লাল-সবুজের পতাকা যেভাবে আমার হলো

স ম গোলাম কিবরিয়া
আপডেট : ০২ মার্চ ২০২৫, ১০: ৫৯

দোসরা মার্চ, ১৯৭১। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে লক্ষ লক্ষ ছাত্র-জনতার সমাবেশ। পহেলা মার্চ প্রেসিডেন্ট আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদ অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করে। ৩রা মার্চ এই অধিবেশন ডাকা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু ইয়াহিয়া খানের ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেন। একইসাথে তিনি এই ঘোষণাকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি সর্বাত্মক আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ঘোষিত কর্মসূচি ছিল- ২রা মার্চ ঢাকা ও ৩রা মার্চ সারা বাংলায় হরতাল এবং ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসভা।

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ছাত্রলীগ ও ডাকসু মিলে ‘স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করা হয়। অন্য কোনো ছাত্র সংগঠন স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদে যোগ দিতে রাজি হয়নি। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ২রা মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ছাত্র-গণজমায়েতের ডাক দেয়।

স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বানে লক্ষ লক্ষ ছাত্র-জনতা বটতলায় জমায়েত হয়। জমায়েতে ডাকসুর সহসভাপতি আ স ম আব্দুর রব পতাকা উত্তোলন করেন। এই পতাকা উত্তোলন বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্নকে কয়েকধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়। উপস্থিত ছাত্র-জনতার বিপুল সমর্থনে অঘোষিতভাবে পতাকাটি জাতীয় পতাকার স্বীকৃতি পায়।

জাতীয় পতাকা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। পতাকা একটি রাষ্ট্রের পরিচয়, নাগরিকদের অহংকার। তাই পতাকা রূপায়ণে ফুটে ওঠে জাতির আত্মপরিচয়। জাতীয় পতাকার মর্যাদা সমুন্নত রাখা সকল দেশের নাগরিকের দায়িত্ব। বাংলাদেশের মতো রক্তে কেনা পতাকার বেলায় মর্যাদাবোধের জায়গাটি আরও বেশি স্পর্শকাতর। গাঢ় সবুজ জমিনের উপর লাল সূর্যের মাঝে সোনালী বর্ণের বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত এই পতাকা কিভাবে এলো? কে তৈরি করলো পতাকাটি? উত্তর পেতে ফিরে যেতে হবে একটু পেছনে।

১৯৬২ সালের নভেম্বর মাস। ছাত্রনেতা সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদ পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন বাংলায় রূপান্তরের প্রশ্নে বৈঠকে বসেন। আলোচনায় তাঁরা একমত হন এবং পরিকল্পনা করেন ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে প্রগতিশীল চিন্তার কর্মীদের নিয়ে গোপন সংগঠন গড়ে তোলা হবে। এ সংগঠনের নাম দেওয়া হয় ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’।

১৯৬৬ সালের মধ্যে তারা সারাদেশে সংগঠনের বিস্তৃতি ঘটাতে সক্ষম হন। ছাত্রলীগের অন্য নেতারা মনে করতেন, এই উদ্যোগ সংগঠনের অভ্যন্তরের উপদলীয় দ্বন্দ্ব। স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের সব কর্মকাণ্ড এই তিন নেতার মাধ্যমে পরিচালিত হতো। পরবর্তীকালে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদকে অনেকেই ‘স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস’ বলে আখ্যায়িত করেন। পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধিকার আন্দোলনকে স্বাধীনতা আন্দোলন এবং স্বাধীনতার আন্দোলনকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে রূপ দিতে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

শেখ মুজিবুর রহমান ছয়দফা ঘোষণার পর ছাত্রলীগের এই অংশই এগিয়ে আসে। ছয়দফার প্রশ্নে আওয়ামীলীগ বিভক্ত হয়ে গেলেও ছাত্রলীগ পূর্ণসমর্থন জানায়। ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর শাখা ছয়দফার প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্রথম মিছিল বের করে। তখন ছাত্রলীগ মহানগর কমিটির সভাপতি ছিলেন কাজী আরেফ আহমেদ। পরদিন ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটিও ছয়দফার প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিবৃতি দেয়।

