অরুণ কর্মকার
বছরখানেক ধরে প্রায় প্রতিদিনই এমন সব ঘটনা ঘটে চলেছে, যা দেশের রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে এবং দেশকে এক জটিল সমীকরণের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এ অবস্থা অবসানের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার এবং ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা তেমন কোনো সুফল দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। বরং দিনদিন পরিস্থিতি জটিলতর হচ্ছে। ফলে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, কোনো কূটকৌশলের অংশ হিসেবে পরিস্থিতিকে এভাবে অস্থির করে তোলা হচ্ছে কি না।
এ অবস্থার মধ্যেই গত ৯ জুলাই পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় সংঘটিত ভাঙারি মালামালের ব্যবসায়ী সোহাগের নৃশংস হত্যাকাণ্ড সারা দেশের মানুষের মধ্যে ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি সম্পর্কে দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের পর মানুষের মধ্যে সঙ্গত কারণেই অনেক প্রশ্নও তৈরি হয়েছে। যেমন—
১. মিটফোর্ডের রাস্তায় সোহাগকে হত্যা করার ঘটনাটি ঘটে ৯ জুলাই। ওই ঘটনার ভিডিও প্রচার কেন ১১ জুলাই হলো? কোনো পথচারী সাধারণ প্রত্যক্ষদর্শী ভিডিওটি ধারণ করলে সঙ্গে সঙ্গেই তা প্রচার করে দেওয়ার কথা, যা সাধারণত যেকোনো খবরাখবর সংক্রান্ত ঘটনায় করতে দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে তা হলো না কেন? তাহলে কি এ ঘটনার ভিডিও প্রকাশ এবং ভাইরাল করাটা পরিকল্পিত? ভিডিওটি প্রথম কোন আইডি থেকে আপলোড করা হয়েছে তা খুঁজে দেখা হলে এই প্রশ্নের একটা উত্তর কি মিলতে পারে না?
২. ভিডিওতে যাদের হত্যাকারী হিসেবে দেখা গেছে তাদের কেন গ্রেপ্তার করা হয়নি? নিহতের পরিবার এজাহারে যাদের নামে অভিযোগ করেছেন, তাদের মধ্যে তিনজনের নাম পরবর্তী সময়ে বাদ দিয়ে অন্য তিনজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলেও খবর বেরিয়েছে। কে বা কারা এসব করল এবং কেনই বা করল?
৩. সোহাগ হত্যার ঘটনাস্থল থেকে স্থানীয় থানা, পুলিশ ফাঁড়ি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর নিয়মিত টহলদলের অবস্থান খুব বেশি দূরে হওয়ার কথা নয়। তা সত্ত্বেও ঘটনার সময় এদের কেউই সেখানে উপস্থিত হতে পারল না কেন? সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়, মব সন্ত্রাসের কোনো ঘটনাতেই তারা ঘটনা ঘটার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এটা কি তাদের কৌশলগত অবস্থান? নাকি জুলাই অভ্যুত্থানের পর এখনো তারা সেই আত্মবিশ্বাস ফিরে পায়নি? না পেলে সেটা তারা কবে পাবে? সে জন্য সরকারের বাস্তবসম্মত কোনো পদক্ষেপ কি দেখা যায়?
৪. একাধিক টিভি চ্যানেলের স্ক্রলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের একটি বক্তব্য গত শনিবার ঘুরে বেড়িয়েছে। তাতে বলা হয়, ‘নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হবে।’ সরল বাংলায় এ কথার অর্থ— আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, কিন্তু আনা হচ্ছে না। নির্বাচনের আগে তা আনা হবে। আমরা জানি না প্রেস উইং থেকে প্রকৃতপক্ষে কী বলা হয়েছে। যদি স্ক্রলের ভাষা ঠিক হয় তাহলে বিষয়টি এমনই দাঁড়ায় না কি? আর বাস্তব পরিস্থিতিও এই রকমই নয় কি?
