জাকির আহমদ খান কামাল
শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির ওপর টিকে আছে বর্তমান বিশ্ব। বিশ্ব অর্থনীতির সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়েছে শিল্প বিপ্লবের ফলে। বাষ্পীয় ইঞ্জিনের নানামুখী ব্যবহারের ফলে ১৭৮০ সালে প্রথম শিল্প বিপ্লব শুরু হয়।
বিদ্যুৎ আবিষ্কারের ফলে এবং নানামুখী ব্যবহারে ১৮৭০ সালে দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লব শুরু। ১৯৬৯ সালে ইন্টারনেট আবিষ্কার ও তথ্যপ্রযুক্তির সহজ ও দ্রুত ব্যবহারের ফলে তৃতীয় শিল্প বিপ্লব শুরু। তারই ধারাবাহিকতায় প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল বিপ্লবকেই বলা হয় চতুর্থ শিল্প। ম্যানুয়াল জগৎ ছেড়ে শুরু হয় ভার্চুয়াল জগতের যাত্রা।
এই বিপ্লবের মূল ভিত্তি জ্ঞান। নতুন নতুন উদ্ভাবনী ধারণা বদলে দিয়েছে বিশ্ব অর্থনীতির সব সনাতনী হিসাব নিকাশ। জ্ঞানভিত্তিক বর্তমান প্রজন্ম যে বিশাল আলোর প্রদীপ জ্বেলেছে, তার নিচেও রয়েছে অস্বস্তিকর অন্ধকার।
বৈষম্যের দেয়ালে ঘেরা এই বিশ্বে এখনও ২০ কোটির বেশি শিশু রয়েছে সাধারণ শিক্ষার বাইরে। যারা যাচ্ছে, তারাও আবার অনেক বিদ্যালয়ে গিয়ে যা শেখার তা শিখছে না। এভাবে চলতে থাকলে ২০৩০ সালে নিম্ন আয়ের দেশে মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষায় দক্ষতা অর্জন করতে পারবে, আবার কম আয়ের দেশে এই সংখ্যা আরও কম হতে পারে। এই বৈষম্য দূর করতে পূর্বশর্ত প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। প্রাথমিক শিক্ষার মতো একেবারে গোড়া থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে নানারকম সংকট বিদ্যমান। এই সংকটগুলো শুধু শিক্ষার্থীদের নয়, বরং সমগ্র জাতির উন্নয়নে বাধা তৈরি করছে। জাতীয় উন্নয়নের জন্য এই খাতের পুনর্গঠন অত্যন্ত জরুরি।
এসব বিবেচনায় বর্তমান অর্থবছরে শিক্ষায় যথাযথ অর্থায়ন প্রয়োজন। ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) ২ দশমিক শূন্য আট শতাংশ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ ছিল জিডিপির ১ দশমিক আট তিন শতাংশ, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষাখাতে মোট বরাদ্দ ছিল জিডিপির ১ দশমিক সাত ছয় শতাংশ। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ছিল ১ দশমিক ছয় নয় শতাংশ। স্পষ্টতই ক্রমান্বয়ে বরাদ্দ নিম্নমুখী।
আজ সোমবার (২ জুন) মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে প্রাধান্য দিয়ে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য সাত লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেওয়া হতে পারে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। সে দিক থেকেও মোট বরাদ্দও নিম্নমুখী।
স্বভাবিকভাবে অর্থমন্ত্রীরা বাজেট উপস্থাপন করে থাকেন জাতীয় সংসদে। সংসদ না থাকায় অর্থ উপদেষ্টা বাজেট উপস্থাপন করবেন টেলিভিশনের পর্দায়। রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে এ বাজেট ঘোষণা করা হবে। সর্বশেষ ২০০৭-০৮ সালে টেলিভিশনে ভাষণের মাধ্যমে দুটি বাজেট ঘোষণা করেছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে প্রাধান্য দেওয়া হলেও এবারের বাজেটে নজর থাকবে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, জ্বালানি সাশ্রয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দক্ষতা উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে এ বাজেটে। সর্বোপরি যেন মানুষের জীবনযাত্রা যেন সহজ হয়, তা থাকবে বাজেটের অন্যতম লক্ষ্য।
