মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া
দেশের আহরিত সরকারি রাজস্বের প্রায় ৮৫ শতাংশই আসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অধীন কর, মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও কাস্টমস অফিসগুলোর অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের মাধ্যমে। তবে আমাদের প্রয়োজনের তুলনায় সংগৃহীত রাজস্বের পরিমাণ অপ্রতুল। দেশের কর-জিডিপি অনুপাত দীর্ঘ সময় ধরে আট শতাংশের কাছাকাছি রয়েছে, যা এশিয়ায় তো বটেই, সারা বিশ্বেই সর্বনিম্ন।
প্রত্যক্ষ করের আওতা সম্প্রসারণ এবং ভ্যাট আইন প্রয়োগ ও মনিটরিংয়ের মাধ্যমে ভ্যাট আদায় নিশ্চিত করে রাজস্ব বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হলেও আশানুরূপ ফল মেলেনি। দেশের মাত্র ৬০ থেকে ৬৫ নাগরিক বার্ষিক রিটার্ন দাখিল করেন। এর মধ্যে প্রত্যক্ষ করদাতা ৪০ লাখ অতিক্রম করবে না।
করজাল সম্প্রসারণ ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এরই মধ্যে বেশকিছু সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। বিলম্বে হলেও কর ও কাস্টমস অফিস এবং জনবল বাড়িয়ে পর্যায়ক্রমে করের আওতা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। ভ্যাট সংগ্রহ বাড়াতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন সরবরাহ করা হচ্ছে।
গত বছর আগস্টে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বিভিন্ন খাতে সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। রাজস্ব সংস্কারের জন্য গঠিত কমিটি গত জানুয়ারিতে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সরকার যে সংস্কারের পরিকল্পনা করে, তা মূলত রাজস্ব সংগ্রহ পলিসি বা নীতি এবং সংগ্রহ ব্যবস্থাপনা আলাদা করা।
গত ১২ মে এ সংক্রান্ত একটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এর মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি পৃথক বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
ওই অধ্যাদেশ জারির পর এনবিআরের কর্মরত কর ও কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তারা তাদের চাকরিক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা ও ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। তাদের অভিযোগ, এ অধ্যাদেশে সংস্কার কমিটির সুপারিশ পুরাপুরি প্রতিফলিত হয়নি।
নবসৃষ্ট উভয় বিভাগে অন্যান্য ক্যাডার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কর ও কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তারাও কাজ করবেন— এ বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও বিভাগের শীর্ষ ও জ্যেষ্ঠ পদগুলোতে প্রশাসনসহ অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা পদায়িত হতে পারেন বলে কর ও কাস্টমস কর্মকর্তারা মনে করছেন।
বর্তমানে এনবিআরে এ বড় দুটি ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য সৃষ্ট পদ ও পদোন্নতি নব সৃষ্ট বিভাগের অধীন দপ্তরগুলোতে অব্যাহত থাকবে কি না, কিংবা তাদের নিয়োগ ও পদোন্নতি আরও সীমিত বা প্রশস্ত হবে কি না— এসব বিষয়ে অধ্যাদেশে স্পষ্ট করে বলা নেই। তাছাড়া এনবিআর কর্মকর্তাদের ধারণা, সরকার রাজস্ব সংস্কার কমিটির দেওয়া সুপারিশমালা আমলে না নিয়ে একতরফা ও গোপনীয়ভাবে অধ্যাদেশটি প্রণয়ন করেছেন।
এসব কারণে এনবিআরের অধীন দুটি ক্যাডার কর্মকর্তারা ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্যপরিষদে’র ব্যানারে আন্দোলন শুরু করেন। কয়েক দিন ধরে তারা ‘কলম বিরতি’ পালনসহ অন্যান্য কর্মসূচি চালিয়ে যান। এরই মধ্যে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকের ফলাফলেও তারা সন্তুষ্ট হতে পারেননি। বরং আন্দোলনের এজেন্ডা হিসেবে যুক্ত হয়েছে এনবিআর চেয়্যারম্যানের অপসারণ।
গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশের অর্থনীতি এখনো স্থবিরতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাবের কারণে রাজস্ব আহরণেও দেখা যাচ্ছে বড় ঘাটতি। এর মধ্যে কর্মকর্তাদের কলম বিরতির প্রভাবে ঘাটতির পরিমাণ আরও বাড়ছে। ফলে রাজস্ব সংস্কারের সাম্প্রতিক উদ্যোগের বাস্তবায়ন হুমকি ও ঝুঁকির মুখে পড়েছে। কর্মকর্তাদের লাগাতার কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘটে এনবিআরএ বলতে গেলে অচলাবস্থা বিরাজ করে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্ত করে দুটি পৃথক বিভাগ তৈরির যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টার অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে বলা হয়েছে, একটি স্বচ্ছ ও আরও যোগ্য করব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ৫০ বছরেরও বেশি সময় আগে প্রতিষ্ঠিত এনবিআর তার রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
ব্যাখ্যায় আরও বলা হয়েছে, নীতি নির্ধারণ ও প্রয়োগ— দুটি এক ছাদের নিচে থাকার ফলে করনীতির সঙ্গে আপস ও ব্যাপক অনিয়ম দেখা দিয়েছে। বর্তমান ব্যবস্থায় কর আদায়ে যুক্ত কর্মকর্তারা কোনো জবাবদিহিতা কাঠামোর অধীনে নন। তারা প্রায়ই জনস্বার্থের বিপরীতে কর ফাঁকিবাজদের সঙ্গে আলোচনা করে থাকেন।
এনবিআরের বর্তমান কাঠামো নীতি প্রণয়ন ও প্রতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ে পর্যাপ্ত মনোযোগ দিতে পারছে না। ফলে করজাল সংকীর্ণ রয়ে গেছে এবং রাজস্ব আদায় সম্ভাবনার চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে। বর্তমান সংস্কারের মাধ্যমে দুটি বিভাগ করে দুই বিভাগের দায়িত্ব স্পষ্ট ও আরও জবাবদিহিমূলক করা হয়েছে। এর ফলে স্বার্থের সংঘাত থাকবে না। করজাল সম্প্রসারিত হবে, পরোক্ষ কর আদায় বাড়বে।
অভিজ্ঞ মহলের কারও কারও মতে, প্রধান উপদেষ্টার অফিশিয়াল ফেসবুক পেজের কিছু মন্তব্যে এনবিআরের এ পর্যন্ত অর্জনকে খাটো করে দেখা হয়েছে এবং কর্মকর্তাদের পেশাদারিত্ব ও জবাবদিহিতার অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।
বস্তুত, এনবিআর সৃষ্টির প্রথম বছর ১৯৭২-৭৩ সালে আহরিত ১৬৬ কোটি টাকার রাজস্ব ৫১ বছরের ব্যবধানে গত অর্থবছরে (২০২৩-২০২৪) এ তিন লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করেছে। আগে বস্তুনিষ্ট ও অর্জনযোগ্য রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হতো। বর্তমানে লক্ষ্যমাত্রা বিগত বছরের আহরণের চেয়ে ৩০ বা ৪০ শতাংশ বেশি থাকে বলে তা অর্জন করা সম্ভব হয় না।
কয়েক বছর ধরে এনবিআরের প্রশাসনিক সংস্কার জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের নীতি নির্ধারণী মহলে আটকে থাকার কারণে রাজস্ব আহরণব্যবস্থা অর্থাৎ কর, ভ্যাট ও কাস্টমস অফিস দেশব্যাপী সম্প্রসারণ সম্ভব হয়নি। প্রশাসনিক সংস্কার ও কর আহরণ ব্যবস্থা অটোমেশনের আওতায় এলে করজাল সম্প্রসারণ ও রাজস্ব প্রবৃদ্ধি সম্ভব হবে। এর ফলে কর ফাঁকিও কমবে।
রাজস্ব আহরণ, ব্যবস্থাপনা ও নীতি প্রণয়ন সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তবে সংস্কার হতে হবে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, অংশীজনের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে। অভিজ্ঞ মহলের অনেকেই বলেছেন, গোপনীয়ভাবে দ্রুততার সঙ্গে এনবিআর বিলুপ্ত করে নীতি ও আহরণ ব্যবস্থাপনা আলাদা করার প্রক্রিয়াটি সঠিক হয়নি।
আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি, এনবিআরের নীতি প্রণয়ন ও রাজস্ব আহরণ একই ছাদের নিচে একজন সচিব বা চেয়ারম্যানের তত্ত্বাবধানে হলেও অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদরে সমন্বয়ে গঠিত টিম ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা, সরকারপ্রধান ও অর্থমন্ত্রীর পরামর্শ গ্রহণ এবং রাজস্ব প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য সামনে রেখে নীতি প্রণয়ন করে থাকে।
এখানে স্বার্থের সংঘাতটি হচ্ছে— ‘রাজস্ব বৃদ্ধি’র লক্ষ্য। রাজস্ব কম অর্জনের কোনো লক্ষ্য থাকে না। লক্ষ্যপূরণ নির্ভর করে দেশের সার্বিক অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, দেশের মানুষের ভোগের সামর্থ্য ও চাহিদা, সরকারি ব্যয় ইত্যাদির ওপর। অর্থনীতির স্থবিরতা বা নিম্নগতি, বেকার সমস্যা, জনমানুষের খরচ করার সামর্থ্য হ্রাস ইত্যাদি রাজস্ব বৃদ্ধির অন্তরায়।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে এনবিআর পুনর্গঠনের এ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছে। ব্যবসায়ী মহল, অর্থনীতিবিদ ও সুশীল সমাজ এ উদ্যোগের প্রশংসা করেছে। তবে সিপিডিসহ কোনো কোনো অর্থনীতিবিদদের অভিমত, যে প্রক্রিয়ায় এনবিআর বিভক্ত করা হয়েছে তা ঠিক হয়নি।
সরকারের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সার্ভিস ক্যাডার, যারা রাজস্ব আদায়ের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত, তাদের যৌক্তিক মতামত আমলে নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। গত ২৫ মে পর্যন্ত দীর্ঘ সময় কলম বিরতি পালনের পর ‘ঐক্য পরিষদ’ ২৬ মে থেকে অনির্দিষ্টকাল পূর্ণবিরতি কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয় ২৫ মে সন্ধ্যায় একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়,
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে ঐক্য পরিষদ তাদের কর্মবিরতি কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয়।
অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব ও বিনিয়োগ স্থবিরতার কারণে চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে প্রায় ৭১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে বলে খবরে প্রকাশ। এর সঙ্গে বিগত প্রায় দুসপ্তাহের ‘কলম বিরতি’ রাজস্ব সংগ্রহ কাজ অনেকটা পিছিয়ে দিয়েছে।
সরকার ও এনবিআরের কর্মকর্তারা বিষয়টি অনুধাবন করে অর্থবছরের বাকি সময়ে রাজস্ব সংগ্রহ কার্যক্রম জোরদার করবে— এটিই সবার প্রত্যাশা।
সরকারের সাম্প্রতিক উদ্যোগ, অর্থ্যাৎ রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা আলাদা করার পাশাপাশি কর অফিস জেলা ও গুরুত্বপূর্ণ থানা পর্যায়ে সম্প্রসারণ এবং জনবল বাড়ানোর কাজটিও দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। কর দিতে সক্ষম ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে কর জাল সম্প্রসারণে জরিপ পরিচালনার জন্য অফিস ও জনবল বাড়ানো অপরিহার্য।
দেশের আহরিত সরকারি রাজস্বের প্রায় ৮৫ শতাংশই আসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অধীন কর, মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও কাস্টমস অফিসগুলোর অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের মাধ্যমে। তবে আমাদের প্রয়োজনের তুলনায় সংগৃহীত রাজস্বের পরিমাণ অপ্রতুল। দেশের কর-জিডিপি অনুপাত দীর্ঘ সময় ধরে আট শতাংশের কাছাকাছি রয়েছে, যা এশিয়ায় তো বটেই, সারা বিশ্বেই সর্বনিম্ন।
প্রত্যক্ষ করের আওতা সম্প্রসারণ এবং ভ্যাট আইন প্রয়োগ ও মনিটরিংয়ের মাধ্যমে ভ্যাট আদায় নিশ্চিত করে রাজস্ব বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হলেও আশানুরূপ ফল মেলেনি। দেশের মাত্র ৬০ থেকে ৬৫ নাগরিক বার্ষিক রিটার্ন দাখিল করেন। এর মধ্যে প্রত্যক্ষ করদাতা ৪০ লাখ অতিক্রম করবে না।
