
বিল্লাল বিন কাশেম

রমজানের সিয়াম সাধনার শেষে মুসলিম উম্মাহর জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো সাদাকাতুল ফিতর (ফিতরা)। এটি এক ধরনের বাধ্যতামূলক দান, যা রমজানের শেষ দিকে আদায় করা হয় এবং ঈদের আগেই গরিব-দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। ফিতরার মূল লক্ষ্য হলো দরিদ্র মানুষদের ঈদের আনন্দে শরিক করা এবং মুসলিম সমাজে সাম্যের বোধ তৈরি করা।
বাংলাদেশে চলতি বছর (১৪৪৬ হিজরি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ) ফিতরার হার সর্বনিম্ন ১১০ টাকা ও সর্বোচ্চ দুই হাজার ৮০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর সর্বনিম্ন ১১৫ টাকা ও সর্বোচ্চ দুই হাজার ৯৭০ টাকা ছিল। ফিতরার এই পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় গম, আটা, যব, খেজুর, কিশমিশ ও পনিরের বাজারমূল্যের ভিত্তিতে। ইসলামের বিধান অনুযায়ী, সামর্থ্য অনুযায়ী এই পণ্যগুলোর নির্দিষ্ট পরিমাণ বা এর সমমূল্যের অর্থ দিয়ে ফিতরা প্রদান করা যায়।
ফিতরার বিধান সম্পর্কে পবিত্র কুরআন ও হাদিসে সুস্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া যায়।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা নামাজ কায়েম করো এবং জাকাত আদায় করো। তোমরা নিজেদের জন্য যা অগ্রিম পাঠিয়ে দাও, তা আল্লাহর কাছে পাবে।’ (সূরা আল-বাকারাহ: ১১০)
এই আয়াত সরাসরি ফিতরার কথা উল্লেখ করে না, তবে ইসলামিক ব্যাখ্যাগুলোতে জাকাত ও ফিতরার সম্পর্কিত নির্দেশনাগুলো একসঙ্গেই আলোচিত হয়েছে।
ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলমানের জন্য সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব, তা এক সা’ (প্রায় আড়াই কেজি) খেজুর বা যব। এটি দাস-মুক্ত, পুরুষ-নারী, ছোট-বড় সব মুসলিমের জন্য প্রযোজ্য।’ (বুখারি: ১৫০৩, মুসলিম: ৯৮৪)
অন্য একটি হাদিসে বলা হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) সিয়ামের পবিত্রতা ও গরিব-মিসকিনদের জন্য খাদ্যের সংস্থান হিসেবে সাদাকাতুল ফিতরকে ফরজ করেছেন।’ (আবু দাউদ: ১৬০৯)
এই হাদিসগুলোর মাধ্যমে এটি স্পষ্ট, ফিতরা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং এটি রোজার পরিপূর্ণতা অর্জনের মাধ্যম।
ফিতরার নির্ধারিত পরিমাণ সম্পর্কে হাদিসে বলা হয়েছে, প্রত্যেক মুসলিমকে ১ সা’ খাদ্যশস্য বা তার মূল্য প্রদান করতে হবে। এক সা’ সাধারণত আড়াই থেকে তিন কেজির সমতুল্য। খাদ্যপণ্যের পরিমাণ (প্রায় আড়াই থেকে তিন কেজি) ও বাজারমূল্য অনুযায়ী ২০২৫ সালের জন্য টাকায় সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ ফিতরা নির্ধারণ করা হয়েছে—
ফিতরা দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিধান রয়েছে—
প্রত্যেক মুসলিম, যিনি নিজের ও পরিবারের মৌলিক চাহিদা মেটানোর পর অতিরিক্ত সম্পদ রাখেন, তাকে ফিতরা দিতে হবে।
পিতার দায়িত্ব হলো তার ছোট সন্তানদের ফিতরা দিয়ে দেওয়া। পরিবারের প্রধান ব্যক্তি যদি সক্ষম হন, তবে পরিবারের অসামর্থ্য ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে তিনিও ফিতরা আদায় করতে পারেন।
ইসলামিক বিধান অনুযায়ী, নিম্নলিখিত ব্যক্তিরা ফিতরার হকদার— দরিদ্র ও অভাবী মানুষ, মিসকিন (অত্যন্ত দুঃস্থ), জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তি, নিঃস্ব ভ্রমণকারী এবং ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, যিনি নিজের ঋণ পরিশোধে অক্ষম।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ফিতরা হলো দরিদ্রদের জন্য খাদ্যের সংস্থান।’ (সুনানে আবু দাউদ)
ফিতরা আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও সত্যিকারের অভাবগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করাই উত্তম।
ফিতরা আদায়ের জন্য সময়সীমা নির্ধারিত রয়েছে। ফিতরা আদায়ের উত্তম সময় হলো ঈদের সালাতের পূর্বে। তবে কেউ যদি আগে দিতে চান, তাহলে রমজান মাসের শেষ কয়েক দিনে দেওয়া যেতে পারে।
যদি কেউ ঈদের নামাজের পর ফিতরা প্রদান করেন, তবে তা সাধারণ দান হিসেবে গণ্য হবে, ফিতরা হিসেবে নয়।
