অরুণাভ বিশ্বাস
১৭৬১ সালের ১৪ জানুয়ারি, উত্তরের শীতপ্রধান আকাশের নিচে দিল্লির উপকণ্ঠে পানিপথের বিস্তীর্ণ ময়দানে সংঘটিত হয়েছিল উপমহাদেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ যুদ্ধ। এটিই ছিল পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ, যেখানে মুখোমুখি হয়েছিল মরাঠা সাম্রাজ্য এবং আফগান শাসক আহমদ শাহ আবদালির নেতৃত্বাধীন বাহিনী। এই যুদ্ধ শুধু দুই পক্ষের ক্ষমতার সংঘাত ছিল না, বরং পুরো ভারতের ভবিষ্যতের গতিপথকে আমূল পালটে দিয়েছিল। আধুনিক ঐতিহাসিকরা মনে করেন, এই যুদ্ধে মরাঠাদের পরাজয় না হলে হয়তো ব্রিটিশরা ভারত জয় করতে এত সহজে পারত না। ইতিহাসবিদরা একে শুধু একটি যুদ্ধ নয়, বরং একটি যুগের অবসান এবং আরেক যুগের সূচনা হিসেবে চিহ্নিত করেন।
এই যুদ্ধ কেন হয়েছিল তা বুঝতে গেলে আমাদের উনিশ শতকের মাঝামাঝি ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি একবার ঝালিয়ে নিতে হবে। ১৭০৭ সালে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর থেকেই মুঘল সাম্রাজ্যের পতন শুরু হয়। দিল্লির সিংহাসন তখন নিছক প্রতীকি ক্ষমতার নিদর্শন হয়ে দাঁড়ায়। এই শূন্যতার সুযোগ নিয়ে একদিকে যেমন বিভিন্ন প্রাদেশিক নবাব ও রাজারা ক্ষমতার জন্য লড়াই করতে থাকে, অন্যদিকে মরাঠা সাম্রাজ্য উত্তর ও মধ্য ভারতে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে।
মরাঠারা মুঘলদের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে দিল্লি পর্যন্ত তাদের প্রভাব বাড়িয়ে তোলে। ১৭৫৭ সালে তারা মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় আলমগীরকে রক্ষাকবচ হিসেবে ব্যবহার করে একপ্রকার দিল্লি দখল করে নেয়। অপরদিকে, উত্তর-পশ্চিম ভারতে আফগান শাসক আহমদ শাহ আবদালি তখন পাঞ্জাব পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছেন এবং একের পর এক অভিযান চালিয়ে মুঘলদের ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে এক নতুন ক্ষমতার প্রতিচ্ছবি গড়তে চাইছিলেন।
মরাঠাদের এই অগ্রগতি আবদালির জন্য এক বড় হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষত যখন তারা পাঞ্জাব ও দিল্লি অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে থাকে, তখন আবদালি বুঝতে পারেন, মরাঠাদের প্রতিরোধ করা না গেলে গোটা উত্তর ভারতই তার হাতছাড়া হয়ে যাবে। তিনি এক বিপুল সেনাবাহিনী নিয়ে আবার ভারত অভিযানে নামেন। এদিকে মরাঠা বাহিনীও এর মোকাবেলায় প্রস্তুত হয়, তবে কিছু ভয়াবহ কৌশলগত ভুল, বিভক্তি, এবং খাদ্য ও রসদের সংকট নিয়ে তারা যুদ্ধে নামে।
ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ হার্ল্ড ল্যাম্ব তাঁর বিখ্যাত আফগান ওয়ারস অ্যান্ড দ্য কলাপস অব দ্যা মুঘলস-এ লিখেছেন, “এই যুদ্ধ ছিল মরাঠা সাম্রাজ্যের আত্মবিশ্বাস এবং আবদালির সামরিক জ্ঞানের মধ্যে একটি রক্তাক্ত সংঘর্ষ। আবদালির পেছনে ছিল সংঘবদ্ধ পশতু যোদ্ধা, আর মরাঠাদের ছিল আলগা জোট।”
মরাঠা বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন সদাশিবরাও ভাউ এবং তার সঙ্গী বিশ্বসেনা বিষ্ণু ভট্ট, যিনি পরে যুদ্ধের স্মৃতি লিপিবদ্ধ করেন। যদিও তাদের সেনাবাহিনী ছিল প্রায় দুই লক্ষাধিক, কিন্তু খাবার, পানি ও সরবরাহে মারাত্মক ঘাটতি ছিল। দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে তারা দিল্লির আশেপাশে যুদ্ধক্ষেত্রে পৌঁছায়, কিন্তু স্থানীয় রাজারা তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। মুসলিম শাসকদের একাংশ মনে করতেন, মরাঠারা হিন্দু শাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে, তাই তারা আফগান বাহিনীকে গোপনে সমর্থন দেয়।
