
মো. কাফি খান

আশি ও নব্বই দশকের বাংলাদেশ—যখন ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী শহরের রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড আর লঞ্চঘাট ছিল জনজীবনের প্রখর স্পন্দন।
সেই সময়ের শহর জেগে থাকত শুধু গাড়ির হর্ণে নয়, বরং হকারদের কণ্ঠে—যে কণ্ঠে ছিল ক্ষুধার ছন্দ, জীবিকার সংগীত, আর জীবনের অনন্ত ডাক।
১. শহরের পথের গায়করা
তারা কেউ বাদামওয়ালা, কেউ চানাচুরওয়ালা, কেউ গরম চা বিক্রেতা—কিন্তু প্রত্যেকে ছিল শহরের কবি, ছন্দের কারিগর।
রেলস্টেশনের ধোঁয়ার ভেতর ভেসে আসত—
“চা-সিগারেট, গরম চা, চানাচুর-বাদাম!”
“ঢাকা ট্রেন ছাড়ে, গরম খবর সঙ্গে আছে!”
বাসের জানালা দিয়ে ভেসে আসত তরুণ কণ্ঠের সুর—
“গরম চানাচুর, ঠান্ডা পানি—মন খারাপের ওষুধ আনি!”
আর সদরঘাটে দিনের শেষে, কণ্ঠ ক্লান্ত হলেও গলা ভরে উঠত—
“বাদাম দে, বাদাম দে, সোনার মেয়ে বাদাম দে!”
এগুলো শুধুই বিক্রির ডাক ছিল না; ছিল শহরের লোকসংগীত, যেখানে জীবন, দারিদ্র্য, প্রেম ও সংগ্রাম মিলেমিশে একাকার।
২. অদৃশ্য অর্থনীতি, দৃশ্যমান মানবতা
হকাররা ছিল শহরের informal economy-র প্রাণ।
তারা কোনো দপ্তরের অধীনে ছিল না, কিন্তু প্রতিদিন হাজার মানুষের সঙ্গে মিশে গড়ে তুলত এক নীরব বাণিজ্যজগৎ।
তাদের হাতে ছিল পণ্যের ওজন, কিন্তু কণ্ঠে ছিল জীবনের আশা।
প্রতিদিনের ছোট ছোট লেনদেন মিলে তৈরি করত বড় অর্থপ্রবাহ, যা শহরের অর্থনীতিকে অক্সিজেন জোগাত।
তবু তারা ছিল সমাজের উপেক্ষিত মানুষ—যাদের গান শহরের ইতিহাসে স্থান পায়নি, যাদের কণ্ঠ রেলস্টেশনের ধোঁয়ায় মিলিয়ে গেছে।
৩. হকারদের গান : জীবনের লোকগীতি
একজন কিশোর হকার গাইত—
“চা না খাইলে চোখে ঘুম নাই, চানাচুর না খাইলে মনই নাই!”
একজন বৃদ্ধ হকার গাইত—
“বউরে দে বাদাম, জামাইরে দে বাদাম!”
এসব গান কোনো রেকর্ডে ওঠেনি, কিন্তু উঠেছে মানুষের স্মৃতিতে।
এই ছন্দগুলোই ছিল শহুরে লোকগান—একসাথে বিক্রয়কৌশল, বিনোদন, এবং বেঁচে থাকার কাব্য।
৪. সময়ের পরিবর্তন ও নিঃশব্দ বিলুপ্তি
আজ যখন শহর ডিজিটাল, যখন খাবার আসে অ্যাপের মাধ্যমে, বিক্রি হয় স্ক্রিনে—তখন সেই হকারদের কণ্ঠ হারিয়ে গেছে নগরের কংক্রিটে।
তাদের জায়গা নিয়েছে মেগাফোন, ব্যানার আর মোবাইল নোটিফিকেশন।
তবু যারা একবার শুনেছে প্ল্যাটফর্মের ভেতর থেকে ভেসে আসা “চা-সিগারেট!”—তারা জানে,
সেই ডাকগুলোই ছিল শহরের প্রথম বিজ্ঞাপন, এবং মানুষের শেষ মানবিকতা।
হকারদের সেই গান আজ কেবল ইতিহাস নয়—এটি আমাদের সামাজিক স্মৃতি।
তাদের কণ্ঠে ছিল এক ধরনের মানবিক সাহস, যা ক্ষুধাকেও গান বানাতে জানত।
আজকের প্রজন্ম যখন সাউন্ড সিস্টেমে গান খোঁজে, তখন শহরের পুরনো দেয়ালগুলোর ভেতর থেকে এক মৃদু প্রতিধ্বনি শোনা যায়—
“বাদাম দে, বাদাম দে…”
“চা গরম চা…”
সেই সুরেই এখনো বেঁচে আছে বাংলাদেশের শহুরে আত্মা—
যে আত্মা কখনো হারায় না, কেবল রূপ বদলায়।

আশি ও নব্বই দশকের বাংলাদেশ—যখন ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী শহরের রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড আর লঞ্চঘাট ছিল জনজীবনের প্রখর স্পন্দন।
সেই সময়ের শহর জেগে থাকত শুধু গাড়ির হর্ণে নয়, বরং হকারদের কণ্ঠে—যে কণ্ঠে ছিল ক্ষুধার ছন্দ, জীবিকার সংগীত, আর জীবনের অনন্ত ডাক।
১. শহরের পথের গায়করা
তারা কেউ বাদামওয়ালা, কেউ চানাচুরওয়ালা, কেউ গরম চা বিক্রেতা—কিন্তু প্রত্যেকে ছিল শহরের কবি, ছন্দের কারিগর।
রেলস্টেশনের ধোঁয়ার ভেতর ভেসে আসত—
“চা-সিগারেট, গরম চা, চানাচুর-বাদাম!”