৫. সোহাগ হত্যার ঘটনার পর অন্তর্বর্তী সরকারের তরফ থেকে যেসব বক্তব্য জনসমক্ষে এসেছে তাতে বোঝা যায় যে সরকার এ ধরনের ঘটনায় অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনবে। মামলা হবে, গ্রেপ্তার হবে। তবে এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে কিংবা নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তেমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ সরকারের প্রাধিকারের মধ্যে নেই। বাস্তবেও এ পরিস্থিতিই দেখা যায়। কিন্তু সরকারের এই অবস্থান কি গ্রহণযোগ্য হতে পারে? সরকারের এই অবস্থানের কারণ কি আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে তার অক্ষমতা, নাকি ভিন্নতর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির কৌশল?
৬. রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি ধারণা বদ্ধমূল, জুলাই অভ্যুত্থান যে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার সামনে নিয়ে এসেছে, তার অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগের বিদায়ের পর বিএনপিকে মাইনাস করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। সে কারণে সুপরিকল্পিতভাবে (মেটিকুলাস প্ল্যান) বিএনপিকে অজনপ্রিয় বা জনবিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে অপরাধমূলক তৎপরতা চালাতে দেওয়া হতে পারে কি? সোহাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যে মিছিল-সমাবেশ করা হয়েছে তাতে এ ধরনের ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সরকারের কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো দায় কিংবা ব্যর্থতা আছে— তেমন কোনো সমালোচনা শোনা যায়নি। বরং এ ঘটনাকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ব্যর্থতা হিসেবে উল্লেখ করার পর মেটিকুলাস প্ল্যানের প্রশ্ন ওঠা কি অস্বাভাবিক?
৭. যদি বিএনপিকে জনবিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যেই এরকম ফাঁদ পাতা হয়ে থাকে, বিএনপি কি তা বুঝতে পারছে না? যদি বুঝে থাকে তাহলে এ থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় কি কিছু ভাবছে? প্রতিদিনই তো দেশের কোথাও না কোথাও বিএনপি এবং তার বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘয়িত নানা অপরাধের খবরাখবর প্রকাশিত হচ্ছে! শুধু ঘটনা ঘটার পর দল থেকে বহিষ্কার করে বিএনপি কি পারবে তার ভাবমূর্তি রক্ষা করতে? সাবেক রাষ্ট্রপতি ও মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমানের ছবি পায়ে দলে অবমাননার ঘটনা কী ইঙ্গিত দেয়?
৮. এ বিষয়ে বিএনপির ভাবনা আমরা জানি না। তবে সরকারের ভূমিকা নিয়ে তাদের মধ্যেও গুরুতর প্রশ্ন রয়েছে। গত শনিবার রাজধানীর হোটেল লেকশোরে গণঅভ্যুত্থানের শহিদ ও আহতদের পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘সরকারকে আমরা বারবার বলেছি, অন্যায়কারী যে-ই হোক, আমরা প্রশ্রয় দেবো না। তাদের (সরকার) দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের জানমালের হেফাজত করা। সরকারের কাছে আমাদের প্রশ্ন, তারা কেন প্রশ্রয় দিচ্ছে।’
সোহাগ হত্যার ঘটনা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা আশ্চর্যের সঙ্গে লক্ষ করেছি, যাকে আমরা স্ক্রিনে দেখেছি, যে হত্যা করছে, তাকে কেন সরকার এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করেনি। আমরা কি তবে ধরে নেব, যারা বিভিন্নভাবে মব সৃষ্টি করে একটি পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে, সেখানে সরকারের কোনো প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় আছে, প্রশাসনের কোনো প্রশ্রয় আছে?’
৯. এ বছরের জানুয়ারি থেকে মে— এই পাঁচ মাসে রাজধানী ঢাকায় খুন, অপহরণ, ছিনতাই, ডাকাতি ও চুরির মতো অপরাধ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। গত বছরের (২০২৪) একই সময়ের তুলনায় মোট অপরাধ বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে হত্যাকাণ্ড, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১৮২ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি।
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাওয়া এ পরিসংখ্যান একটি দৈনিক পত্রিকায় রোববার প্রকাশিত হয়েছে। ওই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম পাঁচ মাসে ঢাকায় খুনসহ কোনো কোনো অপরাধ তিন গুণ পর্যন্ত বেড়েছে। সহিংস ও প্রাণঘাতী অপরাধ যেমন— হত্যা, অপহরণ, ছিনতাই ও ডাকাতির হার বেড়েছে গড়পড়তা ১৭৮ শতাংশ। বিষয়টি জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এ পরিস্থিতি জনপরিসরে দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকারের কী ভূমিকার বহির্প্রকাশ ঘটায়?