আহমদ শাহ আবদালির বাহিনী ছিল তুলনামূলক কম, কিন্তু তারা কৌশলে এগিয়ে যায়। তার বাহিনীতে আফগান যোদ্ধা ছাড়াও ছিলেন শাজাদা শুজা-উদ-দৌলা, ওধের নবাব, এবং রোহিলা শাসক নজীবউদ্দৌলা, যিনি মুঘল দরবারে এক প্রভাবশালী চরিত্র ছিলেন। এই জোটের সামরিক দক্ষতা, রণনীতি ও স্থানিক সহায়তা মরাঠাদের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। যুদ্ধের ঠিক আগের রাতে মরাঠারা একাধিক বার্তা পাঠিয়েছিল প্রতিবেশী রাজাদের, কিন্তু তাতে কোনো সাড়া মেলেনি।
১৪ জানুয়ারির সকাল থেকেই যুদ্ধ শুরু হয়। শুরুতে মরাঠারা কিছুটা অগ্রগতি করলেও আবদালির বাহিনীর ঘোড়সওয়ার ও কামান দাগার কৌশলে তারা দ্রুত ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। যুদ্ধ চলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, রক্তে রঞ্জিত হয় পানিপথের প্রান্তর। মরাঠা বাহিনীর বেশিরভাগ সদস্যই মারা যান বা আহত হন। এমনকি সদাশিবরাও ভাউ নিজেও যুদ্ধে প্রাণ হারান।
এই যুদ্ধের ফলাফল ছিল ভয়াবহ। ইতিহাসবিদ মার্সিয়া হেরমিন, যিনি ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট অস্টিনে ভারতের উপনিবেশ-পূর্ব ইতিহাস পড়ান, তিনি বলেন, “মরাঠারা শুধু যুদ্ধে হারেনি, তারা তাদের ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকেও হারিয়েছে। এই পরাজয়ের ধাক্কা তারা আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি।” (বাংলা অনুবাদ)
প্রায় এক লাখ মরাঠা সেনা এই যুদ্ধে নিহত হন বলে ধারণা করা হয়। প্রাণহানির এমন ভয়াবহতা আগে ভারতীয় উপমহাদেশে দেখা যায়নি। সাধারণ নাগরিক, যুদ্ধাহত সৈনিক, এমনকি মহিলারাও এই সংঘর্ষে প্রাণ হারান। যুদ্ধের পর মরাঠা নেতৃত্বে একধরনের শূন্যতা দেখা দেয়, যা পরবর্তীতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জন্য পথ সুগম করে দেয়। যদিও আবদালি উত্তর ভারতে নিজের সাম্রাজ্য বিস্তার করতে চাননি, তাই তিনি শিগগিরই কাবুলে ফিরে যান। কিন্তু তার ফেলে যাওয়া শূন্যতা আর কেউ পূরণ করতে পারেনি।
এই যুদ্ধ ব্রিটিশদের জন্য এক ‘ঐতিহাসিক সুযোগ’ তৈরি করেছিল। ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ টমাস মেটকাফ তাঁর “The Aftermath of Panipat” প্রবন্ধে লিখেছেন, “যুদ্ধ শেষ হওয়ার এক দশকের মধ্যে ব্রিটিশরা বুঝে ফেলে, ভারতে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের শক্তি ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন সময় একে একে সবাইকে পরাজিত করার।” (বাংলা অনুবাদ)
পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ ছিল নিছক একদিনের যুদ্ধ নয়, বরং ভারতের রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাসে এক ভয়ঙ্কর টার্নিং পয়েন্ট। এটি বোঝা যায় শুধু মরাঠাদের পতনের মধ্য দিয়ে নয়, বরং এটি উপমহাদেশে বিদেশি শক্তির উত্থান, স্থানীয় রাজনীতির জটিলতা এবং ক্ষমতার শূন্যতার ধারাবাহিকতায়ও। এ যুদ্ধ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ঐক্যের অভাব এবং কৌশলগত ব্যর্থতা কীভাবে ইতিহাসকে রক্তাক্ত করে তোলে।
আজও পানিপথের সেই যুদ্ধক্ষেত্র ইতিহাসপিপাসুদের আকর্ষণ করে। সেই বিস্তীর্ণ প্রান্তরে হয়তো এখনও বাতাসে ভেসে বেড়ায় মরাঠা বীরদের আর্তনাদ, আফগান যোদ্ধাদের বিজয়ের উল্লাস, আর ইতিহাসের এক অতল গহ্বরে হারিয়ে যাওয়া একটি সম্ভাব্য ভারতের দীর্ঘশ্বাস।
চাইলে এই ফিচারের জন্য এখন একটি watercolor illustration তৈরি করে দিতে পারি, যাতে থাকবে মরাঠা ও আফগান বাহিনীর যুদ্ধক্ষেত্র, ধুলিধূসর আকাশ, ছিন্নভিন্ন পতাকা ও যুদ্ধরত অশ্বারোহী সৈন্যরা। তৈরি করব?