১৯৬৬ সালের ৭ই জুন ছয়দফার সমর্থনে ঢাকায় অর্ধদিবস হরতাল আহ্বান করা হয়। হরতালের পিকেটিং করতে গিয়ে এগারজন ছাত্র-শ্রমিক শহিদ হন। সেই থেকে ৭ই জুন ছয়দফা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ছয়দফার আন্দোলনকে দমিয়ে দিতেই সাজানো হয় আগরতলার ষড়যন্ত্র মামলা, যার পরিণতি- ৬৯'র গণঅভ্যুত্থান এবং শেখ মুজিব ‘বঙ্গবন্ধু’ খেতাবে ভূষিত হন।

৭ই জুন ১৯৭০। শ্রমিক লীগ ছয়দফা দিবস পালনের কর্মসূচি ঘোষণা করে। এ উপলক্ষ্যে পল্টন ময়দানে বঙ্গবন্ধুকে তারা অভিবাদন জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়। একই অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকেও অভিবাদন জানানোর পরিকল্পনা করে। ছাত্রলীগ অভিবাদন জানানোর জন্য একটি বাহিনী গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। এই বাহিনী সেখানে সামরিক কায়দায় বঙ্গবন্ধুকে অভিবাদন জানাবে। এই বাহিনী বা ব্যাটেলিয়ন গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয় কাজী আরেফ আহমেদকে। নাম দেওয়া হয় ‘জয়বাংলা বাহিনী’। ব্যাটেলিয়ন অধিনায়কের দায়িত্ব পান আ স ম আবদুর রব। জয়বাংলা বাহিনীর জন্য পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ। সিদ্ধান্ত হয়, অভিবাদনকালে বঙ্গবন্ধু পতাকাটি ব্যাটালিয়ানকে প্রদান করবেন।

৬ই জুন ১৯৭০। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলের (বর্তমানে সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ১১৬ নম্বর কক্ষ। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ, ডাকসুর সহসভাপতি আ স ম আবদুর রব ও ছাত্রনেতা মনিরুল ইসলামকে (মার্শাল মনি) ডেকে নিয়ে কাজী আরেফ আহমেদ পতাকা তৈরি করার কথা বলেন। শুরু হয় আলোচনা। এ সময় মনিরুল ইসলাম ও আ স ম আবদুর রব একমত হন যে, পতাকার জমিন অবশ্যই গাঢ় সবুজ রঙের (বট্ল্ গ্রিন) হতে হবে। শাহজাহান সিরাজ বলেন যে, লাল রঙের একটা কিছু পতাকায় রাখতে হবে। এভাবেই আলোচনা চলতে থাকে। কাজী আরেফ আহমেদ গাঢ় সবুজের ওপর লাল সূর্যের একটি পতাকার নকশা তৈরি করেন। নকশা দেখে সবাই একমত হন। এ সময়ে কাজী আরেফ আহমেদ প্রস্তাব করেন, লাল সূর্যের মাঝে সোনালি রঙে পূর্ব পাকিস্তানের মানচিত্র দিতে হবে। না হলে পাকিস্তানিরা আমাদের স্বাধীনতা নিয়ে যেমন অপপ্রচার করে, পতাকা নিয়েও তা-ই করবে।

