আফরোজা পারভীন
অনেকদিন ধরেই স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। জুলাইয়ের আগেও যেমন এখনো তেমনি কোন কিছু বলা বা লেখার আগে দশবার ভাবতে হয়, কোনো বিপদে পড়ব না তো! ন্যায্য কথা লিখতে গেলেও বুক কাঁপে। এর কারণ বিবিধ। এক শ্রেণির ফেসবুকার আছে কোনো কিছু পেলেই সাথে সাথে কোনো একটা দলে ভরে দেয় তারা । তারপর অকথা কুকথা বলতে থাকে। এক শ্রেণির লোক আছে যারা সারাক্ষণ খুঁজতে থাকে কিছু পাওয়া যায় কিনা, কিভাবে ধরা যায়।
একজন লেখক যে স্বাধীন, তার মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে এই চিন্তাটাই কেউ করতে চান না। আর সব লেখক রাজনীতি করেন না। যেমন আমি করিনা, কোনদিন করিনি। তা বলে দেশের ভালো-মন্দ সম্পর্কে সজাগ নই এমনটা নয়। ভাল কিছু হলেও লিখি, খারাপ হলেও লিখি। এটা লেখকের দায়বোধ বলে মনে করি। জুলাইয়ের আগে যাদের অনেকের টিকির সন্ধানও পাওয়া যায়নি, এখন তারা মস্ত মস্ত নেতা। তারা নিজেরাই একসময় বিগত সরকারের স্তুতি গেয়েছে। খুঁজলে তার প্রমাণ আশা করি এখনো মিলবে।
ডিজিটাল এই যুগে সব কিছু গায়েব করে দেয়া সম্ভব না। অনেকে তাদের পূর্ব কীর্তি, সরকারের গুণগান করে লেখা তুলেও ধরেছেন। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’ বাস করছি আমরা ( যদিও পুরোপুরি ডিজিটাল হয়েছে কিনা এ বিষয়ে কথা আছে) । এ কারণে অতীতে কে কি বলেছে আর এখন কী বলছে কোনটাই গোপন থাকছে না।
অমর একুশে বইমেলার শুরু থেকেই অদ্ভুত অদ্ভুত সব কাণ্ড ঘটেছে। ডাস্টবিন কাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন উচ্চ পর্যায়ের লোকেরা। তসলিমা নাসরিনের বই বিক্রি করায় মেলায় একজন প্রকাশকের স্টলে হামলা হলো। তার স্টল বন্ধ করে দেয়া হলো। গ্রেফতার করা হলো তাকে। আরো একটা স্টল বন্ধ হলো সেনিটারি ন্যাপকিন দেবার জন্য। কেউ বলছেন তারা ফ্রিতে সৌজন্য দিচ্ছিলেন, কেউ বলছেন বিক্রি করেছেন। আসল ঘটনা বাংলা একাডেমিই বলতে পারবে। মোট কথা হযবরল অবস্থা।
বাংলা একাডেমি পুরস্কার নিয়েও ঘটল অনেক ঘটনা। এবারের পুরস্কার মোটামুটি নিরপেক্ষ ছিল। দু-একজন বাদে সবাই যোগ্য ছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ওপর বই লিখেছেন বলে দুজনের বাংলা একাডেমি পুরস্কার বাতিল হলো ফেসবুক প্রতিক্রিয়ার জের ধরে। আর কোন অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে ছিল না। কেউ বলেনি তারা খারাপ লেখেন। সাহিত্য বিচারের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা কখনো শুনিনি। আগে দুবার স্বাধীনতা পুরস্কার বাতিল হয়েছিল। একজনের লেখা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছিল। আর একজন ফৌজদারি অভিযোগে অভিযুক্ত ছিলেন। যারা তাদের পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছিলেন, তাদের আগেই বুঝে শুনে বিচার বিবেচনা করে পুরস্কার দেয়া উচিত ছিল। এমন পুরস্কার দেয়া কেন যা বাতিল করতে হবে! যেকোনো পুরস্কার ঘোষণা হলেই প্রতিবাদ হয়, পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা হয়। নোবেল প্রাইজও এর বাইরে নয়। প্রতিবাদ হলেই সেটা আমলে নিয়ে পুরস্কার বাতিল করতে হবে কেন? সুযোগ কম বেশি সবাই নিয়েছে। কেউ সুযোগ নিয়ে বিপদে পড়েছে আবার কেউ সুবিধা পেয়েছে।