এ ছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা এবং শ্বেতপত্র কমিটি ও টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনের সুপারিশের প্রতিফলন থাকতে পারে বাজেটে। কারণ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের এটি হবে প্রথম বাজেট।
এশিয়ার সব দেশের তুলনায় বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ সর্বনিম্ন। সেইসঙ্গে রয়েছে চরম বৈষম্য। ৯৫ শতাংশ মানুষের সন্তানেরা মানসম্পন্ন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জিডিপির অনুপাতে শিক্ষায় বরাদ্দ অন্তত ৬ শতাংশে উন্নীত করা প্রয়োজন। শুধু তাই নয়, শিক্ষা খাতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভুটানে জিডিপির ৬ দশমিক ৬ শতাংশ, আফগানিস্তানের ৪ দশমিক ১ এবং ভারত ও পাকিস্তান বরাদ্দ দেয় ২ দশমিক ৯ শতাংশ। শিক্ষা খাতে বরাদ্দের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এদের সবার চেয়ে নিচেই শুধু নয়, নিম্নগামীও বটে।
বাজেটের এ ভয়াবহ চিত্র একটি জাতির শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য অশনিসংকেত বয়ে আনে। শিক্ষা খাতকে ভবিষ্যতের উত্তম বিনিয়োগ বিবেচনায় প্রয়োজনীয় ব্যয় বরাদ্দ বাজেটে না থাকলে সমাজে বেকারত্ব ও অপরাধপ্রবণতা বাড়বে এবং তা ব্যাপকভাবে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে দেশের রাজনীতি, আইন, অর্থনীতি, সমাজনীতি, সংস্কৃতি, সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধ বিকাশে, যার কুফল জাতিকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে ভোগ করতে হবে।
বাংলাদেশে শিক্ষকদের অধিকার ও মর্যাদার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। আমাদের সমাজব্যবস্থায় শিক্ষকের অবস্থান, মর্যাদা ও বেতন আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের আলোকে চরম নিম্নগামী। শিক্ষকদের এ করুণ অবস্থা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। একটা সময় শিক্ষক বলতে বোঝাত জীর্ণশীর্ণ চেহারা, মলিন জামা, পায়ে ছেঁড়া জুতা, হাতে তালি দেওয়া ছাতা। ঠিক আজও শিক্ষকদের সেই একই দশা। রাজপথে তাদের বেতনের দাবিতে করুণ চিত্র দেখতে হয় প্রতিনিয়ত।
শিক্ষকদের জীবনমান উন্নয়নে ও তাদের মর্যাদা বাড়াতে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকেই বিশেষ অনীহা দেখা যায়। প্রশাসনিক মর্যাদার বিচারে শিক্ষকদের রাখা হয় পেছনের সারিতে। আমলাতান্ত্রিক অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণে শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার, মর্যাদা, দাবি আদায়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।
এ পেশায় আশা করা হয় শ্রেষ্ঠ মেধাবীদের অবস্থান। কিন্তু তৃণমূল পর্যায়ে লক্ষ করলে দেখা যায়, মেধাবী শিক্ষার্থীরা তাদের স্বপ্ন বেঁধে রাখে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিচারক, প্রশাসক— এ রকম কোনো না কোনো পেশায়, যেখানে প্রচুর টাকার পাশাপাশি রয়েছে সামাজিক শক্ত অবস্থান। তাছাড়া শিক্ষকদের উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা খাতে বিনিয়োগ স্বল্পতার কারণে দক্ষ শিক্ষকের অভাবও পরিলক্ষিত হচ্ছে।
