অশোক সজ্জনহর
ভারতের সঙ্গে গ্লোবাল সাউথের সম্পর্কের গভীর শিকড় রয়েছে যৌথ ইতিহাসে, অভিন্ন সংগ্রামে এবং উন্নয়ন ও আত্মনির্ভরশীলতার পারস্পরিক আকাঙ্ক্ষায়। গ্লোবাল সাউথের অন্যতম বৃহৎ ও প্রভাবশালী দেশ হিসেবে, ভারতের ভূমিকা নন-অ্যালাইনড্ মুভমেন্ট (ন্যাম)-এর অগ্রনেতা থেকে সমসাময়িক দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকায় পরিণত হয়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ভারত জি২০-এর সভাপতিত্ব গ্রহণের দুই সপ্তাহের মধ্যেই, ২০২৩ সালের ১২-১৩ জানুয়ারি প্রথম ভয়েস অব দ্য গ্লোবাল সাউথ সামিট (ভিওজিএসএস) আয়োজন করার মাধ্যমে গ্লোবাল সাউথের সাথে ভারতের অংশীদারত্বকে সম্পূর্ণ নতুন মাত্রায় এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। এই শীর্ষ সম্মেলনটির পরে একই বছরে আরও একটি শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং তৃতীয়টি অনুষ্ঠিত হয় ২০২৪ সালে।
ভিওজিএসএস হলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর উদ্বেগ, স্বার্থ ও অগ্রাধিকারসমূহের বিষয়ে আলোচনা করা, ধারণা ও সমাধান বিনিময় করা, এবং উন্নয়ন সমাধান বিনির্মাণে কণ্ঠ ও উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য একটি অভিন্ন মঞ্চ প্রদানের লক্ষ্যে ভারতের প্রচেষ্টা।
পটভূমি
গ্লোবাল সাউথের ধারণাটি ল্যাটিন আমেরিকা, আফ্রিকা, এশিয়া ও ওশেনিয়ার অঞ্চলসমূহকে অন্তর্ভুক্ত করে, উপনিবেশবাদ ও অর্থনৈতিক প্রান্তিককরণের অভিন্ন ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটসম্পন্ন উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে। গ্লোবাল সাউথের মধ্যে ভারতের ভূমিকা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, এটি তার ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক শক্তি, গণতান্ত্রিক কাঠামো ও কৌশলগত ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে ন্যায়সঙ্গত বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থার পক্ষে কথা বলে।
গ্লোবাল সাউথের সঙ্গে ভারতের অর্থনৈতিক সহযোগিতার বৈশিষ্ট্য হলো বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও উন্নয়ন সহায়তা। বিশেষত আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আফ্রিকার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ২০০১ সালে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২০২০ সালে ৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছায়, যা ভারতকে আফ্রিকার তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। একইভাবে, তেল আমদানি এবং ঔষধপত্র, মোটরগাড়ি ও প্রকৌশল পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে ত্বরান্বিত হয়ে ২০২০ সালে ল্যাটিন আমেরিকার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছায়।
বিনিয়োগ হলো ভারতের অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। ভারতীয় কোম্পানিগুলো গ্লোবাল সাউথজুড়ে টেলিযোগাযোগ, ঔষধশিল্প, কৃষি ও খনির মতো বিভিন্ন খাতে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করেছে। আফ্রিকায়, ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে অবদান রেখেছে। ল্যাটিন আমেরিকায়, টেকসই উন্নয়নকে উৎসাহিত করে তথ্যপ্রযুক্তি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির মতো খাতে ভারতীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উপরন্তু, ভারতের