
ড. মিহির কুমার রায়

৮ আগস্ট ২০২৪ অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল গগনচুম্বী। তারা আশা করেছিল, নতুন অন্তর্বর্তী সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার করবে, অর্থনীতিকে গতিশীল করবে এবং মানুষের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন ঘটাবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চাওয়া ছিল একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করে মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ করে দেওয়া এবং একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে আসা।
এক বছর পর যদিও কয়েকটি অর্থনৈতিক সূচক কিছুটা উন্নতি করেছে, তবে অধিকাংশ সূচকই এখনো আগের দুর্বল অবস্থান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, আয়ের তুলনায় জীবনযাত্রার ব্যয় এখন আগের চেয়ে বেশি।
ব্যাংক খাতের কিছুটা উন্নতি হলেও দুর্দশা কাটেনি। বিগত দিনগুলোতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সরকারের ইচ্ছানুযায়ী পরিচালিত হয়েছে, যা ব্যাংক ব্যবস্থাকে দুর্বল করে তুলেছে। এ খাতে সুশাসন ফেরাতে সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা বাস্তবায়ন করা গেলে ব্যাংক খাত আরও ভালো করবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি, আর আইএমএফের বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে তা ২৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ স্থিতিশীল থাকায় ডলারের ওপর চাপ কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি না করায় পরিস্থিতি আরও উন্নত হয়েছে। এর পাশাপাশি বাজেট সহায়তা ও ঋণ হিসেবে কয়েক বিলিয়ন ডলার বিদেশি সহায়তাও রিজার্ভ বাড়াতে ভূমিকা রাখছে।
অন্যদিকে আমদানি নিয়ন্ত্রিত থাকায় ডলারের চাহিদা কমে বিনিময় হার কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। পাশাপাশি এতদিন নীতিমালায় যেসব ছাড় দেওয়া হয়েছিল, তা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা হয়েছে। আগের সরকারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংকগুলো নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাংক রেজ্যুলেশন অধ্যাদেশ অনুমোদন দিয়েছে, যার অধীনে ব্যাংক একীভূতকরণ, অধিগ্রহণ ও অবসায়নের সুযোগ রাখা হয়েছে।
এর মাধ্যমে পাঁচটি ইসলামী ধারার ব্যাংককে একীভূত করার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব ব্যাংককে বিদেশি বিনিয়োগকারী ও দেশি ভালো বিনিয়োগকারী এনে শক্তিশালী করার চিন্তা চলছে।
মোট ১৪টি ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা একটি সুদৃঢ়, স্বচ্ছ ও সংগঠিত ব্যাংকিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার অংশ। সরকারের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে ছয়টি নতুন আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, যার মধ্যে ব্যাংক রেজ্যুলেশন অ্যাক্ট এরই মধ্যে কার্যকর হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ও ব্যাংক কোম্পানি অ্যাক্ট সংশোধনের কাজও চলছে।
প্রবাসী বাংলাদেশিরা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা দেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে প্রাপ্ত সর্বোচ্চ পরিমাণ। তার আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।
এর তুলনায় রেমিট্যান্স প্রবাহ ২৬ দশমিক ৮০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই জোয়ার ২০২৫-২৬ অর্থবছরেও চলমান। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠানো হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই মাসের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি।
নতুন সরকার অর্থপাচার রোধে কঠিন পদক্ষেপ নেওয়ায় দেশের অর্থনীতি কিছু সুফল পেয়েছে। অর্থপাচার রোধে সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) কিছুটা সক্রিয় হয়েছে। তবে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন অর্থ আত্মসাতে জড়িত গ্রাহক ও ব্যাংক কর্মকর্তারা।
