শাহরিয়ার শরীফ
কিসের ভিত্তিতে মন্ত্রী হওয়া যায়, তার সংজ্ঞা বা নীতিমালা নেই। সংসদীয় গণতন্ত্রে রাজনৈতিক সরকারের মন্ত্রীরা সাধারণত প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় এই পদে নিযুক্ত হন। রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী তার নিজের মতো করে কিছু বিষয় পর্যালোচনা করে থাকেন। সোজা কথায়, সরকার পরিচালনা করতে তিনি যাদের যোগ্য মনে করেন তারাই মন্ত্রী পদে নিযুক্ত হন।
সাধারণত নবীন ও প্রবীণের সমন্বয় করে মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। আবার আঞ্চলিক হিসেবে-নিকেশ থাকে। নারী, সংখ্যালঘু বা উপজাতির বিষয়টিও মাথায় রাখতে হয়। এর বাইরে অভিজ্ঞতা, ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ, ব্যক্তি বা পরিবারের অবদানসহ নানা বিষয় পর্যালোচনা করা হয়।
১১ জানুয়ারি ৩৬ সদস্যের যে মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়েছে সেখানে নতুন মুখের সংখ্যা ২১ এবং আগের মন্ত্রিসভা থেকে স্থান পেয়েছেন ১৫ জন। মোট ৪৫ সদস্যের বিদায়ী মন্ত্রিসভা থেকে পুরোনো ২৮ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীই বাদ পড়েছেন। বয়স, আঞ্চলিকতাসহ নানা কারণের বাইরেও বিশেষ কয়েকজনের বাদ পড়া নিয়ে দলের ভেতরে নানা আলোচনা ও অনুমান করা হচ্ছে। তবে এসবের বাইরেও নানা কারণ থাকতে পারে।
বিতর্কিত মন্তব্যে বিদায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বিভিন্ন সময়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে সরকারের মধ্যেও সমালোচিত হন। কূটনীতির মতো স্পর্শকাতর বিষয়টি তিনি খেলো করে তোলেন। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও চীনের নানা ইস্যু নিয়ে তিনি টানা বিতর্কিত মন্তব্য করে আসছেন।
এমন এক বিতর্কের জের ধরে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনকে ভারত সফরের তালিকা থেকে শেষ সময়ে বাদ দেওয়া হয়। ২০২২ সালের আগস্টে চট্টগ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের এক অনুষ্ঠানে মোমেন মন্তব্য করেন, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে তিনি ভারতকে অনুরোধ করেছেন। তার বক্তব্য ছিল, ‘আমি ভারতে গিয়ে যেটি বলেছি যে শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই মন্তব্য বাংলাদেশ এবং ভারত-দুই দেশকেই অস্বস্তিতে ফেলে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ধারণা করেন, এই অস্বস্তি এড়াতে সফর থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম শেষ সময়ে বাদ দেওয়া হয়।
২০২২ সালের জুনে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে সাক্ষাতকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন ও পূজামণ্ডপে হামলা এবং ভাঙচুর নিয়ে মিথ্যা প্রচারণা হয়। তিনি আরও বলেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এ বছর প্রায় ৩৩ হাজার পূজামণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই দুটি বক্তব্যের প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। মন্ত্রী ছাড়াও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও বাদ পড়েছেন।
বিএনপিকে নিয়ে মন্তব্য, বিপাকে কৃষিমন্ত্রী
মন্ত্রিসভায় পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি থাকা কয়েকজন মন্ত্রীর অন্যতম কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলে দলের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার তালিকায় তার নাম আলোচনায় ছিল। মন্ত্রিসভা থেকে আব্দুর রাজ্জাকের বাদ পড়ার বিষয়টি নিয়ে চমক সৃষ্টি হয়েছে সরকারি দলের মধ্যেও। তিনি বিতর্কিত কথা কম বলেন, দলের ভেতর-বাইরে অনেকটাই গ্রহণযোগ্য। ধারণা করা হচ্ছে, সম্প্রতি একটি বিতর্কিত মন্তব্য করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলেন তিনি। এই মন্তব্য এমন সময় করেন যখন সরকার রাজনৈতিক কৌশলে নির্বাচন পার করার চেষ্টা করছিল।
গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে দেওয়া ওই বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী রাজ্জাক বলেন, ‘দেশে সহিংসতা আটকাতে পরিকল্পিতভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদের জেলে রাখা হয়েছে।’
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনে এলে ছাড় দেওয়ার প্রস্তাবেও রাজী হয়নি বিএনপি নেতাকর্মীরা।
আব্দুর রাজ্জাক আরও বলেন, ‘২০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার না করলে কি বাংলাদেশে আজকে যে গাড়ি চলতেছে এই হরতালের দিন, আপনারা এই গাড়ি দেখতেন?... এছাড়া আমাদের জন্য কোনো গত্যন্তর ছিল না। কোনো অল্টারনেটিভ ছিল না। যেটা করেছি আমরা চিন্তাভাবনা করে করেছি।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য বলেন, ‘বারবার বলা হয়েছে নির্বাচন কমিশন থেকে, তারা (বিএনপি) যদি নির্বাচনে আসে তাহলে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হবে। পিছিয়ে দেওয়া না, বলাও হয়েছিল যে সবাইকে জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে।’ এই বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর আব্দুর রাজ্জাক নানাভাবে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করলেও তা তেমন কাজে আসেনি।
যারা বাদ পড়েছেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। আওয়ামী লীগের নির্বাচন ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। শুরুতে ২০০৯ সালে তিনি খাদ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর মন্ত্রিসভায় স্থান না পেলেও, ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর তিনি আবার মন্ত্রিসভায় ফিরে আসেন।
অর্থমন্ত্রীর কথা মানুষ ভুলেই গিয়েছিল
অর্থ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী কে, তা মাঝেমধ্যে মানুষ ভুলে যেতেন। একপর্যায়ে অর্থমন্ত্রী হিসেবে সবাই দেখিয়ে দিতেন প্রধানমন্ত্রীকে। অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও মন্দা মোকাবিলায় ব্যর্থতার জন্য সমালোচিত হন আ হ ম মুস্তফা কামাল। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া, ব্যাংকখাতে লুটাপট ঠেকাতে ব্যর্থতা, অর্থ পাচার, ডলারের বিপরীতে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন, মূল্যস্ফীতি, সূদের হার নির্দিষ্ট করা নিয়ে টানা বিতর্ক, শেয়ার বাজার তলানিতে ঠেকে যাওয়াসহ আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খল অবস্থার জন্য অর্থমন্ত্রীকে দায়ী করেন অনেকেই। জাতীয় সংসদেও তিনি বারবার বিরোধী সাংসদদের তোপের মুখে পড়েন।