১০. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের একটি পোষ্ট ঘিরে বেশ আলোচনা হচ্ছে। তিনি লিখেছেন, ‘প্রস্তর যুগে সবাইকে স্বাগতম। ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেবেন না। সবাইকে ধন্যবাদ।’
প্রস্তর যুগ বলতে তিনি স্পষ্টতই সোহাগের হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পাথরখণ্ডের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। প্রশ্ন হলো— জুলাই অভ্যুত্থানের ১১ মাস পরও এই যুগের দেখা পাওয়ার ক্ষেত্রে আপনাদের, অন্তর্বর্তী সরকারের কি কোনোই ভূমিকা নেই? বেশির ভাগ মব সন্ত্রাসের ঘটনাতেই তো সরকার নিশ্চুপ থাকে। তাকে কি প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় প্রদান ভাবাটা অন্যায় হবে?
আর বেশি প্রশ্ন করে কী হবে! এর সঠিক কোনো জবাব দেশের মানুষ কোনোদিনই পাবে না। তাই এবার একটি মন্তব্য— উত্থাপিত এ প্রশ্নগুলোর ফয়সালা অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপিকে করতে হবে। অন্যথায় উদ্ভূত পরিস্থিতি দেশকে কোন রসাতলে নিয়ে যাবে, বলা যায় না।
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক
বছরখানেক ধরে প্রায় প্রতিদিনই এমন সব ঘটনা ঘটে চলেছে, যা দেশের রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে এবং দেশকে এক জটিল সমীকরণের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এ অবস্থা অবসানের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার এবং ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা তেমন কোনো সুফল দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। বরং দিনদিন পরিস্থিতি জটিলতর হচ্ছে। ফলে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, কোনো কূটকৌশলের অংশ হিসেবে পরিস্থিতিকে এভাবে অস্থির করে তোলা হচ্ছে কি না।
এ অবস্থার মধ্যেই গত ৯ জুলাই পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় সংঘটিত ভাঙারি মালামালের ব্যবসায়ী সোহাগের নৃশংস হত্যাকাণ্ড সারা দেশের মানুষের মধ্যে ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি সম্পর্কে দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের পর মানুষের মধ্যে সঙ্গত কারণেই অনেক প্রশ্নও তৈরি হয়েছে। যেমন—
১. মিটফোর্ডের রাস্তায় সোহাগকে হত্যা করার ঘটনাটি ঘটে ৯ জুলাই। ওই ঘটনার ভিডিও প্রচার কেন ১১ জুলাই হলো? কোনো পথচারী সাধারণ প্রত্যক্ষদর্শী ভিডিওটি ধারণ করলে সঙ্গে সঙ্গেই তা প্রচার করে দেওয়ার কথা, যা সাধারণত যেকোনো খবরাখবর সংক্রান্ত ঘটনায় করতে দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে তা হলো না কেন? তাহলে কি এ ঘটনার ভিডিও প্রকাশ এবং ভাইরাল করাটা পরিকল্পিত? ভিডিওটি প্রথম কোন আইডি থেকে আপলোড করা হয়েছে তা খুঁজে দেখা হলে এই প্রশ্নের একটা উত্তর কি মিলতে পারে না?
২. ভিডিওতে যাদের হত্যাকারী হিসেবে দেখা গেছে তাদের কেন গ্রেপ্তার করা হয়নি? নিহতের পরিবার এজাহারে যাদের নামে অভিযোগ করেছেন, তাদের মধ্যে তিনজনের নাম পরবর্তী সময়ে বাদ দিয়ে অন্য তিনজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলেও খবর বেরিয়েছে। কে বা কারা এসব করল এবং কেনই বা করল?
৩. সোহাগ হত্যার ঘটনাস্থল থেকে স্থানীয় থানা, পুলিশ ফাঁড়ি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর নিয়মিত টহলদলের অবস্থান খুব বেশি দূরে হওয়ার কথা নয়। তা সত্ত্বেও ঘটনার সময় এদের কেউই সেখানে উপস্থিত হতে পারল না কেন? সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়, মব সন্ত্রাসের কোনো ঘটনাতেই তারা ঘটনা ঘটার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এটা কি তাদের কৌশলগত অবস্থান? নাকি জুলাই অভ্যুত্থানের পর এখনো তারা সেই আত্মবিশ্বাস ফিরে পায়নি? না পেলে সেটা তারা কবে পাবে? সে জন্য সরকারের বাস্তবসম্মত কোনো পদক্ষেপ কি দেখা যায়?
