বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল যান চলাচল প্রটোকলের খসড়া চূড়ান্ত

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৯: ০৮

বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের (বিবিআইএন) মধ্যে যাত্রী, ব্যক্তিগত এবং পণ্যবাহী যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে এক দশক আগে স্বাক্ষরিত মোটরযান চুক্তির (এমভিএ) প্রটোকলের চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত হয়েছে।

রোববার (১৩ এপ্রিল) নেপালি সংবাদমাধ্যম দ্য কাঠমান্ডু পোস্টের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় এ ধরনের প্রটোকল এটিই প্রথম। মোটর ভেহিকেল অ্যাগ্রিমেন্ট ছাড়াও বিবিআইএন (বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল) দেশগুলো আঞ্চলিক জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য আন্তসংযুক্ত গ্রিডের পরিকল্পনাও করছে।

বিবিআইএন-এমভিএর লক্ষ্য হলো যাত্রী, ব্যক্তিগত ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলের মাধ্যমে আন্ত-আঞ্চলিক বাণিজ্য ও যোগাযোগ জোরদার করার ক্ষেত্রে বাধা দূর করা।

বিবিআইএন দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা কাঠামো। তবে এই কাঠামো এখনো সুপ্ত। ভারত-পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের বৈরিতার কারণে সার্ক এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কোনো শীর্ষ সম্মেলন করতে পারেনি।

কিছু পর্যবেক্ষক বলছেন, সম্প্রতি ভারতের বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট-সুবিধা বাতিল করার সিদ্ধান্ত এই চার দেশের মধ্যে এমভিএ বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী, ভুটানের তথ্য ও যোগাযোগমন্ত্রী, ভারতের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক এবং নৌপরিবহনমন্ত্রী এবং নেপালের ভৌত অবকাঠামো ও পরিবহনমন্ত্রী ২০১৫ সালের ১৫ জুন ভুটানের থিম্পুতে বিবিআইএন মোটর ভেহিকেল অ্যাগ্রিমেন্টে স্বাক্ষর করেন।

চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এটি কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় অভ্যন্তরীণ আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে। এই চুক্তি দেশগুলোর ভূখণ্ডের মধ্যে দ্রুত ও সুলভে পণ্য ও মানুষ যাতায়াতে সহায়তা করবে। প্রটোকলটির আওতায় একটি পাইলট প্রকল্প চালুর কথাও বলা হয়েছে।

প্রটোকল অনুযায়ী, ভুটান ছাড়া অন্য তিন দেশ সব ধরনের যানবাহন চলাচলের অনুমতি দেবে। পণ্যবাহী যানবাহনের চলাচল অনুমোদনের অধীনে হালকা বাণিজ্যিক যানবাহন (৭ হাজার ৫০০ কেজি পর্যন্ত), মাঝারি বাণিজ্যিক যানবাহন (৭ হাজার ৫০০ থেকে ১২ হাজার কেজি) এবং ভারী বাণিজ্যিক যানবাহন (১২ হাজার কেজির বেশি)—এই তিন শ্রেণি চালু করা হবে।

প্রটোকল চূড়ান্ত করার জন্য ২০১৫ ও ২০১৬ সালে পরীক্ষামূলক চলাচল (ট্রায়াল রান) অনুষ্ঠিত হয়।

এতে যাত্রী, ব্যক্তিগত ও পণ্যবাহী যানবাহনের মসৃণ চলাচল সম্ভব বলেই প্রতীয়মান হয়।

২০১৫ সালের নভেম্বরে কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা রুটে (৬০০ কিলোমিটার) পণ্যবাহী যানবাহনের পরীক্ষামূলক চলাচল; ২০১৬ সালের ২৯ আগস্ট থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে (১ হাজার ৭৮০ কিলোমিটার) এবং ২০১৮ সালের ২৩ এপ্রিল ঢাকা থেকে ভারত হয়ে কাঠমান্ডু পর্যন্ত যাত্রীবাহী বাস পরীক্ষামূলক চলাচল করে।

এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তা করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। সংস্থাটির মতে, প্রস্তাবিত পরীক্ষামূলক রুটের মধ্যে রয়েছে নেপাল ও ভারতের মধ্যে কাঠমান্ডু-ভৈরব-সুনৌলি-লক্ষ্ণৌ-কানপুর-নয়াদিল্লি এবং কাঠমান্ডু-বীরগঞ্জ-রাক্সৌল-কলকাতা।

নেপাল, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে পরীক্ষামূলক রুট হিসেবে কাঠমান্ডু-কাঁকরভিটা-পানিতানকি-শিলিগুঁড়ি-ফুলবাড়ী-বাংলাবান্ধা-মোংলা/চট্টগ্রাম রুট প্রস্তাব করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কর্মকর্তারা ২০২২ সালের মার্চ মাসে নয়াদিল্লিতে বৈঠক করেন এবং মোটর ভেহিকেল অ্যাগ্রিমেন্ট বাস্তবায়নের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে সম্মত হন। সেই সঙ্গে তাঁরা আরও পরীক্ষামূলক চলাচল আয়োজনের পরামর্শ দেন। পাশাপাশি এডিবির কাছে সেই পরীক্ষামূলক চলাচলে সহায়তার অনুরোধ জানান। পরে এডিবি এমভিএর ধারণাপত্রের ভিত্তিতে একটি পদ্ধতি প্রস্তাব করে।

বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের মধ্যে অথবা কেবল দুটি দেশের মধ্যে পরীক্ষামূলক চলাচল অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভুটান বিবিআইএন-এমভিএতে স্বাক্ষর করেছে এবং প্রটোকলে সম্মতিও জানিয়েছে, কিন্তু তারা পরীক্ষামূলক চলাচলে অংশ নেয়নি।