যদিও আ হ ম মুস্তফা কামালকে বিশ্বের সেরা অর্থমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করে দ্য ব্যাংকার নামে যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি বিজনেস পত্রিকা। ২০২০ সালের ২ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানানো হয়।
সেই সেরা অর্থমন্ত্রী নিয়মিত মন্ত্রণালয়ে যেতেন না, অনেকটাই লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকতেন। বাংলাদেশ ব্যাংক, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপর তার নেতৃত্ব সেই অর্থে ছিল না। তিনি কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারতেন না। কারণ যারা কথা শুনতেন না, তাদের খুঁটিও ছিল বেশ শক্ত।
কুমিল্লা-১০ আসন থেকে এবার পঞ্চমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৩২ হাজার ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লাঙল প্রতীকের প্রার্থী জোনাকী হুমায়ুন ৮ হাজার ৫৪৮ ভোট পান। ভোটের মাঠে বড় সফলতা থাকলেও সাধারণ ধারণা হচ্ছে, অর্থ মন্ত্রণালয় পরিচালনা তথা আর্থিক খাত ব্যবস্থাপনায় তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। যদিও তিনি নিজেকে সবসময় সফল হিসেবে দাবি করেছেন। পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেছেন কোভিড, বৈশ্বিক মন্দাসহ উদ্ভূত পরিস্থিতিকে।
পরিবার ঢুকে পড়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে
করোনাভাইরাসের সঙ্কট মোকাবিলায় সরকার অনেকাংশে সফল হলেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ব্যর্থ হিসেবে সমালোচিত হয়েছেন। করোনার টিকা কেনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামগ্রী কেনার দরপত্র নিয়ে অনিয়মের অসংখ্যা অভিযোগ ওঠে। মন্ত্রিসভার সদস্যদের অনেকে তার ওপর বিরক্তও ছিলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়ে জাহিদ মালেক কীভাবে টিকে গেলেন না নিয়ে মন্ত্রিদের অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করতেন।
করোনাকালে স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলে সংসদ অধিবেশনে আবারও স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে তুলাধোনা করেছেন বিরোধী দলের সদস্যরা। সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে আটকে রাখা ও তার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার ঘটনাসহ পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে স্বাস্থ্যমন্ত্রী একজন সাংবাদিককে সরকারের বিরুদ্ধে দাড় করান, যা নিয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিব চলে গেলেও মামলা চলছে রোজিনার বিরুদ্ধে, তিনি পাসপোর্ট ফেরত পাচ্ছেন না।
স্বাস্থ্য সেবাসামগ্রী সরবরাহ, করোনা পরীক্ষা, হাসপাতালে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে তিনি সমালোচিত হন। মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ কেলেঙ্কারি, সাহেদ ও সাবরিনা-কাণ্ড, পিপিই কেলেঙ্কারি নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী। করোনাকালে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কেনাকাটা নিয়ে কেলেঙ্কারিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পুত্র রাহাত মালেক শুভ্র’র নাম সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পায়।
২০২১ সালের ৮ জুন ‘করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলা: কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে টিআইবি, যা নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
সবশেষে মানিকগঞ্জে সরকারি ওষুধ কারখানার জন্য সাড়ে ৩১ একর জমি কেনা নিয়ে দুর্নীতির খবর প্রকাশ পায়। এ জমি ভরাট করে ভিটি শ্রেণিতে পরিবর্তন করার ৭ মাস পর ওষুধ কারখানা স্থাপনের প্রকল্প পাস হয়। ফলে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মেয়ে সাড়ে ৭ কোটি টাকায় যে জমি কিনেছেন, সেটা সরকার অধিগ্রহণ করলে ৪০ কোটি টাকা পাবেন বলে খবর প্রকাশ হয়।
মানুষের বিরক্তির কারণ হন বাণিজ্যমন্ত্রী
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য মন্ত্রী হিসেবে মানুষের সবচেয়ে অপছন্দের তালিকায় উঠে আসনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। দ্রব্যমূল্য ও বাজার সিন্ডিকেট নিয়ে বারবার জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের তোপের মুখে পড়েছেন তিনি।
কোনো কোনো সংসদ সদস্য প্রশ্ন তুলেছেন, বাণিজ্যমন্ত্রী নিজে ব্যবসায়ী হওয়ার কারণেই কি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না? বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সবচেয়ে ব্যর্থ মন্ত্রণালয় আখ্যা দিয়ে মন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করা হয়েছে সংসদে।
যদিও বিরোধীদের সমালোচনার জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, সবাই তাঁকে ব্যবসায়ী বলেন, কিন্তু তিনি রাজনীতি করেন ৫৬ বছর ধরে। আর ব্যবসা করেন ৪০ বছর ধরে। প্রকৃতপক্ষে রাজনীতি ও ব্যবসায়ী হলেও তিনি সিন্ডিকেটের সঙ্গে পেরে ওঠেননি। তারা নিজের কথায়ও বিষয়টি হয়ে ওঠে স্পষ্ট। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বড় গ্রুপগুলোকে জেল-জরিমানা করা যায়। কিন্তু তাতে হঠাৎ যে সংকট তৈরি হবে, তা সইতে কষ্ট হবে। মন্ত্রণালয় আলোচনার মাধ্যমে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে।
মন্ত্রীর এই বক্তব্য গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ হয় গণমাধ্যমে। প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনেও সাংবাদিকেরা সিন্ডিকেটের কাছে বাণিজ্যমন্ত্রীর অসহাত্বের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।
বাণিজ্যমন্ত্রীকে নিয়ে সংসদের ভেতর-বাইরে এমন আলোচনাও ছিল যে, তিনি যখন বলেন, কোনো পণ্যের দাম কমবে, তার পরদিনই ওই পণ্যের দাম বেড়ে যায়। মাস কয়েক আগে একজন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাজারে গিয়ে মানুষ কাঁদছে, তার একমাত্র কারণ সিন্ডিকেট।’ মানুষও এটি বোঝে। শুধু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ওপর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির দায় চাপালে হবে না। ডিমের বাজারে হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে সিন্ডিকেট। হাঁস-মুরগির ডিম ইউক্রেন থেকে আসে না।
যুক্তরাজ্যে বাড়ির খবরে বাদ সাইফুজ্জামান!
