
স. ম. গোলাম কিবরিয়া

শিকল ভাঙার গান গেয়েছে বাঙালি বারবার। কিন্তু মুক্তি মিলেছে একবার—তাও খণ্ডিত বাংলার। ১৯৪৭ সালে মাউন্টব্যাটেন বাংলাকে নতুনভাবে ভাগ করেন। এবার বাঙালির পায়ে নতুন করে শেকল বাঁধে পাকিস্তানিরা। শেকলের নিয়ন্ত্রণ ১,৩০০ মাইল দূরে পাকিস্তানের রাওলপিন্ডিতে। আবারও বেজে ওঠে শেকল ভাঙার গান, শুরু হয় নতুন সংগ্রাম। তেইশ বছরের সংগ্রাম আর নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধে পূর্ববাংলা স্বাধীন হয়। প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙালির জাতিরাষ্ট্র—স্বাধীন, সার্বভৌম ‘বাংলাদেশ’।
১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। যুদ্ধরত ৯৩ হাজার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগী কয়েক হাজার রাজাকার-আলবদরের পক্ষে জেনারেল নিয়াজী আত্মসমর্পণ করেন। মুক্তিপাগল বাঙালি সারাদেশে উল্লাসে ফেটে পড়ে। আবির-মাখা সোনালি বিকেল। সারাদেশে মুক্তির মিছিল। শেকল ভাঙার আনন্দে ভাসছে পুরো দেশ। বন্দরনগরী চট্টগ্রামে সেই আনন্দ অন্য মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ে।
কর্ণফুলীর স্রোতধারার সঙ্গে যুক্ত হয় বঙ্গোপসাগরের আছড়ে পড়া উত্তাল ঢেউ। সেই আনন্দের মাঝেই হঠাৎ যোগ দেয় একদল সশস্ত্র তিব্বতীয় গেরিলা। বঙ্গোপসাগরের ঢেউ আর কর্ণফুলীর স্রোত যেন স্তব্ধ হয়ে যায়। আনন্দে উদ্বেলিত জনতা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তিব্বতীয়দের দিকে।
মিত্রবাহিনীর ভারতীয় সেনাদের বিস্ময়ের দৃষ্টিও তাদের দিকে! সবার মনে একই প্রশ্ন—চট্টগ্রামে তিব্বতীয় নাগরিক! এলো কোথা থেকে? তাও আবার সশস্ত্র যোদ্ধা বেশে। তাকিয়ে থাকা জনতা, মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় সেনাদের বিস্ময়ের ঘোর কাটতে না কাটতেই তারা উধাও। যেন আকাশ থেকে পড়ে হওয়ায় মিশে গেল।
তিব্বতীয় গেরিলা দলের এমন আবির্ভাব ও তিরোধান নিয়ে জন্ম নেয় অনেক গল্পগাঁথা। আস্তে আস্তে জানা যায় তাঁদের কথা, তাঁদের বীরত্বগাঁথা—অনেক কিংবদন্তি। কেউ কেউ এদের নাম দেয় ‘চট্টগ্রামের ভূত’। তবে ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’-র এক লেখায় সাংবাদিক মানস পাল তিব্বতীয় এই গেরিলা দলের নাম দেন ‘The Phantoms of ’71’।
১৪ নভেম্বর ১৯৭১। পার্বত্য চট্টগ্রামের হাড়কাঁপানো শীত। রাতে ক্যাম্পের অদূরে বসে আছে এক পাকিস্তানি স্নাইপার। হঠাৎ অনুভব করে আশপাশে কিছু নড়ে উঠেছে। কোনো সময় না নিয়েই চালায় গুলি। নিঃশব্দে সেই গুলি আঘাত করে বিশ্বের অন্যতম দুর্ধর্ষ এক গেরিলার গায়ে। পাকিস্তানি স্নাইপার তখনও গুলির ফলাফল টের পায়নি। কারণ, গুলিবিদ্ধ হয়েও গেরিলা টুঁ শব্দ করেননি।
রেডিওর ওপারে বসে থাকা কমান্ডারকে শুধু জানালেন, “আমি আর পারছি না।” কমান্ডার বুঝতে পেরে নির্ভীকভাবে বাকিদের নির্দেশ দিলেন ছোট্ট দুটি শব্দে—“Push ahead।” গেরিলা সদস্যদের হাতে বুলগেরিয়ান একে-৪৭ রাইফেল আর তিব্বতীয় ছোরা (কুকরি)। কিছু বুঝে ওঠার আগেই চোখের পলকে তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানিদের ওপর। মুহূর্তেই অপারেশন শেষ। নিমিষেই উধাও হয়ে যায় পুরো দল।
পার্বত্য চট্টগ্রামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ওপর এমন অতর্কিত হামলা হয়েছে অনেক। একের পর এক এমন আক্রমণে হানাদার বাহিনীকে নাস্তানাবুদ করে দেয় এই গেরিলা দল—‘Phantoms of Chittagong’।
মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে অনেক। তার চেয়েও বেশি হয়েছে গেরিলা আক্রমণ। গেরিলা আক্রমণ চালিয়ে পাকিস্তানিদের নাস্তানাবুদ করে তোলে মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে যোগ দেয় ভারতের স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স—সংক্ষেপে এসএফএফ।
ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং (RAW)-এর অধীনে কাজ করে এসএফএফ। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মিলে এসএফএফ একের পর এক বিধ্বংসী আক্রমণ চালিয়ে পাকিস্তানিদের পর্যদুস্ত করে ফেলে। এসএফএফ-এর অন্যতম দুর্ধর্ষ দল ছিল তিব্বতীয়দের নিয়ে গড়ে তোলা গেরিলা দল। এরাই বাংলাদেশের বিজয়-আনন্দকালে চট্টগ্রামে অংশ নিয়েছিল।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সংগোপনে স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সও অংশ নিয়েছিল। যুদ্ধের এক পর্যায়ে তারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ওপর মরণকামড় দেয়। এই অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘Operation Mountain Eagle’।
ষাটের দশকে তিব্বতে চলছিল চরম অস্থিরতা। তিব্বতকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালান প্রধান ধর্মগুরু দালাইলামা। গণচীন সরকার তা দমন করার পদক্ষেপ নেয়। অবশেষে তিব্বত থেকে বিতাড়িত হয়ে দালাইলামা ভারতে আশ্রয় নেন। তাঁর সঙ্গে বিতাড়িত হয়ে বহু সাধারণ তিব্বতীয়ও ভারতে আশ্রয় নেয়।
১৯৬২ সালে ভারত-চীন যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধের পর ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী বিজু পাটনায়েক তিব্বত থেকে বিতাড়িত যুবকদের নিয়ে বিশেষায়িত গেরিলা ইউনিট গঠনের প্রস্তাব দেন। বিজু পাটনায়েক নিজেও এককালে ছিলেন দুর্ধর্ষ পাইলট। তাঁর প্রস্তাব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেয় ভারত সরকার। ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান ছিলেন ভোলানাথ মল্লিক। এই গেরিলা ইউনিট গঠনের দায়িত্ব তাঁর ওপর অর্পণ করা হয়। ১৯৬২ সালের ১৪ নভেম্বর ভোলানাথ মল্লিকের নেতৃত্বে গঠিত হয় ‘স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স’। এই ফোর্স ‘Establishment 22’ নামেও পরিচিত ছিল।
সময়ের পরিক্রমায় ১৯৭১ সালে ‘স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স’ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। RAW-এর অধীনে বিভিন্ন মিশনে অংশ নিয়ে তিব্বতীয় গেরিলা যুবকেরা দক্ষতা ও ক্ষিপ্রতার প্রমাণ দেয়। ১৯৬২ সালে গঠিত এই গেরিলা সংগঠন বিস্তৃতি পায় আটটি ব্যাটালিয়নে। ইউনিটের সদস্যরা বুলগেরিয়ান একে-৪৭ রাইফেলসহ নানা ধরনের অত্যাধুনিক গেরিলা অস্ত্রে সজ্জিত ছিল।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশে গণহত্যা ও নৃশংসতা চালায়। এর বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে জনমত গড়ে ওঠে। বিশ্বের দেশে দেশে প্রতিবাদ তীব্র হয়। প্রতিবেশী দেশ ভারত আগেই বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ায়। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও গোলাবারুদ দিয়ে সহযোগিতা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী। প্রায় এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয়, খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তাও দেওয়া হয়।
স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে ইন্দিরা গান্ধী একটি পত্র পাঠান। বিশেষায়িত এই গেরিলা বাহিনীর কাছে লেখা পত্রে তিনি বলেন,
“We cannot compel you to fight a war for us, but the fact is that General AAK Niazi is treating the people of East Pakistan very badly, the same way the Chinese are treating the Tibetans in Tibet. India has to do something about it. It would be appreciated if you could help us fight the war for liberating the people of Bangladesh.”
