বিল্লাল বিন কাশেম
ছোট্ট একটা পাড়া, নাম বাবুপাড়া। শহরের গণ্ডির একটু বাইরে হলেও ধূলাবালিতে মাখামাখি এই এলাকায় জীবন বড় বাস্তব। কাঁচা রাস্তাঘেঁষা কিছু ঘরবাড়ির মধ্যে একটি ঘর—টিনের ছাউনি, বেড়া সিমেন্টের হলেও রং উঠে গেছে। এই ঘরেই থাকে রোকসানা বেগম আর তার ছেলে আরমান।
রোকসানা বেগম এই ঘরটা নিজের হাতে গড়ে তুলেছেন, নিছক ইট, বালি, রড নয়—ঘামে, চোখের জলে, আর অফুরন্ত ভালোবাসায়। স্বামী হারান হঠাৎ এক সড়ক দুর্ঘটনায়। তখন আরমানের বয়স মাত্র পাঁচ। তারও চোখে পানি আসত না, বোঝার বয়স ছিল না হয়তো। কিন্তু রোকসানা জানতেন, আরমানের মুখে হাসি রাখা এখন তার জীবনের একমাত্র ব্রত।
দিন শুরু হতো খুব ভোরে। পাশের বাজারে সবজি বিক্রি করতেন, দুপুরে গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন তিন বাড়িতে, সন্ধ্যায় টুকটাক সেলাইয়ের কাজ। তবু সবকিছুর মাঝে মুখে থাকত একরাশ হাসি।
কেউ জিজ্ঞেস করলে বলতেন,
— কষ্ট তো জীবনেরই একটা রং, আমি রংহীন হবো না।
আরমান বড় হতে থাকে। স্কুলে ভর্তি হতেই প্রথম বোঝে, জীবনটা এমন সহজ নয়। অন্য ছেলেরা যখন নতুন ব্যাগ, চকচকে বই নিয়ে আসে, সে পুরনো বইয়ে পড়ে। কিন্তু সে দিন গুনে পড়তো— মা প্রতিদিন কত ঘন্টা কাজ করে, কতটা হাঁটে, কখন খায়, কখন বিশ্রাম নেয় না।
একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে আরমান চোখে জল নিয়ে বলেছিল,
— মা, তুমি আর কষ্ট করো না। আমি বড় হয়ে অনেক টাকা কামাবো, তোমার জন্য বড় বাড়ি বানাবো।
মা শুধু হেসে বলেছিলেন,
— আমার জন্য টাকা নয়, তুই মানুষ হ, এটাই চাওয়া।
সময় গড়ায়। রোকসানা বেগম ছেলেকে পড়াতে গিয়ে নিজের শেষ সঞ্চয়ও খরচ করেন। নিজের ওষুধ কেনেন না, ছেলেকে টিউশন দেয়ার জন্য মাটি বিক্রি করেন। কপালে কুঁচকানো দাগ বাড়ে, কিন্তু মুখে হাসির রেখা একটুও কমে না।
আরমান কলেজে ওঠে, পড়াশোনার পাশাপাশি সন্ধ্যায় পড়ায় ছোট ছেলেমেয়েদের। মায়ের কাঁধে আর কাজের বোঝা রাখতে চায় না সে। একদিন রোকসানাকে অবাক করে দিয়ে বলে,
— মা, তুমি আর বাড়ির বাইরে কাজ করো না। এখন থেকে আমি চালিয়ে নেবো।
রোকসানা বেগম খানিকটা বিস্মিত হন, খানিকটা গর্বিত। কিন্তু বলেন না কিছু, শুধু মাথায় হাত বুলিয়ে দেন।
আরমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। বড় শহরে গিয়ে নতুন জীবন শুরু করে। রোকসানা তখনো সেই পুরনো বাড়িতেই থাকেন। চিঠিপত্রে আর ফোনে কথা হয়। মা প্রতিদিন রুটি বানিয়ে নিজে না খেয়ে রেখে দেন— আরমান এলে খাওয়াবেন বলে। সময়ের ব্যবধানে ছেলের কণ্ঠে শহরের ব্যস্ততা, লক্ষ্য, ভবিষ্যতের স্বপ্ন— সব শোনা যায়। কিন্তু মায়ের কণ্ঠে এখনো সেই শান্ত, অভিমানহীন সুর।
একদিন হঠাৎ মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতাল, ডাক্তার, টেস্ট— আরমান সব ফেলে গ্রামে আসে। দেখে মা যেন অর্ধেক মানুষ হয়ে গেছেন। ওষুধেও সাড়া নেই। একরাতে মায়ের পাশে বসে ফুঁপিয়ে কাঁদে সে।
রোকসানা বেগম চোখ খুলে বলে,
— আমি তো তোর মুখে হাসি দেখতে চেয়েছিলাম... তুই কাঁদিস ক্যান রে বাবা?