উন্নয়ন সহায়তা কর্মসূচিসমূহ অগ্রগতির অংশীদার হিসেবে তার ভূমিকার ওপর জোর প্রদান করে। ইন্ডিয়ান টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (আইটেক) কর্মসূচির মাধ্যমে ভারত ১৬০টিরও বেশি দেশকে প্রশিক্ষণ, সক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করেছে। এই কর্মসূচি স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, কৃষি ও তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিস্তৃত ক্ষেত্রসমূহকে অন্তর্ভুক্ত করে, যা গ্লোবাল সাউথে মানবসম্পদ উন্নয়নে অবদান রাখে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, ভারতের পররাষ্ট্রনীতি ক্রমবর্ধমানভাবে গ্লোবাল সাউথকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। “ইন্ডিয়া-আফ্রিকা ফোরাম সামিট,” “ফোরাম ফর ইন্ডিয়া-প্যাসিফিক আইল্যান্ডস কো-অপারেশন” (এফআইপিআইসি), ও ভারত-ক্যারিকম শীর্ষ সম্মেলন যথাক্রমে আফ্রিকা, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রসমূহ ও দক্ষিণ আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার লক্ষ্যে ভারতের কাঠামোবদ্ধ সম্পৃক্ততার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। এই প্ল্যাটফর্মসমূহ সংলাপ, উন্নয়ন সহযোগিতা, ও বিনিয়োগ অংশীদারত্বকে সহজতর করে তোলে।
তদুপরি, ইন্টারন্যাশনাল সোলার অ্যালায়েন্সে (আইএসএ) ভারতের নেতৃত্ব দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে তার ভূমিকার উদাহরণ। ২০১৫ সালে ভারত ও ফ্রান্সের উদ্যোগে চালু হওয়া একটি উদ্যোগ আইএসএ-এর লক্ষ্য হলো গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশগুলোতে সম্পদ সংগ্রহ করা এবং সৌরশক্তির ব্যবহার বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করা। গ্লোবাল সাউথ থেকে সিংহভাগসহ মোট ১২১টি সদস্য দেশ নিয়ে, আইএসএ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রসারে ভারতের অঙ্গীকারের ওপর জোর দিয়ে থাকে।
দ্য ভয়েস অব দ্য গ্লোবাল সাউথ সামিট (ভিওজিএসএস)
ভিওজিএসএস উদীয়মান অর্থনীতি ও গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোকে তাদের অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি, প্রতিবন্ধকতাসমূহ ও উদ্ভাবনী সমাধানগুলো বৈশ্বিক অঙ্গনে প্রকাশ করার একটি মঞ্চ প্রদান করে থাকে। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর কণ্ঠস্বরকে আরও জোরালো করার লক্ষ্যে শুরু হওয়া এই শীর্ষ সম্মেলন তার প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে উন্নত অর্থনীতিগুলোকে অনুন্নত বিশ্বের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটানোর আহ্বান জানায়।
তিনটি ভিওজিএসএস
ভারত ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ভারতের জি২০ সভাপতিত্বের প্রথম কয়েক সপ্তাহে উন্নয়নশীল বিশ্বের অগ্রাধিকারসমূহ, দৃষ্টিভঙ্গি ও উদ্বেগসমূহের প্রতি আন্তর্জাতিক মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার লক্ষ্যে ভার্চুয়াল ফরম্যাটে, ১০টি অধিবেশনে বিভক্তভাবে একটি অনন্য অনুষ্ঠান, ১ম ভিওজিএসএস আয়োজন করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী উদ্বোধনী ও সমাপনী নেতৃবৃন্দের অধিবেশনসমূহে সভাপতিত্ব করেন। ভারত এই অধিবেশনগুলোতে প্রাপ্ত ইনপুটসমূহকে জি২০-এর সংলাপ ও আলোচনাসমূহে অন্তর্ভুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিল।