কাঠমান্ডুভিত্তিক রিভিউ ম্যাগাজিন Himal Southasian-এর গবেষক থাসি ডুন্ডাপ ইন্দিরা গান্ধীর পত্র লেখার বিষয়টি গবেষণায় তুলে ধরেন। মুক্তিযুদ্ধকালে স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের দায়িত্বে ছিলেন মেজর জেনারেল সুজন সিং উবান। ইন্দিরা গান্ধীর অনুরোধপত্র পাওয়ার পর তিনি ফোর্সের নেতৃস্থানীয়দের সঙ্গে বৈঠক করেন। বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বিষয়ে তারা ঐকমত্যে পৌঁছান।
১৯৭১ সালের অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে তিন হাজারের অধিক স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের কমান্ডোকে প্রস্তুত করা হয়। তাদের নিয়ে আসা হয় মিজোরামের ডেমাগিরিতে। সেখান থেকে কর্ণফুলী নদী পাড়ি দিয়ে দুর্গম পাহাড়ি পথ অতিক্রম করে গেরিলারা প্রবেশ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে। শুরু করে পাকিস্তানি বাহিনীকে লক্ষ্য করে ‘hit-and-run raids’ কৌশলে অপারেশন।
পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর অতর্কিত আক্রমণ করেই গেরিলারা ফিরে গিয়ে ডেমাগিরিতে গা ঢাকা দিত। ফলে এদের অস্তিত্ব সম্পর্কে ঘুণাক্ষরেও টের পেত না পাকিস্তানি হানাদাররা। এভাবেই আক্রমণ ও পলায়ন কৌশল চালায় গেরিলারা। পাহাড়ি এলাকার ভূতুড়ে গেরিলা বা ‘Phantoms of Chittagong’ নামে খ্যাতি পায় স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের সদস্যরা।
নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তিব্বতীয় গেরিলারা পাকিস্তানি বাহিনীকে মরণকামড় দেওয়ার প্রস্তুতি নেয়। তারা ডুন্ডাপ গিয়াতসুর নেতৃত্বে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পার্বত্য অঞ্চলে প্রবেশ করে। নয়টি নৌকাভর্তি গেরিলারা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে পার্বত্য অঞ্চলের গভীরে। যুদ্ধের এক পর্যায়ে ডুন্ডাপ গিয়াতসু প্রাণ হারান। এরপর গেরিলারা সরাসরি যোগাযোগ করেন মেজর জেনারেল উবানের সঙ্গে।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীকে মোকাবিলার দায়িত্ব ছিল পাকিস্তানের ৯৭তম ইন্ডিপেনডেন্ট ব্রিগেড ও সেকেন্ড এসএসজি কমান্ডো ব্যাটালিয়নের ওপর। বিপুল অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত এই দুই দলের ধারণাও ছিল না কী পরিমাণ অতর্কিত আক্রমণ হতে যাচ্ছে তাদের ওপর। গেরিলারা যোগাযোগের সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে অতর্কিত আক্রমণে পাকিস্তানি কমান্ডোদের দিশেহারা করে ফেলে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তিব্বতীয় এই ভূতুড়ে গেরিলাদের রক্ত কম ঝরেনি। যুদ্ধে প্রায় ৯০ জন গেরিলা প্রাণ হারান, প্রায় ১৯০ জন আহত হন। অবশেষে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ—১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের দিন। আত্মসমর্পণের সংবাদ চট্টগ্রামেও ছড়িয়ে পড়ে। আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে তিব্বতীয় এই ভূতুড়ে গেরিলারাও উল্লাস করতে রাস্তায় নেমে আসে।
মূলত চট্টগ্রামে উল্লাসরত জনতা ও মিত্রবাহিনীর ভারতীয় সেনা সদস্যদের বিস্ময়ের কারণ ছিল এরাই। গেরিলাদের দেখে ভারতীয় সেনাদের বিস্মিত হওয়া ছিল সত্যিই অবাক কাণ্ড। পরে জানা যায়, স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স বাংলাদেশের যুদ্ধে অংশ নিয়েছে—তা ভারতীয় সেনাবাহিনীর অনেকেই জানতেন না।
