কারাগারে মেনন, একুশে ফেব্রুয়ারির স্মৃতি নিয়ে মেয়ের আবেগঘন চিঠি

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
রাশেদ খান মেনন। ফাইল ছবি

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে কারাবন্দি হয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তার মেয়ে ড. সুবর্না খান আছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে। একুশে ফেব্রুয়ারির প্রভাতফেরী আর একুশে ফেব্রুয়ারির বইমেলা নিয়ে বাবার সঙ্গে তার অমলিন যেসব স্মৃতি, তা স্মরণ করে এক খোলা চিঠি লিখেছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময়ে একুশে ফেব্রুয়ারিতে লেখা সেই চিঠিতে সুবর্ণা তুলে ধরেছেন বাবার হাত ধরে একুশের প্রথম প্রহরে প্রভাতফেরীতে যোগ দেওয়ার স্মৃতি। লিখেছেন একুশে ফেব্রুয়ারির দিনে বাবার সঙ্গে বইমেলায় যাওয়ার কথা৷ সুবর্ণা যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেলে বাবা দেশ থেকে বইমেলার সময় বই কিনে কুরিয়ার করে পাঠিয়ে দিতেন, সে স্মৃতিও তুলে ধরেছেন তিনি।

'একুশ, আমার বাবা, ও একটি খোলা চিঠি' শিরোনামের চিঠিটি হুবহু তুলে দেওয়া হলো পাঠকদের জন্য

'বাবা,

কেমন আছো তুমি? আজ একুশে ফেব্রুয়ারী ২০২৫, মহান ভাষা দিবস I নিউ জার্সির এই শীতের সকালে ঘুম ভেঙে তোমার মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো বাবা I তোমার কারাবাসের ছয় মাস হলো, মনে হয় যেন অনন্তকাল I আজকের দিনটা তোমার কেমন যাচ্ছে বাবা? তুমি কি ভাবছো?

প্রায় ৩২ বৎসর পরে গত বছর একুশের প্রথম প্রহরে তোমার সাথে শহীদ মিনারে গিয়েছিলাম, ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করেছিলাম I তোমার শরীরটা ভালো ছিল না। তবু তুমি শুধু আমি যেতে চাই তাই আমাকে নিয়ে গেলে I তোমাকে খুব খুব মনে পড়ছে বাবা, তোমার বুকে মাথা রাখতে ইচ্ছা করছে, তোমার হাত ধরে বই মেলায় যেতে মন চাইছে I মানুষের মন এমন কেন বাবা, শুধু পিছু টানে?! তোমার সাথে আবার কখনো কি একুশের প্রথম প্রহরে যাওয়া হবে আমার? আর বই মেলা?

মনে আছে বাবা, ছোটবেলা থেকে তোমার সাথে একুশের বইমেলাতে যাওয়া আমাদের বাবা-মেয়ের একটা বিশেষ উপলক্ষ ছিল I কি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম এই দিনটির জন্য I তোমার শত ব্যস্ততার মাঝেও তুমি ঠিকই সময় বের করতে....হয়তো আমার জন্য এটা ছিল তোমার আদরের একটি উপহার! তখন বইমেলা এতো বিশাল আয়োজন ছিল না, কিন্তু তাতে ছিল প্রাণের ছোঁয়া I নতুন বই কিনে কখন পড়ে শেষ করবো এইটা ভেবেই মন অস্থির হয়ে থাকতো, তাইতো তালিকা করে রাখতাম আগেথেকেই যাতে কোনো বইয়ের নাম ভুলে না যাই I আমার পড়ার ঘরের ছোট্ট বুকশেলফটা তোমার কিনে দেয়া বই দিয়ে সাজিয়েছিলাম বাবা, মনে পরে তোমার?