প্রথম ভিওজিএসএসের সাফল্যের পরে, ২০২৩ সালের ১৭ নভেম্বর ভারত দ্বিতীয় ভিওজিএসএস আয়োজন করে, প্রতিপাদ্য ছিল - ‘একসাথে, সকলের বিকাশের জন্য, সকলের আস্থার সঙ্গে’। এই প্রতিপাদ্যটি ছিল ভারতের বসুধৈব কুটুম্বকম দর্শন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস’-এর শাসন আদর্শের সম্প্রসারণ। এই শীর্ষ সম্মেলনের মূল লক্ষ্য ছিল তিনটি:
এই শীর্ষ সম্মেলনের উভয় সংস্করণেই গ্লোবাল সাউথের ১০০টিরও বেশি দেশের অংশগ্রহণ পরিলক্ষিত হয়।
“একটি টেকসই ভবিষ্যতের জন্য একটি ক্ষমতায়িত গ্লোবাল সাউথ” - এই মূল প্রতিপাদ্য নিয়ে তৃতীয় ভিওজিএসএস, বিশ্বকে প্রভাবিত করে এমন বিভিন্ন জটিল প্রতিবন্ধকতাসমূহ, যেমন সংঘাত, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন, ঋণের বোঝা - যার সবগুলোই উন্নয়নশীল দেশগুলোকে তীব্রভাবে প্রভাবিত করে - এর ওপর পূর্ববর্তী শীর্ষ সম্মেলনে অনুষ্ঠিত আলোচনাকে সম্প্রসারিত করার জন্য একটি মঞ্চ হিসেবে কাজ করেছিল। এই শীর্ষ সম্মেলনটিতে, গ্লোবাল সাউথের দেশগুলো গ্লোবাল সাউথের জন্য প্রতিবন্ধকতাসমূহ, অগ্রাধিকারসমূহ ও সমাধানসমূহ নিয়ে আলোচনা করে, বিশেষ করে উন্নয়নমূলক ক্ষেত্রগুলোতে। এই শীর্ষ সম্মেলনে ১২৩টি দেশের ১৭৩ জন মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তি অংশগ্রহণ করেন, যার মধ্যে ২১ জন রাষ্ট্রপ্রধান/সরকারপ্রধান, ৩৪ জন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ১১৮ জন মন্ত্রী ও উপমন্ত্রী রয়েছেন। এটি গ্লোবাল সাউথের সম্মিলিত উন্নয়ন যাত্রাকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের আন্তরিকতা ও প্রতিশ্রুতির সাক্ষ্য এবং গ্লোবাল সাউথের সঙ্গে জড়িত থাকার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যে অগ্রাধিকার প্রদান করেছেন, সেটার প্রমাণ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চারটি উপাদান নিয়ে একটি কমপ্রিহেনসিভ গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট কমপ্যাক্টের প্রস্তাব পেশ করেন:
বিশ্বের জনসংখ্যার ৬০% এরও বেশি অংশের প্রতিনিধিত্বকারী দেশগুলোর অংশগ্রহণের মাধ্যমে, এই শীর্ষ সম্মেলন সকলের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক একটি ভবিষ্যতের সম্মিলিত সাধনায় গ্লোবাল সাউথের কেন্দ্রীয় ভূমিকাকে আরও জোরদার করেছে।
গ্লোবাল সাউথের স্বার্থকে সমর্থন ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভারতের একটি তাৎপর্যপূর্ণ অর্জন ছিল ২০২৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বরে, ভারতের জি২০ সভাপতিত্বের প্রথম দিনেই আফ্রিকান ইউনিয়নকে জি২০-এর পূর্ণ সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান।
শেষ কথা
ভারতের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক শক্তি, কৌশলগত স্বার্থসমূহ ও বিশ্ব মঞ্চে একটি মুখ্য ক্রীড়নক হওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করে বছরের পর বছর ধরে গ্লোবাল সাউথের সঙ্গে ভারতের ভূ-রাজনৈতিক গতিশীলতা উল্লেখযোগ্যভাবে বিকশিত হয়েছে। গ্লোবাল সাউথের সাথে ভারতের সক্রিয় সম্পৃক্ততা একটি বহুমেরু বিশ্বের প্রতি তার প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে যেখানে বৈশ্বিক বিষয়সমূহে উন্নয়নশীল দেশগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কূটনীতি, অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও কৌশলগত অংশীদারত্বের ক্ষেত্রে টেকসই প্রচেষ্টার মাধ্যমে, ভারত গ্লোবাল সাউথের ক্রমবিকাশমান গতিশীলতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত।
