গোলাম মোহাম্মদ কাদের
যে দেশে ইসলামী মৌলবাদী জঙ্গিগোষ্ঠীকে দেশপ্রেমিক মর্যাদা দেওয়া হয়, সেখানে জঙ্গিবাদ উত্থানের অনেক লক্ষণ দেখা যায়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব, সে দেশগুলোকে তখন জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের দেশ মনে করে। সে হিসাবেই হয়তো বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ একটি ইসলামী জঙ্গি রাষ্ট্র হওয়ার পথে ধাবমান বলে যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিমা বিশ্বেও অনেক দেশ ও অন্যান্য অনেকেই ধারণা করছে। যার প্রতিফলন গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্য ও দ্য নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার সাম্প্রতিক প্রতিবেদন।
বাংলাদেশ একটি মুসলমান-অধ্যুষিত দেশ। মোট জনসংখ্যার শতকরা ৯০ ভাগের অধিক মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী। তবে ঐতিহাসিকভাবে বাঙালি মুসলমানরা অন্য ধর্মের মানুষদের প্রতি অত্যন্ত সহনশীল। এখানে একই চত্বরে এক পাশে মুসলমানদের উপাসনালয় মসজিদ ও অন্য পাশে হিন্দুদের পূজার উপাসনালয় মন্দির। সেখানে সমানভাবে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ নিজ নিজ ধর্ম পালন করে আসছে যুগ যুগ ধরে। এখানকার মুসলমানরা নিজেরা অত্যন্ত ধর্মভীরু। নামাজ, রোজা পালন করে। ওয়াজ মাহফিলে সারা রাত ধর্মীয় আলোচনা শোনে ও মোনাজাতের সময় চোখের পানিতে বুক ভাসায়।
একই মানুষ আবার গান-বাজনা নাটক সিনেমা পছন্দ করে। যাত্রা দেখে রাত কাটায়। সেখানে গানের সঙ্গে নাচে। ছেলেমেয়েরা খোলামেলা মিশতে পারে। মেয়েরা ছেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খেত-খামারে কাজ করে, লেখাপড়া, খেলাধুলা করে।
সে দেশে ইসলামী ধর্মীয় মৌলবাদের উত্থান সাধারণভাবে হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বেশ কিছুদিন থেকে বিভিন্নভাবে ইসলামি মৌলবাদ এমনকি জঙ্গিবাদের উপস্থিতি লক্ষ করা যাচ্ছে। বিগত সরকারের আমলে অত্যন্ত কঠোরভাবে এ ধরনের বিষয়গুলোকে মোকাবিলা করা হয়েছিল।
জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর নতুন করে জঙ্গিবাদ উত্থানের বিষয়টি দেখা যাচ্ছে বলে আলোচনায় আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী গ্যাবার্ড অল্প কিছুদিন আগে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান হচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তারপর হঠাৎ করে ‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’-এর মতো অত্যন্ত উঁচুমানের বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্য পত্রিকা গত ১ এপ্রিল একটি প্রতিবেদনে (As Bangladesh Reinvents itself, Islamist Hard-Liners See an Opening) বাংলাদেশে সুস্পষ্টভাবে ইসলামী মৌলবাদের উত্থানের বিষয়টি উপস্থাপন করে। অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিবারই বিষয়টিকে অস্বীকার করেছে ও এটিকে নিছক অপপ্রচার হিসেবে দাবি করেছে। বর্তমান সরকার এটাও দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছে যে, ইসলামী মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ উত্থানের সব প্রচেষ্টা কঠোর হাতে দমন করা হচ্ছে ও ভবিষ্যতেও দমন করা হবে। এসব বিষয় নিয়ে কিছু বাস্তবভিত্তিক বিশ্লেষণ আবশ্যক।
অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান এবং তার ঘোষিত নিয়োগদাতা ও অভিভাবক বলে কথিত তরুণ নেতাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও বক্তব্য-বিবৃতিতে যেটা প্রতীয়মান করেছেন তা হলো- তাদের বিবেচনায় যারা বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের মাধ্যমে নির্যাতিত ও নিপীড়িত বা যারা কোনোভাবে হাসিনা সরকারের বিরোধিতা করেছেন তারাই শুধু দেশপ্রেমিক।
হাসিনা সরকারের নিপীড়ন, নির্যাতন, হত্যাকাণ্ডের সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী ইসলামী জঙ্গি সংগঠনগুলো। যখন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান সরকারের গোয়েন্দাপ্রধান বাংলাদেশে জঙ্গি উত্থানের কথা উল্লেখ করেছিলেন। সে সময় অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জোরালোভাবে প্রতিবাদ জানানো হয়েছিল। তখন বলা হয়, দীর্ঘদিন থেকে বাংলাদেশ সরকার জঙ্গিবাদ দমনে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে আসছে। এতে করে বাংলাদেশ থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূল হয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে জঙ্গিবাদের অস্তিত্ব নেই। এভাবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিগত দিনগুলোতে জঙ্গি দমনের কঠোর কার্যক্রমকে সমর্থন দিয়েছেন। জঙ্গি দমনে আগের সরকারের ভূমিকাকে কার্যকর আখ্যা দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার পরোক্ষভাবে হলেও শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকারের ওই কাজগুলোকে যুক্তিসংগত বলেছে।
স্বাভাবিকভাবে জঙ্গি সংগঠন ও তার সদস্যরা সর্বদাই শেখ হাসিনা সরকারের চরম বিরোধী ছিল। হাসিনার পতন আন্দোলনে তাদের বড় ধরনের ভূমিকা ছিল বলে, এখন জানা যাচ্ছে। তারা নিজেরাই স্বীকার করেছে, তারা সহিংসতা ও নাশকতা করেছে। তাদের দাবি, এসব কারণে হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। হাসিনা সরকারের পতনে ইসলামী জঙ্গি সংগঠনগুলো মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে বলেও তারা মনে করে। এ মর্মে তাদের অনেক সদস্যই গণমাধ্যমে বা অনেক স্থানেই এ ধরনের মন্তব্য করেছেন বলে শোনা যায়। পতনের পর তাদের মধ্যে কেউ কেউ ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিও তুলেছিল। আন্দোলন চলাকালীন ও পরপরই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অনেক শহরে আন্দোলনকারীদের মাধ্যমে ব্যাপক হারে বিশেষ ধরনের চিত্রকর্ম দেয়ালে দেয়ালে অঙ্কিত হতে দেখা যায়। সে চিত্রগুলোয় ইসলামী রাষ্ট্রের দাবিসংবলিত বিভিন্ন স্লোগান, আরবি ভাষায় বাণী ও হিজবুত তাহরীর ও ইসলামী স্টেটের পতাকাসদৃশ চিত্র অঙ্কিত হয়েছে বলে জানা যায়।
এটা কি অস্বীকার করা যাবে যে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ও তার ঘনিষ্ঠ তরুণ নেতৃত্বের কাছে ফ্যাসিবাদবিরোধী হিসেবে ইসলামী জঙ্গি সংগঠন ও তার সদস্যরা ‘দেশপ্রেমিক’ বলেই এত দিন চিহ্নিত হয়ে এসেছে? বিশেষ গুরুত্ব ও প্রাধান্য পেয়েছে। সে সুযোগে সরকারঘনিষ্ঠদের মদদে বিভিন্ন স্থানে ঘোষণা দিয়ে তারা লাগাতার কর্মসূচি পালন করেছে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস ও হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড সংঘটিত করছে। এসব স্থানে ইসলামী রাষ্ট্রের পতাকা ও বিভিন্ন ইসলামি মৌলবাদী সংগঠনের ব্যানার প্রদর্শন করা হয়। সরকার এসব কর্মসূচিতে বাধা দেয়নি, বরং পরোক্ষ সমর্থন দিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে।
আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হলো সরকারপ্রধান ও তার উল্লিখিত ঘনিষ্ঠজনরা আন্দোলন চলাকালীন সৃষ্ট একটি ঐক্যবদ্ধ জাতিকে আন্দোলন পরবর্তী সময়ে ক্রমান্বয়ে বিভাজিত করেন। বিভাজনটি রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিত্তিতে বলে বিশ্বাস করার কারণ আছে। মোটা দাগে, একভাগে উল্লেখযোগ্য জনসমর্থনপুষ্ট উদারপন্থি বা লিবারেল দৃষ্টিভঙ্গির দলগুলো অন্যভাগে জনসমর্থনপুষ্ট রক্ষণশীল এবং উগ্র মৌলবাদী দলগুলো।
লিবারেল মতাদর্শের দলগুলোকে ফ্যাসিবাদী বা ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যা দিয়ে তাদের সব রাজনৈতিক এমনকি মৌলিক মানবাধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে। এ বিষয়টি অযৌক্তিক ও দেশের সার্বিক পরিস্থিতির জন্য ক্ষতিকারক। এতে করে দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। বর্তমান আইনশৃঙ্খলা ক্রমাবনতি অব্যাহত থাকবে। দেশের নাজুক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও ভঙ্গুর হয়ে ভেঙে পড়তে পারে। তা ছাড়া বিশ্বজুড়ে ভূ-রাজনীতিতে যে ব্যাপক পরিবর্তনের আভাস সে কারণেও বাংলাদেশে সার্বিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি বাড়তে থাকবে। এটা প্রায় নিশ্চিতভাবে বলা যায়। তথাপি বর্তমান সরকার দেশের অর্ধেকের অধিক জনসংখ্যাকে বাইরে রেখে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর বলেই মনে হচ্ছে।
উপরোক্ত কারণে এ বিষয়টিকে যেকোনো মূল্যে উগ্র মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ উত্থানের সহায়ক উদ্যোগ হিসেবেও বিবেচনা করার সুযোগ আছে। বর্ণিত পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার অনেকভাবেই বলার ও দেখানোর চেষ্টা করেছে যে, তারা কঠোর হাতে উদীয়মান জঙ্গিবাদ যদি থাকে তা দমন করবে। বিশ্ববাসী এত সহজে এ কথা বিশ্বাস করবে বলে মনে হয় না।
অনেকের ধারণা, জঙ্গিবাদের বিষধর সরীসৃপ সুষ্ঠু সময়ের অপেক্ষায় গর্তে মাথা লুকিয়ে থাকবে মাত্র। সময় সুযোগ পেলে আবার ফণা তুলে দাঁড়াবে; দংশন করবে এ সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। জঙ্গিবাদবিরোধী দেশ ও শক্তিগুলো বিষয়টি এভাবে যে দেখবে না, নিশ্চিতভাবে তা বলা যায় না। বিশ্ববাসীর এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য মারাত্মক বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে।
লেখক: চেয়ারম্যান, জাতীয় পার্টি
যে দেশে ইসলামী মৌলবাদী জঙ্গিগোষ্ঠীকে দেশপ্রেমিক মর্যাদা দেওয়া হয়, সেখানে জঙ্গিবাদ উত্থানের অনেক লক্ষণ দেখা যায়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব, সে দেশগুলোকে তখন জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের দেশ মনে করে। সে হিসাবেই হয়তো বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ একটি ইসলামী জঙ্গি রাষ্ট্র হওয়ার পথে ধাবমান বলে যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিমা বিশ্বেও অনেক দেশ ও অন্যান্য অনেকেই ধারণা করছে। যার প্রতিফলন গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্য ও দ্য নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার সাম্প্রতিক প্রতিবেদন।