পাকিস্তানিরা আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করতে ‘ভারতের হাত আছে’, ‘ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীদের কাজ’, ‘ভারতীয় এজেন্টদের কার্যকলাপ’ ইত্যাদি বলে অপপ্রচার চালাতো। এ ছাড়াও আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে তারা ভারতের পশ্চিম বঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্য, পূর্ব পাকিস্তান এবং মিয়নমারের আরাকান রাজ্য নিয়ে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করা হচ্ছে বলে অপপ্রচার চালাতো। এই অপপ্রচার চালাতে প্রশাসনকেও ব্যবহার করা হতো। পাকিস্তানিরা কাল্পনিক এই রাষ্ট্রের নাম দিয়েছিলো ‘ইউনাইটেড স্টেটস অব বেঙ্গল’ বা ‘বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র’। এই সব অপপ্রচার থেকে রেহাই পেতে পতাকার লাল সূর্যের মাঝখানে সোনালি আঁশ বা পাকা ধানের রঙে বাংলাদেশের মানচিত্র রাখার কথা বলেন কাজী আরেফ। সবাই একমত হলে পতাকা নিয়ে আলাপ করতে যান সিরাজুল আলম খানের কাছে।

একই হলের তিন তলার একটি কক্ষে সিরাজুল আলম খান প্রায়ই থাকতেন। পতাকা তৈরিসহ সব কার্যক্রম সম্পর্কে তাকে জানানো হলো। কিছুক্ষণ চুপ থেকে তিনি বললেন, যে নামেই পতাকা প্রদর্শন করো না কেন, এই পতাকাকে জনগণের ভবিষ্যৎ স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা হিসেবে ভেবে নিতে কোনো বাধা থাকবে না। এরমধ্যে এখানে যোগ দেন ছাত্রনেতা কামরুল আলম খান খসরু, স্বপন কুমার চৌধুরী, হাসানুল হক ইনু, ইউসুফ সালাহউদ্দিন আহমেদ ও নজরুল ইসলাম। তারা সবাই স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের সদস্য। কামরুল আলম খান খসরু, স্বপন কুমার চৌধুরী, হাসানুল হক ইনু ও নজরুল ইসলামকে পাঠানো হয় পতাকার কাপড় কিনে সেলাই করে আনতে। তখন ছাত্রলীগ অফিস ছিলো বলাকা ভবনে। কয়েক বছর পূর্বেও সেটা জাসদ সমর্থিত ছাত্রলীগের অফিস ছিলো। এখানে অনেক দর্জির দোকান ছিলো।

গভীর রাতে নিউমার্কেটের দোকানপাট বন্ধ। ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলে অ্যাপোলো নামক দোকান থেকে সবুজ ও লাল রঙের লেডি হ্যামিলটন কাপড় কেনা হয়। রঙের এক দোকানিকে জাগিয়ে সোনালি রং ও তুলি কিনে নিয়ে তারা যান বলাকা ভবনে। সেখানে পাক টেইলার্সকে ডেকে তুলে পতাকা সেলাই করা হয়। পাক টেইলার্সের দর্জি ছিলেন অবাঙালি। তিনি বুঝতেও পারেননি যে, নতুন এক জাতির, নতুন এক দেশের পতাকা সেলাই করছেন। সেই পতাকা এত শক্তিধর হবে যে, এর প্রভাবে তাকে পাকিস্তানে চলে যেতে হবে। স্বাধীনতার পর ওই দর্জি পাকিস্তান চলে যান।

পতাকা সেলাইয়ের পর সমস্যা দেখা দেয় লাল বৃত্তের মাঝে বাংলাদেশের ম্যাপ আঁকা নিয়ে। প্রয়োজন দেখা দেয় একজন শিল্পীর। সমাধান হিসেবে ডেকে আনা হয় শিবনারায়ণ দাসকে। শিবনারায়ণ দাস তখন কুমিল্লায় ছাত্রলীগ নেতা। তিনিও স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের সদস্য। তিনি খুব ভালো পোস্টার লিখতেন এবং রং-তুলির কাজ জানতেন। ছাত্রলীগ সলিমুল্লাহ হল শাখার সম্মেলন উপলক্ষে ব্যানার-ফেস্টুন লেখার জন্য তাঁকে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আনা হয়েছে। সলিমুল্লাহ হল থেকে তাঁকে ডেকে আনা হলো। শিবনারায়ণ দাস জানালেন তিনি ম্যাপ আঁকতে পারবেন না, তবে আঁকানো হলে তাতে রং করতে পারবেন। দেখা দিল আরেক সমস্যা। ম্যাপ কে আঁকবে?