— মা, আমি তোমার কিছুই করতে পারিনি এখনো!
— করেছিস বাবা, অনেক করেছিস। আমার মুখের হাসি তো তুই-ই।
মা সেরে ওঠেন। এবার আরমান সিদ্ধান্ত নেয় বিদেশে উচ্চশিক্ষায় যাবে। মায়ের সম্মতি নিয়েই পাড়ি দেয়। সেখানে মাস্টার্স শেষে চাকরিও পায়। বছর দুয়েক পরে মাকে নতুন ফ্ল্যাট কিনে দেয়, পরিচারিকা, গার্ডেন, নিরাপত্তা— সব কিছুই।
কিন্তু মা বলেন,
— আমি এ বাড়ি ছাড়বো না। আমার গাছ, আমার উঠোন, তোর ছেলেবেলার স্মৃতি— এসব ফেলে যাওয়া যায়?
আরমান জেদ করে না। তবে প্রতি বছর একবার করে মা দিবসে ঠিক বাড়ি ফিরে আসে। মায়ের জন্য নতুন শাড়ি, পছন্দের মিষ্টি, আর কিছু না-কথা বলা ভালোবাসা নিয়ে।
মা দিবস, ২০২৫। ভোরবেলা রোকসানা বেগম উঠেই দেখে উঠোনে গোলাপ ফুল রাখা, আর পাশে বড় করে লেখা—
"মা, তুমিই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ।"
আরমান সামনে দাঁড়িয়ে, হাতে একজোড়া সোনার কানের দুল।
রোকসানা বেগম চোখ মুছতে মুছতে বলে,
— এইসব তো আমার জন্য না রে।
আরমান জড়িয়ে ধরে,
— তোমার মুখের হাসি আমি টাকায় কিনে দেব না মা। আমি শুধু চাই, তুমি হাসো।
সেদিন বিকেলে পুরো পাড়ায় দাওয়াত হয়। পোলাও, মাংস, পায়েস— মা নিজে রেঁধেছেন। সবাই বলছে—
— রোকসানা আপা, আজ আপনার মুখে যে হাসি দেখছি, অনেক দিন পর!