একুশে পদক ঘোষিত হয়েছে সম্প্রতি। পদক দেয়া হয়ে গেছে। এবারের একুশে পদক নিয়ে সবাই খুব উচ্ছ্বসিত। অত্যন্ত যোগ্য ব্যক্তিরাই পেয়েছেন বলে জনমত। একুশে পদক প্রদানের অন্যতম পূর্বশর্ত হওয়া উচিত, কারা একুশের চেতনা বুকে ধারণ করে সেটা দেখা। একজন খুব ভাল কাজ করেছে কিন্তু সে একুশেকে বুকে ধারণ করে না, বাংলাকে বুকে ধারণ করে না, এমন মানুষকে একুশে পদক না দেয়াই উচিত। একুশেতে প্রাধান্য দেয়া উচিত ভাষাসংগ্রামীদের। তাঁরা একে একে প্রয়াত হচ্ছেন। অনেকে স্বীকৃতি না পাবার দুঃখ বুক নিয়ে মারা গেছেন। যারা বেঁচে আছেন অবিলম্বে তাদের সম্মানিত করা প্রয়োজন। প্রয়োজন ব্যাপক গবেষণা। অনেক ভাষাসৈনিকের খবর এখনো আমরা জানি না। বিশেষ করে নারীভাষাসৈনিকদের। তাদের খুঁজে বের করা দরকার।
আমরা লক্ষ্য করেছি, ভাষা আন্দোলন ক্যাটাগরিতে দু-একজনকে পুরস্কার দেয়া হয়, অন্য ক্যাটাগরিতে দেয়া হয় অনেক বেশি। গত বছর তো সংস্কৃতি ক্ষেত্রে চার পাঁচজনকে দেয়া হয়েছিল (সব ক্যাটাগরি মিলিয়ে)। ভাষাসংগ্রামীদের যত বেশি সম্ভব দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করি। একজন কবিকে গ্রেফতার করা হয়েছে মহানবী (স:) কে কটুক্তি করে কবিতা লেখার অভিযোগে। এ নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় অনেক লেখালেখি হয়েছে। পক্ষেই বেশি, তবে বিপক্ষেও কিছু আছে। বিশিষ্টজনেরা তার মুক্তির দাবিতে বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি এখনও কারাগারে আছে।
মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা আয়নাঘর পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। আমরা কয়েকটি আয়নাঘর প্রত্যক্ষ করেছি। এ বিষয়টি নিয়েও সোসাল মিডিয়ায় ব্যাপক লেখালিখি হয়েছে। বিশেষ করে আয়নাঘরের তোয়ালে সবচেয়ে বেশি প্রাধ্যান্য পেয়েছে আলোচনায় ।
ফেব্রুয়ারি মাসের সবচেয়ে বড় চমক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের পদত্যাগ। অনেকদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল তিনি পদত্যাগ করবেন। পদত্যাগ করবেন নবগঠিত একটা দলের প্রধান হবার জন্য। সেটাই তিনি করেছেন। প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। এটা ঠিক এমনটা সচরাচর দেখা যায় না। কিন্তু তিনি তো দলপ্রধান হয়েই যাচ্ছেন। নিশ্চয়ই ভবিষ্যতে নির্বাচন করবেন। বুঝে শুনেই এগোচ্ছেন তিনি।
এদিকে ট্রাম্প ২৯ মিলিয়ন ডলারের একটা অঙ্ক প্রচার করে তপ্ত কড়াইয়ে ঘি ঢেলে দিয়েছেন। এখন সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে এ বিষয়টি নিয়ে। বাংলাদেশের কোন এক ভুঁইফোড় সংগঠনকে নাকি এই টাকা দেয়া হয়েছে যাদের মাত্র দুজন কর্মী আছে। যাদের কেউ চেনে না। বাংলাদেশের রাজনীতিকে চাঙ্গা করার জন্যই নাকি এই অর্থ খরচ। কি রাজনীতি, কিসের রাজনীতি বুঝতে পারছিনা। যে দেশের বিলিয়ন বিলয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়ে যায়, যে দেশে পাতিমন্ত্রীরা কুমিরের চামড়ার জুতো পরে, সেটা আবার সোচ্চারে আল জাজিরায় সাক্ষাৎকারে বলে, যে দেশের মানুষের ঘরেই কোটি কোটি টাকা পাওয়া যায় সেদেশে ২৯ মিলিয়ন ডলার নস্যি। তারপরও পৃথিবীর ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কথা তো উড়িয়ে দেয়া যায় না। আসল সত্য জানা প্রয়োজন।
এমন অজব ঘটনা ঘটেছে ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে। সীমান্তে উত্তেজনা, বেহাল আইনশৃঙখলা পরিস্থিতি, মোহাম্মদপুরে চাপাতি, রামদা নিয়ে প্রকাশ্যে ঘোরাঘুরি, বাসে ডাকাতি, ধর্ষণ আরো অনেক কিছু। অসহায় মধ্যবিত্ত দ্রব্যমূল্যে নাজেহাল। তারমধ্যে আসছে রোজা। শুনলাম রোজার পর নাকি মূল্যস্ফীতি কমবে। রোজার পর মূল্যস্ফীতি কমলে কী লাভ গরিব মানুষের, অসহায় মধ্যবিত্তের!
