রহিম আব্দুর রহিম
দেশের সার্বিক অবস্থা কতটা উন্নত, আর কতটা অবনত, তা স্পষ্ট করার জন্য আরও একটি মানবিক সংগ্রাম জরুরি হয়ে পড়েছে। আর এই সংগ্রামে কলম সৈনিকদের বিকল্প নেই।
প্রতিদিনের পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে ভয়াবহ সব আতঙ্ক আর হতাশার খবর। ৫ মার্চ একটি জাতীয় পত্রিকার প্রথম পাতার লীড শিরোনাম ছিলো, 'বেড়ে চলেছে নৃশংসতা, বার্তায় আবদ্ধ সরকার।' একই দিনের অন্য আর একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার প্রথম পাতায় শিরোনাম ছিলো, 'বন্দিতে ঠাসা কারাগার।'
শিরোনাম দুটির প্রথম শিরোনামের সারাংশ, প্রতিদিনই কোনো না কোনো স্থানে আতঙ্ক সৃষ্টি করে পরিকল্পিতভাবে গণপিটুনির ঘটনা ঘটছে। হচ্ছে ছিনতাই ও খুনের মতো জগণ্য ঘটনা। ৬ ফেব্রুয়ারি দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার প্রথম পাতায় 'থামছে না মব ভায়োলেন্স' শিরোনামের সংবাদটিতে যে চিত্র উঠে এসেছে তা ভয়াবহ। পূর্ব ঘোষণা দিয়ে মব সৃষ্টি করে গুলশানে তানভীর ইমামের সাবেক স্ত্রীর বাসায় মধ্যরাতে তল্লাশির নামে লুটপাট হয়েছে।
এইদিন অবশ্যই পুলিশ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। গত জানুয়ারী মাসে গণপিটুনিতে ১৬ জন নিহত হয়েছে বলে আসক নামের একটি মানবাধিকার সংস্থা তাদের জরিপ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।
ফেব্রুয়ারি মাসে ১১৯ জন গণপিটুনির শিকার হয়েছে বলে এইচ আর এস এস নামক অন্য আর একটি মানবাধিকার সংস্থা তাদের জরিপ রিপোর্টে জানিয়েছে। এধরনের মব সৃষ্টি করে খুন-খারাপির পদ্ধতিও পরিকল্পিত এবং ভয়াবহ।
ঘটনা, ঘটানোর আগে দুষ্ট চক্রগুলো কোনো না কোনো ব্যক্তিকে রাজনৈতিক অথবা ব্যক্তিগত আক্রোশে তার সম্পদ, প্রতিষ্ঠান বা বাড়িকে টার্গেট করে, পরে তার কিংবা তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার রটিয়ে ঘটনার বিশ্বাসযোগ্য পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ভাঙচুর, লুটপাট, হত্যা-খুনের মতো ঘটনার অবতারণা করে। যা অত্যন্ত বিপদজনক এবং ভয়াবহ। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া দু-একটি ঘটনার উদাহরণ টানলেই মব ভায়োলেন্সের একটি জগণ্য চিত্র স্পষ্ট হবে।
রাজধানীর বসুন্ধরায় ইরানি দুই নাগরিক আহমেদ (৭৪) ও তাঁর নাতি মেহেদী (১৮) গণপিটুনির শিকার হয়েছেন। অপরাধীরা প্রকাশ্যে তাঁদের উপর হামলা করে মারাত্মকভাবে আহত করে। মগবাজারে গণপিটুনিতে আহত হয়েছেন এক ঠিকাদার। পতেঙ্গায় পুলিশের উপর হামলা হয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া জামায়াতের দুই কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
তাদের হত্যার আগে মাইককে ঘোষণা দিয়ে খুনিরা জনসমাগম সৃষ্টি করে। ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর উত্তরায় ছিনতাইকারী সন্দেহে দুই ব্যক্তিকে প্রথমে বেদড়ক পিটানোর পর তাদের পায়ে দড়ি বেঁধে উল্টো করে টানিয়ে রাখে। ভোলায় যুবকের হাতের আঙ্গুল কেটে দিয়েছে, নষ্ট করেছে চোখ। সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ইত্তেফাক সংবাদদাতার বরাত দিয়ে পত্রিকাটি প্রকাশ করেছে, ৫ আগস্টের পর সুনামগঞ্জের লুটপাট কমেনি।