বিশ্ব যখন জলবায়ু পরিবর্তন, অর্থনৈতিক বৈষম্য ও ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনের মতো জটিল প্রতিবন্ধকতাসমূহের মোকাবিলা করছে, তখন গ্লোবাল সাউথের অংশীদার হিসেবে ভারতের ভূমিকা ক্রমবর্ধমানভাবে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠতে যাচ্ছে।
অগ্রনেতা ও অংশীদার উভয় হিসেবেই, গ্লোবাল সাউথের ভবিষ্যৎ গঠনে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। টেকসই সহযোগিতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও অভিন্ন আকাঙ্ক্ষার মাধ্যমে, ভারত ও গ্লোবাল সাউথ সম্মিলিতভাবে ২১শ শতকের প্রতিবন্ধকতাসমূহ ও সুযোগগুলোকে মোকাবিলা করতে সক্ষম।
লেখক: ভারতীয় কূটনীতিক
ভারতের সঙ্গে গ্লোবাল সাউথের সম্পর্কের গভীর শিকড় রয়েছে যৌথ ইতিহাসে, অভিন্ন সংগ্রামে এবং উন্নয়ন ও আত্মনির্ভরশীলতার পারস্পরিক আকাঙ্ক্ষায়। গ্লোবাল সাউথের অন্যতম বৃহৎ ও প্রভাবশালী দেশ হিসেবে, ভারতের ভূমিকা নন-অ্যালাইনড্ মুভমেন্ট (ন্যাম)-এর অগ্রনেতা থেকে সমসাময়িক দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকায় পরিণত হয়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ভারত জি২০-এর সভাপতিত্ব গ্রহণের দুই সপ্তাহের মধ্যেই, ২০২৩ সালের ১২-১৩ জানুয়ারি প্রথম ভয়েস অব দ্য গ্লোবাল সাউথ সামিট (ভিওজিএসএস) আয়োজন করার মাধ্যমে গ্লোবাল সাউথের সাথে ভারতের অংশীদারত্বকে সম্পূর্ণ নতুন মাত্রায় এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। এই শীর্ষ সম্মেলনটির পরে একই বছরে আরও একটি শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং তৃতীয়টি অনুষ্ঠিত হয় ২০২৪ সালে।
ভিওজিএসএস হলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর উদ্বেগ, স্বার্থ ও অগ্রাধিকারসমূহের বিষয়ে আলোচনা করা, ধারণা ও সমাধান বিনিময় করা, এবং উন্নয়ন সমাধান বিনির্মাণে কণ্ঠ ও উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য একটি অভিন্ন মঞ্চ প্রদানের লক্ষ্যে ভারতের প্রচেষ্টা।
পটভূমি
গ্লোবাল সাউথের ধারণাটি ল্যাটিন আমেরিকা, আফ্রিকা, এশিয়া ও ওশেনিয়ার অঞ্চলসমূহকে অন্তর্ভুক্ত করে, উপনিবেশবাদ ও অর্থনৈতিক প্রান্তিককরণের অভিন্ন ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটসম্পন্ন উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে। গ্লোবাল সাউথের মধ্যে ভারতের ভূমিকা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, এটি তার ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক শক্তি, গণতান্ত্রিক কাঠামো ও কৌশলগত ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে ন্যায়সঙ্গত বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থার পক্ষে কথা বলে।
গ্লোবাল সাউথের সঙ্গে ভারতের অর্থনৈতিক সহযোগিতার বৈশিষ্ট্য হলো বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও উন্নয়ন সহায়তা। বিশেষত আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আফ্রিকার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ২০০১ সালে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২০২০ সালে ৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছায়, যা ভারতকে আফ্রিকার তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। একইভাবে, তেল আমদানি এবং ঔষধপত্র, মোটরগাড়ি ও প্রকৌশল পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে ত্বরান্বিত হয়ে ২০২০ সালে ল্যাটিন আমেরিকার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছায়।
