জুলাই সনদ সইয়ে জটিলতার সমাধান কোথায়

রুহিন হোসেন প্রিন্স

সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থাসহ বিভিন্ন খাতের সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করতে সরকার গঠন করেছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ৩০টির মতো রাজনৈতিক দলকে নিয়ে এই কমিশন দফায় দফায় বৈঠক করে এরই মধ্যে কিছু বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। সেখানেও কিছু বিষয়ে রয়েছে মত-দ্বিমত। সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্য আসেনি একেবারেই।

কিন্তু জুলাই সনদে ঐকমত্যে পৌঁছানো ও এর বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে জটিলতা কোথায়?

প্রকৃতপক্ষে একেক দলের আদর্শ একেক রকম। রাষ্ট্রকেও তারা একেকভাবে সাজাতে চায়। এসব ক্ষেত্রে অনেকগুলো বিষয় জোর-জুলুম করে একমত করানোর প্রচেষ্টাই অন্যতম সংকট।

সবাইকে নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হলে যতটুকুতে সবাই একমত হয়েছে, ততটুকুকেই ঐকমত্য ধরতে হবে। এর চেয়ে বেশি কিছু করতে গেলে আর সেটাকে ঐকমত্য বলা যাবে না।

ঐকমত্য কমিশনে যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তার অনেকগুলোতেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে বা ঘোরতর দ্বিমত জানিয়েছে। এসব ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা ঘোরতম দ্বিমতকে কোনোভাবে ঐকমত্য হিসেবে ধরা যাবে না।

রাজনৈতিক দলগুলো অনেক বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতেও পেরেছে। যেসব বিষয়ে ঐকমত্য এসেছে তার মধ্যে এখনকার আইনে যেগুলো বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। আর যেসব বিষয় বাস্তবায়নের জন্য সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন পড়বে, সে বিষয়গুলো আগামী নির্বাচিত সংসদের ওপর ছেড়ে দিতে হবে।

‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা ঘোরতর দ্বিমত রয়েছে যেসব ইস্যুতে, প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে এসব ইস্যুতে নিজ নিজ অবস্থান তুলে ধরে সেগুলো নির্বাচনি ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তাদের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে, তারা নির্বাচিত হলে এগুলো বাস্তবায়ন করবে।

জুলাই সনদের ভূমিকায় বেশকিছু বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এসব বিতর্কিত বক্তব্য পরিহার করতে হবে। সনদের ভূমিকার যতটুকু সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, অল্প কথায় ঠিক ততটুকুই লিখতে হবে।

গণভোট, গণপরিষদ, এলএফও, সাংবিধানিক আদেশ বিষয়ে একমত হওয়া যাবে না। হলে সেটি গ্রহণযোগ্যও হবে না। বরং সেটি ঐকমত্যের দীর্ঘ দিনের বৈঠককেই প্রশ্নবিদ্ধ করবে, যা নিশ্চয় আমাদের কারও কাঙ্ক্ষিত নয়।

জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। আমার মনে হয় এ বিষয়ে বেশি কথা না বলে বরং জুলাই সনদের বাস্তবায়ন আগামী নির্বাচিত সংসদের ওপর ছেড়ে দেওয়া ভালো। যেসব বিষয়ে সব দল একমত হবে, সেগুলো নির্বাচিত সংসদকে বাস্তবায়ন করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনে একটি সময় নির্ধারণ করে দেওয়া যেতে পারে।

আমার বিশ্বাস, এভাবে ভাবলে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা, সনদ সই ও বাস্তবায়ন নিয়ে বিতর্ক এড়িয়ে অগ্রসর হওয়া সম্ভব। এর বাইরে অন্য কিছু করতে গেলে আমার বিবেচনায় সব দলের পক্ষে সনদে সই করা ও বাস্তবায়নে সব দলের একমত হওয়া কঠিন হয়ে পড়বে, যা জনআকাঙ্ক্ষাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে এবং আগামী দিনে অবাধ সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনেও নানামুখী সংকট তৈরি করবে।

লেখক: প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)

ad
ad

মতামত থেকে আরও পড়ুন

কোডিং ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের লিখিত পরীক্ষার মূল্যায়ন: একটি বিশ্লেষণ

কোডিং পদ্ধতিতে কেবল লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। এর বাইরে শ্রেণিকক্ষে ধারাবাহিক মূল্যায়ন বা শ্রেণি পরীক্ষা থেকে শুরু করে প্রেজেন্টেশন, মৌখিক পরীক্ষা, ব্যবহারিক পরীক্ষার কোনোটিতেই কোডিং বা ছদ্মবেশ নেওয়ার কোনো উপায় নেই!

১১ দিন আগে

নারী কমিশনকে সাক্ষাৎই দেয়নি সংবিধান সংস্কার কমিশন

একটি কমিশন আমাদের সময় দেয়নি— সংবিধান কমিশন। আমি জানি না কেন তারা সময় দেয়নি। হয়তো তাদের ধারণা ছিল, সংবিধান সংস্কারে নারীদের আবার কী বলার থাকতে পারে! তারা আমাদের প্রস্তাব গ্রহণ না-ই করতে পারতেন, কিন্তু সময় দেওয়াটা ছিল শোভন আচরণের অংশ। সেই সৌজন্যটুকু আমরা পাইনি।

১২ দিন আগে

প্রসঙ্গ— সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য ভোট

এবারের নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক প্রচার-প্রচারণা যে ভয়াবহ রূপ লাভ করবে, সেটা এরই মধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। সরকার নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে আচরণবিধি ঠিক রেখে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণার সার্বিক দায়-দায়িত্ব নিলে অনেক কিছু রোধ করা যেত।

১২ দিন আগে

এই গণভোটের প্রশ্ন বোধগম্য নয়

প্রকৃত অর্থে এগুলো একটি রাজনৈতিক কাঠামোর প্রশ্ন। এটি শিক্ষা, স্বাস্থ্য বা দ্রব্যমূল্যের মতো বিষয় নয়। তেমন হলে সাধারণ মানুষের স্বার্থ যুক্ত থাকত। কিন্তু এটি উচ্চমধ্যবিত্তের প্রাতিষ্ঠানিক ধারণা। কীভাবে সাধারণ মানুষ এতে ভোট দিবে পক্ষে-বিপক্ষে, সেটি আমিও বুঝতে পারছি না।

২২ দিন আগে