শিমলা চুক্তি: কী ও কেন

সাঈদ বারী

ভারতের কাশ্মিরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ প্রাণহানির পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছেই। ওই হামলা ঘিরে দুই দেশ একে অন্যের বিরুদ্ধে পালটাপালটি ব্যবস্থাও নিয়েছে অনেকগুলো। ভিসা বাতিল, আকাশপথ ব্যবহারের সুযোগ বন্ধ করা, বাণিজ্য সীমিত করা তো বটেই, দুই দেশই কূটনৈতিক মিশনেও জনবল পর্যন্ত কমিয়ে দিয়েছে।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পালটাপালটি এসব ব্যবস্থার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় উঠে এসেছে সিন্ধু নদীর পানিবণ্টন চুক্তি ও শিমলা চুক্তি। পাঁচ দশকেরও বেশি সময় আগের এই চুক্তিগুলো দুই দেশের মধ্যেকার শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য ভারসাম্য হিসেবে কাজ করে থাকে বলে মনে করা হয়।

আলোচিত এই দুটি চুক্তির মধ্যে শিমলা চুক্তি করা হয় দুই দেশের সীমান্তরেখা নির্ধারণের জন্য। এরপর থেকেই ওই চুক্তি অনুযায়ী ভারত ও পাকিস্তান সীমান্তরেখা মেনে চলছে। একনজরে জেনে নেওয়া যাক, কী আছে শিমলা চুক্তিতে।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শেষে ১৯৭২ সালে সই হওয়া একটি শান্তি চুক্তি হলো শিমলা চুক্তি। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু করে বাংলাদেশ। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সে যুদ্ধ সমাপ্তির মুখে ডিসেম্বরে ভারতও যুক্ত হয় বাংলাদেশের সঙ্গে। পরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করে মুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত মিত্রবাহিনীর কাছে।

Shimla-Contract-Signed-28-04-2025

ঐতিহাসিক শিমলা চুক্তি সইয়ের মুহূর্ত। ছবি: সংগৃহীত

ওই সময় আত্মসমর্পণকারীদের যুদ্ধবন্দি হিসেবে নিরাপত্তা দেওয়া হয়। বাংলাদেশ যুদ্ধাপরাধী হিসেবে এদের বিচার করতে চেয়েছিল। আত্মসমর্পণকারী সৈন্যদের ভারতের হেফাজত থেকে মুক্তি ও যুদ্ধবন্দি হিসেবে তাদের বিচার রদ করা ছিল পাকিস্তান সরকারের জন্য একটি জরুরি বিষয়। অন্যদিকে একটি শান্তিকামী জাতি হিসেবে ভারতের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখতে পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক পুনর্প্রতিষ্ঠা ছিল ভারতের জন্য খুবই জরুরি।

এ প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ভারতের শিমলায় এক শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হয়। ২৮ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত আলোচনার পর একটি শান্তিচুক্তি সই করেন। এই চুক্তিতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যেকার সব বৈরিতার অবসান ঘটানো, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সব ক্ষেত্রে বন্ধুত্ব ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা এবং ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত জম্মু ও কাশ্মীরে বিরাজমান স্থিতাবস্থা পুনর্স্থাপনের অঙ্গীকার করা হয়।

এই চুক্তির অধীনে ভারত সব যুদ্ধবন্দিকে বিনা বিচারে পাকিস্তানে ফেরত পাঠায়। পাকিস্তানের সঙ্গে ভারত আরও একটি ‘সার্বিক সমঝোতা’ করে, যার উল্লেখ সন্ধির দলিলে করা হয়নি। এতে ছিল পাকিস্তানের বাংলাদেশকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেওয়া এবং বাংলাদেশ ও পাকিস্তান গমনেচ্ছু নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে সংলাপ শুরুর ব্যবস্থা।

