৫ ফেব্রুয়ারির ঘটনার ব্যাখ্যা চবি ছাত্রীদের, বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি

চট্টগ্রাম ব্যুরো
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কৃত ছাত্রীরা রোববার সংবাদ সম্মেলন করে ৫ ফেব্রুয়ারির ঘটনার ব্যাখ্যা দেন ও বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানান। ছবি: সংগৃহীত

গত ৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা’ হলে ঘটে যাওয়া যে ঘটনার জের ধরে ১০ ছাত্রীকে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন ছাত্রীরা। বলেছেন, ছাত্রী হলের নিরাপত্তা দিতে না পারার ব্যর্থতা ঢাকতেই প্রশাসন তাদের বহিষ্কার করেছে। বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য তারা প্রশাসনকে তিন দিনের আলটিমেটাম দিয়েছেন।

রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টায় চট্টগ্রামের ষোলশহর রেলস্টেশনে সংবাদ সম্মেলন করেন চবি ছাত্রীরা। এ সময় তারা প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফের পদত্যাগ দাবি করেন।

বহিষ্কৃত ছাত্রীদের মধ্যে রওজাতুল জান্নাত, উম্মে হাবিবা বৃষ্টি, সুমাইয়া শিকদার, মাইসারা জাহান ও জান্নাতুল মাওয়া সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুমাইয়া শিকদার।

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রীরা বলেন, গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টায় বেশ কিছু শিক্ষার্থীর একটি জটলা মিছিল নিয়ে হলের সামনে গিয়ে সরাসরি ভাঙচুর শুরু করেন। এ ঘটনার তাৎক্ষণিকতায় অপ্রস্তুত নারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করা হয়। হলের ভেতরে থাকা আবাসিক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে স্লোগানের মাধ্যমে নানা ধরনের নারীবিদ্বেষমূলক কটূক্তি করা হয়।

লিখিত বক্তব্যে ছাত্রীরা বলেন, ‘প্রচণ্ড হট্টগোল ও ভাঙচুরের শব্দে আতঙ্কিত হয়ে হলে অবস্থানরত আবাসিক শিক্ষার্থীরা নিচে নেমে আসেন। তখন গেটের অন্য প্রান্তে ভাঙচুরকারী শিক্ষার্থীদের একজন অনুমতি ছাড়া ছাত্রীদের ভিডিও ধারণ করছিলেন। তখন মেয়েরা প্রতিবাদ জানাতে পাশের ছোট গেটের তালা ভেঙে মূল ভবনের বাইরে হল আঙিনায় নেমে আসে।’

তখনই সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে একজন ছাত্রীদের ‘হাসিনার দোসর’ ও ‘ফ্যাসিস্ট’ বলে গালি দেন উল্লেখ করে ছাত্রীরা বলেন, ছাত্রীরা এ অপমানজনক আচরণের তীব্র প্রতিবাদ করেন। আধা ঘণ্টা ধরে চলতে থাকা এসব ঘটনা প্রক্টরকে জানানো হলেও তিনি আশানুরূপ ব্যবস্থা নেননি বলে অভিযোগ ছাত্রীদের।

নিরাপত্তা সংকটে ভুগতে থাকা শিক্ষার্থীরা পরে প্রতিবাদ জানিয়ে উপাচার্যের বাসভবনে যান বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন ছাত্রীরা। বলেন, সেখানে গাড়ি থেকে নেমেই একজন অশোভন আচরণ শুরু করেন। গাড়ি থেকে নামা ব্যক্তিরাও ‘হাসিনার দোসর’, ‘ফ্যাসিস্ট’ বলে গালাগাল শুরু করেন। শিক্ষার্থীরা প্রথমে বুঝতেই পারেননি যে তাঁরা প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য।

ছাত্রীরা সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন, আমরা একাধিকবার প্রশাসনকে হলের নাম পরিবর্তন ও ফটকের সামনে থাকা নৌকা অপসারণ করার কথা বলেছি। প্রশাসনের কাছে দুবার লিখিত আবেদনও দিয়েছি। কিন্তু প্রশাসন সেটা করেনি। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার এই দায়ভার প্রশাসন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে।

ছাত্রীরা বলেন, প্রশাসন ছাত্রীদের হল এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। বারবার বলার পরও প্রক্টর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেননি। ছাত্রীদের সঙ্গে সহকারী প্রক্টর অশোভন আচরণ করেছেন। ‘হাসিনার দোসর’, ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যা দিয়েছেন। অশোভন আচরণ করা সহকারী একজন প্রক্টরকে একজন ছাত্রী আঘাত করেছেন, যা অনুচিত ও বিচারযোগ্য। রাতে ছাত্রদের মেয়েদের হলে যাওয়া নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ প্রশাসন নিজেদের অপরাধ ও অপকর্ম ঢাকতেই কেবল মেয়েদেরই শাস্তি দিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলন থেকে ছাত্রীরা পাঁচটি দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো—

  • অন্যায়ভাবে দেওয়া বহিষ্কারাদেশ তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রত্যাহার;
  • প্রক্টরিয়াল বডি অপসারণের আগে নতুন করে এ ঘটনার বিচারপ্রক্রিয়া না চালানো;
  • হলে হামলাকারী শিক্ষার্থীদের বিচার করা;
  • ছাত্রীদের সঙ্গে উগ্র আচরণ ও নারীবিদ্বেষী বিভিন্ন মন্তব্য করা ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের বিচার; এবং
  • সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারীদের নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য দেওয়া প্রক্টরের পদত্যাগ ও ক্যাম্পাসে ফ্যাসিবাদের চিহ্ন হিসেবে পরিচিত সব স্থাপনার নাম পরিবর্তন করা।

এর আগে ৫ ফেব্রুয়ারির ওই ঘটনার জের ধরে সহকারী প্রক্টরকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার দায়ে গত বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) একজনকে স্থায়ী বহিষ্কার করে সনদ বাতিলসহ আরও ৯ জনকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করে চবি কর্তৃপক্ষ।

ad
ad

খবরাখবর থেকে আরও পড়ুন

শেখ হাসিনাকে ফেরাতে চিঠি ইস্যুতে মুখ খুলছে না পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

পররাষ্ট্র সচিব সিয়াম বলেন, এ সংবাদ সম্মেলন ও সংবাদ কর্মীদের সঙ্গে যে আলাপ চলছে, তা সম্পূর্ণই ভুটান সফরসংক্রান্ত। এর বাইরে অন্য কোনো বিষয়ে আলোচনা করা অসৌজন্যমূলক হবে। আমি আশা করি আপনারা বিষয়টি বুঝবেন এবং প্রশ্নোত্তর পর্বও দ্বিপাক্ষিক সফরেই সীমাবদ্ধ রাখবেন।

৭ ঘণ্টা আগে

হাসিনা-কামালকে ফেরাতে আন্তর্জাতিক আদালতে যাবে সরকার

জুলাই অভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ফেরত দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার ভারতকে চিঠি পাঠাবে। সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল এই তথ্য জানিয়েছেন।

৯ ঘণ্টা আগে

সাকিব আল হাসানকে দুদকে তলব

শেয়ার বাজার সংক্রান্ত মামলার আসামি ক্রিকেটার ও মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে তাকে আগামী ২৬ নভেম্বর হাজির হওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

৯ ঘণ্টা আগে

গণভোট আইন কবে, জানালেন আইন উপদেষ্টা

আগামী ৩ থেকে ৪ কার্যদিবসের মধ্যে গণভোট আইন করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।

৯ ঘণ্টা আগে