গত ৫ দিনে, অর্থাৎ ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত, দিরাই ও শাল্লা উপজেলার সাতটি জলমহালের ৪ কোটি টাকার মাছ লুটপাট হয়েছে। ১ মার্চ শরীয়তপুরের কীর্তিনাশা নদীতে ডাকাতির চেষ্টার অভিযোগের ঘটনায গণপিটুনি দিয়ে ৪ জনকে পুলিশে দেয় জনগণ। এর মধ্যে দুইজন হাসপাতালে মৃত্যু ঘটে। নিখোঁজ এক ডাকাতের লাশ নদীতে ভেসে ওঠে।
৫ মার্চ ঠাকুরগাঁও-এ হ্যান্ডকাপ পরা মাদক ব্যবসায়ীদের ছিনতাই করে নিয়ে যায় অপরাধীরা। এসব ঘটনা পত্রিকাগুলো সামনে আনলেও, অপ্রকাশিত অসংখ্য ঘটনা ঘটছে দেশের আনাচে-কানাচে। তবে কি সহসাই মানবিক বিপর্যয় ঘটতে যাচ্ছে! এমন আশংকা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এমন পরিস্থিতিতে সরকারকে মনে রাখতে হবে, তারা কোনো দল বা গোষ্ঠীর সরকার নয়, তারা আপামর জনমানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেবার রক্ষক।
কোনভাবেই বিগত কোনো সরকারের আমলের কানভারি করা, দলকানাদের কথায় একমুখি হয়ে কাজ করা যাবে না, অপরাধীদের কোনো দল নেই, এরা সর্বসময়ে অপরাধী। কোনোভাবেই মব জাস্টিসের অজুহাতে কোনো অপরাধী ছাড় পাক-এমন সুযোগ সৃষ্টি করা যাবে না। গণপিটুনি উচ্চারণ করার মানেই হলো অপরাধীকে দায়মুক্তি, যা সভ্য পৃথিবীতে মেনে নেওয়াও জগণ্য গর্হিত কাজ।
এক্ষেত্রে সরকারকে অনঢ় হতেই হবে। অন্যদিকে সাধারণ জনগণকে স্ব স্ব এলাকায় ঐক্যবদ্ধভাবে 'মব জাস্টিস'-এর বিরুদ্ধে জনমত গঠন করার মতো সামাজিক দায়-দায়িত্বে কাঁধে নিয়ে এগুতে হবে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এবং আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ জাগিয়ে তুলতে সমাজের সুধীমহল এবং রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে হবে।
একইভাবে পুলিশ প্রশাসন ভিকটিমকে আশ্বস্ত করবেন; তিনি আইনি সহযোগিতা পাবেন, আসামীকে খুঁজে দেন বা ধরে দেন, এমন চুক্তি থেকে সরে আসতে হবে। সরকারি, বেসরকারি প্রচার মাধ্যম রেডিও টেলিভিশনসহ, সামাজিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠানাদিতে মব জাস্টিসের মতো কাজ যে, শুধু জগণ্য তা নয়, ঘৃণিত অপরাধ বলে প্রতিষ্ঠিত করতে আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে।
এক্ষেত্রে মসজিদের ইমাম, মন্দিরের পুরোহিত, স্কুল টিচার, সাংস্কৃতিক কর্মীদের নিয়ে পাড়া-মহল্লায় ছোট ছোট ট্রুপ মিটিং আদলের কর্মকাণ্ড চালানোও জরুরি হয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে দেশের জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, ইউনিয়ন ও পৌর পরিষদের কর্তাব্যক্তিদের মাধ্যমে স্থানীয় জন-মানুষদের সাথে সভা, সেমিনার, আলোচনা-পর্যালোচনা মাধ্যমে জনহিতকর প্রচারণা বাস্তবায়ন করাও যেতে পারে।