করজাল সম্প্রসারণ ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এরই মধ্যে বেশকিছু সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। বিলম্বে হলেও কর ও কাস্টমস অফিস এবং জনবল বাড়িয়ে পর্যায়ক্রমে করের আওতা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। ভ্যাট সংগ্রহ বাড়াতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন সরবরাহ করা হচ্ছে।
গত বছর আগস্টে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বিভিন্ন খাতে সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। রাজস্ব সংস্কারের জন্য গঠিত কমিটি গত জানুয়ারিতে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সরকার যে সংস্কারের পরিকল্পনা করে, তা মূলত রাজস্ব সংগ্রহ পলিসি বা নীতি এবং সংগ্রহ ব্যবস্থাপনা আলাদা করা।
গত ১২ মে এ সংক্রান্ত একটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এর মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি পৃথক বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
ওই অধ্যাদেশ জারির পর এনবিআরের কর্মরত কর ও কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তারা তাদের চাকরিক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা ও ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। তাদের অভিযোগ, এ অধ্যাদেশে সংস্কার কমিটির সুপারিশ পুরাপুরি প্রতিফলিত হয়নি।
নবসৃষ্ট উভয় বিভাগে অন্যান্য ক্যাডার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কর ও কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তারাও কাজ করবেন— এ বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও বিভাগের শীর্ষ ও জ্যেষ্ঠ পদগুলোতে প্রশাসনসহ অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা পদায়িত হতে পারেন বলে কর ও কাস্টমস কর্মকর্তারা মনে করছেন।
বর্তমানে এনবিআরে এ বড় দুটি ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য সৃষ্ট পদ ও পদোন্নতি নব সৃষ্ট বিভাগের অধীন দপ্তরগুলোতে অব্যাহত থাকবে কি না, কিংবা তাদের নিয়োগ ও পদোন্নতি আরও সীমিত বা প্রশস্ত হবে কি না— এসব বিষয়ে অধ্যাদেশে স্পষ্ট করে বলা নেই। তাছাড়া এনবিআর কর্মকর্তাদের ধারণা, সরকার রাজস্ব সংস্কার কমিটির দেওয়া সুপারিশমালা আমলে না নিয়ে একতরফা ও গোপনীয়ভাবে অধ্যাদেশটি প্রণয়ন করেছেন।
এসব কারণে এনবিআরের অধীন দুটি ক্যাডার কর্মকর্তারা ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্যপরিষদে’র ব্যানারে আন্দোলন শুরু করেন। কয়েক দিন ধরে তারা ‘কলম বিরতি’ পালনসহ অন্যান্য কর্মসূচি চালিয়ে যান। এরই মধ্যে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকের ফলাফলেও তারা সন্তুষ্ট হতে পারেননি। বরং আন্দোলনের এজেন্ডা হিসেবে যুক্ত হয়েছে এনবিআর চেয়্যারম্যানের অপসারণ।
গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশের অর্থনীতি এখনো স্থবিরতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাবের কারণে রাজস্ব আহরণেও দেখা যাচ্ছে বড় ঘাটতি। এর মধ্যে কর্মকর্তাদের কলম বিরতির প্রভাবে ঘাটতির পরিমাণ আরও বাড়ছে। ফলে রাজস্ব সংস্কারের সাম্প্রতিক উদ্যোগের বাস্তবায়ন হুমকি ও ঝুঁকির মুখে পড়েছে। কর্মকর্তাদের লাগাতার কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘটে এনবিআরএ বলতে গেলে অচলাবস্থা বিরাজ করে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্ত করে দুটি পৃথক বিভাগ তৈরির যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টার অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে বলা হয়েছে, একটি স্বচ্ছ ও আরও যোগ্য করব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ৫০ বছরেরও বেশি সময় আগে প্রতিষ্ঠিত এনবিআর তার রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