যুক্তরাজ্যে বাড়ির খবর ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীকে মন্ত্রিত্ব থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সাইফুজ্জামান বিরুদ্ধে আর্থিক বদনাম তেমন শোনা যায়নি।
তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে এতো বাড়ি কিনতে আড়াই হাজার কোটি টাকা তিনি কোথায় পেলেন। এই টাকা তার কোনও নিকটাত্মীয়ের কিনা তা নিয়েও আছে নানা জল্পনা-কল্পনা। তবে সাইফুজ্জামান বিষয়টি হলফনামায় দেখাননি। তাই তার সংসদ সদস্য পদ আইনি জটিলতায় আটকে যেতে পারে বলে আলোচনা রয়েছে।
গত ২৯ ডিসেম্বর ডেইলি স্টার পত্রিকার খবরে বলা হয়, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদের যুক্তরাজ্যে কমপক্ষে ২৬০টি সম্পত্তি রয়েছে যেগুলোর জন্য তিনি প্রায় ১৩৫ মিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ড বা ১৮৮৮ কোটি টাকা পরিশোধ করেছেন, যুক্তরাজ্যে সরকারের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্যের হিসাবে এটি বলছে পত্রিকাটি।
কার্টুনসহ ডেইলি স্টারের খবরে বলা হয়, আওয়ামী লীগের তিন বারের এই সংসদ নেতার যুক্তরাজ্যে সম্পদের বিপরীতে আরও কমপক্ষে ৫৩৭টি মর্টগেজ রেখেছেন, যেগুলোর বেশিরভাগই লন্ডনে। যদিও তিনি নির্বাচন কমিশনে যে সম্পদের হিসাব দিয়েছেন তাতে বিদেশে সম্পত্তির কথা উল্লেখ নেই। এখানে বলা আছে ব্যবসা থেকে তার বার্ষিক আয় মাত্র ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
গত ২৬ ডিসেম্বর প্রথম এই তথ্য প্রকাশ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি। তবে সংস্থাটি মন্ত্রীর নাম প্রকাশ করেনি। এরপর ২৯ ডিসেম্বর মানবজমিনের আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদেশে থাকা এই বিনিয়োগের তথ্য নির্বাচনী হলফনামায় না দেয়ার কারণে একজন প্রার্থী হিসেবে সাইফুজ্জামান শাস্তি পেতে পারেন। এমনকি নির্বাচিত হওয়ার পরও এমন তথ্যের ভিত্তিতে সংসদ সদস্য পদ বাতিল হতে পারে। যদিও নির্বাচন কমিশন বা দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রসঙ্গত, ভূমিসেবা ডিজিটাইজেশনে কাজ করছিলেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, যা ২০২৬ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। শিল্পপতি মরহুম আখতারুজ্জামান চৌধুরী দম্পতির জ্যেষ্ঠ পুত্র সাইফুজ্জামান বাবার আকস্মিক মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে চট্টগ্রামের আনোয়ারা আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে তিনি দশম এবং একাদশ জাতীয় সংসদে নির্বাচিত হন।
সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নেতৃত্বে ভূমি মন্ত্রণালয় ‘ই-মিউটেশন’ উদ্যোগের জন্য জাতিসংঘের মর্যাদাপূর্ণ 'ইউনাইটেড ন্যাশনস পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ডস ২০২০-এ ভূষিত হয়েছে। এছাড়া তাঁর নেতৃত্বে ভূমি মন্ত্রণালয় ‘ডিজিটাল ল্যান্ড ট্যাক্স’ উদ্যোগের জন্য ‘ওয়ার্ল্ড সামিট অন দ্য ইনফরমেশন সোসাইটি পুরস্কার-২০২২’ এবং ‘ল্যান্ড ডাটা ব্যাংক’ উদ্যোগের জন্য ‘বঙ্গবন্ধু পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড-২০২২’ অর্জন করে। ভূমি খাতে নেতৃত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড বুক অব রেকর্ডস’-এর পক্ষ থেকেও সাইফুজ্জামান চৌধুরীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
বাদ পড়া অন্যদের কথা
সুনামগঞ্জের সংসদ সদস্য এমএ মান্নান গত ১০ বছর মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। শুরুতে তিনি অর্থ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন পাঁচ বছর। এরপর তিনি পরিকল্পনা মন্ত্রী হিসেবে কাজ করেছেন। এবারের মন্ত্রিসভায় কেন জায়গা হয়নি, তা নিয়ে কোন ধারণা করতে পারছেন না এম এ মান্নান। ‘আই এম ভেরি হ্যাপি হোয়াট আই ডিড (আমি যা করেছি তাতে আমি খুশি)। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় জনগণের আড়ালে থাকা একটি বিষয় ছিল। আমি সেটাকে মানুষের সামনে আসতে পেরেছি,’ বিবিসি বাংলাকে বলেন মান্নান।
তিনি মনে করেন, মন্ত্রিসভায় পরিবর্তনের বিষয়টি এমন নয় যে কেউ ব্যর্থ হয়েছে। এখানে ভারসাম্যের একটি বিষয় জড়িত। ‘মানুষ মনে করে হয়তো পারে নাই, সেজন্য বাদ পড়েছে। কিন্তু ব্যাপারটা ও রকম না। আমার ধারণা ছিল আমি হয়তো থাকব না। পরপর দুইবার মন্ত্রিসভায় থাকার পরে সাধারণত তৃতীয়বার কাউকে মন্ত্রী করে না,’ বলেন এম এ মান্নান।
সর্বশেষ মন্ত্রিসভায় টেকনোক্র্যাট কোটায় ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন মোস্তফা জব্বার। বাদ পড়া প্রসঙ্গে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এখানে আমার মন্তব্য করার কিছু নাই। তিনি কাউকে যোগ্য মনে করতে পারেন, আবার কাউকে অযোগ্য মনে করতে পারেন।’
মন্ত্রী তালিকা থেকে যারা বাদ পড়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। তিনি বিবিসি বাংলাকে জানান, মন্ত্রিসভা গঠন করা প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। যে মন্ত্রিপরিষদ গঠিত হয়েছে সেখানো সবাই যোগ্য বলে মনে করেন তিনি।