এক্ষেত্রে সরকারের দালিলিক অর্ডার মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মাঝে পৌঁছে দিতে হবে। লেখাটি শুরুতেই অন্য আরও একটি শিরোনাম উল্লেখ করেছি, 'বন্দিতে ঠাসা কারাগার।' এই শিরোনামের সংবাদটির সারসংক্ষেপ, দেশের কারাগারগুলোতে আসামীর সংখ্যা ধারণক্ষমতার চেয়ে বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়ে গেছে। খোদ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ধারণক্ষমতা ৪ হাজার হলেও বর্তমানে সেখানে রয়েছেন প্রায় ৮ হাজার।
কাশিমপুর-২ কারাগারে ধারণক্ষমতা মাত্র ৩০০ জন, অথচ সেখানে বন্দি রাখা হয়েছে ২ হাজার ৫০০ জন। সারাদেশের কারাগারগুলোর প্রায় একই চিত্র। দেশে মোট কারাগারের সংখ্যা ৬৮টি। এর মধ্যে ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগার, ৫৫টি জেলা কারাগার। এসব কারাগারে সবমিলে বন্দি ধারণক্ষমতা মোট ৪২ হাজার ৫৯০ জন। তবে ২ মার্চ পর্যন্ত সারাদেশে এসব কারাগারে বন্দি ছিলেন মোট ৬৯ হাজার জন।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ডেভিল হান্টের অভিযানে গত ১ মার্চ পর্যন্ত, মোট ২১ দিনে ১২ হাজার ৫০০ জন গ্রেফতার হয়েছে। নতুন, পুরাতন নিয়মিত মামলার আসামীসহ সবমিলিয়ে এই সময়ে গ্রেফতার হয়েছে মোট ৩০ হাজার ৩৮৫ জন। ফলে কারাগারগুলোতে আসামীর চাপ অধিকতর চরমে। অপরাধীরা গ্রেফতার হোক, সাধারণ জন-মানুষ এমনটিই চাচ্ছে; এক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সতর্ক থাকতে হবে।
৫ আগস্টের পর যেসব দুষ্কৃতকারী, চিহ্নিত অপরাধীরা সাধু সেজে বিভিন্ন দলের নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম চালিয়েছিল, বর্তমান তারাই কি বিভিন্ন আইন প্রয়োগ সংস্থার সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে, ভুলবাল তথ্য দিয়ে ফ্যাসিস্টদের সমর্থকদের ধরিয়ে দেবার কাজটি করছে? নাকি, পতিত ফ্যাসিস্টদের আদলে ধরপাকড় চলছে? বিএনপি'র মীর্জা আব্বাসের একটি উক্তি খুবই গ্রহণযোগ্য, 'ফ্যাসিস্ট তাড়াতে গিয়ে নতুন ফ্যাসিস্ট যেনো সৃষ্টি না হয়।'
বর্তমান সরকারের প্রতিচ্ছবি কতটা স্বচ্ছতার দিকে কিংবা ফ্যাসিস্টের দিকে কত দ্রুত এগুচ্ছে; তা সরকারের সমষ্টিগত কর্মের মধ্য দিয়ে দ্রুতই প্রকাশ হবে এটাই স্পষ্ট।
লেখক: সাংবাদিক ও নাট্যকার
দেশের সার্বিক অবস্থা কতটা উন্নত, আর কতটা অবনত, তা স্পষ্ট করার জন্য আরও একটি মানবিক সংগ্রাম জরুরি হয়ে পড়েছে। আর এই সংগ্রামে কলম সৈনিকদের বিকল্প নেই।
প্রতিদিনের পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে ভয়াবহ সব আতঙ্ক আর হতাশার খবর। ৫ মার্চ একটি জাতীয় পত্রিকার প্রথম পাতার লীড শিরোনাম ছিলো, 'বেড়ে চলেছে নৃশংসতা, বার্তায় আবদ্ধ সরকার।' একই দিনের অন্য আর একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার প্রথম পাতায় শিরোনাম ছিলো, 'বন্দিতে ঠাসা কারাগার।'
