নির্মূল হোক হাসপাতালে ছারপোকা, সেবা হোক প্রবীণবান্ধব

মো. সিদ্দিকুর রহমান
প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ২১: ৩২

বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও বৃহৎ হাসপাতাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল। সারা দেশের দরিদ্র ও সাধারণ মানুষের চিকিৎসার অন্যতম ভরসা হিসেবে খ্যাত, যা ঢাকা মেডিকেল নামেই পরিচিত। অসংখ্য রোগীকে কক্ষের বাইরে শয্যাবিহীন অবস্থায় যুগের পর যুগ চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে এই হাসপাতালে। সারা দেশের সব সরকারি হাসপাতালের মধ্যে রোগীর চাপও এ হাসপাতালেই সবচেয়ে বেশি।

সুদীর্ঘ দিন ধরেই মারাত্মক অপরিচ্ছন্ন ঢামেক হাসপাতাল। বর্তমানে নার্স ও ডাক্তারদের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে বলে চিকিৎসাব্যবস্থা আগের তুলনায় অনেকটা ভালো। তবে জল থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা— সবকিছুই কিনতে হয় অর্থের বিনিময়ে। তারপরও চিকিৎসা সেবাটুকু বিনামূল্যে হওয়ায় সাধারণ মানুষের জন্য তা অনেকটাই স্বস্তির কারণ। হাসপাতালের খাবারের মানও আগের তুলনায় অনেক ভালো। সকালে রোগীকে দেওয়া হয় ডিম, দুধ, কলা ও রুটি। বিকেলে ডিম, কলা ও বিস্কুট। দুবেলা ভাত, মাছ, মাংস ও ডাল।

যারা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়ে থাকেন তারা সবাই অসুস্থ। তাদের আরও বেশি অসুস্থ ও যন্ত্রণা দেয় হাসপাতালের বিছানায় থাকা অগণিত ছারপোকা। এই ছারপোকার যন্ত্রণা থেকে রোগীদের কীভাবে রেহাই দেওয়া যায়, আশা করি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তথা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিষয়টি সুদৃষ্টি দিয়ে বিবেচনা করবে।

হাসপাতালে রয়েছে শিশু ওয়ার্ড, গাইনি ওয়ার্ডসহ পৃথক পৃথক ওয়ার্ড। নেই কেবল প্রবীণদের সুচিকিৎসা দেওয়ার জন্য আলাদা ব্যবস্থা। চিকিৎসা যানবাহনসহ নানা ক্ষেত্রে প্রবীণদের আলাদা কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে প্রবীণদেরও একই লাইনে, মর্যাদাহীনভাবে সবার সঙ্গে হুমড়ি খেয়ে সেবা নিতে হয়।

আজকের শিশু যেমন আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ, প্রবীণরাও দেশের সম্পদ ও দিকনির্দেশক। তাদের শ্রম ও মেধায় প্রতিষ্ঠিত আজকের এ সুন্দর বাংলাদেশ। দেশের স্বাধীনতা অর্জনে প্রবীণদের আত্মত্যাগ স্বীকার করতে হবে। এ দিক বিবেচনায় নিয়ে সব সরকারি হাসপাতালে প্রবীণদের শিশুদের মতো পৃথক প্রবীণ ওয়ার্ড থাকা জরুরি।

প্রবীণদের জন্য চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হলে নিচের সুবিধাগুলো থাকা প্রয়োজন—

  • জরুরি বিভাগসহ সবখানে প্রবীণদের আলাদা লাইনসহ প্রবীণ ওয়ার্ড থাকা;
  • প্রবীণদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে জরুরি বিভাগের মতো চিকিৎসকসহ জনবল থাকা;
  • প্রবীণদের ওয়াশরুমে হাই-কমোড থাকা এবং পর্যাপ্ত আলো-বাতাস ও বৈদ্যুতিক সুবিধা নিশ্চিত করা;
  • বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের দ্বারা প্রবীণদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া;
  • আমাদের দেশের অধিকাংশ প্রবীণ ডায়েবেটিস ও হৃদরোগে আক্রান্ত। এ দিক বিবেচনায় নিয়ে তাদের জন্য আলাদা খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা করা।