আরেকটি হতাশার জায়গা হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি করা অর্থ পুনরুদ্ধার। বছরের পর বছর ধরে বাণিজ্যসংক্রান্ত চালানে ফাঁকিজুকি দেওয়া হয়েছে, অবৈধ স্থানান্তর এবং ক্রয়সংক্রান্ত দুর্নীতির মাধ্যমে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করা হয়েছে। জনসাধারণের কাছে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও প্রকৃত পুনরুদ্ধার ছিল নগণ্য। বিশ্বাসযোগ্য আন্তর্জাতিক অংশীদারত্ব ও শক্তিশালী দেশীয় তদন্ত ক্ষমতা ছাড়া এ সমস্যা টিকে থাকবে।
সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশের (সিডিবিএল) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালের ৩০ জুন সক্রিয় বিও অ্যাকাউন্ট ছিল ৩২ লাখ ৪ হাজার ৬০৩টি। বিএসইসির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত এ সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৬৮ হাজার ৫৪৮টিতে। অর্থাৎ গত ১০ বছরে ১৮ লাখ ৩৬ হাজার ৫৫ জন বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজার ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
তাদের অনেকেই মোটা অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। পরে তাদের অনেককেই মাথায় হাত দিয়ে বাজার ছাড়তে হয়েছে। কেউ কেউ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এখনই সময় পুঁজিবাজারের মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নেওয়ার। সম্ভাবনা আছে, সামর্থ্য আছে— দরকার কেবল সদিচ্ছা।
আস্থাহীনতার কারণে বিগত আট বছরে কমপক্ষে ১৬ লাখ বিনিয়োগকারী বাজার থেকে বেরিয়ে গেছেন। এখন পর্যন্ত প্রায় ১৭ লাখ বিনিয়োগকারী কোনোভাবে টিকে আছেন। দীর্ঘদিন ধরে স্বার্থান্বেষী মহলের কারসাজি, ভালো শেয়ারের মূল্য বাড়তে না দেওয়া, বাজার নিয়ন্ত্রণে কমিশনের নিষ্ক্রিয়তাসহ নানা কারণে এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার দিকনির্দেশনার মধ্যে রয়েছে— সরকারি মালিকানাধীন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর সরকারি শেয়ার কমিয়ে পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত করা, দেশীয় বড় কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিত করতে প্রণোদনা দেওয়া, স্বার্থান্বেষী মহলের কারসাজি রুখতে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বাজার সংস্কার, পুঁজিবাজারের অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং ব্যাংক ঋণের নির্ভরতা কমাতে বড় কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজার থেকে তহবিল সংগ্রহে উৎসাহ দেওয়া। এতে ব্যাংক খাতের ওপর চাপ ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি হ্রাস পাবে।
নগদ টাকার (তারল্য) সংকট ও নীতি সুদহার বাড়ানোর প্রভাবে ২০২৩ সালের জুন থেকেই ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়ছে। ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে এখন প্রায় ১৬ শতাংশে পৌঁছেছে। যদিও সুদহার বৃদ্ধির কোনো সুফল জনগণ পায়নি। বরং বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি যখন সর্বনিম্ন, তখন মূল্যস্ফীতি আরও লাগামহীন। ২০২৪ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি মাত্র ১ দশমিক ৪১ শতাংশে নেমে এলেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে তা কোনো কাজে আসেনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুন শেষে ব্যাংক খাতে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৭৭ হাজার কোটি টাকার বেশি। একই সময়ে উদ্বৃত্ত তারল্যের পরিমাণ প্রায় দুই লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা, যা দেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে বিরল। অথচ এই বিপুল অর্থ উৎপাদন খাতে প্রবেশ না করে অলস অবস্থায় পড়ে আছে, যার প্রভাব পড়ছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানে।
অন্যদিকে ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে থাকা নগদ অর্থের পরিমাণও বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় দুই লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকায়। ফলে অর্থনীতিতে এক ধরনের অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে বাজারে চাহিদা তৈরি হবে না, বিনিয়োগ আসবে না, উৎপাদন বাড়বে না এবং কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি হবে না।