মনে আছে বাবা, "সেবা প্রকাশনী" থেকে "মাসুদ রানা"র সিরিজের কোনো নতুন বই বের হলেই তোমার কাছে একটা কপি চলে আসতো? আমার জন্য এটা পড়া নিষিদ্ধ ছিল I কখনো তোমাকে বলা হয়নি বাবা, যখন আমার বারো/তেরো বছর বয়স, তখন আমি চুরি করে পড়ার বইয়ের ফাঁকে "মাসুদ রানা" পড়তাম তোমাকে গোপন করে.!! কেমন একটা এডভেঞ্চার ফীল হতো তখন, আর এখন ভাবলে হাসি পায়!

যখন আমি প্রবাসী হলাম, তুমি প্রতিবছর বইমেলা থেকে বই কিনে আমাকে কুরিয়ার করে পাঠাতে...যার খরচ বোধহয় বইগুলোর দামের চেয়ে বেশি ছিল! কিন্তু তুমি বাবা-মেয়ের সেই বইমেলার স্মৃতি ধরে রাখতে চেয়েছিলে বোধহয়, নাইবা ছিলাম আমি তোমার পাশে কিন্তু ছিলাম ঠিকই তোমার মনের গভীরে I

আমি প্রতীক্ষায় আছি বাবা, তোমার হাত ধরে আবার সেই ছোট্ট সুবর্ণার মতো বই মেলায় যাবো, তুমি আমাকে বই কিনে দিবে, আমরা ভাগাভাগি করে পড়বো I আমাদের চারপাশের পৃথিবীটা খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছে বাবা কিন্তু একুশ তোমাকে চিরকাল মনে রাখবে I ভালো থেকো আমার "লড়াকু" বাবা, আমাকে সাহসে রেখো I ভালোবাসা I

ইতি,

তোমার আদরের "সাবনি"

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

নিউ জার্সি, ইউএসএ'

ad
ad

অর্থের রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

নারী কমিশনকে সাক্ষাৎই দেয়নি সংবিধান সংস্কার কমিশন

একটি কমিশন আমাদের সময় দেয়নি— সংবিধান কমিশন। আমি জানি না কেন তারা সময় দেয়নি। হয়তো তাদের ধারণা ছিল, সংবিধান সংস্কারে নারীদের আবার কী বলার থাকতে পারে! তারা আমাদের প্রস্তাব গ্রহণ না-ই করতে পারতেন, কিন্তু সময় দেওয়াটা ছিল শোভন আচরণের অংশ। সেই সৌজন্যটুকু আমরা পাইনি।

৬ দিন আগে

প্রসঙ্গ— সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য ভোট

এবারের নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক প্রচার-প্রচারণা যে ভয়াবহ রূপ লাভ করবে, সেটা এরই মধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। সরকার নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে আচরণবিধি ঠিক রেখে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণার সার্বিক দায়-দায়িত্ব নিলে অনেক কিছু রোধ করা যেত।

৬ দিন আগে

এই গণভোটের প্রশ্ন বোধগম্য নয়

প্রকৃত অর্থে এগুলো একটি রাজনৈতিক কাঠামোর প্রশ্ন। এটি শিক্ষা, স্বাস্থ্য বা দ্রব্যমূল্যের মতো বিষয় নয়। তেমন হলে সাধারণ মানুষের স্বার্থ যুক্ত থাকত। কিন্তু এটি উচ্চমধ্যবিত্তের প্রাতিষ্ঠানিক ধারণা। কীভাবে সাধারণ মানুষ এতে ভোট দিবে পক্ষে-বিপক্ষে, সেটি আমিও বুঝতে পারছি না।

১৭ দিন আগে

‘যদি’, ‘কিন্তু’ আর ‘কেউ’-এর ফাঁদে কাঁদছে ক্ষমা!

নেটিজেনদের অনেকেই বলছেন, ভোটকে সামনে রেখে এটা জামায়াতের একটা চাল। কারণ ক্ষমা চাওয়ার দাবি তো দীর্ঘ দিনের। তাহলে মার্কিন মুল্লুকে গিয়ে কেন ক্ষমা চাইতে হলো। দেশের বাইরে গিয়ে ক্ষমা চাওয়ায় রাজনৈতিক মহলে নতুন বিতর্ক ও সমালোচনা শুরু হয়েছে, বিষয়টি বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচিত হচ্ছে।

২১ দিন আগে