শিক্ষা খাতে সঠিক ও পরিকল্পিত বিনিয়োগ ছাড়া দক্ষ শিক্ষকের অভাব নিরসন ও শিক্ষক পেশায় মেধাবীদের অবস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। শিক্ষকতা পেশায় মেধাবীদের অবস্থান নিশ্চিত করা ছাড়া নতুন প্রজন্মকে সম্পদে পরিণত করা সম্ভব নয়। নতুন প্রজন্মকে সম্পদে পরিণত করতে না পারলে টেকসই উন্নয়নও বাধাগ্রস্ত হবে।
শিক্ষা ক্ষেত্রে জাতির প্রত্যাশা পূরণে নিম্নগামী বাজেট দিয়ে ঊর্ধ্বগামী শিক্ষা সম্ভব নয়। তাই বাজেট প্রণয়ন সংশ্লিষ্ট পরিকল্পনাবিদদের কাছে সুপারিশ থাকবে শিক্ষা খাতে অন্তত জিডিপির ৬ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও কলাম লেখক
শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির ওপর টিকে আছে বর্তমান বিশ্ব। বিশ্ব অর্থনীতির সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়েছে শিল্প বিপ্লবের ফলে। বাষ্পীয় ইঞ্জিনের নানামুখী ব্যবহারের ফলে ১৭৮০ সালে প্রথম শিল্প বিপ্লব শুরু হয়।
বিদ্যুৎ আবিষ্কারের ফলে এবং নানামুখী ব্যবহারে ১৮৭০ সালে দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লব শুরু। ১৯৬৯ সালে ইন্টারনেট আবিষ্কার ও তথ্যপ্রযুক্তির সহজ ও দ্রুত ব্যবহারের ফলে তৃতীয় শিল্প বিপ্লব শুরু। তারই ধারাবাহিকতায় প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল বিপ্লবকেই বলা হয় চতুর্থ শিল্প। ম্যানুয়াল জগৎ ছেড়ে শুরু হয় ভার্চুয়াল জগতের যাত্রা।
এই বিপ্লবের মূল ভিত্তি জ্ঞান। নতুন নতুন উদ্ভাবনী ধারণা বদলে দিয়েছে বিশ্ব অর্থনীতির সব সনাতনী হিসাব নিকাশ। জ্ঞানভিত্তিক বর্তমান প্রজন্ম যে বিশাল আলোর প্রদীপ জ্বেলেছে, তার নিচেও রয়েছে অস্বস্তিকর অন্ধকার।
বৈষম্যের দেয়ালে ঘেরা এই বিশ্বে এখনও ২০ কোটির বেশি শিশু রয়েছে সাধারণ শিক্ষার বাইরে। যারা যাচ্ছে, তারাও আবার অনেক বিদ্যালয়ে গিয়ে যা শেখার তা শিখছে না। এভাবে চলতে থাকলে ২০৩০ সালে নিম্ন আয়ের দেশে মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষায় দক্ষতা অর্জন করতে পারবে, আবার কম আয়ের দেশে এই সংখ্যা আরও কম হতে পারে। এই বৈষম্য দূর করতে পূর্বশর্ত প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। প্রাথমিক শিক্ষার মতো একেবারে গোড়া থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে নানারকম সংকট বিদ্যমান। এই সংকটগুলো শুধু শিক্ষার্থীদের নয়, বরং সমগ্র জাতির উন্নয়নে বাধা তৈরি করছে। জাতীয় উন্নয়নের জন্য এই খাতের পুনর্গঠন অত্যন্ত জরুরি।
এসব বিবেচনায় বর্তমান অর্থবছরে শিক্ষায় যথাযথ অর্থায়ন প্রয়োজন। ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) ২ দশমিক শূন্য আট শতাংশ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ ছিল জিডিপির ১ দশমিক আট তিন শতাংশ, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষাখাতে মোট বরাদ্দ ছিল জিডিপির ১ দশমিক সাত ছয় শতাংশ। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ছিল ১ দশমিক ছয় নয় শতাংশ। স্পষ্টতই ক্রমান্বয়ে বরাদ্দ নিম্নমুখী।
আজ সোমবার (২ জুন) মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে প্রাধান্য দিয়ে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য সাত লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেওয়া হতে পারে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। সে দিক থেকেও মোট বরাদ্দও নিম্নমুখী।