একটা কথা ভুললে চলবে না, আমাদের এই দেশটি অবস্থানগত কারণেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এদেশের ওপর নজর আছে আমাদের আশপাশের প্রতিবেশি দেশগুলোর। বিশ্বের পরাশক্তিগুলোও এ দেশের ওপর নজর রাখে। আমাদের এমন কিছু করা উচিত না, যাতে করে বহিঃবিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। অর্থনৈতিকভাবে বিভিন্ন দেশের উপর আমরা এখনো নির্ভরশীল। আমাদের শ্রমিকরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কাজ করছে, আমাদের সেনাবাহিনী রয়েছে জাতিসংঘ মিশনসহ বিভিন্ন দেশে, আমাদের ডাক্তাররা কাজ করছে বিশ্বজুড়ে।
আমাদের পোশাক শিল্পের একটা বড় বাজার রয়েছে বর্হিবিশ্বে। কাজেই কোন কাজ করার আগে এই বিষয়গুলো ভাবা দরকার। অভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলে সব উড়িয়ে দেয়া যায় না। সবই যদি অভ্যন্তরীণ হতো তাহলে তো আমাদের ঋণের জন্য অন্যের কাছে হাত পাততে হত না। আমাদের দেশের মানুষকে কাজ করার জন্য অন্য দেশ যেতে হতো না। পর্যাপ্ত কাজের সুযোগ, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই বলেই অন্য দেশে কাজের সন্ধানে যেতে হয় আমাদের শ্রমিকদের।
সবশেষ কথা, জোয়ারে না ভেসে ভেবে চিন্তে কাজ করা দরকার। সময় চিরস্থায়ী নয়। কেউ বলল আর একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম এটা হটকারিতা। দেশের ছাত্র সমাজের কাছে আমাদের অনেক প্রত্যাশা। অতীতে ছাত্ররা এদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে, ভবিষ্যতেও করবে এ আশা রাখি। রাজনীতি করার জন্য রাজনীতবিদরা আছেন, ভাঙচুর করার জন্য ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী আছে।
লেখক: কথাশিল্পী, গবেষক
অনেকদিন ধরেই স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। জুলাইয়ের আগেও যেমন এখনো তেমনি কোন কিছু বলা বা লেখার আগে দশবার ভাবতে হয়, কোনো বিপদে পড়ব না তো! ন্যায্য কথা লিখতে গেলেও বুক কাঁপে। এর কারণ বিবিধ। এক শ্রেণির ফেসবুকার আছে কোনো কিছু পেলেই সাথে সাথে কোনো একটা দলে ভরে দেয় তারা । তারপর অকথা কুকথা বলতে থাকে। এক শ্রেণির লোক আছে যারা সারাক্ষণ খুঁজতে থাকে কিছু পাওয়া যায় কিনা, কিভাবে ধরা যায়।
একজন লেখক যে স্বাধীন, তার মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে এই চিন্তাটাই কেউ করতে চান না। আর সব লেখক রাজনীতি করেন না। যেমন আমি করিনা, কোনদিন করিনি। তা বলে দেশের ভালো-মন্দ সম্পর্কে সজাগ নই এমনটা নয়। ভাল কিছু হলেও লিখি, খারাপ হলেও লিখি। এটা লেখকের দায়বোধ বলে মনে করি। জুলাইয়ের আগে যাদের অনেকের টিকির সন্ধানও পাওয়া যায়নি, এখন তারা মস্ত মস্ত নেতা। তারা নিজেরাই একসময় বিগত সরকারের স্তুতি গেয়েছে। খুঁজলে তার প্রমাণ আশা করি এখনো মিলবে।
