ইহুদি-ফিলিস্তিনি সংঘাতের শেষ কোথায়, কেউ জানে না

আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০২৩, ১৩: ১২
গাজা উপত্যকায় বিমান হামলার পর সোমবার রাতে বিস্ফোরণ ও আগুনের গোলা গাজা শহরকে আলোকিত করে। ছবি: বাসস

১৬ শতক থেকে থেকে মধ্যপ্রাচ্যের একাংশ অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোমানরা পারাজিত হলে মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ চলে যায় ব্রিটিশদের দখলে। তখন ইহুদিরা ফিলিস্তিনে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করতে ব্রিটিশদের শরণাপন্ন হয়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরপরই ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিরা মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করার কাজে জোরেশোরে লেগে পড়ে। দুই দলই নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবি তোলে। কিন্তু অন্যদিকে ১৯১৬ সনে মধ্যপ্রাচ্যকে ভাগাভাগি করে নিতে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মধ্যে গোপন চুক্তি হয়। যা ইতিহাসে ‘সাইকস-পিকো চুক্তি’ নামে পরিচিত। যদিও প্রকাশ্যে ব্রিটিশরা আরবদেরকে স্বাধীন আরব রাষ্ট্র গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

ইহুদিরা ১৯১৭ সনে ফিলিস্তিনে ইহুদিদের জন্য একটি আলাদা আবাসভূমি গড়ে তোলার প্রস্তাব করে। এই প্রস্তাবকে ব্রিটিশ সরকার সমর্থন জানায়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড ব্যালফোর এই সমর্থনের কথা ঘোষণা করেন বলেই, তা ‘ব্যালফোর ডিকলারেশন’ নামে পরিচিত।

একটি স্বাধীন ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে দেখে ইসরায়েলিরা খুশি। কিন্তু ফিলিস্তিনিরা এই তৎপরতাকে মোটেও ভালোভাবে নেয়নি। যেহেতু সেসময় ফিলিস্তিনে আরবরাই সংগরিষ্ঠ, তাই ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়, মুসলমানদের নাগরিক ও ধর্মীয় অধিকার ক্ষুন্ন হয় ইহুদিরা এমন কিছু করবে না।

‘ব্যালফোর ডিকলারেশন’-এর পর থেকে আরব-ইহুদি সংঘাত তীব্র হতে শুরু করে। ১৯২০ সনের মার্চে ব্রিটিশ সরকার হার্বার্ট স্যামুয়েলকে ফিলিস্তিনের প্রথম হাইকমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেয়। যাকে মেনে নিতে পারেনি আরবরা। কেননা এই হার্বার্টই ১৯১৫ সনে প্রথম ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের সুবিধার্থে ফিলিস্তিনকে ব্রিটিশ সরকারের আশ্রিত রাজ্য করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। স্যামুয়েলের নিয়োগ আগুনে পেট্রোল ঢেলে দেয়ার মতো কাজ করে।

নিয়োগের পরের মাসেই আরব আর ইহুদিদের মধ্যে দাঙ্গা দেখা দেয়। দাঙ্গায় ৫ ইহুদি নিহত হয়। পরের বছরের দাঙ্গায় ১৪৬ জন ইহুদি এবং ৭৩ জন আরব নিহত হয়। উভয় শিবিরেই গড়ে ওঠে একাধিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন।

১৯২২ সনে ব্রিটিশ সরকার ঘোষণা করে, গোটা ফিলিস্তিনকে ইহুদি রাষ্ট্র করা হবে না। ইহুদি অভিবাসন সীমিত রাখা হবে। অবশ্য সে অনুযায়ী কাজ হয়নি। ১৯২২ সনে ফিলিস্তিনে ৮৪ হাজার ইহুদি ছিল। ১৯২৫-এ সে সংখ্যা ১ লাখ ৬০ হাজার ৫৮৫-তে উন্নীত হয়। ১৯২০ সনে ইহুদিদের কেনা জমির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৬০ হাজার একর। ১৯২৯ সনে তা হয় ২ লাখ ৮৮ হাজার একর।

১৮৫০ সনে ফিলিস্তিনে মুসলমানের সংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ। ১৯১৫ সনে ছিল ৮০ শতাংশ।