আরমান চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখে। এটাই তো সে চেয়েছিল—
মায়ের মুখে সত্যিকারের হাসি।
ছোট্ট একটা পাড়া, নাম বাবুপাড়া। শহরের গণ্ডির একটু বাইরে হলেও ধূলাবালিতে মাখামাখি এই এলাকায় জীবন বড় বাস্তব। কাঁচা রাস্তাঘেঁষা কিছু ঘরবাড়ির মধ্যে একটি ঘর—টিনের ছাউনি, বেড়া সিমেন্টের হলেও রং উঠে গেছে। এই ঘরেই থাকে রোকসানা বেগম আর তার ছেলে আরমান।
রোকসানা বেগম এই ঘরটা নিজের হাতে গড়ে তুলেছেন, নিছক ইট, বালি, রড নয়—ঘামে, চোখের জলে, আর অফুরন্ত ভালোবাসায়। স্বামী হারান হঠাৎ এক সড়ক দুর্ঘটনায়। তখন আরমানের বয়স মাত্র পাঁচ। তারও চোখে পানি আসত না, বোঝার বয়স ছিল না হয়তো। কিন্তু রোকসানা জানতেন, আরমানের মুখে হাসি রাখা এখন তার জীবনের একমাত্র ব্রত।
দিন শুরু হতো খুব ভোরে। পাশের বাজারে সবজি বিক্রি করতেন, দুপুরে গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন তিন বাড়িতে, সন্ধ্যায় টুকটাক সেলাইয়ের কাজ। তবু সবকিছুর মাঝে মুখে থাকত একরাশ হাসি।
কেউ জিজ্ঞেস করলে বলতেন,
— কষ্ট তো জীবনেরই একটা রং, আমি রংহীন হবো না।
আরমান বড় হতে থাকে। স্কুলে ভর্তি হতেই প্রথম বোঝে, জীবনটা এমন সহজ নয়। অন্য ছেলেরা যখন নতুন ব্যাগ, চকচকে বই নিয়ে আসে, সে পুরনো বইয়ে পড়ে। কিন্তু সে দিন গুনে পড়তো— মা প্রতিদিন কত ঘন্টা কাজ করে, কতটা হাঁটে, কখন খায়, কখন বিশ্রাম নেয় না।
একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে আরমান চোখে জল নিয়ে বলেছিল,
— মা, তুমি আর কষ্ট করো না। আমি বড় হয়ে অনেক টাকা কামাবো, তোমার জন্য বড় বাড়ি বানাবো।
মা শুধু হেসে বলেছিলেন,
— আমার জন্য টাকা নয়, তুই মানুষ হ, এটাই চাওয়া।
সময় গড়ায়। রোকসানা বেগম ছেলেকে পড়াতে গিয়ে নিজের শেষ সঞ্চয়ও খরচ করেন। নিজের ওষুধ কেনেন না, ছেলেকে টিউশন দেয়ার জন্য মাটি বিক্রি করেন। কপালে কুঁচকানো দাগ বাড়ে, কিন্তু মুখে হাসির রেখা একটুও কমে না।
আরমান কলেজে ওঠে, পড়াশোনার পাশাপাশি সন্ধ্যায় পড়ায় ছোট ছেলেমেয়েদের। মায়ের কাঁধে আর কাজের বোঝা রাখতে চায় না সে। একদিন রোকসানাকে অবাক করে দিয়ে বলে,
— মা, তুমি আর বাড়ির বাইরে কাজ করো না। এখন থেকে আমি চালিয়ে নেবো।
রোকসানা বেগম খানিকটা বিস্মিত হন, খানিকটা গর্বিত। কিন্তু বলেন না কিছু, শুধু মাথায় হাত বুলিয়ে দেন।
আরমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। বড় শহরে গিয়ে নতুন জীবন শুরু করে। রোকসানা তখনো সেই পুরনো বাড়িতেই থাকেন। চিঠিপত্রে আর ফোনে কথা হয়। মা প্রতিদিন রুটি বানিয়ে নিজে না খেয়ে রেখে দেন— আরমান এলে খাওয়াবেন বলে। সময়ের ব্যবধানে ছেলের কণ্ঠে শহরের ব্যস্ততা, লক্ষ্য, ভবিষ্যতের স্বপ্ন— সব শোনা যায়। কিন্তু মায়ের কণ্ঠে এখনো সেই শান্ত, অভিমানহীন সুর।
একদিন হঠাৎ মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতাল, ডাক্তার, টেস্ট— আরমান সব ফেলে গ্রামে আসে। দেখে মা যেন অর্ধেক মানুষ হয়ে গেছেন। ওষুধেও সাড়া নেই। একরাতে মায়ের পাশে বসে ফুঁপিয়ে কাঁদে সে।
রোকসানা বেগম চোখ খুলে বলে,
— আমি তো তোর মুখে হাসি দেখতে চেয়েছিলাম... তুই কাঁদিস ক্যান রে বাবা?