ব্যাখ্যায় আরও বলা হয়েছে, নীতি নির্ধারণ ও প্রয়োগ— দুটি এক ছাদের নিচে থাকার ফলে করনীতির সঙ্গে আপস ও ব্যাপক অনিয়ম দেখা দিয়েছে। বর্তমান ব্যবস্থায় কর আদায়ে যুক্ত কর্মকর্তারা কোনো জবাবদিহিতা কাঠামোর অধীনে নন। তারা প্রায়ই জনস্বার্থের বিপরীতে কর ফাঁকিবাজদের সঙ্গে আলোচনা করে থাকেন।
এনবিআরের বর্তমান কাঠামো নীতি প্রণয়ন ও প্রতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ে পর্যাপ্ত মনোযোগ দিতে পারছে না। ফলে করজাল সংকীর্ণ রয়ে গেছে এবং রাজস্ব আদায় সম্ভাবনার চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে। বর্তমান সংস্কারের মাধ্যমে দুটি বিভাগ করে দুই বিভাগের দায়িত্ব স্পষ্ট ও আরও জবাবদিহিমূলক করা হয়েছে। এর ফলে স্বার্থের সংঘাত থাকবে না। করজাল সম্প্রসারিত হবে, পরোক্ষ কর আদায় বাড়বে।
অভিজ্ঞ মহলের কারও কারও মতে, প্রধান উপদেষ্টার অফিশিয়াল ফেসবুক পেজের কিছু মন্তব্যে এনবিআরের এ পর্যন্ত অর্জনকে খাটো করে দেখা হয়েছে এবং কর্মকর্তাদের পেশাদারিত্ব ও জবাবদিহিতার অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।
বস্তুত, এনবিআর সৃষ্টির প্রথম বছর ১৯৭২-৭৩ সালে আহরিত ১৬৬ কোটি টাকার রাজস্ব ৫১ বছরের ব্যবধানে গত অর্থবছরে (২০২৩-২০২৪) এ তিন লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করেছে। আগে বস্তুনিষ্ট ও অর্জনযোগ্য রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হতো। বর্তমানে লক্ষ্যমাত্রা বিগত বছরের আহরণের চেয়ে ৩০ বা ৪০ শতাংশ বেশি থাকে বলে তা অর্জন করা সম্ভব হয় না।
কয়েক বছর ধরে এনবিআরের প্রশাসনিক সংস্কার জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের নীতি নির্ধারণী মহলে আটকে থাকার কারণে রাজস্ব আহরণব্যবস্থা অর্থাৎ কর, ভ্যাট ও কাস্টমস অফিস দেশব্যাপী সম্প্রসারণ সম্ভব হয়নি। প্রশাসনিক সংস্কার ও কর আহরণ ব্যবস্থা অটোমেশনের আওতায় এলে করজাল সম্প্রসারণ ও রাজস্ব প্রবৃদ্ধি সম্ভব হবে। এর ফলে কর ফাঁকিও কমবে।
রাজস্ব আহরণ, ব্যবস্থাপনা ও নীতি প্রণয়ন সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তবে সংস্কার হতে হবে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, অংশীজনের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে। অভিজ্ঞ মহলের অনেকেই বলেছেন, গোপনীয়ভাবে দ্রুততার সঙ্গে এনবিআর বিলুপ্ত করে নীতি ও আহরণ ব্যবস্থাপনা আলাদা করার প্রক্রিয়াটি সঠিক হয়নি।
আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি, এনবিআরের নীতি প্রণয়ন ও রাজস্ব আহরণ একই ছাদের নিচে একজন সচিব বা চেয়ারম্যানের তত্ত্বাবধানে হলেও অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদরে সমন্বয়ে গঠিত টিম ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা, সরকারপ্রধান ও অর্থমন্ত্রীর পরামর্শ গ্রহণ এবং রাজস্ব প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য সামনে রেখে নীতি প্রণয়ন করে থাকে।
এখানে স্বার্থের সংঘাতটি হচ্ছে— ‘রাজস্ব বৃদ্ধি’র লক্ষ্য। রাজস্ব কম অর্জনের কোনো লক্ষ্য থাকে না। লক্ষ্যপূরণ নির্ভর করে দেশের সার্বিক অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, দেশের মানুষের ভোগের সামর্থ্য ও চাহিদা, সরকারি ব্যয় ইত্যাদির ওপর। অর্থনীতির স্থবিরতা বা নিম্নগতি, বেকার সমস্যা, জনমানুষের খরচ করার সামর্থ্য হ্রাস ইত্যাদি রাজস্ব বৃদ্ধির অন্তরায়।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে এনবিআর পুনর্গঠনের এ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছে। ব্যবসায়ী মহল, অর্থনীতিবিদ ও সুশীল সমাজ এ উদ্যোগের প্রশংসা করেছে। তবে সিপিডিসহ কোনো কোনো অর্থনীতিবিদদের অভিমত, যে প্রক্রিয়ায় এনবিআর বিভক্ত করা হয়েছে তা ঠিক হয়নি।