ডিজিটাল এই যুগে সব কিছু গায়েব করে দেয়া সম্ভব না। অনেকে তাদের পূর্ব কীর্তি, সরকারের গুণগান করে লেখা তুলেও ধরেছেন। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’ বাস করছি আমরা ( যদিও পুরোপুরি ডিজিটাল হয়েছে কিনা এ বিষয়ে কথা আছে) । এ কারণে অতীতে কে কি বলেছে আর এখন কী বলছে কোনটাই গোপন থাকছে না।
অমর একুশে বইমেলার শুরু থেকেই অদ্ভুত অদ্ভুত সব কাণ্ড ঘটেছে। ডাস্টবিন কাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন উচ্চ পর্যায়ের লোকেরা। তসলিমা নাসরিনের বই বিক্রি করায় মেলায় একজন প্রকাশকের স্টলে হামলা হলো। তার স্টল বন্ধ করে দেয়া হলো। গ্রেফতার করা হলো তাকে। আরো একটা স্টল বন্ধ হলো সেনিটারি ন্যাপকিন দেবার জন্য। কেউ বলছেন তারা ফ্রিতে সৌজন্য দিচ্ছিলেন, কেউ বলছেন বিক্রি করেছেন। আসল ঘটনা বাংলা একাডেমিই বলতে পারবে। মোট কথা হযবরল অবস্থা।
বাংলা একাডেমি পুরস্কার নিয়েও ঘটল অনেক ঘটনা। এবারের পুরস্কার মোটামুটি নিরপেক্ষ ছিল। দু-একজন বাদে সবাই যোগ্য ছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ওপর বই লিখেছেন বলে দুজনের বাংলা একাডেমি পুরস্কার বাতিল হলো ফেসবুক প্রতিক্রিয়ার জের ধরে। আর কোন অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে ছিল না। কেউ বলেনি তারা খারাপ লেখেন। সাহিত্য বিচারের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা কখনো শুনিনি। আগে দুবার স্বাধীনতা পুরস্কার বাতিল হয়েছিল। একজনের লেখা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছিল। আর একজন ফৌজদারি অভিযোগে অভিযুক্ত ছিলেন। যারা তাদের পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছিলেন, তাদের আগেই বুঝে শুনে বিচার বিবেচনা করে পুরস্কার দেয়া উচিত ছিল। এমন পুরস্কার দেয়া কেন যা বাতিল করতে হবে! যেকোনো পুরস্কার ঘোষণা হলেই প্রতিবাদ হয়, পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা হয়। নোবেল প্রাইজও এর বাইরে নয়। প্রতিবাদ হলেই সেটা আমলে নিয়ে পুরস্কার বাতিল করতে হবে কেন? সুযোগ কম বেশি সবাই নিয়েছে। কেউ সুযোগ নিয়ে বিপদে পড়েছে আবার কেউ সুবিধা পেয়েছে।
একুশে পদক ঘোষিত হয়েছে সম্প্রতি। পদক দেয়া হয়ে গেছে। এবারের একুশে পদক নিয়ে সবাই খুব উচ্ছ্বসিত। অত্যন্ত যোগ্য ব্যক্তিরাই পেয়েছেন বলে জনমত। একুশে পদক প্রদানের অন্যতম পূর্বশর্ত হওয়া উচিত, কারা একুশের চেতনা বুকে ধারণ করে সেটা দেখা। একজন খুব ভাল কাজ করেছে কিন্তু সে একুশেকে বুকে ধারণ করে না, বাংলাকে বুকে ধারণ করে না, এমন মানুষকে একুশে পদক না দেয়াই উচিত। একুশেতে প্রাধান্য দেয়া উচিত ভাষাসংগ্রামীদের। তাঁরা একে একে প্রয়াত হচ্ছেন। অনেকে স্বীকৃতি না পাবার দুঃখ বুক নিয়ে মারা গেছেন। যারা বেঁচে আছেন অবিলম্বে তাদের সম্মানিত করা প্রয়োজন। প্রয়োজন ব্যাপক গবেষণা। অনেক ভাষাসৈনিকের খবর এখনো আমরা জানি না। বিশেষ করে নারীভাষাসৈনিকদের। তাদের খুঁজে বের করা দরকার।