৪. একাধিক টিভি চ্যানেলের স্ক্রলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের একটি বক্তব্য গত শনিবার ঘুরে বেড়িয়েছে। তাতে বলা হয়, ‘নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হবে।’ সরল বাংলায় এ কথার অর্থ— আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, কিন্তু আনা হচ্ছে না। নির্বাচনের আগে তা আনা হবে। আমরা জানি না প্রেস উইং থেকে প্রকৃতপক্ষে কী বলা হয়েছে। যদি স্ক্রলের ভাষা ঠিক হয় তাহলে বিষয়টি এমনই দাঁড়ায় না কি? আর বাস্তব পরিস্থিতিও এই রকমই নয় কি?
৫. সোহাগ হত্যার ঘটনার পর অন্তর্বর্তী সরকারের তরফ থেকে যেসব বক্তব্য জনসমক্ষে এসেছে তাতে বোঝা যায় যে সরকার এ ধরনের ঘটনায় অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনবে। মামলা হবে, গ্রেপ্তার হবে। তবে এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে কিংবা নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তেমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ সরকারের প্রাধিকারের মধ্যে নেই। বাস্তবেও এ পরিস্থিতিই দেখা যায়। কিন্তু সরকারের এই অবস্থান কি গ্রহণযোগ্য হতে পারে? সরকারের এই অবস্থানের কারণ কি আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে তার অক্ষমতা, নাকি ভিন্নতর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির কৌশল?
৬. রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি ধারণা বদ্ধমূল, জুলাই অভ্যুত্থান যে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার সামনে নিয়ে এসেছে, তার অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগের বিদায়ের পর বিএনপিকে মাইনাস করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। সে কারণে সুপরিকল্পিতভাবে (মেটিকুলাস প্ল্যান) বিএনপিকে অজনপ্রিয় বা জনবিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে অপরাধমূলক তৎপরতা চালাতে দেওয়া হতে পারে কি? সোহাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যে মিছিল-সমাবেশ করা হয়েছে তাতে এ ধরনের ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সরকারের কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো দায় কিংবা ব্যর্থতা আছে— তেমন কোনো সমালোচনা শোনা যায়নি। বরং এ ঘটনাকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ব্যর্থতা হিসেবে উল্লেখ করার পর মেটিকুলাস প্ল্যানের প্রশ্ন ওঠা কি অস্বাভাবিক?
৭. যদি বিএনপিকে জনবিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যেই এরকম ফাঁদ পাতা হয়ে থাকে, বিএনপি কি তা বুঝতে পারছে না? যদি বুঝে থাকে তাহলে এ থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় কি কিছু ভাবছে? প্রতিদিনই তো দেশের কোথাও না কোথাও বিএনপি এবং তার বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘয়িত নানা অপরাধের খবরাখবর প্রকাশিত হচ্ছে! শুধু ঘটনা ঘটার পর দল থেকে বহিষ্কার করে বিএনপি কি পারবে তার ভাবমূর্তি রক্ষা করতে? সাবেক রাষ্ট্রপতি ও মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমানের ছবি পায়ে দলে অবমাননার ঘটনা কী ইঙ্গিত দেয়?
৮. এ বিষয়ে বিএনপির ভাবনা আমরা জানি না। তবে সরকারের ভূমিকা নিয়ে তাদের মধ্যেও গুরুতর প্রশ্ন রয়েছে। গত শনিবার রাজধানীর হোটেল লেকশোরে গণঅভ্যুত্থানের শহিদ ও আহতদের পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘সরকারকে আমরা বারবার বলেছি, অন্যায়কারী যে-ই হোক, আমরা প্রশ্রয় দেবো না। তাদের (সরকার) দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের জানমালের হেফাজত করা। সরকারের কাছে আমাদের প্রশ্ন, তারা কেন প্রশ্রয় দিচ্ছে।’
সোহাগ হত্যার ঘটনা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা আশ্চর্যের সঙ্গে লক্ষ করেছি, যাকে আমরা স্ক্রিনে দেখেছি, যে হত্যা করছে, তাকে কেন সরকার এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করেনি। আমরা কি তবে ধরে নেব, যারা বিভিন্নভাবে মব সৃষ্টি করে একটি পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে, সেখানে সরকারের কোনো প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় আছে, প্রশাসনের কোনো প্রশ্রয় আছে?’