শিরোনাম দুটির প্রথম শিরোনামের সারাংশ, প্রতিদিনই কোনো না কোনো স্থানে আতঙ্ক সৃষ্টি করে পরিকল্পিতভাবে গণপিটুনির ঘটনা ঘটছে। হচ্ছে ছিনতাই ও খুনের মতো জগণ্য ঘটনা। ৬ ফেব্রুয়ারি দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার প্রথম পাতায় 'থামছে না মব ভায়োলেন্স' শিরোনামের সংবাদটিতে যে চিত্র উঠে এসেছে তা ভয়াবহ। পূর্ব ঘোষণা দিয়ে মব সৃষ্টি করে গুলশানে তানভীর ইমামের সাবেক স্ত্রীর বাসায় মধ্যরাতে তল্লাশির নামে লুটপাট হয়েছে।
এইদিন অবশ্যই পুলিশ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। গত জানুয়ারী মাসে গণপিটুনিতে ১৬ জন নিহত হয়েছে বলে আসক নামের একটি মানবাধিকার সংস্থা তাদের জরিপ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।
ফেব্রুয়ারি মাসে ১১৯ জন গণপিটুনির শিকার হয়েছে বলে এইচ আর এস এস নামক অন্য আর একটি মানবাধিকার সংস্থা তাদের জরিপ রিপোর্টে জানিয়েছে। এধরনের মব সৃষ্টি করে খুন-খারাপির পদ্ধতিও পরিকল্পিত এবং ভয়াবহ।
ঘটনা, ঘটানোর আগে দুষ্ট চক্রগুলো কোনো না কোনো ব্যক্তিকে রাজনৈতিক অথবা ব্যক্তিগত আক্রোশে তার সম্পদ, প্রতিষ্ঠান বা বাড়িকে টার্গেট করে, পরে তার কিংবা তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার রটিয়ে ঘটনার বিশ্বাসযোগ্য পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ভাঙচুর, লুটপাট, হত্যা-খুনের মতো ঘটনার অবতারণা করে। যা অত্যন্ত বিপদজনক এবং ভয়াবহ। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া দু-একটি ঘটনার উদাহরণ টানলেই মব ভায়োলেন্সের একটি জগণ্য চিত্র স্পষ্ট হবে।
রাজধানীর বসুন্ধরায় ইরানি দুই নাগরিক আহমেদ (৭৪) ও তাঁর নাতি মেহেদী (১৮) গণপিটুনির শিকার হয়েছেন। অপরাধীরা প্রকাশ্যে তাঁদের উপর হামলা করে মারাত্মকভাবে আহত করে। মগবাজারে গণপিটুনিতে আহত হয়েছেন এক ঠিকাদার। পতেঙ্গায় পুলিশের উপর হামলা হয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া জামায়াতের দুই কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
তাদের হত্যার আগে মাইককে ঘোষণা দিয়ে খুনিরা জনসমাগম সৃষ্টি করে। ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর উত্তরায় ছিনতাইকারী সন্দেহে দুই ব্যক্তিকে প্রথমে বেদড়ক পিটানোর পর তাদের পায়ে দড়ি বেঁধে উল্টো করে টানিয়ে রাখে। ভোলায় যুবকের হাতের আঙ্গুল কেটে দিয়েছে, নষ্ট করেছে চোখ। সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ইত্তেফাক সংবাদদাতার বরাত দিয়ে পত্রিকাটি প্রকাশ করেছে, ৫ আগস্টের পর সুনামগঞ্জের লুটপাট কমেনি।
গত ৫ দিনে, অর্থাৎ ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত, দিরাই ও শাল্লা উপজেলার সাতটি জলমহালের ৪ কোটি টাকার মাছ লুটপাট হয়েছে। ১ মার্চ শরীয়তপুরের কীর্তিনাশা নদীতে ডাকাতির চেষ্টার অভিযোগের ঘটনায গণপিটুনি দিয়ে ৪ জনকে পুলিশে দেয় জনগণ। এর মধ্যে দুইজন হাসপাতালে মৃত্যু ঘটে। নিখোঁজ এক ডাকাতের লাশ নদীতে ভেসে ওঠে।
৫ মার্চ ঠাকুরগাঁও-এ হ্যান্ডকাপ পরা মাদক ব্যবসায়ীদের ছিনতাই করে নিয়ে যায় অপরাধীরা। এসব ঘটনা পত্রিকাগুলো সামনে আনলেও, অপ্রকাশিত অসংখ্য ঘটনা ঘটছে দেশের আনাচে-কানাচে। তবে কি সহসাই মানবিক বিপর্যয় ঘটতে যাচ্ছে! এমন আশংকা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এমন পরিস্থিতিতে সরকারকে মনে রাখতে হবে, তারা কোনো দল বা গোষ্ঠীর সরকার নয়, তারা আপামর জনমানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেবার রক্ষক।