বিনিয়োগ হলো ভারতের অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। ভারতীয় কোম্পানিগুলো গ্লোবাল সাউথজুড়ে টেলিযোগাযোগ, ঔষধশিল্প, কৃষি ও খনির মতো বিভিন্ন খাতে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করেছে। আফ্রিকায়, ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে অবদান রেখেছে। ল্যাটিন আমেরিকায়, টেকসই উন্নয়নকে উৎসাহিত করে তথ্যপ্রযুক্তি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির মতো খাতে ভারতীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উপরন্তু, ভারতের উন্নয়ন সহায়তা কর্মসূচিসমূহ অগ্রগতির অংশীদার হিসেবে তার ভূমিকার ওপর জোর প্রদান করে। ইন্ডিয়ান টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (আইটেক) কর্মসূচির মাধ্যমে ভারত ১৬০টিরও বেশি দেশকে প্রশিক্ষণ, সক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করেছে। এই কর্মসূচি স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, কৃষি ও তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিস্তৃত ক্ষেত্রসমূহকে অন্তর্ভুক্ত করে, যা গ্লোবাল সাউথে মানবসম্পদ উন্নয়নে অবদান রাখে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, ভারতের পররাষ্ট্রনীতি ক্রমবর্ধমানভাবে গ্লোবাল সাউথকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। “ইন্ডিয়া-আফ্রিকা ফোরাম সামিট,” “ফোরাম ফর ইন্ডিয়া-প্যাসিফিক আইল্যান্ডস কো-অপারেশন” (এফআইপিআইসি), ও ভারত-ক্যারিকম শীর্ষ সম্মেলন যথাক্রমে আফ্রিকা, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রসমূহ ও দক্ষিণ আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার লক্ষ্যে ভারতের কাঠামোবদ্ধ সম্পৃক্ততার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। এই প্ল্যাটফর্মসমূহ সংলাপ, উন্নয়ন সহযোগিতা, ও বিনিয়োগ অংশীদারত্বকে সহজতর করে তোলে।
তদুপরি, ইন্টারন্যাশনাল সোলার অ্যালায়েন্সে (আইএসএ) ভারতের নেতৃত্ব দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে তার ভূমিকার উদাহরণ। ২০১৫ সালে ভারত ও ফ্রান্সের উদ্যোগে চালু হওয়া একটি উদ্যোগ আইএসএ-এর লক্ষ্য হলো গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশগুলোতে সম্পদ সংগ্রহ করা এবং সৌরশক্তির ব্যবহার বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করা। গ্লোবাল সাউথ থেকে সিংহভাগসহ মোট ১২১টি সদস্য দেশ নিয়ে, আইএসএ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রসারে ভারতের অঙ্গীকারের ওপর জোর দিয়ে থাকে।
দ্য ভয়েস অব দ্য গ্লোবাল সাউথ সামিট (ভিওজিএসএস)
ভিওজিএসএস উদীয়মান অর্থনীতি ও গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোকে তাদের অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি, প্রতিবন্ধকতাসমূহ ও উদ্ভাবনী সমাধানগুলো বৈশ্বিক অঙ্গনে প্রকাশ করার একটি মঞ্চ প্রদান করে থাকে। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর কণ্ঠস্বরকে আরও জোরালো করার লক্ষ্যে শুরু হওয়া এই শীর্ষ সম্মেলন তার প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে উন্নত অর্থনীতিগুলোকে অনুন্নত বিশ্বের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটানোর আহ্বান জানায়।
তিনটি ভিওজিএসএস