এডিবির তৈরি করা এশিয়ান হাইওয়ে করিডর বিবিআইএন-এমভিএ বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

এডিবি রুট সমন্বয় (রুটভিত্তিক উৎস-গন্তব্য বিশ্লেষণ) ; রুট চিহ্নিতকরণ; ফি নির্ধারণ; আন্তসীমান্ত যানবাহন বিমা এবং নেপালের জন্য বিবিআইএন প্রভাব সমীক্ষাসহ অন্যান্য বিষয়ে গবেষণা সম্পন্ন করেছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নেপাল সরাসরি চারটি ভারতীয় বন্দর—কলকাতা, হলদিয়া, বিশাখাপত্তম ও মুন্দ্রার সঙ্গে যুক্ত হবে।

এডিবি চ্যালেঞ্জ হিসেবে সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলোর মধ্যে দুর্বল সমন্বয়ের কথাও উল্লেখ করেছে।

তবে অংশীজনেরা চুক্তি বাস্তবায়নের পর নেপালে ভারত ও বাংলাদেশের যানবাহন প্রবেশের ব্যাপক বৃদ্ধি আশা করছেন।

প্রটোকলটিতে বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া; চুক্তির শর্ত লঙ্ঘনের তদন্ত ও প্রতিরোধের জন্য সহযোগিতাসহ অন্যান্য বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রটোকলের খসড়া অনুসারে, স্বাক্ষরকারীরা চুক্তি স্বাক্ষরের দুই বছরের মধ্যে চুক্তির অধীনে চলাচলকারী যানবাহনগুলোর কার্যকর ট্র্যাকিংয়ের জন্য উপযুক্ত সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারসহ একটি ইলেকট্রনিক প্ল্যাটফর্ম স্থাপন করবে। দেশগুলো যানবাহন ও পণ্য চলাচল পর্যবেক্ষণ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতে জন্য একটি সাধারণ (যৌথ) ইলেকট্রনিক প্ল্যাটফর্ম স্থাপন করবে।

যানবাহনের ক্রুদের (চালক, সহকারী ইত্যাদি) অবশ্যই স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর নাগরিক হতে হবে। তাঁরা বৈধ পাসপোর্ট বা অন্যান্য নথির ভিত্তিতে ভ্রমণ করবেন। আন্তসীমান্ত ভ্রমণের জন্য ভিসার প্রয়োজন হলে, চালক ও সহকারীদের ভিসার আবেদনের সঙ্গে চুক্তির সংযুক্তি-৩ অনুযায়ী ইস্যু করা তাঁর ক্রু আইডেনটিটি কার্ডের কপি জমা দিতে হবে। আবেদনকারীকে তাঁর ড্রাইভিং লাইসেন্সের একটি কপিও জমা দিতে হবে। ক্রু আইডেনটিটি কার্ড কাগজের ফরমে বা স্মার্ট কার্ড হিসেবে ইস্যু করা হবে।

প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা হিসেবে, চুক্তির বাস্তবায়ন, সমন্বয় ও পর্যবেক্ষণের জন্য এবং সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত সচিবের সভাপতিত্বে একটি স্থায়ী জাতীয় স্থল পরিবহন সুবিধা কমিটি বা অনুরূপ সংস্থা গঠন করা হবে।

চুক্তির বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা এবং বিরোধের বন্ধুত্বপূর্ণ নিষ্পত্তির জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করার জন্য একটি যৌথ স্থল পরিবহন সুবিধা কমিটি গঠন করা হবে। অনুরূপভাবে, প্রটোকল অনুযায়ী মোটর যানবাহনের প্রবেশ ও প্রস্থান নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি কাস্টমস উপ-গ্রুপ গঠন করা হবে। প্রটোকলে চুক্তি স্থগিত, প্রত্যাহার, পর্যালোচনা ও সংশোধনের বিধানও রাখা হয়েছে।

ad
ad

বিশ্ব রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের নির্দেশ ট্রাম্পের

সিরিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা বহুদিন ধরে বলবৎ ছিল। এর অনেকগুলো ২০১১ সালে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধেরও আগে থেকে আরোপিত।

১৪ ঘণ্টা আগে

সার্ক যেভাবে গঠিত হয়েছিল

সার্কের সূচনার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ প্রস্তুতি, নানা রাজনৈতিক সমঝোতা এবং কিছু সাহসী কূটনৈতিক উদ্যোগ।

১ দিন আগে

'ইরানের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কখনোই বন্ধ হবে না'

ইরানের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কখনোই বন্ধ হবে না বলে দাবি করেছেন জাতিসংঘে দেশটির রাষ্ট্রদূত আমির-সাঈদ ইরাভানি। তিনি বলেন, পরমাণু অস্ত্রবিস্তাররোধ চুক্তির অধীনে শান্তিপূর্ণ জ্বালানির উদ্দেশ্যে তাদের এই প্রকল্প অনুমোদিত।

১ দিন আগে

বাংলাদেশকে নিয়ে সার্কের বিকল্প জোট গঠন করছে পাকিস্তান-চীন

বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে সার্কের বিকল্প জোট তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে পাকিস্তান ও চীন। এ বিষয়ে ইসলামাবাদ ও বেইজিংয়ের মধ্যে আলোচনা অনেকটাই এগিয়েছে। দুই পক্ষই মনে করছে, আঞ্চলিক সংহতি ও যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য এখনই একটি নতুন সংগঠন তৈরি করা জরুরি।

১ দিন আগে