স্বভাবিকভাবে অর্থমন্ত্রীরা বাজেট উপস্থাপন করে থাকেন জাতীয় সংসদে। সংসদ না থাকায় অর্থ উপদেষ্টা বাজেট উপস্থাপন করবেন টেলিভিশনের পর্দায়। রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে এ বাজেট ঘোষণা করা হবে। সর্বশেষ ২০০৭-০৮ সালে টেলিভিশনে ভাষণের মাধ্যমে দুটি বাজেট ঘোষণা করেছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে প্রাধান্য দেওয়া হলেও এবারের বাজেটে নজর থাকবে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, জ্বালানি সাশ্রয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দক্ষতা উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে এ বাজেটে। সর্বোপরি যেন মানুষের জীবনযাত্রা যেন সহজ হয়, তা থাকবে বাজেটের অন্যতম লক্ষ্য।
এ ছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা এবং শ্বেতপত্র কমিটি ও টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনের সুপারিশের প্রতিফলন থাকতে পারে বাজেটে। কারণ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের এটি হবে প্রথম বাজেট।
এশিয়ার সব দেশের তুলনায় বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ সর্বনিম্ন। সেইসঙ্গে রয়েছে চরম বৈষম্য। ৯৫ শতাংশ মানুষের সন্তানেরা মানসম্পন্ন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জিডিপির অনুপাতে শিক্ষায় বরাদ্দ অন্তত ৬ শতাংশে উন্নীত করা প্রয়োজন। শুধু তাই নয়, শিক্ষা খাতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভুটানে জিডিপির ৬ দশমিক ৬ শতাংশ, আফগানিস্তানের ৪ দশমিক ১ এবং ভারত ও পাকিস্তান বরাদ্দ দেয় ২ দশমিক ৯ শতাংশ। শিক্ষা খাতে বরাদ্দের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এদের সবার চেয়ে নিচেই শুধু নয়, নিম্নগামীও বটে।
বাজেটের এ ভয়াবহ চিত্র একটি জাতির শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য অশনিসংকেত বয়ে আনে। শিক্ষা খাতকে ভবিষ্যতের উত্তম বিনিয়োগ বিবেচনায় প্রয়োজনীয় ব্যয় বরাদ্দ বাজেটে না থাকলে সমাজে বেকারত্ব ও অপরাধপ্রবণতা বাড়বে এবং তা ব্যাপকভাবে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে দেশের রাজনীতি, আইন, অর্থনীতি, সমাজনীতি, সংস্কৃতি, সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধ বিকাশে, যার কুফল জাতিকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে ভোগ করতে হবে।
বাংলাদেশে শিক্ষকদের অধিকার ও মর্যাদার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। আমাদের সমাজব্যবস্থায় শিক্ষকের অবস্থান, মর্যাদা ও বেতন আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের আলোকে চরম নিম্নগামী। শিক্ষকদের এ করুণ অবস্থা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। একটা সময় শিক্ষক বলতে বোঝাত জীর্ণশীর্ণ চেহারা, মলিন জামা, পায়ে ছেঁড়া জুতা, হাতে তালি দেওয়া ছাতা। ঠিক আজও শিক্ষকদের সেই একই দশা। রাজপথে তাদের বেতনের দাবিতে করুণ চিত্র দেখতে হয় প্রতিনিয়ত।