আমরা লক্ষ্য করেছি, ভাষা আন্দোলন ক্যাটাগরিতে দু-একজনকে পুরস্কার দেয়া হয়, অন্য ক্যাটাগরিতে দেয়া হয় অনেক বেশি। গত বছর তো সংস্কৃতি ক্ষেত্রে চার পাঁচজনকে দেয়া হয়েছিল (সব ক্যাটাগরি মিলিয়ে)। ভাষাসংগ্রামীদের যত বেশি সম্ভব দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করি। একজন কবিকে গ্রেফতার করা হয়েছে মহানবী (স:) কে কটুক্তি করে কবিতা লেখার অভিযোগে। এ নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় অনেক লেখালেখি হয়েছে। পক্ষেই বেশি, তবে বিপক্ষেও কিছু আছে। বিশিষ্টজনেরা তার মুক্তির দাবিতে বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি এখনও কারাগারে আছে।
মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা আয়নাঘর পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। আমরা কয়েকটি আয়নাঘর প্রত্যক্ষ করেছি। এ বিষয়টি নিয়েও সোসাল মিডিয়ায় ব্যাপক লেখালিখি হয়েছে। বিশেষ করে আয়নাঘরের তোয়ালে সবচেয়ে বেশি প্রাধ্যান্য পেয়েছে আলোচনায় ।
ফেব্রুয়ারি মাসের সবচেয়ে বড় চমক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের পদত্যাগ। অনেকদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল তিনি পদত্যাগ করবেন। পদত্যাগ করবেন নবগঠিত একটা দলের প্রধান হবার জন্য। সেটাই তিনি করেছেন। প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। এটা ঠিক এমনটা সচরাচর দেখা যায় না। কিন্তু তিনি তো দলপ্রধান হয়েই যাচ্ছেন। নিশ্চয়ই ভবিষ্যতে নির্বাচন করবেন। বুঝে শুনেই এগোচ্ছেন তিনি।
এদিকে ট্রাম্প ২৯ মিলিয়ন ডলারের একটা অঙ্ক প্রচার করে তপ্ত কড়াইয়ে ঘি ঢেলে দিয়েছেন। এখন সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে এ বিষয়টি নিয়ে। বাংলাদেশের কোন এক ভুঁইফোড় সংগঠনকে নাকি এই টাকা দেয়া হয়েছে যাদের মাত্র দুজন কর্মী আছে। যাদের কেউ চেনে না। বাংলাদেশের রাজনীতিকে চাঙ্গা করার জন্যই নাকি এই অর্থ খরচ। কি রাজনীতি, কিসের রাজনীতি বুঝতে পারছিনা। যে দেশের বিলিয়ন বিলয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়ে যায়, যে দেশে পাতিমন্ত্রীরা কুমিরের চামড়ার জুতো পরে, সেটা আবার সোচ্চারে আল জাজিরায় সাক্ষাৎকারে বলে, যে দেশের মানুষের ঘরেই কোটি কোটি টাকা পাওয়া যায় সেদেশে ২৯ মিলিয়ন ডলার নস্যি। তারপরও পৃথিবীর ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কথা তো উড়িয়ে দেয়া যায় না। আসল সত্য জানা প্রয়োজন।
এমন অজব ঘটনা ঘটেছে ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে। সীমান্তে উত্তেজনা, বেহাল আইনশৃঙখলা পরিস্থিতি, মোহাম্মদপুরে চাপাতি, রামদা নিয়ে প্রকাশ্যে ঘোরাঘুরি, বাসে ডাকাতি, ধর্ষণ আরো অনেক কিছু। অসহায় মধ্যবিত্ত দ্রব্যমূল্যে নাজেহাল। তারমধ্যে আসছে রোজা। শুনলাম রোজার পর নাকি মূল্যস্ফীতি কমবে। রোজার পর মূল্যস্ফীতি কমলে কী লাভ গরিব মানুষের, অসহায় মধ্যবিত্তের!