কোনভাবেই বিগত কোনো সরকারের আমলের কানভারি করা, দলকানাদের কথায় একমুখি হয়ে কাজ করা যাবে না, অপরাধীদের কোনো দল নেই, এরা সর্বসময়ে অপরাধী। কোনোভাবেই মব জাস্টিসের অজুহাতে কোনো অপরাধী ছাড় পাক-এমন সুযোগ সৃষ্টি করা যাবে না। গণপিটুনি উচ্চারণ করার মানেই হলো অপরাধীকে দায়মুক্তি, যা সভ্য পৃথিবীতে মেনে নেওয়াও জগণ্য গর্হিত কাজ।
এক্ষেত্রে সরকারকে অনঢ় হতেই হবে। অন্যদিকে সাধারণ জনগণকে স্ব স্ব এলাকায় ঐক্যবদ্ধভাবে 'মব জাস্টিস'-এর বিরুদ্ধে জনমত গঠন করার মতো সামাজিক দায়-দায়িত্বে কাঁধে নিয়ে এগুতে হবে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এবং আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ জাগিয়ে তুলতে সমাজের সুধীমহল এবং রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে হবে।
একইভাবে পুলিশ প্রশাসন ভিকটিমকে আশ্বস্ত করবেন; তিনি আইনি সহযোগিতা পাবেন, আসামীকে খুঁজে দেন বা ধরে দেন, এমন চুক্তি থেকে সরে আসতে হবে। সরকারি, বেসরকারি প্রচার মাধ্যম রেডিও টেলিভিশনসহ, সামাজিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠানাদিতে মব জাস্টিসের মতো কাজ যে, শুধু জগণ্য তা নয়, ঘৃণিত অপরাধ বলে প্রতিষ্ঠিত করতে আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে।
এক্ষেত্রে মসজিদের ইমাম, মন্দিরের পুরোহিত, স্কুল টিচার, সাংস্কৃতিক কর্মীদের নিয়ে পাড়া-মহল্লায় ছোট ছোট ট্রুপ মিটিং আদলের কর্মকাণ্ড চালানোও জরুরি হয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে দেশের জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, ইউনিয়ন ও পৌর পরিষদের কর্তাব্যক্তিদের মাধ্যমে স্থানীয় জন-মানুষদের সাথে সভা, সেমিনার, আলোচনা-পর্যালোচনা মাধ্যমে জনহিতকর প্রচারণা বাস্তবায়ন করাও যেতে পারে।
এক্ষেত্রে সরকারের দালিলিক অর্ডার মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মাঝে পৌঁছে দিতে হবে। লেখাটি শুরুতেই অন্য আরও একটি শিরোনাম উল্লেখ করেছি, 'বন্দিতে ঠাসা কারাগার।' এই শিরোনামের সংবাদটির সারসংক্ষেপ, দেশের কারাগারগুলোতে আসামীর সংখ্যা ধারণক্ষমতার চেয়ে বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়ে গেছে। খোদ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ধারণক্ষমতা ৪ হাজার হলেও বর্তমানে সেখানে রয়েছেন প্রায় ৮ হাজার।
