
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক

তরুণ রাজনীতিবিদ ওসমান হাদিকে ১২ ডিসেম্বরে গুলিবর্ষণ ও ১৮ ডিসেম্বরে তার মর্মান্তিক মৃত্যুর পর হতাশাজনক ও বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠী একের পর এক অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্ম দিয়েছে। হত্যাকারীকে গ্রেপ্তারে ব্যর্থ হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। অথচ সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে শীর্ষস্থানীয় দুটি দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে এবং দুটি ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট ও উদীচীতে।
ডেইলি স্টারে আগুন দিয়ে আটকে রাখা সাংবাদিকদের উদ্ধার করতে যাওয়া প্রখ্যাত সাংবাদিক-সম্পাদক নূরুল কবিরকে হেনস্তা করা হয়েছে। ময়মনসিংহের ভালুকায় দিপু চন্দ্র দাস নামের এক যুবককে কথিত ধর্ম অবমাননার অভিযোগে নির্মমভাবে হত্যা ও প্রকাশ্যে তার মরদেহে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
এ ছাড়া লক্ষ্মীপুরে বিএনপি নেতা বেলাল হোসেনের বাড়িতে বাইরে থেকে তালা দিয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যা করা হয় তার দুই সন্তান আয়েশা ও সালমা আক্তার শিল্পীকে। রাজশাহীর বাগমারাতে চুরির মিথ্যা অভিযোগে ভ্যানচালক ওমর ফারুককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক যেমন ওসমান হাদি হত্যার বিচার চেয়েছে, তেমনি উত্তাল পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে দঙ্গল পাকিয়ে অন্যান্য ফৌজদারি অপরাধের প্রতিটি ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। এ বিবৃতির মাধ্যমে আমরা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত ছাত্রপ্রতিনিধিদের এখতিয়ারবহির্ভূত কার্যক্রমের নিন্দা জানাচ্ছি এবং এ ধরনের তৎপরতা অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মারের নেতৃত্বে নানা ধরনের মবপ্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। ডিনদের পদত্যাগ করানো, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের হয়রানি তৎপরতা চলমান আছে। আপনারা সকলেই জানেন, নির্বাচিত ডিনদের সময়সীমা শেষ হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সুচারুভাবে ভর্তি পরীক্ষা সম্পাদনের জন্য বিভিন্ন বিভাগে চিঠি দিয়ে তাদের ডিনশিপ আরও কয়েক মাস বর্ধিত করার বিষয় অবহিত করে। কিন্তু রাকসুর জিএস প্রশাসনের কাছে জবাবদিহি না চেয়ে বরং ডিনদের পদত্যাগ দাবি করেন।
কেবল তাই নয় নিজেই ‘প্রশাসন’ হয়ে অত্যন্ত ঔদ্ধত্যপূর্ণ ভাষায় ডিনদের বিরুদ্ধে হুমকি দেন। এমনকি এখতিয়ারবহির্ভূতভাবে নিজে পদত্যাগপত্র লিখে এনে বিভিন্ন বিভাগে গিয়ে ডিনদের খুঁজতে থাকেন, সম্ভবত লাঞ্ছিত করার উদ্দেশ্যে।
অবাক করার মতো বিষয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২ জন ডিনের সবাই গত আওয়ামী শাসনামলে নির্বাচিত। কিন্তু বাকি ছয়জন হয়তো জিএসের বিবেচনায় ‘রাজনৈতিক বিবেচনায় উত্তীর্ণ’। ফলে তাদের পদত্যাগের দাবি ওঠেনি, তাদের নিয়ে অবমাননাকর কিছু বলাও হয়নি। এই উদ্ভূত অসম্মানজনক পরিস্থিতিতে ‘প্রগতিশীল শিক্ষক’ হিসেবে পরিচিত ছয়জন ডিন দায়িত্ব পালতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এ ঘটনার সংবাদ পরিবেশনাতেও আমরা চতুর কৌশল লক্ষ করি। প্রথমত, প্রশাসনই চেয়েছিল তারা আরও কিছুদিন দায়িত্ব পালন করুক। দ্বিতীয়ত, তারা স্বেচ্ছায় পদ ধরে রাখার চেষ্টা করেননি, বরং অব্যাহতিই চেয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুরোধেই তারা বাড়তি সময় দায়িত্ব পালনে সম্মত হয়েছিলেন। কিন্তু এই ঘটনাটি পরিবেশিত হয় এভাবে যে ‘চাপের মুখে পদত্যাগ করলেন ডিনগণ’। এটাও আরও অসম্মানিত করার কৌশল হিসেবেই আমরা পাঠ করতে পারি।
