ঐতিহ্য

মঙ্গল শোভাযাত্রা: বদলে গেল নাম, বদলাবে কি বার্তা?

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ১৮: ২৭
পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভযাত্রা। এ বছর বাঙালি ছাড়াও সব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে শোভাযাত্রা আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে শুরু হওয়া বাংলা নববর্ষের ঐতিহ্যবাহী ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র নাম বদলে এখন থেকে হবে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’।

চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলাম শেখ শুক্রবার (১১ এপ্রিল) সকালে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন।

ড. আজহারুল বলেন, “নাম পরিবর্তন হলেও আয়োজনের মূল ভাবনা, চেতনা ও প্রতিবাদী রূপ অক্ষুণ্ন থাকবে।”

তবে এ ঘোষণার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে প্রবল প্রতিক্রিয়া। প্রশ্ন উঠছে— এটি কি শুধুই একটি নাম বদল, না কি এর পেছনে আছে সংস্কৃতি ও রাজনীতির গভীর টানাপোড়েন?

মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিকথা

মঙ্গল শোভাযাত্রা কয়েক যুগ ধরে বাংলার ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে ছিল। পেয়েছিল ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি। সেই ঐতিহ্যেই এবার ছেদ পড়তে যাচ্ছে, এর নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে।

ষাটের দশকে পাকিস্তান সরকার রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ করলে ছায়ানট রমনার বটমূলে শুরু করে বর্ষবরণের আয়োজন। এরপর প্রয়াত মতিয়া চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি শোভাযাত্রা বের হয়—সেখানে লেখা ছিল “এসো হে বৈশাখ”।

১৯৮৫ সালে যশোরের চারুপীঠ একটি শোভাযাত্রা আয়োজন করে, যা ঢাকার চারুকলাকে অনুপ্রাণিত করে। ১৯৮৮ সালের বন্যার সময় চারুকলার শিক্ষার্থীদের ত্রাণ তৎপরতা থেকে তৈরি হয় পারস্পরিক বন্ধন। ১৯৮৯ সালের পহেলা বৈশাখে ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামে চারুকলা থেকে শোভাযাত্রা বের হয়, যার ভিতরে ছিল প্রতিবাদী মঙ্গল চেতনা।

ওয়াহিদুল হক, ইমদাদ হোসেন, রফিকুন নবীর মত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা এই উদ্যোগে ভূমিকা রাখেন। যদিও প্রথমদিকে ‘মঙ্গল’ শব্দ নিয়ে সংশয় থাকলেও পরে সেটিই প্রতিষ্ঠিত হয়।

স্লোগান ও সময়কে ধারণ করা

মঙ্গল শোভাযাত্রা শুধু উৎসব নয়—সময়ের প্রতিবিম্ব। প্রতিবছরের প্রতিপাদ্য স্লোগান হয়ে ওঠে সমাজ ও রাজনীতির এক প্রতীকী ভাষ্য।

  • ২০২৪: সালে ছিল—“আমরা তো তিমিরবিনাশী” (জীবনানন্দ)।
  • ২০২৩: “বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি” (রবীন্দ্রনাথ)।
  • ২০২২: “নির্মল করো মঙ্গল করো মলিন মর্ম মুছায়ে” (কোভিড-পরবর্তী)।
  • ২০২১: “কাল ভয়ংকরে বেশে এবার ঐ আসে সুন্দর”।
  • ২০২০: “আপনা মাঝে শক্তি ধরো, নিজেরে করো জয়” (কোভিডে প্রতীকী পোস্টার)।
  • ২০১৯: “মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে”।
  • ২০১৮: “মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি” (লালন)।
  • ২০১৭: “আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্য সুন্দর”।
  • ২০১৬: “অন্তর মম বিকশিত করো, অন্তরতর হে” (শিশু নির্যাতন বিরোধ)।
  • ২০১৫: “অনেক আলো জ্বালতে হবে মনের অন্ধকারে” (ব্লগার হত্যার প্রতিবাদ)।
  • ২০১৩: “রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ অনিঃশেষ” (সাম্প্রদায়িকতা বিরোধ)।

নতুন নাম, পুরোনো বার্তা?

২০২৫ সালের শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য—“নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান”—একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক বার্তা বহন করছে। অথচ এর নাম বদলে এমন নিরপেক্ষ টোনে যাওয়ায় বিভ্রান্ত বোধ করছেন অনেকেই।

সাংস্কৃতিক কর্মী রুবিনা আক্তার বলেন, “শুধু আনন্দ নয়, শোভাযাত্রা ছিল মানবিকতা ও প্রতিবাদের প্রতীক। নামের এই পরিবর্তন তার স্পষ্ট বার্তাকেই ধোঁয়াটে করে দিচ্ছে।”

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদিও বলছে, সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে এই পরিবর্তন, তবু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—বহু বছরের ঐতিহ্য ও প্রতিরোধের চেতনাকে কি এভাবে বদলে দেওয়া যায়?

ad
ad

ফিচার থেকে আরও পড়ুন

বুড়িগঙ্গার মহাশোল

আটার রুটি, হাঁসের ঝোল বুড়িগঙ্গার মহাশোল

১৬ ঘণ্টা আগে

নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার বিব্রতকর ঘটনা: ফারুকী

ফারুকী লিখেছেন, আমি সাধারণত চেষ্টা করি আমার মন্ত্রণালয়ের কাজের বাইরে কথা না বলতে। কিন্তু আমার তো একটা পরিচয় আছে। আমি এই ইন্ডাস্ট্রিরই মানুষ ছিলাম এবং দুদিন পর সেখানেই ফিরে যাব। নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার বিব্রতকর একটি ঘটনা হয়ে থাকল আমাদের জন্য।

২০ ঘণ্টা আগে

ট্রেড লাইসেন্সের দুই গল্প: নতুন শুরু ও নবায়ন

মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস ব্যবহার করে পেমেন্ট করেন। তিনদিন পর অফিসার আসেন দোকান দেখতে। সপ্তাহের মধ্যে লাইসেন্স রেডি হয়। ডাউনলোড করে প্রিন্ট দেন।

১ দিন আগে

পেট ব্যথা থেকে মুক্তির উপায় কী?

প্রথমেই জানিয়ে রাখা ভালো, সব পেট ব্যথাই এক নয়। কোনোটা হজমের সমস্যা, কোনোটা ইনফেকশন, আবার কোনোটা মানসিক চাপ থেকেও হয়ে থাকে। তাই ব্যথার ধরন, সময়কাল, ও অবস্থান বুঝে নিতে হয় আসল কারণটা।

১ দিন আগে