ফিতরার মাধ্যমে সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য ও সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত হয়। এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দুর্ভোগ বেড়েছে। বাংলাদেশেও খাদ্যদ্রব্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় অনেক মানুষ চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ফিতরা তাদের জন্য একটি বড় সহায়তা হতে পারে।
আমাদের উচিত—
ফিতরা শুধু একটি দান নয়, বরং এটি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান, যা রোজার পরিপূর্ণতা আনে এবং সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে। এটি দরিদ্রদের সহায়তা করে এবং ঈদের আনন্দ সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়। তাই আমাদের উচিত যথাযথভাবে ফিতরা আদায় করা এবং এর মাধ্যমে ইসলামের মানবিকতা ও সাম্যের বার্তা বাস্তবায়ন করা।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে যথাযথভাবে ফিতরা আদায় করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
লেখক: গণসংযোগ কর্মকর্তা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন

রমজানের সিয়াম সাধনার শেষে মুসলিম উম্মাহর জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো সাদাকাতুল ফিতর (ফিতরা)। এটি এক ধরনের বাধ্যতামূলক দান, যা রমজানের শেষ দিকে আদায় করা হয় এবং ঈদের আগেই গরিব-দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। ফিতরার মূল লক্ষ্য হলো দরিদ্র মানুষদের ঈদের আনন্দে শরিক করা এবং মুসলিম সমাজে সাম্যের বোধ তৈরি করা।
বাংলাদেশে চলতি বছর (১৪৪৬ হিজরি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ) ফিতরার হার সর্বনিম্ন ১১০ টাকা ও সর্বোচ্চ দুই হাজার ৮০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর সর্বনিম্ন ১১৫ টাকা ও সর্বোচ্চ দুই হাজার ৯৭০ টাকা ছিল। ফিতরার এই পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় গম, আটা, যব, খেজুর, কিশমিশ ও পনিরের বাজারমূল্যের ভিত্তিতে। ইসলামের বিধান অনুযায়ী, সামর্থ্য অনুযায়ী এই পণ্যগুলোর নির্দিষ্ট পরিমাণ বা এর সমমূল্যের অর্থ দিয়ে ফিতরা প্রদান করা যায়।
ফিতরার বিধান সম্পর্কে পবিত্র কুরআন ও হাদিসে সুস্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া যায়।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা নামাজ কায়েম করো এবং জাকাত আদায় করো। তোমরা নিজেদের জন্য যা অগ্রিম পাঠিয়ে দাও, তা আল্লাহর কাছে পাবে।’ (সূরা আল-বাকারাহ: ১১০)
এই আয়াত সরাসরি ফিতরার কথা উল্লেখ করে না, তবে ইসলামিক ব্যাখ্যাগুলোতে জাকাত ও ফিতরার সম্পর্কিত নির্দেশনাগুলো একসঙ্গেই আলোচিত হয়েছে।
ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলমানের জন্য সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব, তা এক সা’ (প্রায় আড়াই কেজি) খেজুর বা যব। এটি দাস-মুক্ত, পুরুষ-নারী, ছোট-বড় সব মুসলিমের জন্য প্রযোজ্য।’ (বুখারি: ১৫০৩, মুসলিম: ৯৮৪)
অন্য একটি হাদিসে বলা হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) সিয়ামের পবিত্রতা ও গরিব-মিসকিনদের জন্য খাদ্যের সংস্থান হিসেবে সাদাকাতুল ফিতরকে ফরজ করেছেন।’ (আবু দাউদ: ১৬০৯)
এই হাদিসগুলোর মাধ্যমে এটি স্পষ্ট, ফিতরা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং এটি রোজার পরিপূর্ণতা অর্জনের মাধ্যম।
ফিতরার নির্ধারিত পরিমাণ সম্পর্কে হাদিসে বলা হয়েছে, প্রত্যেক মুসলিমকে ১ সা’ খাদ্যশস্য বা তার মূল্য প্রদান করতে হবে। এক সা’ সাধারণত আড়াই থেকে তিন কেজির সমতুল্য। খাদ্যপণ্যের পরিমাণ (প্রায় আড়াই থেকে তিন কেজি) ও বাজারমূল্য অনুযায়ী ২০২৫ সালের জন্য টাকায় সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ ফিতরা নির্ধারণ করা হয়েছে—
ফিতরা দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিধান রয়েছে—