এখানেই শেষ নয়, ক্যাম্পাসে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে রাকসুর জিএস ভব্যতার সব সীমা ছাড়িয়ে বারবার ঘোষণা করতে থাকেন, লীগপন্থি শিক্ষকদের ক্যাম্পাসে ঢুকলে ‘কলার ধরে টেনে এনে প্রশাসন ভবনের সামনে বেঁধে রাখা হবে।’ উপরন্তু, রাকসু ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ ঘোষণা করেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো প্রকার আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শিক্ষক ক্লাসে আসতে পারবে না।’ তিনি রাজশাহীর ভারতীয় হাইকমিশন উচ্ছেদেরও উসকানি দেন।
বলা বাহুল্য, এসব নির্বাচিত প্রতিনিধিরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইসলামী ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তাই দেখা যায়, রাকসু ও শিবিরনিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপ থেকে ‘হেট স্পিচ’ ছড়ানো হতে থাকে। ফলে ক্যাম্পাসে ভীতির পরিবেশ তৈরি হয় যা এখনো জারি আছে।
আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করেছি, রাকসু ও তার নেতাদের এ রকম অভব্য ও সন্ত্রাসী আচরণের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিকারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, যদিও এগুলো ফৌজদারি অপরাধের শামিল। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যা করছেন তা রাকসুর এখতিয়ারবহির্ভূত এবং তাদের আচরণও আগ্রাসী ও সন্ত্রাসীদের মতো।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমরা এর জবাবদিহি প্রত্যাশা করি। কেননা রাকসুর নেতাদের এ রকম আচরণ কেবল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করেনি, এটি সরাসরি বিদ্যায়তনিক স্বাধীনতার ওপরে হামলা। এর ‘স্পাইরাল ইফেক্ট’ পড়েছে সারা দেশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও।
এদিকে ১৮ ডিসেম্বর ওসমান হাদির মৃত্যুর পর রাকসুর ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন। অন্যদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শিবিরের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান উদীচী ও ছায়ানটকে তছনছ করে দেওয়ার আহ্বান জানালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে জনপরিসরে অস্থিরতা ও মবসন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়ে।
আমরা এ-ও লক্ষ করেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত একজন শিবির নেতা সরাসরি হামলায় যুক্ত ছিলেন। দেখা যাচ্ছে, ১৮ ডিসেম্বর রাতে অগ্নিসন্ত্রাসের পেছনে অন্য আরও উসকানিদাতার পাশাপাশি রাকসু ও জাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এবং ছাত্রশিবিরের নেতারাও একই ধরনের অপরাধ করেছেন। পাশাপাশি, ক্যাম্পাসগুলোতে ভীতিকর এক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও ডাকসুর প্রতিনিধিরা অতীতেও ক্যাম্পাসে পুলিশিং ও শিক্ষকদের ওপর শারীরিক হামলা করে নিন্দিত হয়েছে।
এসব সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ, মবসন্ত্রাস ও হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে জনমনে এমন ধারণাই স্পষ্ট হয়েছে, এগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং একের পর এক ঘটনাগুলো পরস্পর সম্পর্কিত ও পূর্বপরিকল্পিত। এসব পরিকল্পনা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ইউটিউবারের ও মিডিয়ার মাধ্যমে অনেক আগে থেকেই বহুলভাবে প্রচারিত হয়েছে। তারপরও সরকারের আইন শৃঙ্খলা ও দেশরক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বাহিনী এগুলো আমলে না নিয়ে দর্শকের ভূমিকা পালন করে এসেছে। সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চরমভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
উল্লেখ্য, জুলাই অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব নিয়ে মুক্ত গণমাধ্যম, নাগরিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও জানমালের নিরাপত্তার নিশ্চিতের অঙ্গীকার করেছিলেন। অথচ অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে নানা ঘটনায় মাজার ভাঙা, মবসন্ত্রাস, লোকশিল্পী ও বাউল গানের অনুষ্ঠানে হামলা, ভিন্নমত, ভিন্নধর্ম ও সংস্কৃতির ওপর আক্রমণ, ব্যক্তি ও সংস্থার ওপর আক্রমণ, হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত চলেছে। কিন্তু সরকার প্রতিটি ক্ষেত্রেই সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