উপস্থিত ছাত্রনেতা ইউসুফ সালাহউদ্দিন আহমেদ ও হাসানুল হক ইনু প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের জিন্নাহ হলের (বর্তমানে তিতুমীর হল) ৪০৮ নম্বর কক্ষে যান। তাঁরা দুজনই প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। জিন্নাহ হলের ৪০৮ নম্বর কক্ষে থাকতেন এনামুল হক (হাসানুল হক ইনুর কাজিন)। তার কাছ থেকে ম্যাপের বই অ্যাটলাস নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের ম্যাপ বের করলেন। ট্রেসিং পেপার বসিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের ম্যাপ আঁকা হলো। সেই ম্যাপ নিয়ে ফিরে এলেন ইকবাল হলে। তারপর শিবনারায়ণ দাস নিপুণ হাতে বৃত্তের মাঝে ম্যাপটি আঁকলেন। শেষ হলো ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের নতুন পতাকা তৈরির কাজ।

তখনই পতাকা অনুমোদনের জন্য বৈঠক বসে। স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ অনুমোদন দিলেও চূড়ান্তভাবে বঙ্গবন্ধুর অনুমোদন প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুমোদনের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় আবদুর রাজ্জাককে। ওই রাতেই আবদুর রাজ্জাক পতাকাটি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাসায় যান এবং তা অনুমোদন করিয়ে আনেন।

পরদিন ৭ জুন। সকাল থেকেই মুষলধারে বৃষ্টি। কর্দমাক্ত মাঠে কুচকাওয়াজ করতে করতে এগিয়ে আসছে জয়বাংলা বাহিনী। বাহিনীর পোশাক ছিলো সাদা প্যান্ট, সাদা শার্ট, মাথায় লাল-সবুজ টুপি এবং হাতে লাল-সবুজ কাপড়ের ব্যান্ডে লেখা ‘জয়বাংলা বাহিনী’। তখন মঞ্চে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু। তাঁর পাশে সিরাজুল আলম খান, শেখ ফজলুল হক মনি, তোফায়েল আহমেদ, আবদুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদ। আ স ম আবদুর রব মঞ্চের কাছে এসে বঙ্গবন্ধুকে অভিবাদন জানিয়ে হাঁটু গেড়ে বসলেন। পতাকা গ্রহণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। বঙ্গবন্ধু কাজী আরেফের হাত থেকে পতাকাটি নিয়ে উপস্থিত জনতাকে প্রদর্শন করেন। এরপর আ স ম আবদুর রব বঙ্গবন্ধুর হাত থেকে পতাকা গ্রহণ করেন এবং কুচকাওয়াজ করে মঞ্চের সামনে দিয়ে চলে যান।

সেই পতাকাটি ২রা মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় উত্তোলন করা হয়। লাখো জনতা হর্ষধ্বনি আর গগনবিদারি স্লোগানে পতাকাকে স্বাগত জানায়। ২৩ মার্চ সারাদেশে পাকিস্তান দিবস পালন করা হতো। এদিন সারা দেশে সরকারি বেসরকারি ভবনে চাঁদ-তারার পাকিস্তানি পতাকা উড়ানো হতো। ১৯৭১ সালের ২৩শে মার্চ পূর্ব বাংলায় আর চাঁদ-তারা পতাকা দেখা যায়নি। সেনানিবাস ব্যতীত সারাদেশের ঘরে ঘরে লাল সবুজের মাঝে সোনালী মানচিত্রখচিত পতাকা ওড়ানো হয়। পরবর্তীকালে দীর্ঘ ৯ মাস রণাঙ্গনে এ পতাকাই ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা, বাঙালি জাতির বেঁচে থাকার অবলম্বন। এই পতাকা বুকে ধারণ করেই একাত্তরে রণাঙ্গনে অকাতরে মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে। এ পতাকা ধারণ করেই রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাস্ত করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে।