বাদ পড়া বাকি মন্ত্রীরা নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ে বড় কোনো প্রভাব ফেলতে পারেননি। অনেকে ৫ বছর মন্ত্রিত্ব করলেও কারও অর্জনের ঝুলি তেমন সমৃদ্ধ নয়। বরং নিকটাত্মীয়কে কৌশলে প্রবাসী অ্যাপ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের বিরুদ্ধে।
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর সঙ্গে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যাপক দ্বন্দ্ব চলছে কয়েক বছর, যা সামাল দিতেই তিনি হিমশিম খাচ্ছেন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে এলাকায় নানা অভিযোগ রয়েছে দলের নেতা-কর্মীদের। তার আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধেও এলাকায় নানা অভিযোগ উঠেছে।
সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমদের আপন ছোট ভাই মাহবুবুজ্জামান আহমেদ প্রকাশ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য ভোট চেয়েছেন ভোটারদের কাছে। লালমনিরহাটে সভা-সমাবেশে ভাইয়ের দুর্নীতর খবর তুলে ধরেন মাহবুবুজ্জামান, এমনকি ভাইকে ঠেকাতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। নুরুজ্জামান বীর মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও সনদ সংগ্রহ করেন বলে প্রকাশ্যে অভিযোগ তোলেন তার ভাই।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়কমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের ছেলে, ভাগিনা আর খালাতো ভাইদের বিরুদ্ধে স্থানীয় পর্যায়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, তাদের ইশারায় চলত প্রশাসন কিংবা পুলিশ। মৌলভীবাজারের বড়লেখা ও জুড়ীর মানুষ। স্বজনদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ ছিলেন। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের ওপর হামলাসহ এসব অভিযোগ মন্ত্রী বিভিন্নসময় অস্বীকার করেছেন। নিজের এলাকায়ও উন্নয়ন তেমন হয়নি। এসব কারণে তিনি মন্ত্রিসভা থেকে ছিটকে পড়ে থাকতেন বলে অনুমান করা হচ্ছে।
মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়া বা বাদ পড়ার সুনির্দিষ্ট কোনো শর্ত নেই। যারা বাদ পড়েন তারা আবার ফিরে আসতে পারেন। আবার যারা ফিরে আসেন তারা বাদও পড়তে পারেন।
বিরোধী দল ছাড়া একটি জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে যে মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, তা নিয়ে খুব একটা সমালোচনা নেই। অর্থনৈতিকসংকট মোকাবিলা, জিনিসপত্রের দাম কমানো ও দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরে মোটামুটি সুশাসন দিতে পারলেই বাংলার মানুষ খুশি হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার কাজটি তখনই সহজ হবে।
কিসের ভিত্তিতে মন্ত্রী হওয়া যায়, তার সংজ্ঞা বা নীতিমালা নেই। সংসদীয় গণতন্ত্রে রাজনৈতিক সরকারের মন্ত্রীরা সাধারণত প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় এই পদে নিযুক্ত হন। রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী তার নিজের মতো করে কিছু বিষয় পর্যালোচনা করে থাকেন। সোজা কথায়, সরকার পরিচালনা করতে তিনি যাদের যোগ্য মনে করেন তারাই মন্ত্রী পদে নিযুক্ত হন।
সাধারণত নবীন ও প্রবীণের সমন্বয় করে মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। আবার আঞ্চলিক হিসেবে-নিকেশ থাকে। নারী, সংখ্যালঘু বা উপজাতির বিষয়টিও মাথায় রাখতে হয়। এর বাইরে অভিজ্ঞতা, ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ, ব্যক্তি বা পরিবারের অবদানসহ নানা বিষয় পর্যালোচনা করা হয়।
১১ জানুয়ারি ৩৬ সদস্যের যে মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়েছে সেখানে নতুন মুখের সংখ্যা ২১ এবং আগের মন্ত্রিসভা থেকে স্থান পেয়েছেন ১৫ জন। মোট ৪৫ সদস্যের বিদায়ী মন্ত্রিসভা থেকে পুরোনো ২৮ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীই বাদ পড়েছেন। বয়স, আঞ্চলিকতাসহ নানা কারণের বাইরেও বিশেষ কয়েকজনের বাদ পড়া নিয়ে দলের ভেতরে নানা আলোচনা ও অনুমান করা হচ্ছে। তবে এসবের বাইরেও নানা কারণ থাকতে পারে।
বিতর্কিত মন্তব্যে বিদায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বিভিন্ন সময়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে সরকারের মধ্যেও সমালোচিত হন। কূটনীতির মতো স্পর্শকাতর বিষয়টি তিনি খেলো করে তোলেন। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও চীনের নানা ইস্যু নিয়ে তিনি টানা বিতর্কিত মন্তব্য করে আসছেন।
এমন এক বিতর্কের জের ধরে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনকে ভারত সফরের তালিকা থেকে শেষ সময়ে বাদ দেওয়া হয়। ২০২২ সালের আগস্টে চট্টগ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের এক অনুষ্ঠানে মোমেন মন্তব্য করেন, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে তিনি ভারতকে অনুরোধ করেছেন। তার বক্তব্য ছিল, ‘আমি ভারতে গিয়ে যেটি বলেছি যে শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই মন্তব্য বাংলাদেশ এবং ভারত-দুই দেশকেই অস্বস্তিতে ফেলে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ধারণা করেন, এই অস্বস্তি এড়াতে সফর থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম শেষ সময়ে বাদ দেওয়া হয়।