১৮ ডিসেম্বরের রাতের অগ্নিসন্ত্রাস ও ভালুকায় দীপু হত্যার ঘটনায় সরকার কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। আমাদের জোর দাবি, ওসমান হাদির হত্যাকারীকেও সরকার দ্রুত গ্রেপ্তার করবে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র প্রতিনিধি ও একটি বিশেষ দলের সদস্যদের উৎপাত ও এখতিয়ারবহির্ভূত সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বন্ধ হবে।
এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে। রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামিকেও তার অঙ্গসংগঠন ছাত্রশিবিরের নেতাদের অপতৎপরতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের মতো জড়িতদের ‘ব্যক্তিগত’ মতামত বলে দায়মুক্তি দেওয়ার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
সন্ত্রাসী কাজের উসকানি দেওয়া অপরাধ। রাকসু, জাকসু ও ডাকসুর যেসব নেতারা উসকানি ও সরাসরি হামলায় অংশ নিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।

তরুণ রাজনীতিবিদ ওসমান হাদিকে ১২ ডিসেম্বরে গুলিবর্ষণ ও ১৮ ডিসেম্বরে তার মর্মান্তিক মৃত্যুর পর হতাশাজনক ও বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠী একের পর এক অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্ম দিয়েছে। হত্যাকারীকে গ্রেপ্তারে ব্যর্থ হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। অথচ সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে শীর্ষস্থানীয় দুটি দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে এবং দুটি ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট ও উদীচীতে।
ডেইলি স্টারে আগুন দিয়ে আটকে রাখা সাংবাদিকদের উদ্ধার করতে যাওয়া প্রখ্যাত সাংবাদিক-সম্পাদক নূরুল কবিরকে হেনস্তা করা হয়েছে। ময়মনসিংহের ভালুকায় দিপু চন্দ্র দাস নামের এক যুবককে কথিত ধর্ম অবমাননার অভিযোগে নির্মমভাবে হত্যা ও প্রকাশ্যে তার মরদেহে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
এ ছাড়া লক্ষ্মীপুরে বিএনপি নেতা বেলাল হোসেনের বাড়িতে বাইরে থেকে তালা দিয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যা করা হয় তার দুই সন্তান আয়েশা ও সালমা আক্তার শিল্পীকে। রাজশাহীর বাগমারাতে চুরির মিথ্যা অভিযোগে ভ্যানচালক ওমর ফারুককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক যেমন ওসমান হাদি হত্যার বিচার চেয়েছে, তেমনি উত্তাল পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে দঙ্গল পাকিয়ে অন্যান্য ফৌজদারি অপরাধের প্রতিটি ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। এ বিবৃতির মাধ্যমে আমরা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত ছাত্রপ্রতিনিধিদের এখতিয়ারবহির্ভূত কার্যক্রমের নিন্দা জানাচ্ছি এবং এ ধরনের তৎপরতা অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মারের নেতৃত্বে নানা ধরনের মবপ্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। ডিনদের পদত্যাগ করানো, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের হয়রানি তৎপরতা চলমান আছে। আপনারা সকলেই জানেন, নির্বাচিত ডিনদের সময়সীমা শেষ হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সুচারুভাবে ভর্তি পরীক্ষা সম্পাদনের জন্য বিভিন্ন বিভাগে চিঠি দিয়ে তাদের ডিনশিপ আরও কয়েক মাস বর্ধিত করার বিষয় অবহিত করে। কিন্তু রাকসুর জিএস প্রশাসনের কাছে জবাবদিহি না চেয়ে বরং ডিনদের পদত্যাগ দাবি করেন।
কেবল তাই নয় নিজেই ‘প্রশাসন’ হয়ে অত্যন্ত ঔদ্ধত্যপূর্ণ ভাষায় ডিনদের বিরুদ্ধে হুমকি দেন। এমনকি এখতিয়ারবহির্ভূতভাবে নিজে পদত্যাগপত্র লিখে এনে বিভিন্ন বিভাগে গিয়ে ডিনদের খুঁজতে থাকেন, সম্ভবত লাঞ্ছিত করার উদ্দেশ্যে।
