্তাবনা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে । তাতে প্রধান শিক্ষকরা আগে কত টাকা বেতন ও ভাতা পেতেন, আর দশম গ্রেড বাস্তবায়ন হলে কত পাবেন—তা নিয়ে পরিপূর্ণ হিসাব রয়েছে ।
৪ দিন আগেভিওজিএসএস হলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর উদ্বেগ, স্বার্থ ও অগ্রাধিকারসমূহের বিষয়ে আলোচনা করা, ধারণা ও সমাধান বিনিময় করা, এবং উন্নয়ন সমাধান বিনির্মাণে কণ্ঠ ও উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য একটি অভিন্ন মঞ্চ প্রদানের লক্ষ্যে ভারতের প্রচেষ্টা।
৫ দিন আগেবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকেই খাজা সলিমুল্লাহ, মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ, আল্লামা ইকবাল, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দ্দী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ অনুধাবন করেন যে, ভারতবর্ষ স্বাধীন হলে মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমির প্রয়োজন হবে। অন্যথায় ভারতবর্ষের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির মধ্যে গৃহযুদ্ধ লেগেই থাকবে। রা
৯ দিন আগে