টেলিগ্রাফের হেডিং— ডাস ক্যাপিটাল

দ্য টেলিগ্রাফের প্রধান সংবাদের শিরোনামে ভারত-চীন বাণিজ্য সম্পর্কের সঙ্গে কার্র মার্ক্সের ডাস ক্যাপিটাল।

সোমবার ভারতের ইংরেজি দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফের লিড নিউজ— Dash Kapital: PM Modi, Xi Jinping signal unity to ‘stabilise’ trade hit by US tariffs (ডাস ক্যাপিটাল: মার্কিন শুল্ক আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত বাণিজ্য ‘স্থিতিশীল’ করতে মোদি-শির ঐক্যের বার্তা)।

মার্কিন শুল্কনীতির ধাক্কায় যখন বিশ্ব বাণিজ্য কেঁপে উঠছে, তখন ভারত-চীনের ঐক্যের এই বার্তা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বড় খবর।

মজার ব্যাপার হলো, এই সেপ্টেম্বরেই ১৫৮ বছরে পা দিলো সেই বই, যার নাম থেকে এই হেডলাইনের খেলা— কার্ল মার্ক্সের যুগান্তকারী গ্রন্থ ‘ডাস ক্যাপিটাল’।

মার্ক্স বইটি লিখতে শুরু করেছিলেন ১৮৫৭ সালে, শেষ করতে লেগেছিল ১০ বছর। তখন তিনি ঋণে জর্জরিত ছিলেন। প্রকাশকের কাছে পাণ্ডুলিপি পাঠানোর ডাক খরচ পর্যন্ত ছিল না তার হাতে।

এঙ্গেলসকে লেখা চিঠিতে বারবার টাকা চেয়ে মার্ক্স লিখেছিলেন, ‘পাওনাদাররা কড়া নাড়ছে, টাকা না পাঠালে জেলে যেতে হবে।’ তবু শেষ পর্যন্ত সেই বই-ই তাকে করেছে ইতিহাসের অন্যতম প্রভাবশালী দার্শনিক।

রোববার তিয়ানজিনে এসসিও সম্মেলনের ফাঁকে মোদি ও শি বৈঠকে বসেন। দুই রাজধানীর বিবৃতিতে একই সুর— বিশ্ব বাণিজ্যের অস্থিরতা সামলাতে ভারত-চীনের সহযোগিতা জরুরি।

Narendra-Modi-With-Trump-And-Xi-Jinping-01-09-2025

(বাঁয়ে) ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদি, এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে; (ডানে) শি জিনপিং ও নরেন্দ্র মোদি, সদ্য বিদায়ী আগস্টে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতির আঘাতই ছিল আলোচনার মূল প্রেক্ষাপট। দুই নেতা পারস্পরিক সুসম্পর্কের মাধ্যমে ট্রাম্পকে যে চোখ রাঙাচ্ছেন, তা এই বৈঠকে স্পষ্ট। চীন ও ভারত একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বরং অংশীদার। দুই প্রতিদ্বন্দ্বী কমিউনিস্ট শাসনের চীন ও গণতান্ত্রিক ভারত বন্ধুত্বের পথে এগোতে চায়।

কিন্তু মার্ক্সের ডাস ক্যাপিটাল আমাদের মনে করিয়ে দেয় ভিন্ন প্রশ্ন। তিনি বলেছিলেন, পুঁজিবাদের ভেতরেই লুকিয়ে আছে এর পতনের বীজ। উদ্বৃত্ত শ্রমের তত্ত্বে তিনি দেখান— শ্রমিকেরা পরিশ্রম করে যে মুনাফা সৃষ্টি করেন, তার সিংহভাগ চলে যায় মালিকের হাতে। এই ফাঁক থেকেই জন্ম নেয় ধনিক শ্রেণি ও শ্রমিক শ্রেণির বৈষম্য।