২০২২ সালের জুনে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে সাক্ষাতকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন ও পূজামণ্ডপে হামলা এবং ভাঙচুর নিয়ে মিথ্যা প্রচারণা হয়। তিনি আরও বলেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এ বছর প্রায় ৩৩ হাজার পূজামণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই দুটি বক্তব্যের প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। মন্ত্রী ছাড়াও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও বাদ পড়েছেন।
বিএনপিকে নিয়ে মন্তব্য, বিপাকে কৃষিমন্ত্রী
মন্ত্রিসভায় পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি থাকা কয়েকজন মন্ত্রীর অন্যতম কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলে দলের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার তালিকায় তার নাম আলোচনায় ছিল। মন্ত্রিসভা থেকে আব্দুর রাজ্জাকের বাদ পড়ার বিষয়টি নিয়ে চমক সৃষ্টি হয়েছে সরকারি দলের মধ্যেও। তিনি বিতর্কিত কথা কম বলেন, দলের ভেতর-বাইরে অনেকটাই গ্রহণযোগ্য। ধারণা করা হচ্ছে, সম্প্রতি একটি বিতর্কিত মন্তব্য করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলেন তিনি। এই মন্তব্য এমন সময় করেন যখন সরকার রাজনৈতিক কৌশলে নির্বাচন পার করার চেষ্টা করছিল।
গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে দেওয়া ওই বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী রাজ্জাক বলেন, ‘দেশে সহিংসতা আটকাতে পরিকল্পিতভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদের জেলে রাখা হয়েছে।’
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনে এলে ছাড় দেওয়ার প্রস্তাবেও রাজী হয়নি বিএনপি নেতাকর্মীরা।
আব্দুর রাজ্জাক আরও বলেন, ‘২০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার না করলে কি বাংলাদেশে আজকে যে গাড়ি চলতেছে এই হরতালের দিন, আপনারা এই গাড়ি দেখতেন?... এছাড়া আমাদের জন্য কোনো গত্যন্তর ছিল না। কোনো অল্টারনেটিভ ছিল না। যেটা করেছি আমরা চিন্তাভাবনা করে করেছি।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য বলেন, ‘বারবার বলা হয়েছে নির্বাচন কমিশন থেকে, তারা (বিএনপি) যদি নির্বাচনে আসে তাহলে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হবে। পিছিয়ে দেওয়া না, বলাও হয়েছিল যে সবাইকে জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে।’ এই বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর আব্দুর রাজ্জাক নানাভাবে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করলেও তা তেমন কাজে আসেনি।
যারা বাদ পড়েছেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। আওয়ামী লীগের নির্বাচন ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। শুরুতে ২০০৯ সালে তিনি খাদ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর মন্ত্রিসভায় স্থান না পেলেও, ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর তিনি আবার মন্ত্রিসভায় ফিরে আসেন।
অর্থমন্ত্রীর কথা মানুষ ভুলেই গিয়েছিল
অর্থ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী কে, তা মাঝেমধ্যে মানুষ ভুলে যেতেন। একপর্যায়ে অর্থমন্ত্রী হিসেবে সবাই দেখিয়ে দিতেন প্রধানমন্ত্রীকে। অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও মন্দা মোকাবিলায় ব্যর্থতার জন্য সমালোচিত হন আ হ ম মুস্তফা কামাল। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া, ব্যাংকখাতে লুটাপট ঠেকাতে ব্যর্থতা, অর্থ পাচার, ডলারের বিপরীতে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন, মূল্যস্ফীতি, সূদের হার নির্দিষ্ট করা নিয়ে টানা বিতর্ক, শেয়ার বাজার তলানিতে ঠেকে যাওয়াসহ আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খল অবস্থার জন্য অর্থমন্ত্রীকে দায়ী করেন অনেকেই। জাতীয় সংসদেও তিনি বারবার বিরোধী সাংসদদের তোপের মুখে পড়েন।
যদিও আ হ ম মুস্তফা কামালকে বিশ্বের সেরা অর্থমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করে দ্য ব্যাংকার নামে যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি বিজনেস পত্রিকা। ২০২০ সালের ২ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানানো হয়।
সেই সেরা অর্থমন্ত্রী নিয়মিত মন্ত্রণালয়ে যেতেন না, অনেকটাই লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকতেন। বাংলাদেশ ব্যাংক, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপর তার নেতৃত্ব সেই অর্থে ছিল না। তিনি কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারতেন না। কারণ যারা কথা শুনতেন না, তাদের খুঁটিও ছিল বেশ শক্ত।
কুমিল্লা-১০ আসন থেকে এবার পঞ্চমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৩২ হাজার ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লাঙল প্রতীকের প্রার্থী জোনাকী হুমায়ুন ৮ হাজার ৫৪৮ ভোট পান। ভোটের মাঠে বড় সফলতা থাকলেও সাধারণ ধারণা হচ্ছে, অর্থ মন্ত্রণালয় পরিচালনা তথা আর্থিক খাত ব্যবস্থাপনায় তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। যদিও তিনি নিজেকে সবসময় সফল হিসেবে দাবি করেছেন। পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেছেন কোভিড, বৈশ্বিক মন্দাসহ উদ্ভূত পরিস্থিতিকে।