বাংলাদেশ একটি মুসলমান-অধ্যুষিত দেশ। মোট জনসংখ্যার শতকরা ৯০ ভাগের অধিক মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী। তবে ঐতিহাসিকভাবে বাঙালি মুসলমানরা অন্য ধর্মের মানুষদের প্রতি অত্যন্ত সহনশীল। এখানে একই চত্বরে এক পাশে মুসলমানদের উপাসনালয় মসজিদ ও অন্য পাশে হিন্দুদের পূজার উপাসনালয় মন্দির। সেখানে সমানভাবে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ নিজ নিজ ধর্ম পালন করে আসছে যুগ যুগ ধরে। এখানকার মুসলমানরা নিজেরা অত্যন্ত ধর্মভীরু। নামাজ, রোজা পালন করে। ওয়াজ মাহফিলে সারা রাত ধর্মীয় আলোচনা শোনে ও মোনাজাতের সময় চোখের পানিতে বুক ভাসায়।
একই মানুষ আবার গান-বাজনা নাটক সিনেমা পছন্দ করে। যাত্রা দেখে রাত কাটায়। সেখানে গানের সঙ্গে নাচে। ছেলেমেয়েরা খোলামেলা মিশতে পারে। মেয়েরা ছেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খেত-খামারে কাজ করে, লেখাপড়া, খেলাধুলা করে।
সে দেশে ইসলামী ধর্মীয় মৌলবাদের উত্থান সাধারণভাবে হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বেশ কিছুদিন থেকে বিভিন্নভাবে ইসলামি মৌলবাদ এমনকি জঙ্গিবাদের উপস্থিতি লক্ষ করা যাচ্ছে। বিগত সরকারের আমলে অত্যন্ত কঠোরভাবে এ ধরনের বিষয়গুলোকে মোকাবিলা করা হয়েছিল।
জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর নতুন করে জঙ্গিবাদ উত্থানের বিষয়টি দেখা যাচ্ছে বলে আলোচনায় আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী গ্যাবার্ড অল্প কিছুদিন আগে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান হচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তারপর হঠাৎ করে ‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’-এর মতো অত্যন্ত উঁচুমানের বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্য পত্রিকা গত ১ এপ্রিল একটি প্রতিবেদনে (As Bangladesh Reinvents itself, Islamist Hard-Liners See an Opening) বাংলাদেশে সুস্পষ্টভাবে ইসলামী মৌলবাদের উত্থানের বিষয়টি উপস্থাপন করে। অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিবারই বিষয়টিকে অস্বীকার করেছে ও এটিকে নিছক অপপ্রচার হিসেবে দাবি করেছে। বর্তমান সরকার এটাও দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছে যে, ইসলামী মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ উত্থানের সব প্রচেষ্টা কঠোর হাতে দমন করা হচ্ছে ও ভবিষ্যতেও দমন করা হবে। এসব বিষয় নিয়ে কিছু বাস্তবভিত্তিক বিশ্লেষণ আবশ্যক।
অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান এবং তার ঘোষিত নিয়োগদাতা ও অভিভাবক বলে কথিত তরুণ নেতাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও বক্তব্য-বিবৃতিতে যেটা প্রতীয়মান করেছেন তা হলো- তাদের বিবেচনায় যারা বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের মাধ্যমে নির্যাতিত ও নিপীড়িত বা যারা কোনোভাবে হাসিনা সরকারের বিরোধিতা করেছেন তারাই শুধু দেশপ্রেমিক।