শিক্ষকদের জীবনমান উন্নয়নে ও তাদের মর্যাদা বাড়াতে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকেই বিশেষ অনীহা দেখা যায়। প্রশাসনিক মর্যাদার বিচারে শিক্ষকদের রাখা হয় পেছনের সারিতে। আমলাতান্ত্রিক অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণে শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার, মর্যাদা, দাবি আদায়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।
এ পেশায় আশা করা হয় শ্রেষ্ঠ মেধাবীদের অবস্থান। কিন্তু তৃণমূল পর্যায়ে লক্ষ করলে দেখা যায়, মেধাবী শিক্ষার্থীরা তাদের স্বপ্ন বেঁধে রাখে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিচারক, প্রশাসক— এ রকম কোনো না কোনো পেশায়, যেখানে প্রচুর টাকার পাশাপাশি রয়েছে সামাজিক শক্ত অবস্থান। তাছাড়া শিক্ষকদের উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা খাতে বিনিয়োগ স্বল্পতার কারণে দক্ষ শিক্ষকের অভাবও পরিলক্ষিত হচ্ছে।
শিক্ষা খাতে সঠিক ও পরিকল্পিত বিনিয়োগ ছাড়া দক্ষ শিক্ষকের অভাব নিরসন ও শিক্ষক পেশায় মেধাবীদের অবস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। শিক্ষকতা পেশায় মেধাবীদের অবস্থান নিশ্চিত করা ছাড়া নতুন প্রজন্মকে সম্পদে পরিণত করা সম্ভব নয়। নতুন প্রজন্মকে সম্পদে পরিণত করতে না পারলে টেকসই উন্নয়নও বাধাগ্রস্ত হবে।
শিক্ষা ক্ষেত্রে জাতির প্রত্যাশা পূরণে নিম্নগামী বাজেট দিয়ে ঊর্ধ্বগামী শিক্ষা সম্ভব নয়। তাই বাজেট প্রণয়ন সংশ্লিষ্ট পরিকল্পনাবিদদের কাছে সুপারিশ থাকবে শিক্ষা খাতে অন্তত জিডিপির ৬ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও কলাম লেখক
একটি জাতির উন্নয়নের ভিত্তি তার জনশক্তির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহারের উপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল দেশে, জনসংখ্যাগত স্থিতিশীলতা (Demographic Stability) অর্জন করা এখন আর কেবল জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের একটি কৌশল নয়, বরং এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং সুশাসনের এক অবিচ্ছেদ্য অং
১৮ দিন আগেরাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকায় ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা বিএনপির প্রতিপক্ষ এখন জামায়াতে ইসলামি। জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করা গেলে জামায়াত তখন বিএনপির শক্ত বা সবল প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে পারে। এমনকি অন্যান্য ইসলামি দলগুলো সঙ্গে নিয়ে জামায়াত দরকষাকষির সর্বোচ্চ জায়গায় পৌঁছাতে পারে।
১৯ দিন আগেঝিনাইদহের কৃষক শ্রী হরিপদ কাপালীর হাতে হরি ধানের আবিষ্কার দুই দশক আগে যার কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহনের সুযোগ হয়নি কেবল দারিদ্রতার কারনে। এখানে উল্লেখ্য যে হরিপদ কাপালী ১৯২২ সালে ঝিনাইদহ জেলার সদর উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন এবং ২০১৮ সালের ৬ই জুলাই নিজ শ্বশুরালয় আহসান নগর গ্রামে মৃত্
১৯ দিন আগেগত বছরের জুনে ব্যাংক ঋণের সুদহার ছিল ৯ শতাংশ, যা বর্তমানে ১৪–১৫ শতাংশে পৌঁছেছে। শোনা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও এক দফা নীতি সুদহার বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে। এমন দফায় দফায় সুদহার বৃদ্ধির ফলে বড় প্রতিষ্ঠানও চাপে পড়তে পারে এবং বহু প্রতিষ্ঠান রুগ্ন তালিকাভুক্ত হবে। উল্লেখযোগ্য, ২০২০ সালের এপ্রিলে স
১৯ দিন আগে