Das-kapital-And-Karl-Marx-01-09-2025

কার্ল মার্ক্স ও তার ঐতিহাসিক বই ডাস ক্যাপিটালের প্রচ্ছদ।

ডাস ক্যাপিটালে পুঁজিবাদের সেইসব অন্তর্নিহিত দ্বন্দ্বের কথা বলা হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত এর পতন ডেকে আনে। মার্ক্স দেখিয়েছেন কীভাবে পুঁজিবাদের উৎপত্তি হয়, কীভাবে এটি বিকাশ লাভ করে এবং কীভাবে এটি শ্রমিক শ্রেণির ওপর শোষণ চালায়।

ট্রাম্পের বিতর্কিত শুল্ক আরোপ দেশে দেশে শ্রম শোষণের হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে। অস্বাভাবিক শুল্ক আরোপ বিশ্ব বাণিজ্যে ভারসাম্যহীনতা, পুঁজিবাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব— সবকিছু মিলিয়ে টেলিগ্রাফের এই বার্তা রূপক হলেও তা এখনকার বাস্তবতার সঙ্গে অনেকটাই মিলে যায়।

ad
ad

মতামত থেকে আরও পড়ুন

অপারেশন মাউন্টেন ঈগল: মুক্তিযুদ্ধে তিব্বতী গেরিলা

কর্ণফুলীর স্রোতধারার সঙ্গে যুক্ত হয় বঙ্গোপসাগরের আছড়ে পড়া উত্তাল ঢেউ। সেই আনন্দের মাঝেই হঠাৎ যোগ দেয় একদল সশস্ত্র তিব্বতীয় গেরিলা। বঙ্গোপসাগরের ঢেউ আর কর্ণফুলীর স্রোত যেন স্তব্ধ হয়ে যায়। আনন্দে উদ্বেলিত জনতা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তিব্বতীয়দের দিকে।

১২ দিন আগে

সব সংকট-শঙ্কার মধ‍্যেও বিজয়ের আশা ছাড়িনি

তখন আমাদের চিহ্নিত শত্রু ছিল হানাদার বাহিনী। তাদের সঙ্গে আরও চিহ্নিত হয়েছিল তাদের এ দেশীয় ‘কোলাবোরেটর’ বা সহযোগীরা, যারা ছিল মূলত রাজাকার, আলবদর বা আল শামস বাহিনীর। এরাও চিহ্নিত ছিল। এদের বিরুদ্ধে দেশের মানুষ একাট্টা হয়ে সংগ্রাম করেছে। সেই সংগ্রাম রক্তক্ষয়ী ছিল, বহু মানুষ অকাতরে শহিদ হয়েছে।

১২ দিন আগে

সহিংসতার রাজনীতি আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?

রাজনৈতিক সহিংসতার চক্র যত বড় হয়, ততই সংকুচিত হয় নাগরিকদের নিরাপত্তা, গণতান্ত্রিক অধিকার, ভিন্নমতের পরিসর এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা। সামাজিক আস্থাও ক্ষয়ে যায়। আজ একজন হাদি আক্রান্ত,আগামীকাল কে বা কারা টার্গেট হবেন তা কেউ জানে না। সহিংসতা যখন ধীরে ধীরে রাজনৈতিক কৌশলে পরিণত হয়, ‘ব্যবহারযোগ্য হাতিয়ার’ হ

১৩ দিন আগে

অস্তিত্ব সংকটে শিক্ষা ক্যাডার ও উচ্চশিক্ষা

আজ যদি ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির দাবি মেনে এই মডেলে বিশ্ববিদ্যালয় গঠন করা হয়, তবে খুব দ্রুতই জেলা পর্যায়েও একই দাবি উঠবে। টাঙ্গাইল সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি, ময়মনসিংহ সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি কিংবা রাজশাহী কলেজ, বিএম কলেজ, সিলেটের এমসি কলেজের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়েও বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবি আসবে।

২০ দিন আগে