পরিবার ঢুকে পড়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে
করোনাভাইরাসের সঙ্কট মোকাবিলায় সরকার অনেকাংশে সফল হলেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ব্যর্থ হিসেবে সমালোচিত হয়েছেন। করোনার টিকা কেনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামগ্রী কেনার দরপত্র নিয়ে অনিয়মের অসংখ্যা অভিযোগ ওঠে। মন্ত্রিসভার সদস্যদের অনেকে তার ওপর বিরক্তও ছিলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়ে জাহিদ মালেক কীভাবে টিকে গেলেন না নিয়ে মন্ত্রিদের অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করতেন।
করোনাকালে স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলে সংসদ অধিবেশনে আবারও স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে তুলাধোনা করেছেন বিরোধী দলের সদস্যরা। সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে আটকে রাখা ও তার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার ঘটনাসহ পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে স্বাস্থ্যমন্ত্রী একজন সাংবাদিককে সরকারের বিরুদ্ধে দাড় করান, যা নিয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিব চলে গেলেও মামলা চলছে রোজিনার বিরুদ্ধে, তিনি পাসপোর্ট ফেরত পাচ্ছেন না।
স্বাস্থ্য সেবাসামগ্রী সরবরাহ, করোনা পরীক্ষা, হাসপাতালে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে তিনি সমালোচিত হন। মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ কেলেঙ্কারি, সাহেদ ও সাবরিনা-কাণ্ড, পিপিই কেলেঙ্কারি নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী। করোনাকালে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কেনাকাটা নিয়ে কেলেঙ্কারিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পুত্র রাহাত মালেক শুভ্র’র নাম সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পায়।
২০২১ সালের ৮ জুন ‘করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলা: কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে টিআইবি, যা নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
সবশেষে মানিকগঞ্জে সরকারি ওষুধ কারখানার জন্য সাড়ে ৩১ একর জমি কেনা নিয়ে দুর্নীতির খবর প্রকাশ পায়। এ জমি ভরাট করে ভিটি শ্রেণিতে পরিবর্তন করার ৭ মাস পর ওষুধ কারখানা স্থাপনের প্রকল্প পাস হয়। ফলে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মেয়ে সাড়ে ৭ কোটি টাকায় যে জমি কিনেছেন, সেটা সরকার অধিগ্রহণ করলে ৪০ কোটি টাকা পাবেন বলে খবর প্রকাশ হয়।
মানুষের বিরক্তির কারণ হন বাণিজ্যমন্ত্রী
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য মন্ত্রী হিসেবে মানুষের সবচেয়ে অপছন্দের তালিকায় উঠে আসনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। দ্রব্যমূল্য ও বাজার সিন্ডিকেট নিয়ে বারবার জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের তোপের মুখে পড়েছেন তিনি।
কোনো কোনো সংসদ সদস্য প্রশ্ন তুলেছেন, বাণিজ্যমন্ত্রী নিজে ব্যবসায়ী হওয়ার কারণেই কি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না? বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সবচেয়ে ব্যর্থ মন্ত্রণালয় আখ্যা দিয়ে মন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করা হয়েছে সংসদে।
যদিও বিরোধীদের সমালোচনার জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, সবাই তাঁকে ব্যবসায়ী বলেন, কিন্তু তিনি রাজনীতি করেন ৫৬ বছর ধরে। আর ব্যবসা করেন ৪০ বছর ধরে। প্রকৃতপক্ষে রাজনীতি ও ব্যবসায়ী হলেও তিনি সিন্ডিকেটের সঙ্গে পেরে ওঠেননি। তারা নিজের কথায়ও বিষয়টি হয়ে ওঠে স্পষ্ট। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বড় গ্রুপগুলোকে জেল-জরিমানা করা যায়। কিন্তু তাতে হঠাৎ যে সংকট তৈরি হবে, তা সইতে কষ্ট হবে। মন্ত্রণালয় আলোচনার মাধ্যমে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে।
মন্ত্রীর এই বক্তব্য গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ হয় গণমাধ্যমে। প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনেও সাংবাদিকেরা সিন্ডিকেটের কাছে বাণিজ্যমন্ত্রীর অসহাত্বের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।
বাণিজ্যমন্ত্রীকে নিয়ে সংসদের ভেতর-বাইরে এমন আলোচনাও ছিল যে, তিনি যখন বলেন, কোনো পণ্যের দাম কমবে, তার পরদিনই ওই পণ্যের দাম বেড়ে যায়। মাস কয়েক আগে একজন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাজারে গিয়ে মানুষ কাঁদছে, তার একমাত্র কারণ সিন্ডিকেট।’ মানুষও এটি বোঝে। শুধু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ওপর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির দায় চাপালে হবে না। ডিমের বাজারে হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে সিন্ডিকেট। হাঁস-মুরগির ডিম ইউক্রেন থেকে আসে না।
যুক্তরাজ্যে বাড়ির খবরে বাদ সাইফুজ্জামান!
