জান্নাতুল বাকেয়া কেকা
‘দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ’ নিছক প্রবাদ বাক্য নয়। এটি ভারতবর্ষের মহাকাব্যিক এক উপাখ্যান। সনাতন ধর্মের পঞ্চম বেদস্বরূপ ধর্মগ্রন্থ মহাভারতে উল্লিখিত এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র দ্রৌপদী। কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন ব্যাসদেব রচিত, মূলত সংস্কৃত ভাষায় লিখিত, প্রাচীন ভারতের অন্যতম বৃহৎ মহাকাব্য মহাভারত। একে সংহিতা তথা সংগ্রহগ্রন্থ ও ধর্মগ্রন্থ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই মহাকাব্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে রয়েছেন পঞ্চপাণ্ডব যুধিষ্ঠির, ভীম, অর্জুন, নকুল ও সহদেব এবং তাদের স্ত্রী দ্রৌপদী। আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু এই দ্রৌপদী।
গত শনিবার দেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক এক চত্বরে নারীর প্রতিকৃতিতে সহিংসতা প্রদর্শনের ঘটনায় বাকরুদ্ধ হয়েছি। ফিরে গেছি গুপ্তযুগের সেই ৪০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। বহু আন্দোলন, সংগ্রাম ও সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের সাক্ষী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সন্ত্রাসবিরোধী ভাস্কর্য’ রাজু স্মারকের পাদদেশে ঘটে গেল নারীর প্রতিকৃতি ঘিরে সহিংসতার সেই মহাউৎসব!
তার সূত্র ধরেই মনে পড়ে গেল মহাভারতের পৌরাণিক আখ্যানের সেই দ্রৌপদী ও তার বস্ত্রহরণের কাহিনী। আধুনিক গবেষণা বলছে, দ্রৌপদীর ওই লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে তাকে রক্ষা করেছিল ঢাকার মসলিন শাড়ি! একজন চিরায়ত নারীর শালীনতা রক্ষায় ঢাকায় তৈরি মসলিনের বহু প্যাঁচই হয়ে উঠেছিল দ্রৌপদীর রক্ষাকবচ।
দ্রৌপদীকে যখন রাজসভায় টেনে আনা হয়েছিল, তখন তিনি ছিলেন শতাধিক প্যাঁচে জড়ানো মসলিনে আবৃত। গুপ্তযুগে রাজকন্যা ও রাজবধূ দ্রৌপদী যখন জনসমক্ষে বস্ত্রহরণের শিকার হন, তখন দুঃশাসনের হাতে ধরা পড়লেও তিনি সম্পূর্ণ নিরাবরণ হননি। সেই মসলিনের অতিসূক্ষ্ম অথচ দীর্ঘ প্যাঁচ তাকে রক্ষা করেছিল। দ্রৌপদীর আর্তনাদে এবং তার অসম্মানে কেঁপে উঠেছিল প্রকৃতি ও সমাজ।
একবিংশ শতকের এই ঢাকায়, সেই ঐতিহ্যবাহী মসলিনের শহরে আবারও যেন ফিরে এলো দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের উপাখ্যান। প্রযুক্তির কল্যাণে সেই দৃশ্য এখন ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়। দুঃখজনকভাবে দেখা যাচ্ছে, নারীর প্রতিকৃতিকে অবমাননার ঘটনায় অংশ নিয়েছে নারীরাও, যারা ফ্যাসিস্ট মনোভাব নিয়ে এমন ঘটনার পক্ষে জোর সুর তুলেছেন। এ যেন ফিরে যাওয়া ৪০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে, দ্রৌপদীর সেই অপমানের মুহূর্তে।
দ্রৌপদী ছিলেন পঞ্চপাণ্ডবের সহধর্মিণী, দ্রুপদের কন্যা। তিনি পাঞ্চালী ও যাজ্ঞসেনী নামেও পরিচিত। ধর্মনিষ্ঠা, সাহসিকতা ও প্রজ্ঞায় তিনি ছিলেন অতুলনীয়। মহাভারতের অন্যতম কাহিনী হস্তিনাপুরের রাজসভায় পাশা খেলা। সেই খেলায় যুধিষ্ঠির হারান সব—রাজ্য, সম্পদ, এমনকি দ্রৌপদীকেও। দ্রৌপদীকে রাজসভায় আনা হয়, যেখানে দুঃশাসন তার বস্ত্রহরণের চেষ্টা করে। তবে শ্রীকৃষ্ণের ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপে তার সম্মান রক্ষা পায়। এ ঘটনাই কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সূত্রপাত করে।
