পা হারানো শিক্ষার্থী ইমরানের জবানবন্দি

‘নো ট্রিটমেন্ট নো রিলিজ’ নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা

প্রতিবেদক, রাজনীতি ডটকম
আপডেট : ০৪ আগস্ট ২০২৫, ১৯: ০৫

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় জবানবন্দি দিয়েছেন পা হারানো শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল ইমরান।

সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এ মামলার দ্বিতীয় সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন তিনি। জবানবন্দিতে ইমরান বলেন, রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র (পঙ্গু হাসপাতাল) পরিদর্শনে গিয়ে শেখ হাসিনা ‘নো ট্রিটমেন্ট নো রিলিজ’ নির্দেশ দিয়েছিলেন। আল ইমরান এই নির্দেশ শুনেছেন বলে জানান।

জবানবন্দিতে শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল ইমরান বলেন, গত বছরের ১৯ জুলাই রাজধানীর বিজয়নগর পানির ট্যাংক এলাকায় তিনি গুলিবিদ্ধ হন। তার বাঁ হাঁটুর নিচে গুলি লাগে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুর্নবাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) তার চিকিৎসা চলছিল। গত বছরের ২৬ অথবা ২৭ জুলাই সকাল ৯টা-১০টার দিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পঙ্গু হাসপাতাল পরিদর্শনে যান। একপর্যায়ে শেখ হাসিনা তার কাছে যান। শেখ হাসিনাকে তিনি ‘ম্যাডাম’ বলে সম্বোধন করেন। শেখ হাসিনা তাকে ‘আপা’ বলে ডাকতে বলেন।

আবদুল্লাহ আল ইমরান আরও বলেন, তিনি কোথায় পড়াশোনা করেন, হলে থাকেন কি না, কেন থাকেন না, সে সম্পর্কে শেখ হাসিনা জানতে চান। তিনি বলেন, ‘একপর্যায়ে শেখ হাসিনা বুঝতে পারেন, আমি আন্দোলনকারী। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, পুলিশ তোমাকে গুলি করেছে? আমি বলি, পুলিশ আমাকে সরাসরি গুলি করে। পুলিশের পোশাকে কারা ছিল, সেটা আমি জানি না। আমার পর আরও চার থেকে পাঁচজনের সঙ্গে তিনি কথা বলেন। পরে শেখ হাসিনা যখন চলে যাচ্ছিলেন, তখন হেল্পডেস্কের কাছে গিয়ে “নো ট্রিটমেন্ট নো রিলিজ” অর্ডার দিয়ে যান, যা আমি শুনতে পাই।’

তবে ‘নো ট্রিটমেন্ট নো রিলিজ’ মানে কী, তখন বুঝতে পারেননি বলেও জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন আবদুল্লাহ আল ইমরান। তিনি বলেন, একপর্যায়ে তিনি দেখেন, যথাসময়ে তার অস্ত্রোপচার হচ্ছে না। বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে পারছেন না। তার বাবা হাসপাতাল থেকে নিয়ে যেতে চাইলেও নিতে পারছিলেন না। তখন তিনি বুঝতে পারেন ‘নো ট্রিটমেন্ট নো রিলিজ’–এর মানে। তাঁর পা কেটে তাঁকে কারাগারে নিতে চেয়েছিল।

এ ঘটনার জন্য শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে দায়ী করেন আবদুল্লাহ আল ইমরান।

এদিন জুলাই আন্দোলনে আহত ঢাকা কলেজের এই ছাত্র আব্দুল্লাহ আল ইমরান গুলি করে একটা, মরে একটা, একটাই যায়: এই ভিডিওর সাক্ষী দিয়ে সাবেক আইজিপি মামুন, শেখ হাসিনা, কামালের সাজা চান তিনি। পরে তার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে জেরা করেন তাকে স্টেট ডিফেন্স।

এর আগে সকালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। দ্বিতীয় সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন ঢাকা কলেজের ছাত্র আব্দুল্লাহ আল ইমরান। যেখানে তিনি গেল বছর জুলাইয়ে তার সঙ্গে হওয়া নির্মম ঘটনা তুলে ধরেন।

গতকাল রোববার এই মামলার প্রথম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন মাইক্রোবাসচালক খোকন চন্দ্র বর্মণ।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় গতকাল ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন ও সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে বিচার শুরু হয়।

গত বছরের জুলাই ও আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে যে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল, তার এক বছরের মাথায় এই মামলার মাধ্যমে সেই অপরাধের আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো।

এর আগে সকাল ৯ টায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি মামুনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। রোববার এ মামলায় সূচনা বক্তব্য ও সাক্ষ্য শুরু হয়। সূচনা বক্তব্যে রাষ্ট্রপক্ষ শেখ হাসিনা, কামালের সর্বোচ্চ সাজা চান।

ad
ad

খবরাখবর থেকে আরও পড়ুন

বৃহস্পতিবার সব প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা

আগামীকাল দেশের সকল প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা সব বন্ধ থাকবে। বৃহস্পতিবার বিকেলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

১২ ঘণ্টা আগে

ডিএমপি কমিশনারের দুঃখ প্রকাশ, শাহবাগ ছাড়লেন আন্দোলনকারীরা

ডিএমপি কমিশনারের ক্ষমা চাওয়ার পরপরই দুঃখ প্রকাশের পরপরই শাহবাগ ছাড়তে থাকেন আন্দোলনকারী প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা বলেন, জনদুর্ভোগ তৈরি করে— এমন কোনো কর্মসূচি আর দেবেন না। পাশাপাশি দাবি-দাওয়া নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলবে।

১৩ ঘণ্টা আগে

সাংবাদিক বিভুরঞ্জনের মৃত্যুতে ১০৯ দেশি-বিদেশি নাগরিকের বিবৃতি

প্রথিতযশা সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের মৃত্যু ও এর আগে তার লিখে যাওয়া ‘খোলা চিঠি’তে উঠে আসা বিভিন্ন অভিযোগের তদন্ত দাবি করেছেন দেশি-বিদেশি ১০৯ নাগরিক। তাদের মধ্যে রয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক, শিক্ষক, আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মী ও অ্যাক্টিভিস্টসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।

১৩ ঘণ্টা আগে

ওয়ান ব্যাংকে কাজের সুযোগ, পদসংখ্যা ১০

১৪ ঘণ্টা আগে