জাতি গড়ার অন্যতম কর্ণধার আজকের প্রবীণ। তাদের যত্ন নেওয়া পরিবার, সমাজ, দেশ ও জাতির কর্তব্য। অথচ অনেক ক্ষেত্রে তারা পরিবার ও সমাজের মাঝে অবহেলিত। রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে প্রবীণদের জন্য নেই আলাদা বিশেষ কোনো ভাবনা।

দেশের যানবাহনগুলোতে শিশু, নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আসন থাকলেও নেই প্রবীণদের জন্য আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা। হাসপাতালসহ সভা-সমাবেশ কোনো স্থানেই নেই প্রবীণদের জন্য সংরক্ষিত ব্যবস্থা। সরকারি কর্মচারী হিসেবে ৬৫ বছরের কম বয়সী প্রবীণরা ১৫০০ টাকা ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সী প্রবীণরা ২৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পেয়ে থাকেন। অনেক প্রবীণ শতভাগ পেনশন সমর্পণ করায় আজ ২৫০০ টাকাই তাদের একমাত্র ভরসা।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শুভঙ্করের ফাঁকি ছিল ১৫ বছর পেনশন প্রতিস্থাপন। মৃত্যুবরণ করে প্রতিস্থাপন আদেশ কার্যকর হয় না। বেশির ভাগই ১৫ বছরের আগেই পরপারে চলে যায়। এ প্রেক্ষাপটে ১০ বছর পর পেনশন পুনর্স্থাপনের সুযোগ পেলে সিনিয়র পেনশনভোগীরা উপকৃত হবেন।

হাসপাতালসহ সব ক্ষেত্রেই প্রবীণদের জন্য আলাদা সুযোগ নিশ্চিত হোক, হাসপাতালের বিছানা থেকে নিশ্চিহ্ন হোক ছারপোকা— এটুকুই প্রত্যাশা।

লেখক: সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি

ad
ad

মতামত থেকে আরও পড়ুন

মার্কিন উচ্চ শুল্কহার: উত্তরণে চাই কার্যকর পদক্ষেপ

বাংলাদেশও বাদ পড়েনি ট্রাম্পের এই ‘বাণিজ্য যুদ্ধে’র তালিকা থেকে। সর্বশেষ বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর দেশটি ৩৫ শতাংশ পালটা শুল্ক আরোপ করেছে, যা আমাদের দেশের জন্য একটি কঠিন অর্থনৈতিক আঘাত। বিশেষ করে এই শুল্কে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্প।

২ দিন আগে

নির্বাচনি ভারসাম্যে হাঁটছেন অধ্যাপক ইউনূস

এ নির্দেশের পর রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সমালোচকদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই একে রাজনৈতিক অস্থিরতা সামাল দেওয়া, প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিগুলোর দাবির সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা এবং অনিশ্চয়তার মধ্যেও ইউনূসের সংস্কার এজেন্ডা সচল রাখার কৌশল হিসেবে দেখছেন।

৪ দিন আগে

মুদ্রিত সংবাদপত্র কি অপসৃত হয়ে যাবে

অনেক দিন ধরেই মুদ্রিত সংবাদপত্র পাঠক হারানো শঙ্কার মধ্যে আছে। অনলাইন নিউজ পোর্টালের দ্রুত বিকাশ এই শঙ্কা তৈরি করেছে। দেশব্যাপী পরিচালিত জরিপটি যেন এই শঙ্কাকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। জরিপ থেকে জানা যাচ্ছে, বেশির ভাগ পাঠকই এখন খবরের কাগজের অনলাইন সংস্করণ পড়েন এবং তা পড়েন মোবাইল ফোনে, যার পরিমাণ প্রায় ৬

৫ দিন আগে

স্বপ্নের ডানায় ভর করে শিশুশ্রমের শৃঙ্খল ভাঙা কি আদৌ সম্ভব?

দেশে প্রায় ৩৫ লাখ শিশু শ্রমিক রয়েছে এবং ১০ লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত— এ তথ্য জানিয়ে শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, শিশুশ্রম প্রতিরোধে শিশুদের কাজে নিয়োগ করা ব্যক্তিদের শাস্তি কয়েকগুণ বাড়ানো হবে। সেই সঙ্গে পরিবর্তন করা হবে শিশুশ্রমের সংজ্ঞা।

৫ দিন আগে