চট্টগ্রামের রাস্তায় তিব্বতীয় গেরিলাদের উল্লাসের খবর দ্রুতই মেজর জেনারেল সুজন সিং উবানের কাছে পৌঁছে যায়। তৎক্ষণাৎ তিনি গেরিলাদের আস্তানায় ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন। তাই শুধুই কিংবদন্তি হয়ে রয়ে যায় তিব্বতীয় এই ভূতুড়ে গেরিলা সদস্যরা।
তিব্বতের ঘরছাড়া এই যুবকেরা বুকের রক্ত দিয়ে নিঃস্বার্থ এক উপাখ্যান লিখে গেছেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে। রক্ত দিয়েও নিভৃতে থেকে গেছেন তারা। একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধ করেছে এই তিব্বতীয় গেরিলারা।
তিব্বতীয়দের বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধের সম্মাননা দিয়েছে ভারত সরকার। যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ভারত সরকার স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের ৫৮০ জনকে বিশেষ সম্মাননা দেয়। নিঃস্বার্থভাবে প্রাণ উৎসর্গ করে তিব্বতীয় এই গেরিলারা বাংলাদেশকে ঋণে আবদ্ধ করেছে। বাঙালি চিরদিন তাদের স্মরণ করবে সশ্রদ্ধচিত্তে। বিজয়ের এই দিনে সেই বীরদের প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম। [তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া ও বাংলা ট্রিবিউন]
লেখক: চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর—ডিএফপির সাবেক মহাপরিচালক

শিকল ভাঙার গান গেয়েছে বাঙালি বারবার। কিন্তু মুক্তি মিলেছে একবার—তাও খণ্ডিত বাংলার। ১৯৪৭ সালে মাউন্টব্যাটেন বাংলাকে নতুনভাবে ভাগ করেন। এবার বাঙালির পায়ে নতুন করে শেকল বাঁধে পাকিস্তানিরা। শেকলের নিয়ন্ত্রণ ১,৩০০ মাইল দূরে পাকিস্তানের রাওলপিন্ডিতে। আবারও বেজে ওঠে শেকল ভাঙার গান, শুরু হয় নতুন সংগ্রাম। তেইশ বছরের সংগ্রাম আর নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধে পূর্ববাংলা স্বাধীন হয়। প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙালির জাতিরাষ্ট্র—স্বাধীন, সার্বভৌম ‘বাংলাদেশ’।
১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। যুদ্ধরত ৯৩ হাজার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগী কয়েক হাজার রাজাকার-আলবদরের পক্ষে জেনারেল নিয়াজী আত্মসমর্পণ করেন। মুক্তিপাগল বাঙালি সারাদেশে উল্লাসে ফেটে পড়ে। আবির-মাখা সোনালি বিকেল। সারাদেশে মুক্তির মিছিল। শেকল ভাঙার আনন্দে ভাসছে পুরো দেশ। বন্দরনগরী চট্টগ্রামে সেই আনন্দ অন্য মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ে।
কর্ণফুলীর স্রোতধারার সঙ্গে যুক্ত হয় বঙ্গোপসাগরের আছড়ে পড়া উত্তাল ঢেউ। সেই আনন্দের মাঝেই হঠাৎ যোগ দেয় একদল সশস্ত্র তিব্বতীয় গেরিলা। বঙ্গোপসাগরের ঢেউ আর কর্ণফুলীর স্রোত যেন স্তব্ধ হয়ে যায়। আনন্দে উদ্বেলিত জনতা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তিব্বতীয়দের দিকে।
মিত্রবাহিনীর ভারতীয় সেনাদের বিস্ময়ের দৃষ্টিও তাদের দিকে! সবার মনে একই প্রশ্ন—চট্টগ্রামে তিব্বতীয় নাগরিক! এলো কোথা থেকে? তাও আবার সশস্ত্র যোদ্ধা বেশে। তাকিয়ে থাকা জনতা, মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় সেনাদের বিস্ময়ের ঘোর কাটতে না কাটতেই তারা উধাও। যেন আকাশ থেকে পড়ে হওয়ায় মিশে গেল।
তিব্বতীয় গেরিলা দলের এমন আবির্ভাব ও তিরোধান নিয়ে জন্ম নেয় অনেক গল্পগাঁথা। আস্তে আস্তে জানা যায় তাঁদের কথা, তাঁদের বীরত্বগাঁথা—অনেক কিংবদন্তি। কেউ কেউ এদের নাম দেয় ‘চট্টগ্রামের ভূত’। তবে ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’-র এক লেখায় সাংবাদিক মানস পাল তিব্বতীয় এই গেরিলা দলের নাম দেন ‘The Phantoms of ’71’।