বিনিয়োগে স্থবিরতার পেছনে করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা— এই তিনটি বড় ধাক্কা বিনিয়োগকারীদের মনোবল ভেঙে দিয়েছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যে আমদানি শুল্ক কমানো, এলসি-বিষয়ক বাধ্যবাধকতা তুলে নেওয়া এবং খাদ্য ও সার আমদানিকারকদের ঋণ সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে সরবরাহজনিত সমস্যা প্রশমনের চেষ্টা করা হয়েছে।
প্রথম দিকে ফল না মিললেও মূল্যস্ফীতি এখন কমতির দিকে। জুলাই ২০২৪-এ পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ, যা ২০২৫ সালের জুনে নেমে এসেছে ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রাক্কলন অনুযায়ী ২০২৫ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ; ২০২৪ অর্থবছরে যা ছিল ৪ দশমিক ২২ শতাংশ।
ভেঙে পড়া সামষ্টিক অর্থনীতিকে জোড়া লাগানোর জরুরি কাজ অন্তর্বর্তী সরকার সফলভাবেই করেছে। তবে সামষ্টিক স্থিতিশীলতা আর সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন স্বস্তি এক বিষয় নয়। আইনশৃঙ্খলা, বিচারব্যবস্থা ও দুর্নীতির মতো ক্ষেত্রে বড় ঘাটতি রয়ে গেছে। ঘোষণা ও বাস্তবায়নের ফারাক স্পষ্ট।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন খাতে সংস্কার উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরিকল্পনা উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়, যা সমতা ও টেকসই উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক কৌশল প্রস্তাব করে। তবে অনেক সুপারিশ বাস্তবায়নে আগ্রহ দেখা যায়নি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে শক্তিশালী করতে আরেকটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। স্থানীয় সরকারকে আরও দুর্বল করা এবং কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে অনীহার বিষয়টি দৃষ্টিভঙ্গির ঘাটতির পরিচায়ক। অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতায় কিছু স্বস্তি এলেও ঘুরে দাঁড়াতে টেকসই সংস্কার দরকার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংস্কার জরুরি হলেও এখনো অসমাপ্ত।
১২ মে সরকার ‘রেভিনিউ পলিসি অ্যান্ড রেভিনিউ ম্যানেজমেন্ট অর্ডিন্যান্স’ জারি করে এনবিআরকে ‘রেভিনিউ পলিসি বিভাগ’ ও ‘রেভিনিউ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগে’ ভাগ করার ঘোষণা দেয়। এটি আইএমএফের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ কর্মসূচির একটি শর্ত। তবে রাজস্ব আদায়ে অগ্রগতি হয়নি, কর-জিডিপি অনুপাত কমেছে এবং ব্যয় বেড়েছে। উন্নয়ন ব্যয় ঋণনির্ভর হয়ে পড়েছে, যা ভবিষ্যতে উদ্বেগের কারণ।
গত এক বছরে কর্মসংস্থান তৈরি ও বৈষম্য হ্রাসে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হয়নি। কৃষক ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না, শ্রমিকের বেতন মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না। নারীর প্রতি সহিংসতা ও সংখ্যালঘুদের আর্থসামাজিক ঝুঁকি বেড়েছে। কৃষিভিত্তিক ভ্যালুচেইন ও শ্রমঘন শিল্পে বিনিয়োগ দুর্বল থাকায় দারিদ্র্য বেড়েছে। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী চরম দারিদ্র্যের হার ৭ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে।
এক বছরে অনেক প্রতিশ্রুতি এলেও বাস্তবায়নের গতি কম। সাধারণ মানুষের জীবনে গুণগত পরিবর্তন আসেনি। টেকসই বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে আরও মনোযোগ দরকার। প্রয়োজন এমন সার্বজনীন সংস্কার, যার প্রভাব পড়বে প্রতিটি ঘরে, বিদ্যালয়ে, মাঠে ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। এর বাইরে কিছু হলে তা হবে পুরোনো ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি। আর এর সুফল পেতে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের হাতে রাষ্ট্রের দায়িত্ব তুলে দেওয়ার বিকল্প নেই।
লেখক: অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক পরিচালক, বার্ড

৮ আগস্ট ২০২৪ অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল গগনচুম্বী। তারা আশা করেছিল, নতুন অন্তর্বর্তী সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার করবে, অর্থনীতিকে গতিশীল করবে এবং মানুষের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন ঘটাবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চাওয়া ছিল একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করে মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ করে দেওয়া এবং একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে আসা।