হাসিনা সরকারের নিপীড়ন, নির্যাতন, হত্যাকাণ্ডের সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী ইসলামী জঙ্গি সংগঠনগুলো। যখন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান সরকারের গোয়েন্দাপ্রধান বাংলাদেশে জঙ্গি উত্থানের কথা উল্লেখ করেছিলেন। সে সময় অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জোরালোভাবে প্রতিবাদ জানানো হয়েছিল। তখন বলা হয়, দীর্ঘদিন থেকে বাংলাদেশ সরকার জঙ্গিবাদ দমনে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে আসছে। এতে করে বাংলাদেশ থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূল হয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে জঙ্গিবাদের অস্তিত্ব নেই। এভাবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিগত দিনগুলোতে জঙ্গি দমনের কঠোর কার্যক্রমকে সমর্থন দিয়েছেন। জঙ্গি দমনে আগের সরকারের ভূমিকাকে কার্যকর আখ্যা দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার পরোক্ষভাবে হলেও শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকারের ওই কাজগুলোকে যুক্তিসংগত বলেছে।
স্বাভাবিকভাবে জঙ্গি সংগঠন ও তার সদস্যরা সর্বদাই শেখ হাসিনা সরকারের চরম বিরোধী ছিল। হাসিনার পতন আন্দোলনে তাদের বড় ধরনের ভূমিকা ছিল বলে, এখন জানা যাচ্ছে। তারা নিজেরাই স্বীকার করেছে, তারা সহিংসতা ও নাশকতা করেছে। তাদের দাবি, এসব কারণে হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। হাসিনা সরকারের পতনে ইসলামী জঙ্গি সংগঠনগুলো মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে বলেও তারা মনে করে। এ মর্মে তাদের অনেক সদস্যই গণমাধ্যমে বা অনেক স্থানেই এ ধরনের মন্তব্য করেছেন বলে শোনা যায়। পতনের পর তাদের মধ্যে কেউ কেউ ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিও তুলেছিল। আন্দোলন চলাকালীন ও পরপরই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অনেক শহরে আন্দোলনকারীদের মাধ্যমে ব্যাপক হারে বিশেষ ধরনের চিত্রকর্ম দেয়ালে দেয়ালে অঙ্কিত হতে দেখা যায়। সে চিত্রগুলোয় ইসলামী রাষ্ট্রের দাবিসংবলিত বিভিন্ন স্লোগান, আরবি ভাষায় বাণী ও হিজবুত তাহরীর ও ইসলামী স্টেটের পতাকাসদৃশ চিত্র অঙ্কিত হয়েছে বলে জানা যায়।
এটা কি অস্বীকার করা যাবে যে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ও তার ঘনিষ্ঠ তরুণ নেতৃত্বের কাছে ফ্যাসিবাদবিরোধী হিসেবে ইসলামী জঙ্গি সংগঠন ও তার সদস্যরা ‘দেশপ্রেমিক’ বলেই এত দিন চিহ্নিত হয়ে এসেছে? বিশেষ গুরুত্ব ও প্রাধান্য পেয়েছে। সে সুযোগে সরকারঘনিষ্ঠদের মদদে বিভিন্ন স্থানে ঘোষণা দিয়ে তারা লাগাতার কর্মসূচি পালন করেছে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস ও হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড সংঘটিত করছে। এসব স্থানে ইসলামী রাষ্ট্রের পতাকা ও বিভিন্ন ইসলামি মৌলবাদী সংগঠনের ব্যানার প্রদর্শন করা হয়। সরকার এসব কর্মসূচিতে বাধা দেয়নি, বরং পরোক্ষ সমর্থন দিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে।
আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হলো সরকারপ্রধান ও তার উল্লিখিত ঘনিষ্ঠজনরা আন্দোলন চলাকালীন সৃষ্ট একটি ঐক্যবদ্ধ জাতিকে আন্দোলন পরবর্তী সময়ে ক্রমান্বয়ে বিভাজিত করেন। বিভাজনটি রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিত্তিতে বলে বিশ্বাস করার কারণ আছে। মোটা দাগে, একভাগে উল্লেখযোগ্য জনসমর্থনপুষ্ট উদারপন্থি বা লিবারেল দৃষ্টিভঙ্গির দলগুলো অন্যভাগে জনসমর্থনপুষ্ট রক্ষণশীল এবং উগ্র মৌলবাদী দলগুলো।