১৪ নভেম্বর ১৯৭১। পার্বত্য চট্টগ্রামের হাড়কাঁপানো শীত। রাতে ক্যাম্পের অদূরে বসে আছে এক পাকিস্তানি স্নাইপার। হঠাৎ অনুভব করে আশপাশে কিছু নড়ে উঠেছে। কোনো সময় না নিয়েই চালায় গুলি। নিঃশব্দে সেই গুলি আঘাত করে বিশ্বের অন্যতম দুর্ধর্ষ এক গেরিলার গায়ে। পাকিস্তানি স্নাইপার তখনও গুলির ফলাফল টের পায়নি। কারণ, গুলিবিদ্ধ হয়েও গেরিলা টুঁ শব্দ করেননি।
রেডিওর ওপারে বসে থাকা কমান্ডারকে শুধু জানালেন, “আমি আর পারছি না।” কমান্ডার বুঝতে পেরে নির্ভীকভাবে বাকিদের নির্দেশ দিলেন ছোট্ট দুটি শব্দে—“Push ahead।” গেরিলা সদস্যদের হাতে বুলগেরিয়ান একে-৪৭ রাইফেল আর তিব্বতীয় ছোরা (কুকরি)। কিছু বুঝে ওঠার আগেই চোখের পলকে তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানিদের ওপর। মুহূর্তেই অপারেশন শেষ। নিমিষেই উধাও হয়ে যায় পুরো দল।
পার্বত্য চট্টগ্রামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ওপর এমন অতর্কিত হামলা হয়েছে অনেক। একের পর এক এমন আক্রমণে হানাদার বাহিনীকে নাস্তানাবুদ করে দেয় এই গেরিলা দল—‘Phantoms of Chittagong’।
মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে অনেক। তার চেয়েও বেশি হয়েছে গেরিলা আক্রমণ। গেরিলা আক্রমণ চালিয়ে পাকিস্তানিদের নাস্তানাবুদ করে তোলে মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে যোগ দেয় ভারতের স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স—সংক্ষেপে এসএফএফ।
ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং (RAW)-এর অধীনে কাজ করে এসএফএফ। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মিলে এসএফএফ একের পর এক বিধ্বংসী আক্রমণ চালিয়ে পাকিস্তানিদের পর্যদুস্ত করে ফেলে। এসএফএফ-এর অন্যতম দুর্ধর্ষ দল ছিল তিব্বতীয়দের নিয়ে গড়ে তোলা গেরিলা দল। এরাই বাংলাদেশের বিজয়-আনন্দকালে চট্টগ্রামে অংশ নিয়েছিল।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সংগোপনে স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সও অংশ নিয়েছিল। যুদ্ধের এক পর্যায়ে তারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ওপর মরণকামড় দেয়। এই অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘Operation Mountain Eagle’।
ষাটের দশকে তিব্বতে চলছিল চরম অস্থিরতা। তিব্বতকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালান প্রধান ধর্মগুরু দালাইলামা। গণচীন সরকার তা দমন করার পদক্ষেপ নেয়। অবশেষে তিব্বত থেকে বিতাড়িত হয়ে দালাইলামা ভারতে আশ্রয় নেন। তাঁর সঙ্গে বিতাড়িত হয়ে বহু সাধারণ তিব্বতীয়ও ভারতে আশ্রয় নেয়।
১৯৬২ সালে ভারত-চীন যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধের পর ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী বিজু পাটনায়েক তিব্বত থেকে বিতাড়িত যুবকদের নিয়ে বিশেষায়িত গেরিলা ইউনিট গঠনের প্রস্তাব দেন। বিজু পাটনায়েক নিজেও এককালে ছিলেন দুর্ধর্ষ পাইলট। তাঁর প্রস্তাব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেয় ভারত সরকার। ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান ছিলেন ভোলানাথ মল্লিক। এই গেরিলা ইউনিট গঠনের দায়িত্ব তাঁর ওপর অর্পণ করা হয়। ১৯৬২ সালের ১৪ নভেম্বর ভোলানাথ মল্লিকের নেতৃত্বে গঠিত হয় ‘স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স’। এই ফোর্স ‘Establishment 22’ নামেও পরিচিত ছিল।