১৭৬১ সালের ১৪ জানুয়ারি, উত্তরের শীতপ্রধান আকাশের নিচে দিল্লির উপকণ্ঠে পানিপথের বিস্তীর্ণ ময়দানে সংঘটিত হয়েছিল উপমহাদেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ যুদ্ধ। এটিই ছিল পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ, যেখানে মুখোমুখি হয়েছিল মরাঠা সাম্রাজ্য এবং আফগান শাসক আহমদ শাহ আবদালির নেতৃত্বাধীন বাহিনী। এই যুদ্ধ শুধু দুই পক্ষের ক্ষমতার সংঘাত ছিল না, বরং পুরো ভারতের ভবিষ্যতের গতিপথকে আমূল পালটে দিয়েছিল। আধুনিক ঐতিহাসিকরা মনে করেন, এই যুদ্ধে মরাঠাদের পরাজয় না হলে হয়তো ব্রিটিশরা ভারত জয় করতে এত সহজে পারত না। ইতিহাসবিদরা একে শুধু একটি যুদ্ধ নয়, বরং একটি যুগের অবসান এবং আরেক যুগের সূচনা হিসেবে চিহ্নিত করেন।
এই যুদ্ধ কেন হয়েছিল তা বুঝতে গেলে আমাদের উনিশ শতকের মাঝামাঝি ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি একবার ঝালিয়ে নিতে হবে। ১৭০৭ সালে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর থেকেই মুঘল সাম্রাজ্যের পতন শুরু হয়। দিল্লির সিংহাসন তখন নিছক প্রতীকি ক্ষমতার নিদর্শন হয়ে দাঁড়ায়। এই শূন্যতার সুযোগ নিয়ে একদিকে যেমন বিভিন্ন প্রাদেশিক নবাব ও রাজারা ক্ষমতার জন্য লড়াই করতে থাকে, অন্যদিকে মরাঠা সাম্রাজ্য উত্তর ও মধ্য ভারতে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে।
মরাঠারা মুঘলদের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে দিল্লি পর্যন্ত তাদের প্রভাব বাড়িয়ে তোলে। ১৭৫৭ সালে তারা মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় আলমগীরকে রক্ষাকবচ হিসেবে ব্যবহার করে একপ্রকার দিল্লি দখল করে নেয়। অপরদিকে, উত্তর-পশ্চিম ভারতে আফগান শাসক আহমদ শাহ আবদালি তখন পাঞ্জাব পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছেন এবং একের পর এক অভিযান চালিয়ে মুঘলদের ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে এক নতুন ক্ষমতার প্রতিচ্ছবি গড়তে চাইছিলেন।
মরাঠাদের এই অগ্রগতি আবদালির জন্য এক বড় হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষত যখন তারা পাঞ্জাব ও দিল্লি অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে থাকে, তখন আবদালি বুঝতে পারেন, মরাঠাদের প্রতিরোধ করা না গেলে গোটা উত্তর ভারতই তার হাতছাড়া হয়ে যাবে। তিনি এক বিপুল সেনাবাহিনী নিয়ে আবার ভারত অভিযানে নামেন। এদিকে মরাঠা বাহিনীও এর মোকাবেলায় প্রস্তুত হয়, তবে কিছু ভয়াবহ কৌশলগত ভুল, বিভক্তি, এবং খাদ্য ও রসদের সংকট নিয়ে তারা যুদ্ধে নামে।
ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ হার্ল্ড ল্যাম্ব তাঁর বিখ্যাত আফগান ওয়ারস অ্যান্ড দ্য কলাপস অব দ্যা মুঘলস-এ লিখেছেন, “এই যুদ্ধ ছিল মরাঠা সাম্রাজ্যের আত্মবিশ্বাস এবং আবদালির সামরিক জ্ঞানের মধ্যে একটি রক্তাক্ত সংঘর্ষ। আবদালির পেছনে ছিল সংঘবদ্ধ পশতু যোদ্ধা, আর মরাঠাদের ছিল আলগা জোট।”