অবাক করার মতো বিষয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২ জন ডিনের সবাই গত আওয়ামী শাসনামলে নির্বাচিত। কিন্তু বাকি ছয়জন হয়তো জিএসের বিবেচনায় ‘রাজনৈতিক বিবেচনায় উত্তীর্ণ’। ফলে তাদের পদত্যাগের দাবি ওঠেনি, তাদের নিয়ে অবমাননাকর কিছু বলাও হয়নি। এই উদ্ভূত অসম্মানজনক পরিস্থিতিতে ‘প্রগতিশীল শিক্ষক’ হিসেবে পরিচিত ছয়জন ডিন দায়িত্ব পালতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এ ঘটনার সংবাদ পরিবেশনাতেও আমরা চতুর কৌশল লক্ষ করি। প্রথমত, প্রশাসনই চেয়েছিল তারা আরও কিছুদিন দায়িত্ব পালন করুক। দ্বিতীয়ত, তারা স্বেচ্ছায় পদ ধরে রাখার চেষ্টা করেননি, বরং অব্যাহতিই চেয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুরোধেই তারা বাড়তি সময় দায়িত্ব পালনে সম্মত হয়েছিলেন। কিন্তু এই ঘটনাটি পরিবেশিত হয় এভাবে যে ‘চাপের মুখে পদত্যাগ করলেন ডিনগণ’। এটাও আরও অসম্মানিত করার কৌশল হিসেবেই আমরা পাঠ করতে পারি।
এখানেই শেষ নয়, ক্যাম্পাসে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে রাকসুর জিএস ভব্যতার সব সীমা ছাড়িয়ে বারবার ঘোষণা করতে থাকেন, লীগপন্থি শিক্ষকদের ক্যাম্পাসে ঢুকলে ‘কলার ধরে টেনে এনে প্রশাসন ভবনের সামনে বেঁধে রাখা হবে।’ উপরন্তু, রাকসু ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ ঘোষণা করেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো প্রকার আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শিক্ষক ক্লাসে আসতে পারবে না।’ তিনি রাজশাহীর ভারতীয় হাইকমিশন উচ্ছেদেরও উসকানি দেন।
বলা বাহুল্য, এসব নির্বাচিত প্রতিনিধিরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইসলামী ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তাই দেখা যায়, রাকসু ও শিবিরনিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপ থেকে ‘হেট স্পিচ’ ছড়ানো হতে থাকে। ফলে ক্যাম্পাসে ভীতির পরিবেশ তৈরি হয় যা এখনো জারি আছে।
আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করেছি, রাকসু ও তার নেতাদের এ রকম অভব্য ও সন্ত্রাসী আচরণের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিকারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, যদিও এগুলো ফৌজদারি অপরাধের শামিল। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যা করছেন তা রাকসুর এখতিয়ারবহির্ভূত এবং তাদের আচরণও আগ্রাসী ও সন্ত্রাসীদের মতো।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমরা এর জবাবদিহি প্রত্যাশা করি। কেননা রাকসুর নেতাদের এ রকম আচরণ কেবল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করেনি, এটি সরাসরি বিদ্যায়তনিক স্বাধীনতার ওপরে হামলা। এর ‘স্পাইরাল ইফেক্ট’ পড়েছে সারা দেশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও।
এদিকে ১৮ ডিসেম্বর ওসমান হাদির মৃত্যুর পর রাকসুর ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন। অন্যদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শিবিরের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান উদীচী ও ছায়ানটকে তছনছ করে দেওয়ার আহ্বান জানালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে জনপরিসরে অস্থিরতা ও মবসন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়ে।
আমরা এ-ও লক্ষ করেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত একজন শিবির নেতা সরাসরি হামলায় যুক্ত ছিলেন। দেখা যাচ্ছে, ১৮ ডিসেম্বর রাতে অগ্নিসন্ত্রাসের পেছনে অন্য আরও উসকানিদাতার পাশাপাশি রাকসু ও জাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এবং ছাত্রশিবিরের নেতারাও একই ধরনের অপরাধ করেছেন। পাশাপাশি, ক্যাম্পাসগুলোতে ভীতিকর এক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও ডাকসুর প্রতিনিধিরা অতীতেও ক্যাম্পাসে পুলিশিং ও শিক্ষকদের ওপর শারীরিক হামলা করে নিন্দিত হয়েছে।