সময়ের পরিক্রমায় ১৯৭১ সালে ‘স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স’ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। RAW-এর অধীনে বিভিন্ন মিশনে অংশ নিয়ে তিব্বতীয় গেরিলা যুবকেরা দক্ষতা ও ক্ষিপ্রতার প্রমাণ দেয়। ১৯৬২ সালে গঠিত এই গেরিলা সংগঠন বিস্তৃতি পায় আটটি ব্যাটালিয়নে। ইউনিটের সদস্যরা বুলগেরিয়ান একে-৪৭ রাইফেলসহ নানা ধরনের অত্যাধুনিক গেরিলা অস্ত্রে সজ্জিত ছিল।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশে গণহত্যা ও নৃশংসতা চালায়। এর বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে জনমত গড়ে ওঠে। বিশ্বের দেশে দেশে প্রতিবাদ তীব্র হয়। প্রতিবেশী দেশ ভারত আগেই বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ায়। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও গোলাবারুদ দিয়ে সহযোগিতা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী। প্রায় এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয়, খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তাও দেওয়া হয়।
স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে ইন্দিরা গান্ধী একটি পত্র পাঠান। বিশেষায়িত এই গেরিলা বাহিনীর কাছে লেখা পত্রে তিনি বলেন,
“We cannot compel you to fight a war for us, but the fact is that General AAK Niazi is treating the people of East Pakistan very badly, the same way the Chinese are treating the Tibetans in Tibet. India has to do something about it. It would be appreciated if you could help us fight the war for liberating the people of Bangladesh.”
কাঠমান্ডুভিত্তিক রিভিউ ম্যাগাজিন Himal Southasian-এর গবেষক থাসি ডুন্ডাপ ইন্দিরা গান্ধীর পত্র লেখার বিষয়টি গবেষণায় তুলে ধরেন। মুক্তিযুদ্ধকালে স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের দায়িত্বে ছিলেন মেজর জেনারেল সুজন সিং উবান। ইন্দিরা গান্ধীর অনুরোধপত্র পাওয়ার পর তিনি ফোর্সের নেতৃস্থানীয়দের সঙ্গে বৈঠক করেন। বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বিষয়ে তারা ঐকমত্যে পৌঁছান।
১৯৭১ সালের অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে তিন হাজারের অধিক স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের কমান্ডোকে প্রস্তুত করা হয়। তাদের নিয়ে আসা হয় মিজোরামের ডেমাগিরিতে। সেখান থেকে কর্ণফুলী নদী পাড়ি দিয়ে দুর্গম পাহাড়ি পথ অতিক্রম করে গেরিলারা প্রবেশ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে। শুরু করে পাকিস্তানি বাহিনীকে লক্ষ্য করে ‘hit-and-run raids’ কৌশলে অপারেশন।
পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর অতর্কিত আক্রমণ করেই গেরিলারা ফিরে গিয়ে ডেমাগিরিতে গা ঢাকা দিত। ফলে এদের অস্তিত্ব সম্পর্কে ঘুণাক্ষরেও টের পেত না পাকিস্তানি হানাদাররা। এভাবেই আক্রমণ ও পলায়ন কৌশল চালায় গেরিলারা। পাহাড়ি এলাকার ভূতুড়ে গেরিলা বা ‘Phantoms of Chittagong’ নামে খ্যাতি পায় স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের সদস্যরা।
নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তিব্বতীয় গেরিলারা পাকিস্তানি বাহিনীকে মরণকামড় দেওয়ার প্রস্তুতি নেয়। তারা ডুন্ডাপ গিয়াতসুর নেতৃত্বে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পার্বত্য অঞ্চলে প্রবেশ করে। নয়টি নৌকাভর্তি গেরিলারা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে পার্বত্য অঞ্চলের গভীরে। যুদ্ধের এক পর্যায়ে ডুন্ডাপ গিয়াতসু প্রাণ হারান। এরপর গেরিলারা সরাসরি যোগাযোগ করেন মেজর জেনারেল উবানের সঙ্গে।