এক বছর পর যদিও কয়েকটি অর্থনৈতিক সূচক কিছুটা উন্নতি করেছে, তবে অধিকাংশ সূচকই এখনো আগের দুর্বল অবস্থান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, আয়ের তুলনায় জীবনযাত্রার ব্যয় এখন আগের চেয়ে বেশি।
ব্যাংক খাতের কিছুটা উন্নতি হলেও দুর্দশা কাটেনি। বিগত দিনগুলোতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সরকারের ইচ্ছানুযায়ী পরিচালিত হয়েছে, যা ব্যাংক ব্যবস্থাকে দুর্বল করে তুলেছে। এ খাতে সুশাসন ফেরাতে সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা বাস্তবায়ন করা গেলে ব্যাংক খাত আরও ভালো করবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি, আর আইএমএফের বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে তা ২৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ স্থিতিশীল থাকায় ডলারের ওপর চাপ কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি না করায় পরিস্থিতি আরও উন্নত হয়েছে। এর পাশাপাশি বাজেট সহায়তা ও ঋণ হিসেবে কয়েক বিলিয়ন ডলার বিদেশি সহায়তাও রিজার্ভ বাড়াতে ভূমিকা রাখছে।
অন্যদিকে আমদানি নিয়ন্ত্রিত থাকায় ডলারের চাহিদা কমে বিনিময় হার কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। পাশাপাশি এতদিন নীতিমালায় যেসব ছাড় দেওয়া হয়েছিল, তা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা হয়েছে। আগের সরকারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংকগুলো নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাংক রেজ্যুলেশন অধ্যাদেশ অনুমোদন দিয়েছে, যার অধীনে ব্যাংক একীভূতকরণ, অধিগ্রহণ ও অবসায়নের সুযোগ রাখা হয়েছে।
এর মাধ্যমে পাঁচটি ইসলামী ধারার ব্যাংককে একীভূত করার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব ব্যাংককে বিদেশি বিনিয়োগকারী ও দেশি ভালো বিনিয়োগকারী এনে শক্তিশালী করার চিন্তা চলছে।
মোট ১৪টি ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা একটি সুদৃঢ়, স্বচ্ছ ও সংগঠিত ব্যাংকিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার অংশ। সরকারের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে ছয়টি নতুন আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, যার মধ্যে ব্যাংক রেজ্যুলেশন অ্যাক্ট এরই মধ্যে কার্যকর হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ও ব্যাংক কোম্পানি অ্যাক্ট সংশোধনের কাজও চলছে।
প্রবাসী বাংলাদেশিরা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা দেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে প্রাপ্ত সর্বোচ্চ পরিমাণ। তার আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।
এর তুলনায় রেমিট্যান্স প্রবাহ ২৬ দশমিক ৮০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই জোয়ার ২০২৫-২৬ অর্থবছরেও চলমান। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠানো হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই মাসের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি।
নতুন সরকার অর্থপাচার রোধে কঠিন পদক্ষেপ নেওয়ায় দেশের অর্থনীতি কিছু সুফল পেয়েছে। অর্থপাচার রোধে সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) কিছুটা সক্রিয় হয়েছে। তবে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন অর্থ আত্মসাতে জড়িত গ্রাহক ও ব্যাংক কর্মকর্তারা।
আরেকটি হতাশার জায়গা হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি করা অর্থ পুনরুদ্ধার। বছরের পর বছর ধরে বাণিজ্যসংক্রান্ত চালানে ফাঁকিজুকি দেওয়া হয়েছে, অবৈধ স্থানান্তর এবং ক্রয়সংক্রান্ত দুর্নীতির মাধ্যমে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করা হয়েছে। জনসাধারণের কাছে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও প্রকৃত পুনরুদ্ধার ছিল নগণ্য। বিশ্বাসযোগ্য আন্তর্জাতিক অংশীদারত্ব ও শক্তিশালী দেশীয় তদন্ত ক্ষমতা ছাড়া এ সমস্যা টিকে থাকবে।
সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশের (সিডিবিএল) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালের ৩০ জুন সক্রিয় বিও অ্যাকাউন্ট ছিল ৩২ লাখ ৪ হাজার ৬০৩টি। বিএসইসির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত এ সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৬৮ হাজার ৫৪৮টিতে। অর্থাৎ গত ১০ বছরে ১৮ লাখ ৩৬ হাজার ৫৫ জন বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজার ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
তাদের অনেকেই মোটা অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। পরে তাদের অনেককেই মাথায় হাত দিয়ে বাজার ছাড়তে হয়েছে। কেউ কেউ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এখনই সময় পুঁজিবাজারের মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নেওয়ার। সম্ভাবনা আছে, সামর্থ্য আছে— দরকার কেবল সদিচ্ছা।
আস্থাহীনতার কারণে বিগত আট বছরে কমপক্ষে ১৬ লাখ বিনিয়োগকারী বাজার থেকে বেরিয়ে গেছেন। এখন পর্যন্ত প্রায় ১৭ লাখ বিনিয়োগকারী কোনোভাবে টিকে আছেন। দীর্ঘদিন ধরে স্বার্থান্বেষী মহলের কারসাজি, ভালো শেয়ারের মূল্য বাড়তে না দেওয়া, বাজার নিয়ন্ত্রণে কমিশনের নিষ্ক্রিয়তাসহ নানা কারণে এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার দিকনির্দেশনার মধ্যে রয়েছে— সরকারি মালিকানাধীন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর সরকারি শেয়ার কমিয়ে পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত করা, দেশীয় বড় কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিত করতে প্রণোদনা দেওয়া, স্বার্থান্বেষী মহলের কারসাজি রুখতে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বাজার সংস্কার, পুঁজিবাজারের অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং ব্যাংক ঋণের নির্ভরতা কমাতে বড় কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজার থেকে তহবিল সংগ্রহে উৎসাহ দেওয়া। এতে ব্যাংক খাতের ওপর চাপ ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি হ্রাস পাবে।
নগদ টাকার (তারল্য) সংকট ও নীতি সুদহার বাড়ানোর প্রভাবে ২০২৩ সালের জুন থেকেই ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়ছে। ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে এখন প্রায় ১৬ শতাংশে পৌঁছেছে। যদিও সুদহার বৃদ্ধির কোনো সুফল জনগণ পায়নি। বরং বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি যখন সর্বনিম্ন, তখন মূল্যস্ফীতি আরও লাগামহীন। ২০২৪ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি মাত্র ১ দশমিক ৪১ শতাংশে নেমে এলেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে তা কোনো কাজে আসেনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুন শেষে ব্যাংক খাতে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৭৭ হাজার কোটি টাকার বেশি। একই সময়ে উদ্বৃত্ত তারল্যের পরিমাণ প্রায় দুই লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা, যা দেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে বিরল। অথচ এই বিপুল অর্থ উৎপাদন খাতে প্রবেশ না করে অলস অবস্থায় পড়ে আছে, যার প্রভাব পড়ছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানে।
অন্যদিকে ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে থাকা নগদ অর্থের পরিমাণও বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় দুই লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকায়। ফলে অর্থনীতিতে এক ধরনের অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে বাজারে চাহিদা তৈরি হবে না, বিনিয়োগ আসবে না, উৎপাদন বাড়বে না এবং কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি হবে না।
বিনিয়োগে স্থবিরতার পেছনে করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা— এই তিনটি বড় ধাক্কা বিনিয়োগকারীদের মনোবল ভেঙে দিয়েছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যে আমদানি শুল্ক কমানো, এলসি-বিষয়ক বাধ্যবাধকতা তুলে নেওয়া এবং খাদ্য ও সার আমদানিকারকদের ঋণ সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে সরবরাহজনিত সমস্যা প্রশমনের চেষ্টা করা হয়েছে।