৯. এ বছরের জানুয়ারি থেকে মে— এই পাঁচ মাসে রাজধানী ঢাকায় খুন, অপহরণ, ছিনতাই, ডাকাতি ও চুরির মতো অপরাধ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। গত বছরের (২০২৪) একই সময়ের তুলনায় মোট অপরাধ বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে হত্যাকাণ্ড, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১৮২ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি।
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাওয়া এ পরিসংখ্যান একটি দৈনিক পত্রিকায় রোববার প্রকাশিত হয়েছে। ওই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম পাঁচ মাসে ঢাকায় খুনসহ কোনো কোনো অপরাধ তিন গুণ পর্যন্ত বেড়েছে। সহিংস ও প্রাণঘাতী অপরাধ যেমন— হত্যা, অপহরণ, ছিনতাই ও ডাকাতির হার বেড়েছে গড়পড়তা ১৭৮ শতাংশ। বিষয়টি জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এ পরিস্থিতি জনপরিসরে দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকারের কী ভূমিকার বহির্প্রকাশ ঘটায়?
১০. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের একটি পোষ্ট ঘিরে বেশ আলোচনা হচ্ছে। তিনি লিখেছেন, ‘প্রস্তর যুগে সবাইকে স্বাগতম। ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেবেন না। সবাইকে ধন্যবাদ।’
প্রস্তর যুগ বলতে তিনি স্পষ্টতই সোহাগের হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পাথরখণ্ডের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। প্রশ্ন হলো— জুলাই অভ্যুত্থানের ১১ মাস পরও এই যুগের দেখা পাওয়ার ক্ষেত্রে আপনাদের, অন্তর্বর্তী সরকারের কি কোনোই ভূমিকা নেই? বেশির ভাগ মব সন্ত্রাসের ঘটনাতেই তো সরকার নিশ্চুপ থাকে। তাকে কি প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় প্রদান ভাবাটা অন্যায় হবে?
আর বেশি প্রশ্ন করে কী হবে! এর সঠিক কোনো জবাব দেশের মানুষ কোনোদিনই পাবে না। তাই এবার একটি মন্তব্য— উত্থাপিত এ প্রশ্নগুলোর ফয়সালা অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপিকে করতে হবে। অন্যথায় উদ্ভূত পরিস্থিতি দেশকে কোন রসাতলে নিয়ে যাবে, বলা যায় না।
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, যেসব কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পাঁচটি ব্যাংককে একীভূত করার পরিকল্পনা নিয়েছিল, এক্সিম ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা, পরিচালন কাঠামো এবং গ্রাহক আস্থা সেই প্রেক্ষাপটে ব্যতিক্রম। ফলস্বরূপ, এক্সিম ব্যাংককে এ প্রক্রিয়া থেকে বাদ দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
৬ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ডেমোক্র্যাটিক ও রিপাবলিকান— এই দুই দলের বৃত্তে আবর্তিত হচ্ছে। তবে মাস্ক বলছেন, বাস্তবে এই দুই দল একে অন্যের পরিপূরক হয়ে উঠেছে। ‘তারা ভিন্ন পোশাক পরে একসঙ্গে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করছে— এটাই ইউনিপার্টি,’— বলেন মাস্ক।
৭ দিন আগেবাংলাদেশের গণমাধ্যম অসুস্থ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পাঠক-দর্শক আকৃষ্ট করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সাংবাদিকতার নীতি পরিপন্থি কাজ করছে।
৯ দিন আগেবিশ্ব মুসলিম উম্মাহর জন্য এই ১০ দিন শুধু আবেগ নয়, আত্মশুদ্ধি ও আত্মজিজ্ঞাসারও উপলক্ষ্য। ইসলামি ইতিহাসে বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যেমন— আশুরা দিবস, তেমনিভাবে ইমাম হোসাইন (রা.)-এর শাহাদাত এ মাসকে দিয়েছে অমরতা।
১৩ দিন আগে