চুক্তির মধ্যে ছিল— একাত্তরের যুদ্ধের পর কাশ্মিরে দুদেশের নিয়ন্ত্রণরেখা উভয়পক্ষ মেনে নেবে। বলপ্রয়োগ থেকে বিরত থাকবে দুদেশের সেনাবাহিনী। শেষে এই নিয়ন্ত্রণ রেখাকেই মেনে নেওয়া হয় আন্তর্জাতিক সীমান্ত হিসেবে।

একনজরে সিমলা চুক্তি

  • কাশ্মির সীমান্তে দুই দেশের সৈনিকরা যে অবস্থান গ্রহণ করেছে, ওই অবস্থানগুলোই যার যার দেশের সীমানা মানতে হবে। এই সীমানাকে ভারত ও পাকিস্তান লাইন অব কন্ট্রোল (এলওসি) বা নিয়ন্ত্রণ রেখা হিসেবে মেনে নিল।
  • শিমলা চুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তানি ৯৩ হাজার বন্দি সেনাকে ভারত ছেড়ে দিয়েছিল। তবে তাদের শর্ত দেওয়া হয়েছিল, যেন তাদের বিচার পাকিস্তান নিজেই করে, যারা কি না তখনকার পূর্বপাকিস্তান তথা বর্তমান বাংলাদেশে যুদ্ধকালীন অপরাধে জড়িত ছিল।
  • পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলে ভারতীয় সেনাদের দখল করে নেওয়া সীমানা ভারত বিনা শর্তে ছেড়ে দিয়েছিল।
  • ভবিষ্যতে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কোনো সমস্যা হলে তা সমাধানে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা থেকে দুই দেশই বিরত থাকবে।
  • দুই দেশের সেনারা কোনোভাবেই এলওসি তথা নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করবে না।
  • সাধারণ জনগণের আসা-যাওয়ার জন্য বর্ডার থাকবে, যেন দুই দেশের জনগণের আত্মীয় পরিজনের সঙ্গে মিলিত হতে পারে।

শিমলা চুক্তি পুরোটা দেখুন এখানে—

তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া

ad
ad

মতামত থেকে আরও পড়ুন

স্লোগানের স্বরূপ: নান্দনিকতা, সহিংসতা ও অশ্লীলতা

স্লোগান বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক অবিছ্ছেদ্য অংশ। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে স্লোগানের ব্যবহার ছিল। “ব্রিটিশ হটাও, দেশ বাঁচাও”; “বিদেশি পণ্য বর্জন করো, দেশি পণ্য ব্যবহার করো”; “তুমি আমি স্বদেশি, স্বদেশি স্বদেশি” “আমরা লড়ব, আমরা জিতব” ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে এরূপ অনেক স্লোগানই রাজনৈতিক সচেতন

৪ দিন আগে

প্রধান শিক্ষক : দশম গ্রেড প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি

২২ জুলাই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এ নিয়ে একটি প্রস্তাবনা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে । তাতে প্রধান শিক্ষকরা আগে কত টাকা বেতন ও ভাতা পেতেন, আর দশম গ্রেড বাস্তবায়ন হলে কত পাবেন—তা নিয়ে পরিপূর্ণ হিসাব রয়েছে ।

৫ দিন আগে

ভারত এবং গ্লোবাল সাউথ

ভিওজিএসএস হলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর উদ্বেগ, স্বার্থ ও অগ্রাধিকারসমূহের বিষয়ে আলোচনা করা, ধারণা ও সমাধান বিনিময় করা, এবং উন্নয়ন সমাধান বিনির্মাণে কণ্ঠ ও উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য একটি অভিন্ন মঞ্চ প্রদানের লক্ষ্যে ভারতের প্রচেষ্টা।

৫ দিন আগে

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের টানাপোড়েন দূর হোক

বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকেই খাজা সলিমুল্লাহ, মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ, আল্লামা ইকবাল, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দ্দী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ অনুধাবন করেন যে, ভারতবর্ষ স্বাধীন হলে মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমির প্রয়োজন হবে। অন্যথায় ভারতবর্ষের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির মধ্যে গৃহযুদ্ধ লেগেই থাকবে। রা

৯ দিন আগে