ভারত ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ভারতের জি২০ সভাপতিত্বের প্রথম কয়েক সপ্তাহে উন্নয়নশীল বিশ্বের অগ্রাধিকারসমূহ, দৃষ্টিভঙ্গি ও উদ্বেগসমূহের প্রতি আন্তর্জাতিক মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার লক্ষ্যে ভার্চুয়াল ফরম্যাটে, ১০টি অধিবেশনে বিভক্তভাবে একটি অনন্য অনুষ্ঠান, ১ম ভিওজিএসএস আয়োজন করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী উদ্বোধনী ও সমাপনী নেতৃবৃন্দের অধিবেশনসমূহে সভাপতিত্ব করেন। ভারত এই অধিবেশনগুলোতে প্রাপ্ত ইনপুটসমূহকে জি২০-এর সংলাপ ও আলোচনাসমূহে অন্তর্ভুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিল।
প্রথম ভিওজিএসএসের সাফল্যের পরে, ২০২৩ সালের ১৭ নভেম্বর ভারত দ্বিতীয় ভিওজিএসএস আয়োজন করে, প্রতিপাদ্য ছিল - ‘একসাথে, সকলের বিকাশের জন্য, সকলের আস্থার সঙ্গে’। এই প্রতিপাদ্যটি ছিল ভারতের বসুধৈব কুটুম্বকম দর্শন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস’-এর শাসন আদর্শের সম্প্রসারণ। এই শীর্ষ সম্মেলনের মূল লক্ষ্য ছিল তিনটি:
এই শীর্ষ সম্মেলনের উভয় সংস্করণেই গ্লোবাল সাউথের ১০০টিরও বেশি দেশের অংশগ্রহণ পরিলক্ষিত হয়।
“একটি টেকসই ভবিষ্যতের জন্য একটি ক্ষমতায়িত গ্লোবাল সাউথ” - এই মূল প্রতিপাদ্য নিয়ে তৃতীয় ভিওজিএসএস, বিশ্বকে প্রভাবিত করে এমন বিভিন্ন জটিল প্রতিবন্ধকতাসমূহ, যেমন সংঘাত, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন, ঋণের বোঝা - যার সবগুলোই উন্নয়নশীল দেশগুলোকে তীব্রভাবে প্রভাবিত করে - এর ওপর পূর্ববর্তী শীর্ষ সম্মেলনে অনুষ্ঠিত আলোচনাকে সম্প্রসারিত করার জন্য একটি মঞ্চ হিসেবে কাজ করেছিল। এই শীর্ষ সম্মেলনটিতে, গ্লোবাল সাউথের দেশগুলো গ্লোবাল সাউথের জন্য প্রতিবন্ধকতাসমূহ, অগ্রাধিকারসমূহ ও সমাধানসমূহ নিয়ে আলোচনা করে, বিশেষ করে উন্নয়নমূলক ক্ষেত্রগুলোতে। এই শীর্ষ সম্মেলনে ১২৩টি দেশের ১৭৩ জন মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তি অংশগ্রহণ করেন, যার মধ্যে ২১ জন রাষ্ট্রপ্রধান/সরকারপ্রধান, ৩৪ জন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ১১৮ জন মন্ত্রী ও উপমন্ত্রী রয়েছেন। এটি গ্লোবাল সাউথের সম্মিলিত উন্নয়ন যাত্রাকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের আন্তরিকতা ও প্রতিশ্রুতির সাক্ষ্য এবং গ্লোবাল সাউথের সঙ্গে জড়িত থাকার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যে অগ্রাধিকার প্রদান করেছেন, সেটার প্রমাণ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চারটি উপাদান নিয়ে একটি কমপ্রিহেনসিভ গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট কমপ্যাক্টের প্রস্তাব পেশ করেন:
বিশ্বের জনসংখ্যার ৬০% এরও বেশি অংশের প্রতিনিধিত্বকারী দেশগুলোর অংশগ্রহণের মাধ্যমে, এই শীর্ষ সম্মেলন সকলের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক একটি ভবিষ্যতের সম্মিলিত সাধনায় গ্লোবাল সাউথের কেন্দ্রীয় ভূমিকাকে আরও জোরদার করেছে।
গ্লোবাল সাউথের স্বার্থকে সমর্থন ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভারতের একটি তাৎপর্যপূর্ণ অর্জন ছিল ২০২৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বরে, ভারতের জি২০ সভাপতিত্বের প্রথম দিনেই আফ্রিকান ইউনিয়নকে জি২০-এর পূর্ণ সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান।
শেষ কথা