লিবারেল মতাদর্শের দলগুলোকে ফ্যাসিবাদী বা ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যা দিয়ে তাদের সব রাজনৈতিক এমনকি মৌলিক মানবাধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে। এ বিষয়টি অযৌক্তিক ও দেশের সার্বিক পরিস্থিতির জন্য ক্ষতিকারক। এতে করে দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। বর্তমান আইনশৃঙ্খলা ক্রমাবনতি অব্যাহত থাকবে। দেশের নাজুক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও ভঙ্গুর হয়ে ভেঙে পড়তে পারে। তা ছাড়া বিশ্বজুড়ে ভূ-রাজনীতিতে যে ব্যাপক পরিবর্তনের আভাস সে কারণেও বাংলাদেশে সার্বিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি বাড়তে থাকবে। এটা প্রায় নিশ্চিতভাবে বলা যায়। তথাপি বর্তমান সরকার দেশের অর্ধেকের অধিক জনসংখ্যাকে বাইরে রেখে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর বলেই মনে হচ্ছে।
উপরোক্ত কারণে এ বিষয়টিকে যেকোনো মূল্যে উগ্র মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ উত্থানের সহায়ক উদ্যোগ হিসেবেও বিবেচনা করার সুযোগ আছে। বর্ণিত পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার অনেকভাবেই বলার ও দেখানোর চেষ্টা করেছে যে, তারা কঠোর হাতে উদীয়মান জঙ্গিবাদ যদি থাকে তা দমন করবে। বিশ্ববাসী এত সহজে এ কথা বিশ্বাস করবে বলে মনে হয় না।
অনেকের ধারণা, জঙ্গিবাদের বিষধর সরীসৃপ সুষ্ঠু সময়ের অপেক্ষায় গর্তে মাথা লুকিয়ে থাকবে মাত্র। সময় সুযোগ পেলে আবার ফণা তুলে দাঁড়াবে; দংশন করবে এ সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। জঙ্গিবাদবিরোধী দেশ ও শক্তিগুলো বিষয়টি এভাবে যে দেখবে না, নিশ্চিতভাবে তা বলা যায় না। বিশ্ববাসীর এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য মারাত্মক বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে।
লেখক: চেয়ারম্যান, জাতীয় পার্টি
এই সেপ্টেম্বরেই ১৫৮ বছরে পা দিলো সেই বই, যার নাম থেকে এই হেডলাইনের খেলা— কার্ল মার্ক্সের যুগান্তকারী গ্রন্থ ‘ডাস ক্যাপিটাল’।
১৮ দিন আগেএকটি জাতির উন্নয়নের ভিত্তি তার জনশক্তির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহারের উপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল দেশে, জনসংখ্যাগত স্থিতিশীলতা (Demographic Stability) অর্জন করা এখন আর কেবল জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের একটি কৌশল নয়, বরং এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং সুশাসনের এক অবিচ্ছেদ্য অং
১৮ দিন আগেরাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকায় ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা বিএনপির প্রতিপক্ষ এখন জামায়াতে ইসলামি। জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করা গেলে জামায়াত তখন বিএনপির শক্ত বা সবল প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে পারে। এমনকি অন্যান্য ইসলামি দলগুলো সঙ্গে নিয়ে জামায়াত দরকষাকষির সর্বোচ্চ জায়গায় পৌঁছাতে পারে।
১৯ দিন আগেঝিনাইদহের কৃষক শ্রী হরিপদ কাপালীর হাতে হরি ধানের আবিষ্কার দুই দশক আগে যার কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহনের সুযোগ হয়নি কেবল দারিদ্রতার কারনে। এখানে উল্লেখ্য যে হরিপদ কাপালী ১৯২২ সালে ঝিনাইদহ জেলার সদর উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন এবং ২০১৮ সালের ৬ই জুলাই নিজ শ্বশুরালয় আহসান নগর গ্রামে মৃত্
১৯ দিন আগে