কাশিমপুর-২ কারাগারে ধারণক্ষমতা মাত্র ৩০০ জন, অথচ সেখানে বন্দি রাখা হয়েছে ২ হাজার ৫০০ জন। সারাদেশের কারাগারগুলোর প্রায় একই চিত্র। দেশে মোট কারাগারের সংখ্যা ৬৮টি। এর মধ্যে ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগার, ৫৫টি জেলা কারাগার। এসব কারাগারে সবমিলে বন্দি ধারণক্ষমতা মোট ৪২ হাজার ৫৯০ জন। তবে ২ মার্চ পর্যন্ত সারাদেশে এসব কারাগারে বন্দি ছিলেন মোট ৬৯ হাজার জন।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ডেভিল হান্টের অভিযানে গত ১ মার্চ পর্যন্ত, মোট ২১ দিনে ১২ হাজার ৫০০ জন গ্রেফতার হয়েছে। নতুন, পুরাতন নিয়মিত মামলার আসামীসহ সবমিলিয়ে এই সময়ে গ্রেফতার হয়েছে মোট ৩০ হাজার ৩৮৫ জন। ফলে কারাগারগুলোতে আসামীর চাপ অধিকতর চরমে। অপরাধীরা গ্রেফতার হোক, সাধারণ জন-মানুষ এমনটিই চাচ্ছে; এক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সতর্ক থাকতে হবে।
৫ আগস্টের পর যেসব দুষ্কৃতকারী, চিহ্নিত অপরাধীরা সাধু সেজে বিভিন্ন দলের নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম চালিয়েছিল, বর্তমান তারাই কি বিভিন্ন আইন প্রয়োগ সংস্থার সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে, ভুলবাল তথ্য দিয়ে ফ্যাসিস্টদের সমর্থকদের ধরিয়ে দেবার কাজটি করছে? নাকি, পতিত ফ্যাসিস্টদের আদলে ধরপাকড় চলছে? বিএনপি'র মীর্জা আব্বাসের একটি উক্তি খুবই গ্রহণযোগ্য, 'ফ্যাসিস্ট তাড়াতে গিয়ে নতুন ফ্যাসিস্ট যেনো সৃষ্টি না হয়।'
বর্তমান সরকারের প্রতিচ্ছবি কতটা স্বচ্ছতার দিকে কিংবা ফ্যাসিস্টের দিকে কত দ্রুত এগুচ্ছে; তা সরকারের সমষ্টিগত কর্মের মধ্য দিয়ে দ্রুতই প্রকাশ হবে এটাই স্পষ্ট।
লেখক: সাংবাদিক ও নাট্যকার
তবে হঠাৎ করেই ঘুরে গেছে হাওয়া। বদলে গেছে সবার সুর। সবার মুখে মুখে এখন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন। কেউ বলছেন, ফেব্রুয়ারিতে ভোট হতেই হবে। তবে সংস্কার নিয়ে ৮৪টি বিষয়ে ঐকমত্য হলেও জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে এখনো ঐকমত্যে আসতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। এ নিয়ে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি তিন দলের অবস্থান ভিন্
৪ দিন আগেএই সেপ্টেম্বরেই ১৫৮ বছরে পা দিলো সেই বই, যার নাম থেকে এই হেডলাইনের খেলা— কার্ল মার্ক্সের যুগান্তকারী গ্রন্থ ‘ডাস ক্যাপিটাল’।
১৮ দিন আগেএকটি জাতির উন্নয়নের ভিত্তি তার জনশক্তির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহারের উপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল দেশে, জনসংখ্যাগত স্থিতিশীলতা (Demographic Stability) অর্জন করা এখন আর কেবল জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের একটি কৌশল নয়, বরং এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং সুশাসনের এক অবিচ্ছেদ্য অং
১৮ দিন আগেরাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকায় ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা বিএনপির প্রতিপক্ষ এখন জামায়াতে ইসলামি। জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করা গেলে জামায়াত তখন বিএনপির শক্ত বা সবল প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে পারে। এমনকি অন্যান্য ইসলামি দলগুলো সঙ্গে নিয়ে জামায়াত দরকষাকষির সর্বোচ্চ জায়গায় পৌঁছাতে পারে।
১৯ দিন আগে