ভারতের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক শক্তি, কৌশলগত স্বার্থসমূহ ও বিশ্ব মঞ্চে একটি মুখ্য ক্রীড়নক হওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করে বছরের পর বছর ধরে গ্লোবাল সাউথের সঙ্গে ভারতের ভূ-রাজনৈতিক গতিশীলতা উল্লেখযোগ্যভাবে বিকশিত হয়েছে। গ্লোবাল সাউথের সাথে ভারতের সক্রিয় সম্পৃক্ততা একটি বহুমেরু বিশ্বের প্রতি তার প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে যেখানে বৈশ্বিক বিষয়সমূহে উন্নয়নশীল দেশগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কূটনীতি, অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও কৌশলগত অংশীদারত্বের ক্ষেত্রে টেকসই প্রচেষ্টার মাধ্যমে, ভারত গ্লোবাল সাউথের ক্রমবিকাশমান গতিশীলতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত।
বিশ্ব যখন জলবায়ু পরিবর্তন, অর্থনৈতিক বৈষম্য ও ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনের মতো জটিল প্রতিবন্ধকতাসমূহের মোকাবিলা করছে, তখন গ্লোবাল সাউথের অংশীদার হিসেবে ভারতের ভূমিকা ক্রমবর্ধমানভাবে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠতে যাচ্ছে।
অগ্রনেতা ও অংশীদার উভয় হিসেবেই, গ্লোবাল সাউথের ভবিষ্যৎ গঠনে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। টেকসই সহযোগিতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও অভিন্ন আকাঙ্ক্ষার মাধ্যমে, ভারত ও গ্লোবাল সাউথ সম্মিলিতভাবে ২১শ শতকের প্রতিবন্ধকতাসমূহ ও সুযোগগুলোকে মোকাবিলা করতে সক্ষম।
লেখক: ভারতীয় কূটনীতিক
স্লোগান বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক অবিছ্ছেদ্য অংশ। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে স্লোগানের ব্যবহার ছিল। “ব্রিটিশ হটাও, দেশ বাঁচাও”; “বিদেশি পণ্য বর্জন করো, দেশি পণ্য ব্যবহার করো”; “তুমি আমি স্বদেশি, স্বদেশি স্বদেশি” “আমরা লড়ব, আমরা জিতব” ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে এরূপ অনেক স্লোগানই রাজনৈতিক সচেতন
৪ দিন আগে২২ জুলাই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এ নিয়ে একটি প্রস্তাবনা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে । তাতে প্রধান শিক্ষকরা আগে কত টাকা বেতন ও ভাতা পেতেন, আর দশম গ্রেড বাস্তবায়ন হলে কত পাবেন—তা নিয়ে পরিপূর্ণ হিসাব রয়েছে ।
৪ দিন আগেবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকেই খাজা সলিমুল্লাহ, মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ, আল্লামা ইকবাল, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দ্দী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ অনুধাবন করেন যে, ভারতবর্ষ স্বাধীন হলে মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমির প্রয়োজন হবে। অন্যথায় ভারতবর্ষের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির মধ্যে গৃহযুদ্ধ লেগেই থাকবে। রা
৯ দিন আগেশেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানী নেতাদের প্রতি খারাপ ভাষার ব্যবহার করতে শুনিনি। স্বাধীনতার ঘোষক বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা সেনাবাহিনী প্রধান বাংলাদেশের সফল রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তাঁর জীবদ্দশায় শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য করেননি। শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে এনে রাজনীতি করার সুযোগস
৯ দিন আগে