একটা কথা ভুললে চলবে না, আমাদের এই দেশটি অবস্থানগত কারণেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এদেশের ওপর নজর আছে আমাদের আশপাশের প্রতিবেশি দেশগুলোর। বিশ্বের পরাশক্তিগুলোও এ দেশের ওপর নজর রাখে। আমাদের এমন কিছু করা উচিত না, যাতে করে বহিঃবিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। অর্থনৈতিকভাবে বিভিন্ন দেশের উপর আমরা এখনো নির্ভরশীল। আমাদের শ্রমিকরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কাজ করছে, আমাদের সেনাবাহিনী রয়েছে জাতিসংঘ মিশনসহ বিভিন্ন দেশে, আমাদের ডাক্তাররা কাজ করছে বিশ্বজুড়ে।
আমাদের পোশাক শিল্পের একটা বড় বাজার রয়েছে বর্হিবিশ্বে। কাজেই কোন কাজ করার আগে এই বিষয়গুলো ভাবা দরকার। অভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলে সব উড়িয়ে দেয়া যায় না। সবই যদি অভ্যন্তরীণ হতো তাহলে তো আমাদের ঋণের জন্য অন্যের কাছে হাত পাততে হত না। আমাদের দেশের মানুষকে কাজ করার জন্য অন্য দেশ যেতে হতো না। পর্যাপ্ত কাজের সুযোগ, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই বলেই অন্য দেশে কাজের সন্ধানে যেতে হয় আমাদের শ্রমিকদের।
সবশেষ কথা, জোয়ারে না ভেসে ভেবে চিন্তে কাজ করা দরকার। সময় চিরস্থায়ী নয়। কেউ বলল আর একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম এটা হটকারিতা। দেশের ছাত্র সমাজের কাছে আমাদের অনেক প্রত্যাশা। অতীতে ছাত্ররা এদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে, ভবিষ্যতেও করবে এ আশা রাখি। রাজনীতি করার জন্য রাজনীতবিদরা আছেন, ভাঙচুর করার জন্য ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী আছে।
লেখক: কথাশিল্পী, গবেষক
স্লোগান বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক অবিছ্ছেদ্য অংশ। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে স্লোগানের ব্যবহার ছিল। “ব্রিটিশ হটাও, দেশ বাঁচাও”; “বিদেশি পণ্য বর্জন করো, দেশি পণ্য ব্যবহার করো”; “তুমি আমি স্বদেশি, স্বদেশি স্বদেশি” “আমরা লড়ব, আমরা জিতব” ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে এরূপ অনেক স্লোগানই রাজনৈতিক সচেতন
৪ দিন আগে২২ জুলাই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এ নিয়ে একটি প্রস্তাবনা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে । তাতে প্রধান শিক্ষকরা আগে কত টাকা বেতন ও ভাতা পেতেন, আর দশম গ্রেড বাস্তবায়ন হলে কত পাবেন—তা নিয়ে পরিপূর্ণ হিসাব রয়েছে ।
৪ দিন আগেভিওজিএসএস হলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর উদ্বেগ, স্বার্থ ও অগ্রাধিকারসমূহের বিষয়ে আলোচনা করা, ধারণা ও সমাধান বিনিময় করা, এবং উন্নয়ন সমাধান বিনির্মাণে কণ্ঠ ও উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য একটি অভিন্ন মঞ্চ প্রদানের লক্ষ্যে ভারতের প্রচেষ্টা।
৫ দিন আগেবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকেই খাজা সলিমুল্লাহ, মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ, আল্লামা ইকবাল, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দ্দী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ অনুধাবন করেন যে, ভারতবর্ষ স্বাধীন হলে মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমির প্রয়োজন হবে। অন্যথায় ভারতবর্ষের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির মধ্যে গৃহযুদ্ধ লেগেই থাকবে। রা
৯ দিন আগে