বিশ্বের নানা প্রান্তের ইহুদিরা ফিলিস্তিনে আসতে শুরু করে। বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসিরা ইহুদি নিধন শুরু করলে অসংখ্য ইহুদি হিটলার নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল ছেড়ে ফিলিস্তিনে পাড়ি জমায়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৭ সনে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন নামের দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন বিষয়ক প্রস্তাব পাস হয়। এই প্রস্তাবের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে অবিচার হয়েছে বলে ফিলিস্তিনিরা তা প্রত্যাখ্যান করে। বাড়তেই থাকে এ অঞ্চলে সহিংসতা।

এর মধ্যেই ১৯৪৮ সনের ১৪ মে ইসরায়েল স্বাধীনতা ঘোষণা করে বসে। পরদিনই ফিলিস্তিন তাদের আরব জোটকে সঙ্গে নিয়ে ইসরায়েলে ওপর হামলা চালায়। বহুবার সংঘটিত আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের শুরুটা সেদিন থেকেই। একসময় ইসরায়েলের দখলে চলে যায় ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের অধিকাংশ। প্রায় ৭ লাখ ফিলিস্তিনিকে গৃহহীন হতে হয়।

২০০৭ সালে হামাস গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে ইসরাইল গাজা অবরোধ করে রেখেছে। যার ফলে ইসরাইলের সাথে আগে চারটি যুদ্ধ হয়েছে। আর ছোটখাটো সংঘাত লেগেই আছে।

হামাসের সাম্প্রতিক হামলায় ইসরাইলে মৃতের সংখ্যা ৯০০ জনে পৌঁছেছে। গাজায় ইসরাইলের প্রতিশোধমূলক বিমান হামলায় মৃত্যুর সংখ্যা ৬৮৭ জনে পৌঁছেছে। এবার শুরু হওয়া ভয়াবহ সংঘাত কবে, কীভাবে শেষ হবে তা কারো জানা নেই। [সূত্র : দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট এবং এম ইদ্রিস আলী রচিত ‘ ইসরায়েলের পুত্রগণ’] ১১ অক্টোবর ২০২৩

ad
ad

মতামত থেকে আরও পড়ুন

মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্স ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ

প্যানেল আলোচনায় যুদ্ধের ভয়াবহতা ও ক্ষয়ক্ষতি তুলে ধরার পাশাপাশি সবার সম্মিলিত সহায়তায় কীভাবে রাশিয়াকে যুদ্ধে পর্যুদস্ত করা যায় সেসব বিষয় উঠে আসে। ন্যাটোর তত্ত্বাবধানে সমরাস্ত্র ও তহবিল সংগ্রহ, এমনকি সম্মিলিত সৈন্যবাহিনী পাঠানোর সম্ভাব্যতা নিয়েও আলোচনা চলছিল বলে রাষ্ট্রদূতদের অবহিত করা হয়।

৫ দিন আগে

রক্তাক্ত বাংলাদেশ: ১৯৭১ থেকে ২০২৫

২০০৮ থেকে ২০২৪। বাংলাদেশে শুরু হলো এক রক্তঝরানোর অধ্যায়। হত্যা, খুন, গুম, আয়নাঘর— বিরোধী দলের নেতাদের ওপর অমানুষিক, নির্মম, নিষ্ঠুর অত্যাচার। মানবতা বিসর্জন দিয়ে রক্তের হোলি খেলায় মেতেছিল ফ্যাসিস্ট সরকার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে গুলির নির্দেশ দিয়ে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে গিয়ে নিজের দেশের

৫ দিন আগে

সবার মুখে ফেব্রুয়ারিতে ভোট, বিরোধ জুলাই সনদ ঘিরে

তবে হঠাৎ করেই ঘুরে গেছে হাওয়া। বদলে গেছে সবার সুর। সবার মুখে মুখে এখন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন। কেউ বলছেন, ফেব্রুয়ারিতে ভোট হতেই হবে। তবে সংস্কার নিয়ে ৮৪টি বিষয়ে ঐকমত্য হলেও জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে এখনো ঐকমত্যে আসতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। এ নিয়ে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি তিন দলের অবস্থান ভিন্

৬ দিন আগে

টেলিগ্রাফের হেডিং— ডাস ক্যাপিটাল

এই সেপ্টেম্বরেই ১৫৮ বছরে পা দিলো সেই বই, যার নাম থেকে এই হেডলাইনের খেলা— কার্ল মার্ক্সের যুগান্তকারী গ্রন্থ ‘ডাস ক্যাপিটাল’।

১৯ দিন আগে