— মা, আমি তোমার কিছুই করতে পারিনি এখনো!
— করেছিস বাবা, অনেক করেছিস। আমার মুখের হাসি তো তুই-ই।
মা সেরে ওঠেন। এবার আরমান সিদ্ধান্ত নেয় বিদেশে উচ্চশিক্ষায় যাবে। মায়ের সম্মতি নিয়েই পাড়ি দেয়। সেখানে মাস্টার্স শেষে চাকরিও পায়। বছর দুয়েক পরে মাকে নতুন ফ্ল্যাট কিনে দেয়, পরিচারিকা, গার্ডেন, নিরাপত্তা— সব কিছুই।
কিন্তু মা বলেন,
— আমি এ বাড়ি ছাড়বো না। আমার গাছ, আমার উঠোন, তোর ছেলেবেলার স্মৃতি— এসব ফেলে যাওয়া যায়?
আরমান জেদ করে না। তবে প্রতি বছর একবার করে মা দিবসে ঠিক বাড়ি ফিরে আসে। মায়ের জন্য নতুন শাড়ি, পছন্দের মিষ্টি, আর কিছু না-কথা বলা ভালোবাসা নিয়ে।
মা দিবস, ২০২৫। ভোরবেলা রোকসানা বেগম উঠেই দেখে উঠোনে গোলাপ ফুল রাখা, আর পাশে বড় করে লেখা—
"মা, তুমিই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ।"
আরমান সামনে দাঁড়িয়ে, হাতে একজোড়া সোনার কানের দুল।
রোকসানা বেগম চোখ মুছতে মুছতে বলে,
— এইসব তো আমার জন্য না রে।
আরমান জড়িয়ে ধরে,
— তোমার মুখের হাসি আমি টাকায় কিনে দেব না মা। আমি শুধু চাই, তুমি হাসো।
সেদিন বিকেলে পুরো পাড়ায় দাওয়াত হয়। পোলাও, মাংস, পায়েস— মা নিজে রেঁধেছেন। সবাই বলছে—
— রোকসানা আপা, আজ আপনার মুখে যে হাসি দেখছি, অনেক দিন পর!
আরমান চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখে। এটাই তো সে চেয়েছিল—
মায়ের মুখে সত্যিকারের হাসি।
কবি রেজাউদ্দিন স্টালিনকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। রবিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
১৫ দিন আগেঅনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লেখক ও গবেষক রেহনুমা আহমেদ, সংগীতশিল্পী কফিল আহমেদ, বিশ্বসূফি সংস্থার সদস্য হাসান শাহ সুরেশ্বরী দীপু নূরী, সায়ান, অরূপ রাহী, কাজী কৃষ্ণকলি ইসলাম, সহজিয়া ব্যান্ডের রাজুসহ বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী, সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মীরা। অনুষ্ঠানের শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সমগীতের সভাপ্রধ
১৬ দিন আগেপ্রভাবশালী ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান তাদের বৃহস্পতিবার প্রথম পাতা সাজিয়েছে ট্রাম্পের সফর নিয়েই। সেখানে মূল সংবাদের পাশেই স্থান পেয়েছে ব্রিটিশ ‘পোয়েট লরিয়েট’ তথা রাষ্ট্রীয়ভাবে নিযুক্ত কবি ক্যারল অ্যান ডাফির কবিতা STATE/BANQUET। বিশ্বব্যবস্থা যে রাজনৈতিক বাস্তবতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তারই এক মূর্ত
১৭ দিন আগেকানাডা প্রবাসী হলেও দেশের টানে এই ফিল্ম নির্মাণ করেছেন শিল্পী লুমিন। তিনি বলেন, ‘আমার প্রিয় বন্ধু ও মিডিয়ার প্রিয় মানুষ ডা. আশীষ না থাকলে এটি সম্ভব হতো না। আগত সব অতিথি ও গণমাধ্যমকর্মীদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই।’
২৪ দিন আগে