যুক্তরাজ্যে বাড়ির খবর ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীকে মন্ত্রিত্ব থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সাইফুজ্জামান বিরুদ্ধে আর্থিক বদনাম তেমন শোনা যায়নি।
তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে এতো বাড়ি কিনতে আড়াই হাজার কোটি টাকা তিনি কোথায় পেলেন। এই টাকা তার কোনও নিকটাত্মীয়ের কিনা তা নিয়েও আছে নানা জল্পনা-কল্পনা। তবে সাইফুজ্জামান বিষয়টি হলফনামায় দেখাননি। তাই তার সংসদ সদস্য পদ আইনি জটিলতায় আটকে যেতে পারে বলে আলোচনা রয়েছে।
গত ২৯ ডিসেম্বর ডেইলি স্টার পত্রিকার খবরে বলা হয়, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদের যুক্তরাজ্যে কমপক্ষে ২৬০টি সম্পত্তি রয়েছে যেগুলোর জন্য তিনি প্রায় ১৩৫ মিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ড বা ১৮৮৮ কোটি টাকা পরিশোধ করেছেন, যুক্তরাজ্যে সরকারের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্যের হিসাবে এটি বলছে পত্রিকাটি।
কার্টুনসহ ডেইলি স্টারের খবরে বলা হয়, আওয়ামী লীগের তিন বারের এই সংসদ নেতার যুক্তরাজ্যে সম্পদের বিপরীতে আরও কমপক্ষে ৫৩৭টি মর্টগেজ রেখেছেন, যেগুলোর বেশিরভাগই লন্ডনে। যদিও তিনি নির্বাচন কমিশনে যে সম্পদের হিসাব দিয়েছেন তাতে বিদেশে সম্পত্তির কথা উল্লেখ নেই। এখানে বলা আছে ব্যবসা থেকে তার বার্ষিক আয় মাত্র ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
গত ২৬ ডিসেম্বর প্রথম এই তথ্য প্রকাশ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি। তবে সংস্থাটি মন্ত্রীর নাম প্রকাশ করেনি। এরপর ২৯ ডিসেম্বর মানবজমিনের আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদেশে থাকা এই বিনিয়োগের তথ্য নির্বাচনী হলফনামায় না দেয়ার কারণে একজন প্রার্থী হিসেবে সাইফুজ্জামান শাস্তি পেতে পারেন। এমনকি নির্বাচিত হওয়ার পরও এমন তথ্যের ভিত্তিতে সংসদ সদস্য পদ বাতিল হতে পারে। যদিও নির্বাচন কমিশন বা দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রসঙ্গত, ভূমিসেবা ডিজিটাইজেশনে কাজ করছিলেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, যা ২০২৬ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। শিল্পপতি মরহুম আখতারুজ্জামান চৌধুরী দম্পতির জ্যেষ্ঠ পুত্র সাইফুজ্জামান বাবার আকস্মিক মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে চট্টগ্রামের আনোয়ারা আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে তিনি দশম এবং একাদশ জাতীয় সংসদে নির্বাচিত হন।
সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নেতৃত্বে ভূমি মন্ত্রণালয় ‘ই-মিউটেশন’ উদ্যোগের জন্য জাতিসংঘের মর্যাদাপূর্ণ 'ইউনাইটেড ন্যাশনস পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ডস ২০২০-এ ভূষিত হয়েছে। এছাড়া তাঁর নেতৃত্বে ভূমি মন্ত্রণালয় ‘ডিজিটাল ল্যান্ড ট্যাক্স’ উদ্যোগের জন্য ‘ওয়ার্ল্ড সামিট অন দ্য ইনফরমেশন সোসাইটি পুরস্কার-২০২২’ এবং ‘ল্যান্ড ডাটা ব্যাংক’ উদ্যোগের জন্য ‘বঙ্গবন্ধু পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড-২০২২’ অর্জন করে। ভূমি খাতে নেতৃত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড বুক অব রেকর্ডস’-এর পক্ষ থেকেও সাইফুজ্জামান চৌধুরীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
বাদ পড়া অন্যদের কথা
সুনামগঞ্জের সংসদ সদস্য এমএ মান্নান গত ১০ বছর মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। শুরুতে তিনি অর্থ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন পাঁচ বছর। এরপর তিনি পরিকল্পনা মন্ত্রী হিসেবে কাজ করেছেন। এবারের মন্ত্রিসভায় কেন জায়গা হয়নি, তা নিয়ে কোন ধারণা করতে পারছেন না এম এ মান্নান। ‘আই এম ভেরি হ্যাপি হোয়াট আই ডিড (আমি যা করেছি তাতে আমি খুশি)। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় জনগণের আড়ালে থাকা একটি বিষয় ছিল। আমি সেটাকে মানুষের সামনে আসতে পেরেছি,’ বিবিসি বাংলাকে বলেন মান্নান।
তিনি মনে করেন, মন্ত্রিসভায় পরিবর্তনের বিষয়টি এমন নয় যে কেউ ব্যর্থ হয়েছে। এখানে ভারসাম্যের একটি বিষয় জড়িত। ‘মানুষ মনে করে হয়তো পারে নাই, সেজন্য বাদ পড়েছে। কিন্তু ব্যাপারটা ও রকম না। আমার ধারণা ছিল আমি হয়তো থাকব না। পরপর দুইবার মন্ত্রিসভায় থাকার পরে সাধারণত তৃতীয়বার কাউকে মন্ত্রী করে না,’ বলেন এম এ মান্নান।
সর্বশেষ মন্ত্রিসভায় টেকনোক্র্যাট কোটায় ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন মোস্তফা জব্বার। বাদ পড়া প্রসঙ্গে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এখানে আমার মন্তব্য করার কিছু নাই। তিনি কাউকে যোগ্য মনে করতে পারেন, আবার কাউকে অযোগ্য মনে করতে পারেন।’