প্রথম দিকে ফল না মিললেও মূল্যস্ফীতি এখন কমতির দিকে। জুলাই ২০২৪-এ পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ, যা ২০২৫ সালের জুনে নেমে এসেছে ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রাক্কলন অনুযায়ী ২০২৫ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ; ২০২৪ অর্থবছরে যা ছিল ৪ দশমিক ২২ শতাংশ।
ভেঙে পড়া সামষ্টিক অর্থনীতিকে জোড়া লাগানোর জরুরি কাজ অন্তর্বর্তী সরকার সফলভাবেই করেছে। তবে সামষ্টিক স্থিতিশীলতা আর সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন স্বস্তি এক বিষয় নয়। আইনশৃঙ্খলা, বিচারব্যবস্থা ও দুর্নীতির মতো ক্ষেত্রে বড় ঘাটতি রয়ে গেছে। ঘোষণা ও বাস্তবায়নের ফারাক স্পষ্ট।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন খাতে সংস্কার উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরিকল্পনা উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়, যা সমতা ও টেকসই উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক কৌশল প্রস্তাব করে। তবে অনেক সুপারিশ বাস্তবায়নে আগ্রহ দেখা যায়নি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে শক্তিশালী করতে আরেকটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। স্থানীয় সরকারকে আরও দুর্বল করা এবং কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে অনীহার বিষয়টি দৃষ্টিভঙ্গির ঘাটতির পরিচায়ক। অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতায় কিছু স্বস্তি এলেও ঘুরে দাঁড়াতে টেকসই সংস্কার দরকার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংস্কার জরুরি হলেও এখনো অসমাপ্ত।
১২ মে সরকার ‘রেভিনিউ পলিসি অ্যান্ড রেভিনিউ ম্যানেজমেন্ট অর্ডিন্যান্স’ জারি করে এনবিআরকে ‘রেভিনিউ পলিসি বিভাগ’ ও ‘রেভিনিউ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগে’ ভাগ করার ঘোষণা দেয়। এটি আইএমএফের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ কর্মসূচির একটি শর্ত। তবে রাজস্ব আদায়ে অগ্রগতি হয়নি, কর-জিডিপি অনুপাত কমেছে এবং ব্যয় বেড়েছে। উন্নয়ন ব্যয় ঋণনির্ভর হয়ে পড়েছে, যা ভবিষ্যতে উদ্বেগের কারণ।
গত এক বছরে কর্মসংস্থান তৈরি ও বৈষম্য হ্রাসে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হয়নি। কৃষক ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না, শ্রমিকের বেতন মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না। নারীর প্রতি সহিংসতা ও সংখ্যালঘুদের আর্থসামাজিক ঝুঁকি বেড়েছে। কৃষিভিত্তিক ভ্যালুচেইন ও শ্রমঘন শিল্পে বিনিয়োগ দুর্বল থাকায় দারিদ্র্য বেড়েছে। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী চরম দারিদ্র্যের হার ৭ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে।
এক বছরে অনেক প্রতিশ্রুতি এলেও বাস্তবায়নের গতি কম। সাধারণ মানুষের জীবনে গুণগত পরিবর্তন আসেনি। টেকসই বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে আরও মনোযোগ দরকার। প্রয়োজন এমন সার্বজনীন সংস্কার, যার প্রভাব পড়বে প্রতিটি ঘরে, বিদ্যালয়ে, মাঠে ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। এর বাইরে কিছু হলে তা হবে পুরোনো ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি। আর এর সুফল পেতে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের হাতে রাষ্ট্রের দায়িত্ব তুলে দেওয়ার বিকল্প নেই।
লেখক: অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক পরিচালক, বার্ড

মূলত এটি দক্ষিণ এশিয়াকে ঘিরে চীনকে যুক্ত করে একটি বিকল্প আঞ্চলিক জোট গঠনের প্রস্তাব, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান আঞ্চলিক সংগঠন সার্ক গত বহু বছর ধরেই ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার কারণে কার্যত অচল হয়ে রয়েছে।
১৮ দিন আগে
মহান বিজয়ের মাস ডিসেম্বর এবং ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে এ মাসের ১৬ তারিখে চূড়ান্ত বিজয়ের মাধ্যমে বাঙালি জাতির জীবনে সবচেয়ে গৌরবের অধ্যায় রচিত হয়। ৩০ লাখ শহীদ আর অসংখ্য মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল এ বিজয়।
১৮ দিন আগে
আমি বুঝি— ‘সহায়তা’ মানে চাঁদা, আর ‘সফল জনসভা’ মানে আমার টাকা দিয়ে অন্যের মাইক বাজবে। তাই আমি হাসিমুখে বলি, ‘ঠিক আছে ভাই, কত লাগবে?’ তিনি বলেন, ‘যত মন চায় দেন, তবে কম দিলে মন খারাপ হয়।’
১৮ দিন আগে