প্রত্যেক মুসলিম, যিনি নিজের ও পরিবারের মৌলিক চাহিদা মেটানোর পর অতিরিক্ত সম্পদ রাখেন, তাকে ফিতরা দিতে হবে।
পিতার দায়িত্ব হলো তার ছোট সন্তানদের ফিতরা দিয়ে দেওয়া। পরিবারের প্রধান ব্যক্তি যদি সক্ষম হন, তবে পরিবারের অসামর্থ্য ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে তিনিও ফিতরা আদায় করতে পারেন।
ইসলামিক বিধান অনুযায়ী, নিম্নলিখিত ব্যক্তিরা ফিতরার হকদার— দরিদ্র ও অভাবী মানুষ, মিসকিন (অত্যন্ত দুঃস্থ), জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তি, নিঃস্ব ভ্রমণকারী এবং ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, যিনি নিজের ঋণ পরিশোধে অক্ষম।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ফিতরা হলো দরিদ্রদের জন্য খাদ্যের সংস্থান।’ (সুনানে আবু দাউদ)
ফিতরা আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও সত্যিকারের অভাবগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করাই উত্তম।
ফিতরা আদায়ের জন্য সময়সীমা নির্ধারিত রয়েছে। ফিতরা আদায়ের উত্তম সময় হলো ঈদের সালাতের পূর্বে। তবে কেউ যদি আগে দিতে চান, তাহলে রমজান মাসের শেষ কয়েক দিনে দেওয়া যেতে পারে।
যদি কেউ ঈদের নামাজের পর ফিতরা প্রদান করেন, তবে তা সাধারণ দান হিসেবে গণ্য হবে, ফিতরা হিসেবে নয়।
ফিতরার মাধ্যমে সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য ও সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত হয়। এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দুর্ভোগ বেড়েছে। বাংলাদেশেও খাদ্যদ্রব্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় অনেক মানুষ চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ফিতরা তাদের জন্য একটি বড় সহায়তা হতে পারে।
আমাদের উচিত—
ফিতরা শুধু একটি দান নয়, বরং এটি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান, যা রোজার পরিপূর্ণতা আনে এবং সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে। এটি দরিদ্রদের সহায়তা করে এবং ঈদের আনন্দ সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়। তাই আমাদের উচিত যথাযথভাবে ফিতরা আদায় করা এবং এর মাধ্যমে ইসলামের মানবিকতা ও সাম্যের বার্তা বাস্তবায়ন করা।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে যথাযথভাবে ফিতরা আদায় করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
লেখক: গণসংযোগ কর্মকর্তা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন

ব্যাংক খাতের কিছুটা উন্নতি হলেও দুর্দশা কাটেনি। বিগত দিনগুলোতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সরকারের ইচ্ছানুযায়ী পরিচালিত হয়েছে, যা ব্যাংক ব্যবস্থাকে দুর্বল করে তুলেছে। এ খাতে সুশাসন ফেরাতে সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা বাস্তবায়ন করা গেলে ব্যাংক খাত আরও ভালো করবে।
৬ দিন আগে
কর্ণফুলীর স্রোতধারার সঙ্গে যুক্ত হয় বঙ্গোপসাগরের আছড়ে পড়া উত্তাল ঢেউ। সেই আনন্দের মাঝেই হঠাৎ যোগ দেয় একদল সশস্ত্র তিব্বতীয় গেরিলা। বঙ্গোপসাগরের ঢেউ আর কর্ণফুলীর স্রোত যেন স্তব্ধ হয়ে যায়। আনন্দে উদ্বেলিত জনতা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তিব্বতীয়দের দিকে।
১৩ দিন আগে
তখন আমাদের চিহ্নিত শত্রু ছিল হানাদার বাহিনী। তাদের সঙ্গে আরও চিহ্নিত হয়েছিল তাদের এ দেশীয় ‘কোলাবোরেটর’ বা সহযোগীরা, যারা ছিল মূলত রাজাকার, আলবদর বা আল শামস বাহিনীর। এরাও চিহ্নিত ছিল। এদের বিরুদ্ধে দেশের মানুষ একাট্টা হয়ে সংগ্রাম করেছে। সেই সংগ্রাম রক্তক্ষয়ী ছিল, বহু মানুষ অকাতরে শহিদ হয়েছে।
১৩ দিন আগে
রাজনৈতিক সহিংসতার চক্র যত বড় হয়, ততই সংকুচিত হয় নাগরিকদের নিরাপত্তা, গণতান্ত্রিক অধিকার, ভিন্নমতের পরিসর এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা। সামাজিক আস্থাও ক্ষয়ে যায়। আজ একজন হাদি আক্রান্ত,আগামীকাল কে বা কারা টার্গেট হবেন তা কেউ জানে না। সহিংসতা যখন ধীরে ধীরে রাজনৈতিক কৌশলে পরিণত হয়, ‘ব্যবহারযোগ্য হাতিয়ার’ হ
১৪ দিন আগে