মরাঠা বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন সদাশিবরাও ভাউ এবং তার সঙ্গী বিশ্বসেনা বিষ্ণু ভট্ট, যিনি পরে যুদ্ধের স্মৃতি লিপিবদ্ধ করেন। যদিও তাদের সেনাবাহিনী ছিল প্রায় দুই লক্ষাধিক, কিন্তু খাবার, পানি ও সরবরাহে মারাত্মক ঘাটতি ছিল। দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে তারা দিল্লির আশেপাশে যুদ্ধক্ষেত্রে পৌঁছায়, কিন্তু স্থানীয় রাজারা তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। মুসলিম শাসকদের একাংশ মনে করতেন, মরাঠারা হিন্দু শাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে, তাই তারা আফগান বাহিনীকে গোপনে সমর্থন দেয়।
আহমদ শাহ আবদালির বাহিনী ছিল তুলনামূলক কম, কিন্তু তারা কৌশলে এগিয়ে যায়। তার বাহিনীতে আফগান যোদ্ধা ছাড়াও ছিলেন শাজাদা শুজা-উদ-দৌলা, ওধের নবাব, এবং রোহিলা শাসক নজীবউদ্দৌলা, যিনি মুঘল দরবারে এক প্রভাবশালী চরিত্র ছিলেন। এই জোটের সামরিক দক্ষতা, রণনীতি ও স্থানিক সহায়তা মরাঠাদের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। যুদ্ধের ঠিক আগের রাতে মরাঠারা একাধিক বার্তা পাঠিয়েছিল প্রতিবেশী রাজাদের, কিন্তু তাতে কোনো সাড়া মেলেনি।
১৪ জানুয়ারির সকাল থেকেই যুদ্ধ শুরু হয়। শুরুতে মরাঠারা কিছুটা অগ্রগতি করলেও আবদালির বাহিনীর ঘোড়সওয়ার ও কামান দাগার কৌশলে তারা দ্রুত ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। যুদ্ধ চলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, রক্তে রঞ্জিত হয় পানিপথের প্রান্তর। মরাঠা বাহিনীর বেশিরভাগ সদস্যই মারা যান বা আহত হন। এমনকি সদাশিবরাও ভাউ নিজেও যুদ্ধে প্রাণ হারান।
এই যুদ্ধের ফলাফল ছিল ভয়াবহ। ইতিহাসবিদ মার্সিয়া হেরমিন, যিনি ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট অস্টিনে ভারতের উপনিবেশ-পূর্ব ইতিহাস পড়ান, তিনি বলেন, “মরাঠারা শুধু যুদ্ধে হারেনি, তারা তাদের ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকেও হারিয়েছে। এই পরাজয়ের ধাক্কা তারা আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি।” (বাংলা অনুবাদ)
প্রায় এক লাখ মরাঠা সেনা এই যুদ্ধে নিহত হন বলে ধারণা করা হয়। প্রাণহানির এমন ভয়াবহতা আগে ভারতীয় উপমহাদেশে দেখা যায়নি। সাধারণ নাগরিক, যুদ্ধাহত সৈনিক, এমনকি মহিলারাও এই সংঘর্ষে প্রাণ হারান। যুদ্ধের পর মরাঠা নেতৃত্বে একধরনের শূন্যতা দেখা দেয়, যা পরবর্তীতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জন্য পথ সুগম করে দেয়। যদিও আবদালি উত্তর ভারতে নিজের সাম্রাজ্য বিস্তার করতে চাননি, তাই তিনি শিগগিরই কাবুলে ফিরে যান। কিন্তু তার ফেলে যাওয়া শূন্যতা আর কেউ পূরণ করতে পারেনি।