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পটিয়া কামরুল হাসানকে পতাকার সঠিক মাপ ও নকশা নিয়ে কাজ করার দায়িত্ব দেন। শিল্পী কামরুল হাসান পতাকা থেকে বাংলাদেশের ম্যাপ সরিয়ে ফেলার প্রস্তাব দেন। কারণ বাংলাদেশের ম্যাপ আঁকা কঠিন এবং উত্তোলনের সময়ও ভুল হয়ে যেতো। তাই বাংলাদেশের ম্যাপ সরিয়ে ফেলা হয়, আমরা পাই আজকের লাল-সবুজের পতাকা, বাঙালির অহংকার!

লেখক : চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক

তথ্যসূত্র:

১. ইউসুফ সালাহউদ্দিন আহমেদের নিবন্ধ ‘আমাদের জাতীয় পতাকার ইতিহাস’, দৈনিক আমাদের সময়, ৩রা ডিসেম্বর, ২০০৯।

২. শাহজাহান সিরাজের বক্তব্য, তৃতীয়মাত্রা, চ্যানেল আই, প্রচারকাল ২৩শে মার্চ, ২০১১।

৩. জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সমাজতন্ত্র, মনিরুল ইসলাম, প্রকাশকাল ২০১৩।

৪. বাঙালির জাতীয় রাষ্ট্র, কাজী আরেফ আহমেদ, প্রকাশকাল ২০১৪।

৫. আ স ম আবদুর রব, বাংলামেইল ২৪, প্রচারকাল ৭ই মার্চ, ২০১৫।

৬. বাংলাপিডিয়া

ad
ad

মতামত থেকে আরও পড়ুন

স্লোগানের স্বরূপ: নান্দনিকতা, সহিংসতা ও অশ্লীলতা

স্লোগান বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক অবিছ্ছেদ্য অংশ। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে স্লোগানের ব্যবহার ছিল। “ব্রিটিশ হটাও, দেশ বাঁচাও”; “বিদেশি পণ্য বর্জন করো, দেশি পণ্য ব্যবহার করো”; “তুমি আমি স্বদেশি, স্বদেশি স্বদেশি” “আমরা লড়ব, আমরা জিতব” ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে এরূপ অনেক স্লোগানই রাজনৈতিক সচেতন

৪ দিন আগে

প্রধান শিক্ষক : দশম গ্রেড প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি

২২ জুলাই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এ নিয়ে একটি প্রস্তাবনা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে । তাতে প্রধান শিক্ষকরা আগে কত টাকা বেতন ও ভাতা পেতেন, আর দশম গ্রেড বাস্তবায়ন হলে কত পাবেন—তা নিয়ে পরিপূর্ণ হিসাব রয়েছে ।

৫ দিন আগে

ভারত এবং গ্লোবাল সাউথ

ভিওজিএসএস হলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর উদ্বেগ, স্বার্থ ও অগ্রাধিকারসমূহের বিষয়ে আলোচনা করা, ধারণা ও সমাধান বিনিময় করা, এবং উন্নয়ন সমাধান বিনির্মাণে কণ্ঠ ও উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য একটি অভিন্ন মঞ্চ প্রদানের লক্ষ্যে ভারতের প্রচেষ্টা।

৫ দিন আগে

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের টানাপোড়েন দূর হোক

বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকেই খাজা সলিমুল্লাহ, মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ, আল্লামা ইকবাল, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দ্দী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ অনুধাবন করেন যে, ভারতবর্ষ স্বাধীন হলে মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমির প্রয়োজন হবে। অন্যথায় ভারতবর্ষের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির মধ্যে গৃহযুদ্ধ লেগেই থাকবে। রা

৯ দিন আগে