আধুনিক গবেষণায় জানা যায়, দ্রৌপদীর পরনে ছিল ঢাকার মসলিনের বহু প্যাঁচে জড়ানো শাড়ি, যা তাঁকে বাঁচায় বেআব্রু হওয়া থেকে। সেই মসলিনের অতিসূক্ষ্ম বুননের সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা তাকে দেয় লজ্জা রক্ষার আচ্ছাদন। এটি কেবল পৌরাণিক উপাখ্যান নয়, বরং নারীর শালীনতা রক্ষার এক প্রতীকও বটে।
আজকের ঢাকায়, দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের চত্বরে প্রকাশ্যে একজন নারীর প্রতিকৃতি ঘিরে সহিংসতার এই নাটক আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় সেই পুরাণের দ্রৌপদীকে। তখনকার রাজসভা আর এখনকার রাজপথের ফারাক কোথায়? যারা বলেন, এটি পূর্বপরিকল্পিত বা পুরোনো ঘটনা, তাদের বলি— এতে কিছু যায় আসে না। বরং নারীর প্রতি এই প্রতীকী সহিংসতা এক ক্ষমাহীন অপরাধ। একবিংশ শতকেও দ্রৌপদীরা বস্ত্রহরণের শিকার হন— এ কথা আজও সত্য।
নারীকে অসম্মান করা মানেই সমাজ ও রাষ্ট্রকে অপমান করা। তাই আজকের তারুণ্য, বিদ্রোহ ও দ্রোহের কণ্ঠে আমরা যেন আবার উচ্চারণ করি—
বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক
‘দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ’ নিছক প্রবাদ বাক্য নয়। এটি ভারতবর্ষের মহাকাব্যিক এক উপাখ্যান। সনাতন ধর্মের পঞ্চম বেদস্বরূপ ধর্মগ্রন্থ মহাভারতে উল্লিখিত এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র দ্রৌপদী। কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন ব্যাসদেব রচিত, মূলত সংস্কৃত ভাষায় লিখিত, প্রাচীন ভারতের অন্যতম বৃহৎ মহাকাব্য মহাভারত। একে সংহিতা তথা সংগ্রহগ্রন্থ ও ধর্মগ্রন্থ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই মহাকাব্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে রয়েছেন পঞ্চপাণ্ডব যুধিষ্ঠির, ভীম, অর্জুন, নকুল ও সহদেব এবং তাদের স্ত্রী দ্রৌপদী। আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু এই দ্রৌপদী।
গত শনিবার দেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক এক চত্বরে নারীর প্রতিকৃতিতে সহিংসতা প্রদর্শনের ঘটনায় বাকরুদ্ধ হয়েছি। ফিরে গেছি গুপ্তযুগের সেই ৪০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। বহু আন্দোলন, সংগ্রাম ও সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের সাক্ষী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সন্ত্রাসবিরোধী ভাস্কর্য’ রাজু স্মারকের পাদদেশে ঘটে গেল নারীর প্রতিকৃতি ঘিরে সহিংসতার সেই মহাউৎসব!
তার সূত্র ধরেই মনে পড়ে গেল মহাভারতের পৌরাণিক আখ্যানের সেই দ্রৌপদী ও তার বস্ত্রহরণের কাহিনী। আধুনিক গবেষণা বলছে, দ্রৌপদীর ওই লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে তাকে রক্ষা করেছিল ঢাকার মসলিন শাড়ি! একজন চিরায়ত নারীর শালীনতা রক্ষায় ঢাকায় তৈরি মসলিনের বহু প্যাঁচই হয়ে উঠেছিল দ্রৌপদীর রক্ষাকবচ।
দ্রৌপদীকে যখন রাজসভায় টেনে আনা হয়েছিল, তখন তিনি ছিলেন শতাধিক প্যাঁচে জড়ানো মসলিনে আবৃত। গুপ্তযুগে রাজকন্যা ও রাজবধূ দ্রৌপদী যখন জনসমক্ষে বস্ত্রহরণের শিকার হন, তখন দুঃশাসনের হাতে ধরা পড়লেও তিনি সম্পূর্ণ নিরাবরণ হননি। সেই মসলিনের অতিসূক্ষ্ম অথচ দীর্ঘ প্যাঁচ তাকে রক্ষা করেছিল। দ্রৌপদীর আর্তনাদে এবং তার অসম্মানে কেঁপে উঠেছিল প্রকৃতি ও সমাজ।