এই যুদ্ধ ব্রিটিশদের জন্য এক ‘ঐতিহাসিক সুযোগ’ তৈরি করেছিল। ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ টমাস মেটকাফ তাঁর “The Aftermath of Panipat” প্রবন্ধে লিখেছেন, “যুদ্ধ শেষ হওয়ার এক দশকের মধ্যে ব্রিটিশরা বুঝে ফেলে, ভারতে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের শক্তি ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন সময় একে একে সবাইকে পরাজিত করার।” (বাংলা অনুবাদ)
পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ ছিল নিছক একদিনের যুদ্ধ নয়, বরং ভারতের রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাসে এক ভয়ঙ্কর টার্নিং পয়েন্ট। এটি বোঝা যায় শুধু মরাঠাদের পতনের মধ্য দিয়ে নয়, বরং এটি উপমহাদেশে বিদেশি শক্তির উত্থান, স্থানীয় রাজনীতির জটিলতা এবং ক্ষমতার শূন্যতার ধারাবাহিকতায়ও। এ যুদ্ধ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ঐক্যের অভাব এবং কৌশলগত ব্যর্থতা কীভাবে ইতিহাসকে রক্তাক্ত করে তোলে।
আজও পানিপথের সেই যুদ্ধক্ষেত্র ইতিহাসপিপাসুদের আকর্ষণ করে। সেই বিস্তীর্ণ প্রান্তরে হয়তো এখনও বাতাসে ভেসে বেড়ায় মরাঠা বীরদের আর্তনাদ, আফগান যোদ্ধাদের বিজয়ের উল্লাস, আর ইতিহাসের এক অতল গহ্বরে হারিয়ে যাওয়া একটি সম্ভাব্য ভারতের দীর্ঘশ্বাস।
চাইলে এই ফিচারের জন্য এখন একটি watercolor illustration তৈরি করে দিতে পারি, যাতে থাকবে মরাঠা ও আফগান বাহিনীর যুদ্ধক্ষেত্র, ধুলিধূসর আকাশ, ছিন্নভিন্ন পতাকা ও যুদ্ধরত অশ্বারোহী সৈন্যরা। তৈরি করব?
দুই দফায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মাহাথির গণতন্ত্র নিয়ে সংশয় প্রখাম করে বলেন, “গণতন্ত্র মানুষের তৈরি একটি পদ্ধতি। এটি নিখুঁত নয়। একে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারলে এর থেকে ভালো কিছু পাওয়া যায় না।”
৩ দিন আগেপাকিস্তানের বেলুচিস্তানে অন্তত ৯ জন বাসযাত্রীকে অপহরণের পর গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) রাতে ঝোব ও লোরালাই জেলার সীমানা ঘেঁষা সুর-ডাকাই এলাকায় এই ভয়াবহ ঘটনা ঘটে। আজ শুক্রবার দেশটির সংবাদমাধ্যম ডন এ খবর নিশ্চিত করেছে।
৩ দিন আগেজন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব বাতিলে ট্রাম্পের আদেশের ওপর আবারও স্থগিতাদেশ দিয়েছেন দেশটির আদালতে। সম্প্রতি নিউ হ্যাম্পশায়ারের একটি আদালত আদেশটি কার্যকর হওয়া থেকে সাময়িক স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে এ আদেশকে প্রতিনিধিত্বমূলক মামলা হিসেবে গ্রহণ করেন বিচারক।
৩ দিন আগেহুতিদের প্রযুক্তিগত উত্থান শুরু হয় ২০১৫ সালের দিকে, যখন সৌদি আরব তাদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা শুরু করে। এই সময় থেকেই হুতিরা বুঝে যায়, শুধু ছোট অস্ত্র বা স্থানীয় হামলা দিয়ে টিকে থাকা যাবে না। দরকার প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিরোধ। সেই থেকেই শুরু হয় তাদের ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র, রাডার, এবং স্যাটেলাইট-নির্ভর হামলা
৪ দিন আগে