সরকারের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সার্ভিস ক্যাডার, যারা রাজস্ব আদায়ের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত, তাদের যৌক্তিক মতামত আমলে নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। গত ২৫ মে পর্যন্ত দীর্ঘ সময় কলম বিরতি পালনের পর ‘ঐক্য পরিষদ’ ২৬ মে থেকে অনির্দিষ্টকাল পূর্ণবিরতি কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয় ২৫ মে সন্ধ্যায় একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়,
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে ঐক্য পরিষদ তাদের কর্মবিরতি কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয়।
অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব ও বিনিয়োগ স্থবিরতার কারণে চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে প্রায় ৭১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে বলে খবরে প্রকাশ। এর সঙ্গে বিগত প্রায় দুসপ্তাহের ‘কলম বিরতি’ রাজস্ব সংগ্রহ কাজ অনেকটা পিছিয়ে দিয়েছে।
সরকার ও এনবিআরের কর্মকর্তারা বিষয়টি অনুধাবন করে অর্থবছরের বাকি সময়ে রাজস্ব সংগ্রহ কার্যক্রম জোরদার করবে— এটিই সবার প্রত্যাশা।
সরকারের সাম্প্রতিক উদ্যোগ, অর্থ্যাৎ রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা আলাদা করার পাশাপাশি কর অফিস জেলা ও গুরুত্বপূর্ণ থানা পর্যায়ে সম্প্রসারণ এবং জনবল বাড়ানোর কাজটিও দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। কর দিতে সক্ষম ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে কর জাল সম্প্রসারণে জরিপ পরিচালনার জন্য অফিস ও জনবল বাড়ানো অপরিহার্য।
আইয়ুব খানের পর জেনারেল ইয়াহিয়া খান ৯ মাস যুদ্ধ করেও ‘ফিল্ড মার্শাল’ হতে পারেননি। কারণ হাতেনাতে ধরা খেয়ে পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছেন। জেনারেল জিয়াউল হক, জেনারেল পারভেজ মোশাররফরাও ‘ফিল্ড মার্শাল’ হতে পারেননি। কিন্তু বাজিমাৎ করে দিলেন পাকিস্তানের বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনির।
৫ দিন আগেবাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ‘কথিত পদত্যাগের ভাবনা’ নিয়ে তৈরি হওয়া সংকটের আপাত নিরসন হলেও প্রকৃত অর্থে সংকট কাটলো, নাকি নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হলো, সেই প্রশ্নও আলোচনায় আসছে।
৭ দিন আগেসম্প্রতি বান্দরবান-মিয়ানমার সীমান্তে বাংলাদেশের ভেতরে আরাকান আর্মির সদস্যদের অনুপ্রবেশের অভিযোগ নিয়ে আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। থানচি উপজেলার রেমাক্রিতে সাঙ্গু নদীর চরে যেখানে অনুষ্ঠান আয়োজন এবং আরাকান আর্মির সদস্যরা উপস্থিত হয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে, সেটি মিয়ানমার সীমান্ত থেকে অন্তত দশ কিলোমিট
৮ দিন আগেইন্টারনেটের ব্যবহার সহজ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশে সোস্যাল মিডিয়ার ব্যবহারেও অনেকটা বিপ্লবই ঘটে গেছে। বিপুল জনগোষ্ঠী সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন। আর অনলাইন নিউজ পোর্টলগুলোও বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। সংযুক্ত হতে হয়েছে ফেসবুকের সঙ্গেও। দ্রুত ও বেশি পাঠকের কাছে পৌঁছানোর জন্য নিউজ পোর্টা
৮ দিন আগে