এসব সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ, মবসন্ত্রাস ও হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে জনমনে এমন ধারণাই স্পষ্ট হয়েছে, এগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং একের পর এক ঘটনাগুলো পরস্পর সম্পর্কিত ও পূর্বপরিকল্পিত। এসব পরিকল্পনা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ইউটিউবারের ও মিডিয়ার মাধ্যমে অনেক আগে থেকেই বহুলভাবে প্রচারিত হয়েছে। তারপরও সরকারের আইন শৃঙ্খলা ও দেশরক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বাহিনী এগুলো আমলে না নিয়ে দর্শকের ভূমিকা পালন করে এসেছে। সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চরমভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
উল্লেখ্য, জুলাই অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব নিয়ে মুক্ত গণমাধ্যম, নাগরিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও জানমালের নিরাপত্তার নিশ্চিতের অঙ্গীকার করেছিলেন। অথচ অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে নানা ঘটনায় মাজার ভাঙা, মবসন্ত্রাস, লোকশিল্পী ও বাউল গানের অনুষ্ঠানে হামলা, ভিন্নমত, ভিন্নধর্ম ও সংস্কৃতির ওপর আক্রমণ, ব্যক্তি ও সংস্থার ওপর আক্রমণ, হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত চলেছে। কিন্তু সরকার প্রতিটি ক্ষেত্রেই সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
১৮ ডিসেম্বরের রাতের অগ্নিসন্ত্রাস ও ভালুকায় দীপু হত্যার ঘটনায় সরকার কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। আমাদের জোর দাবি, ওসমান হাদির হত্যাকারীকেও সরকার দ্রুত গ্রেপ্তার করবে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র প্রতিনিধি ও একটি বিশেষ দলের সদস্যদের উৎপাত ও এখতিয়ারবহির্ভূত সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বন্ধ হবে।
এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে। রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামিকেও তার অঙ্গসংগঠন ছাত্রশিবিরের নেতাদের অপতৎপরতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের মতো জড়িতদের ‘ব্যক্তিগত’ মতামত বলে দায়মুক্তি দেওয়ার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
সন্ত্রাসী কাজের উসকানি দেওয়া অপরাধ। রাকসু, জাকসু ও ডাকসুর যেসব নেতারা উসকানি ও সরাসরি হামলায় অংশ নিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।

কর্ণফুলীর স্রোতধারার সঙ্গে যুক্ত হয় বঙ্গোপসাগরের আছড়ে পড়া উত্তাল ঢেউ। সেই আনন্দের মাঝেই হঠাৎ যোগ দেয় একদল সশস্ত্র তিব্বতীয় গেরিলা। বঙ্গোপসাগরের ঢেউ আর কর্ণফুলীর স্রোত যেন স্তব্ধ হয়ে যায়। আনন্দে উদ্বেলিত জনতা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তিব্বতীয়দের দিকে।
১৩ দিন আগে
তখন আমাদের চিহ্নিত শত্রু ছিল হানাদার বাহিনী। তাদের সঙ্গে আরও চিহ্নিত হয়েছিল তাদের এ দেশীয় ‘কোলাবোরেটর’ বা সহযোগীরা, যারা ছিল মূলত রাজাকার, আলবদর বা আল শামস বাহিনীর। এরাও চিহ্নিত ছিল। এদের বিরুদ্ধে দেশের মানুষ একাট্টা হয়ে সংগ্রাম করেছে। সেই সংগ্রাম রক্তক্ষয়ী ছিল, বহু মানুষ অকাতরে শহিদ হয়েছে।
১৩ দিন আগে
রাজনৈতিক সহিংসতার চক্র যত বড় হয়, ততই সংকুচিত হয় নাগরিকদের নিরাপত্তা, গণতান্ত্রিক অধিকার, ভিন্নমতের পরিসর এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা। সামাজিক আস্থাও ক্ষয়ে যায়। আজ একজন হাদি আক্রান্ত,আগামীকাল কে বা কারা টার্গেট হবেন তা কেউ জানে না। সহিংসতা যখন ধীরে ধীরে রাজনৈতিক কৌশলে পরিণত হয়, ‘ব্যবহারযোগ্য হাতিয়ার’ হ
১৪ দিন আগে
আজ যদি ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির দাবি মেনে এই মডেলে বিশ্ববিদ্যালয় গঠন করা হয়, তবে খুব দ্রুতই জেলা পর্যায়েও একই দাবি উঠবে। টাঙ্গাইল সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি, ময়মনসিংহ সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি কিংবা রাজশাহী কলেজ, বিএম কলেজ, সিলেটের এমসি কলেজের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়েও বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবি আসবে।
২১ দিন আগে