একবিংশ শতকের এই ঢাকায়, সেই ঐতিহ্যবাহী মসলিনের শহরে আবারও যেন ফিরে এলো দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের উপাখ্যান। প্রযুক্তির কল্যাণে সেই দৃশ্য এখন ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়। দুঃখজনকভাবে দেখা যাচ্ছে, নারীর প্রতিকৃতিকে অবমাননার ঘটনায় অংশ নিয়েছে নারীরাও, যারা ফ্যাসিস্ট মনোভাব নিয়ে এমন ঘটনার পক্ষে জোর সুর তুলেছেন। এ যেন ফিরে যাওয়া ৪০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে, দ্রৌপদীর সেই অপমানের মুহূর্তে।
দ্রৌপদী ছিলেন পঞ্চপাণ্ডবের সহধর্মিণী, দ্রুপদের কন্যা। তিনি পাঞ্চালী ও যাজ্ঞসেনী নামেও পরিচিত। ধর্মনিষ্ঠা, সাহসিকতা ও প্রজ্ঞায় তিনি ছিলেন অতুলনীয়। মহাভারতের অন্যতম কাহিনী হস্তিনাপুরের রাজসভায় পাশা খেলা। সেই খেলায় যুধিষ্ঠির হারান সব—রাজ্য, সম্পদ, এমনকি দ্রৌপদীকেও। দ্রৌপদীকে রাজসভায় আনা হয়, যেখানে দুঃশাসন তার বস্ত্রহরণের চেষ্টা করে। তবে শ্রীকৃষ্ণের ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপে তার সম্মান রক্ষা পায়। এ ঘটনাই কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সূত্রপাত করে।
আধুনিক গবেষণায় জানা যায়, দ্রৌপদীর পরনে ছিল ঢাকার মসলিনের বহু প্যাঁচে জড়ানো শাড়ি, যা তাঁকে বাঁচায় বেআব্রু হওয়া থেকে। সেই মসলিনের অতিসূক্ষ্ম বুননের সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা তাকে দেয় লজ্জা রক্ষার আচ্ছাদন। এটি কেবল পৌরাণিক উপাখ্যান নয়, বরং নারীর শালীনতা রক্ষার এক প্রতীকও বটে।
আজকের ঢাকায়, দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের চত্বরে প্রকাশ্যে একজন নারীর প্রতিকৃতি ঘিরে সহিংসতার এই নাটক আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় সেই পুরাণের দ্রৌপদীকে। তখনকার রাজসভা আর এখনকার রাজপথের ফারাক কোথায়? যারা বলেন, এটি পূর্বপরিকল্পিত বা পুরোনো ঘটনা, তাদের বলি— এতে কিছু যায় আসে না। বরং নারীর প্রতি এই প্রতীকী সহিংসতা এক ক্ষমাহীন অপরাধ। একবিংশ শতকেও দ্রৌপদীরা বস্ত্রহরণের শিকার হন— এ কথা আজও সত্য।
নারীকে অসম্মান করা মানেই সমাজ ও রাষ্ট্রকে অপমান করা। তাই আজকের তারুণ্য, বিদ্রোহ ও দ্রোহের কণ্ঠে আমরা যেন আবার উচ্চারণ করি—
বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বর্তমানে যুক্তরাজ্যে সফরে রয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই সফরে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হবে।
৮ দিন আগেহালের সাম্রাজ্যবাদী ঔপনিবেশবাদের নয়া কৌশলে দাবার ছকের নতুন গুটি জর্জ সোরেসের ‘ডিপ স্টেট’! এ কালের কাবলিওয়ালারা আক্রান্ত নিজ দেশীয় দোসরদের মাধ্যমেই সেই সাম্রাজবাদের প্রসার ঘটিয়ে চলেছে দেশে দেশে। আর ডিপ স্টেটের প্রভুরা দেশীয় দোসরদের ব্যবহারের পর কাজ শেষে ছুড়ে ফেলে দেবে আস্তাকুঁড়ে। তবে ততদিনে সাড়ে সর্
১৪ দিন আগেএখন থেকে ঠিক এক বছর আগে, অর্থাৎ গত বছরের পাঁচই জুন হাইকোর্ট যখন সরকারি চাকরিতে কোটা বহালের পক্ষে রায় ঘোষণা করেছিল, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের কেউ তখন ধারণাও করতে পারেনি যে পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে তাদের টানা দেড় দশকের শাসনের পতন ঘটে যাবে।
১৫ দিন আগেবৈষম্যের দেয়ালে ঘেরা এই বিশ্বে এখনও ২০ কোটির বেশি শিশু রয়েছে সাধারণ শিক্ষার বাইরে। যারা যাচ্ছে, তারাও আবার অনেক বিদ্যালয়ে গিয়ে যা শেখার তা শিখছে না। এভাবে চলতে থাকলে ২০৩০ সালে নিম্ন আয়ের দেশে মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষায় দক্ষতা অর্জন করতে পারবে, আবার কম আয়ের দেশে এই সংখ্যা আরও
১৮ দিন আগে