“ঢাকা ট্রেন ছাড়ে, গরম খবর সঙ্গে আছে!”
বাসের জানালা দিয়ে ভেসে আসত তরুণ কণ্ঠের সুর—
“গরম চানাচুর, ঠান্ডা পানি—মন খারাপের ওষুধ আনি!”
আর সদরঘাটে দিনের শেষে, কণ্ঠ ক্লান্ত হলেও গলা ভরে উঠত—
“বাদাম দে, বাদাম দে, সোনার মেয়ে বাদাম দে!”
এগুলো শুধুই বিক্রির ডাক ছিল না; ছিল শহরের লোকসংগীত, যেখানে জীবন, দারিদ্র্য, প্রেম ও সংগ্রাম মিলেমিশে একাকার।
২. অদৃশ্য অর্থনীতি, দৃশ্যমান মানবতা
হকাররা ছিল শহরের informal economy-র প্রাণ।
তারা কোনো দপ্তরের অধীনে ছিল না, কিন্তু প্রতিদিন হাজার মানুষের সঙ্গে মিশে গড়ে তুলত এক নীরব বাণিজ্যজগৎ।
তাদের হাতে ছিল পণ্যের ওজন, কিন্তু কণ্ঠে ছিল জীবনের আশা।
প্রতিদিনের ছোট ছোট লেনদেন মিলে তৈরি করত বড় অর্থপ্রবাহ, যা শহরের অর্থনীতিকে অক্সিজেন জোগাত।
তবু তারা ছিল সমাজের উপেক্ষিত মানুষ—যাদের গান শহরের ইতিহাসে স্থান পায়নি, যাদের কণ্ঠ রেলস্টেশনের ধোঁয়ায় মিলিয়ে গেছে।
৩. হকারদের গান : জীবনের লোকগীতি
একজন কিশোর হকার গাইত—
“চা না খাইলে চোখে ঘুম নাই, চানাচুর না খাইলে মনই নাই!”
একজন বৃদ্ধ হকার গাইত—
“বউরে দে বাদাম, জামাইরে দে বাদাম!”
এসব গান কোনো রেকর্ডে ওঠেনি, কিন্তু উঠেছে মানুষের স্মৃতিতে।
এই ছন্দগুলোই ছিল শহুরে লোকগান—একসাথে বিক্রয়কৌশল, বিনোদন, এবং বেঁচে থাকার কাব্য।
৪. সময়ের পরিবর্তন ও নিঃশব্দ বিলুপ্তি
আজ যখন শহর ডিজিটাল, যখন খাবার আসে অ্যাপের মাধ্যমে, বিক্রি হয় স্ক্রিনে—তখন সেই হকারদের কণ্ঠ হারিয়ে গেছে নগরের কংক্রিটে।
তাদের জায়গা নিয়েছে মেগাফোন, ব্যানার আর মোবাইল নোটিফিকেশন।
তবু যারা একবার শুনেছে প্ল্যাটফর্মের ভেতর থেকে ভেসে আসা “চা-সিগারেট!”—তারা জানে,
সেই ডাকগুলোই ছিল শহরের প্রথম বিজ্ঞাপন, এবং মানুষের শেষ মানবিকতা।
হকারদের সেই গান আজ কেবল ইতিহাস নয়—এটি আমাদের সামাজিক স্মৃতি।
তাদের কণ্ঠে ছিল এক ধরনের মানবিক সাহস, যা ক্ষুধাকেও গান বানাতে জানত।
আজকের প্রজন্ম যখন সাউন্ড সিস্টেমে গান খোঁজে, তখন শহরের পুরনো দেয়ালগুলোর ভেতর থেকে এক মৃদু প্রতিধ্বনি শোনা যায়—
“বাদাম দে, বাদাম দে…”
“চা গরম চা…”
সেই সুরেই এখনো বেঁচে আছে বাংলাদেশের শহুরে আত্মা—
যে আত্মা কখনো হারায় না, কেবল রূপ বদলায়।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, সাধারণ ব্যবহারকারীরা কীভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারে আরও সচেতন হতে পারেন, অনলাইন প্রতারণা, ফিশিং ও ডেটা লিকের মতো ঝুঁকি থেকে কীভাবে নিজেদের রক্ষা করা যায়— সেসব বিষয় নিয়েও অনুষ্ঠানে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়।
৫ দিন আগে
তিন কিশোর গোয়েন্দাকে নিয়ে লেখা জনপ্রিয় সিরিজ 'তিন গোয়েন্দা'র স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১০ দিন আগে
শরতের শেষে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে, বাতাসে শুষ্কতা বাড়ছে। যা শীত আগমনের ইঙ্গিত দেয়। তবে এই মৌসুমি পরিবর্তনের সঙ্গে অনেকেই ঠান্ডা-কাশি, অ্যালার্জি, ত্বক শুষ্কতা ও শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যায় ভুগেন।
১১ দিন আগে