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীকে মোকাবিলার দায়িত্ব ছিল পাকিস্তানের ৯৭তম ইন্ডিপেনডেন্ট ব্রিগেড ও সেকেন্ড এসএসজি কমান্ডো ব্যাটালিয়নের ওপর। বিপুল অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত এই দুই দলের ধারণাও ছিল না কী পরিমাণ অতর্কিত আক্রমণ হতে যাচ্ছে তাদের ওপর। গেরিলারা যোগাযোগের সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে অতর্কিত আক্রমণে পাকিস্তানি কমান্ডোদের দিশেহারা করে ফেলে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তিব্বতীয় এই ভূতুড়ে গেরিলাদের রক্ত কম ঝরেনি। যুদ্ধে প্রায় ৯০ জন গেরিলা প্রাণ হারান, প্রায় ১৯০ জন আহত হন। অবশেষে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ—১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের দিন। আত্মসমর্পণের সংবাদ চট্টগ্রামেও ছড়িয়ে পড়ে। আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে তিব্বতীয় এই ভূতুড়ে গেরিলারাও উল্লাস করতে রাস্তায় নেমে আসে।
মূলত চট্টগ্রামে উল্লাসরত জনতা ও মিত্রবাহিনীর ভারতীয় সেনা সদস্যদের বিস্ময়ের কারণ ছিল এরাই। গেরিলাদের দেখে ভারতীয় সেনাদের বিস্মিত হওয়া ছিল সত্যিই অবাক কাণ্ড। পরে জানা যায়, স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স বাংলাদেশের যুদ্ধে অংশ নিয়েছে—তা ভারতীয় সেনাবাহিনীর অনেকেই জানতেন না।
চট্টগ্রামের রাস্তায় তিব্বতীয় গেরিলাদের উল্লাসের খবর দ্রুতই মেজর জেনারেল সুজন সিং উবানের কাছে পৌঁছে যায়। তৎক্ষণাৎ তিনি গেরিলাদের আস্তানায় ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন। তাই শুধুই কিংবদন্তি হয়ে রয়ে যায় তিব্বতীয় এই ভূতুড়ে গেরিলা সদস্যরা।
তিব্বতের ঘরছাড়া এই যুবকেরা বুকের রক্ত দিয়ে নিঃস্বার্থ এক উপাখ্যান লিখে গেছেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে। রক্ত দিয়েও নিভৃতে থেকে গেছেন তারা। একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধ করেছে এই তিব্বতীয় গেরিলারা।
তিব্বতীয়দের বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধের সম্মাননা দিয়েছে ভারত সরকার। যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ভারত সরকার স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের ৫৮০ জনকে বিশেষ সম্মাননা দেয়। নিঃস্বার্থভাবে প্রাণ উৎসর্গ করে তিব্বতীয় এই গেরিলারা বাংলাদেশকে ঋণে আবদ্ধ করেছে। বাঙালি চিরদিন তাদের স্মরণ করবে সশ্রদ্ধচিত্তে। বিজয়ের এই দিনে সেই বীরদের প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম। [তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া ও বাংলা ট্রিবিউন]
লেখক: চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর—ডিএফপির সাবেক মহাপরিচালক

মহান বিজয়ের মাস ডিসেম্বর এবং ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে এ মাসের ১৬ তারিখে চূড়ান্ত বিজয়ের মাধ্যমে বাঙালি জাতির জীবনে সবচেয়ে গৌরবের অধ্যায় রচিত হয়। ৩০ লাখ শহীদ আর অসংখ্য মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল এ বিজয়।
১১ দিন আগে
আমি বুঝি— ‘সহায়তা’ মানে চাঁদা, আর ‘সফল জনসভা’ মানে আমার টাকা দিয়ে অন্যের মাইক বাজবে। তাই আমি হাসিমুখে বলি, ‘ঠিক আছে ভাই, কত লাগবে?’ তিনি বলেন, ‘যত মন চায় দেন, তবে কম দিলে মন খারাপ হয়।’
১১ দিন আগে
এখানে সরকারের ব্যাখ্যা দেওয়ার দায়িত্ব আছে। তার মন্তব্যের কারণ কী, সেটি সরকার জানতে চাইতে পারে এবং পরিষ্কার করতে পারে। কারণ এর বাইরে অন্য কোনো বিশেষ জটিলতা আছে বলে আমার মনে হয় না।
১৬ দিন আগে