মন্ত্রী তালিকা থেকে যারা বাদ পড়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। তিনি বিবিসি বাংলাকে জানান, মন্ত্রিসভা গঠন করা প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। যে মন্ত্রিপরিষদ গঠিত হয়েছে সেখানো সবাই যোগ্য বলে মনে করেন তিনি।
বাদ পড়া বাকি মন্ত্রীরা নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ে বড় কোনো প্রভাব ফেলতে পারেননি। অনেকে ৫ বছর মন্ত্রিত্ব করলেও কারও অর্জনের ঝুলি তেমন সমৃদ্ধ নয়। বরং নিকটাত্মীয়কে কৌশলে প্রবাসী অ্যাপ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের বিরুদ্ধে।
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর সঙ্গে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যাপক দ্বন্দ্ব চলছে কয়েক বছর, যা সামাল দিতেই তিনি হিমশিম খাচ্ছেন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে এলাকায় নানা অভিযোগ রয়েছে দলের নেতা-কর্মীদের। তার আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধেও এলাকায় নানা অভিযোগ উঠেছে।
সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমদের আপন ছোট ভাই মাহবুবুজ্জামান আহমেদ প্রকাশ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য ভোট চেয়েছেন ভোটারদের কাছে। লালমনিরহাটে সভা-সমাবেশে ভাইয়ের দুর্নীতর খবর তুলে ধরেন মাহবুবুজ্জামান, এমনকি ভাইকে ঠেকাতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। নুরুজ্জামান বীর মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও সনদ সংগ্রহ করেন বলে প্রকাশ্যে অভিযোগ তোলেন তার ভাই।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়কমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের ছেলে, ভাগিনা আর খালাতো ভাইদের বিরুদ্ধে স্থানীয় পর্যায়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, তাদের ইশারায় চলত প্রশাসন কিংবা পুলিশ। মৌলভীবাজারের বড়লেখা ও জুড়ীর মানুষ। স্বজনদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ ছিলেন। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের ওপর হামলাসহ এসব অভিযোগ মন্ত্রী বিভিন্নসময় অস্বীকার করেছেন। নিজের এলাকায়ও উন্নয়ন তেমন হয়নি। এসব কারণে তিনি মন্ত্রিসভা থেকে ছিটকে পড়ে থাকতেন বলে অনুমান করা হচ্ছে।
মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়া বা বাদ পড়ার সুনির্দিষ্ট কোনো শর্ত নেই। যারা বাদ পড়েন তারা আবার ফিরে আসতে পারেন। আবার যারা ফিরে আসেন তারা বাদও পড়তে পারেন।
বিরোধী দল ছাড়া একটি জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে যে মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, তা নিয়ে খুব একটা সমালোচনা নেই। অর্থনৈতিকসংকট মোকাবিলা, জিনিসপত্রের দাম কমানো ও দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরে মোটামুটি সুশাসন দিতে পারলেই বাংলার মানুষ খুশি হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার কাজটি তখনই সহজ হবে।
প্যানেল আলোচনায় যুদ্ধের ভয়াবহতা ও ক্ষয়ক্ষতি তুলে ধরার পাশাপাশি সবার সম্মিলিত সহায়তায় কীভাবে রাশিয়াকে যুদ্ধে পর্যুদস্ত করা যায় সেসব বিষয় উঠে আসে। ন্যাটোর তত্ত্বাবধানে সমরাস্ত্র ও তহবিল সংগ্রহ, এমনকি সম্মিলিত সৈন্যবাহিনী পাঠানোর সম্ভাব্যতা নিয়েও আলোচনা চলছিল বলে রাষ্ট্রদূতদের অবহিত করা হয়।
৫ দিন আগে২০০৮ থেকে ২০২৪। বাংলাদেশে শুরু হলো এক রক্তঝরানোর অধ্যায়। হত্যা, খুন, গুম, আয়নাঘর— বিরোধী দলের নেতাদের ওপর অমানুষিক, নির্মম, নিষ্ঠুর অত্যাচার। মানবতা বিসর্জন দিয়ে রক্তের হোলি খেলায় মেতেছিল ফ্যাসিস্ট সরকার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে গুলির নির্দেশ দিয়ে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে গিয়ে নিজের দেশের
৫ দিন আগেতবে হঠাৎ করেই ঘুরে গেছে হাওয়া। বদলে গেছে সবার সুর। সবার মুখে মুখে এখন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন। কেউ বলছেন, ফেব্রুয়ারিতে ভোট হতেই হবে। তবে সংস্কার নিয়ে ৮৪টি বিষয়ে ঐকমত্য হলেও জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে এখনো ঐকমত্যে আসতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। এ নিয়ে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি তিন দলের অবস্থান ভিন্
৬ দিন আগেএই সেপ্টেম্বরেই ১৫৮ বছরে পা দিলো সেই বই, যার নাম থেকে এই হেডলাইনের খেলা— কার্ল মার্ক্সের যুগান্তকারী গ্রন্থ ‘ডাস ক্যাপিটাল’।
১৯ দিন আগে