শরিফুজ্জামান পিন্টু
দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন শুল্কনীতির মোড় ঘুরে গেছে পাকিস্তানের দিকে। ভারতের তুলনায় কম শুল্ক পাচ্ছে ইসলামাবাদ, যার ফলে দেশটির গার্মেন্টস খাতে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা মিলবে।
ইসলামাবাদের পণ্যে আমদানি শুল্ক ২৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৯ শতাংশে নামিয়েছে ওয়াশিংটন। অন্যদিকে ভারতের পণ্যে এখনো বহাল রয়েছে ২৫ শতাংশ শুল্ক।
সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাতে পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আলোচনা চূড়ান্ত হয়েছে। এর ফলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গার্মেন্টস বাজারে পাকিস্তান আগের চেয়ে কম ব্যয়ে প্রবেশ করতে পারবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ভারত, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার যথাক্রমে ২৫, ২০ ও ৪০ শতাংশ শুল্কের আওতায় থাকায় পাকিস্তান এই অঞ্চলে প্রতিযোগিতায় বাড়তি সুবিধা পেল।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “এটি দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা।”
পাকিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, খনিজ, জ্বালানি, আইটি এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির মতো খাতে যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান অংশীদারিত্ব আরও গভীর হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই শুল্ক ছাড়ের পেছনে ইসলামাবাদের কৌশলগত কিছু পদক্ষেপ কাজ করেছে। চলতি মাসের শুরুতে বিদেশি ডিজিটাল সেবার ওপর আরোপিত ৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার করে নেয় পাকিস্তান, যা ওয়াশিংটনের কাছে ইতিবাচক বার্তা হিসেবে গৃহীত হয়।
এদিকে একই সময়ে ভারতীয় পণ্যে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক বহাল রয়েছে। অর্থনীতিবিদদের ভাষ্য, যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক, হোম টেক্সটাইল ও প্রযুক্তিপণ্যের বাজারে ভারত ও পাকিস্তান এখন মুখোমুখি প্রতিযোগিতায়।
শুল্ক আলোচনায় কিছুটা ছাড় পেয়েছে বাংলাদেশও। দফায় দফায় বৈঠকের পর বাংলাদেশের জন্য এই হার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার মনে করছে, এই ‘ট্রাম্প শুল্কে’ রপ্তানিতে বাংলাদেশের আপেক্ষিক প্রতিযোগিতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। তবে ব্যবসায়ী সমাজ থেকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে পাকিস্তানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতিগত নমনীয়তা অনেকটাই স্পষ্ট। এমনকি গত জুনে ইসলামাবাদ ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন দেয়, যা কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা বলে মনে করা হচ্ছে।
সিএনএন বলছে, পাকিস্তানের রপ্তানির ৬০ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এই খাতেই শুল্ক ছাড় তাদের একধাপ এগিয়ে দিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের তুলনায় পাকিস্তানের নতুন ট্যারিফ রেট এখন সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক।
পাকিস্তানের সঙ্গে একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তির কথাও নিশ্চিত করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার সকালে নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লেখেন, “আমরা মাত্রই পাকিস্তানের সঙ্গে একটি চুক্তি সম্পন্ন করেছি। এর মাধ্যমে পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে তাদের বিশাল তেলসম্পদ উন্নয়নে কাজ করবে।”
ভারতকে ইঙ্গিত করে ট্রাম্প আরও লেখেন, “এই অংশীদারত্বে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আমরা তেল কোম্পানি বাছাই করছি। কে জানে, হয়তো একদিন তারা (পাকিস্তান) ভারতেও তেল রপ্তানি করবে!”
সম্প্রতি ভারতের বাণিজ্যনীতি ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়েও একাধিক মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প। ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লেখেন, “ভারত আমাদের বন্ধু হলেও তাদের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে কম ব্যবসা করেছি। কারণ তাদের শুল্ক হার বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ।”
তিনি যোগ করেন, “ভারত সবসময় রাশিয়া থেকে সামরিক সরঞ্জামের বড় অংশ কিনেছে। একই সঙ্গে রাশিয়া ও চীনের এনার্জি সেক্টরের বৃহত্তম ক্রেতাও তারা। এটা এমন সময়, যখন বিশ্ব চায় রাশিয়া ইউক্রেনে হত্যাকাণ্ড বন্ধ করুক। তাই ভারত ২৫ শতাংশ শুল্ক দেবে এবং এই নীতিগত অবস্থানের জন্য জরিমানাও গুণবে— ১ আগস্ট থেকে এটা কার্যকর হবে।”
তবে আলোচনা চলবে বলেও জানিয়েছেন ট্রাম্প। তার ভাষায়, “এই বিষয়টা ব্রিকস-এর সঙ্গেও যুক্ত, যা মূলত যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী দেশগুলোর একটি প্ল্যাটফর্ম এবং ভারতও তার সদস্য। এটা ডলারের ওপর আক্রমণ, আর আমরা কাউকে ডলারের ওপর আক্রমণ করতে দেবো না।”
রাশিয়ার প্রসঙ্গ টেনে ভারতের বিরুদ্ধে তীব্র মন্তব্য করে ট্রাম্প বলেন, “ভারত রাশিয়ার সঙ্গে কী করে, তাতে আমার কিছু যায় আসে না।”
ভারত এরই মধ্যে অভিবাসন, বাণিজ্য শুল্কসহ একাধিক ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড় দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করতে ভারত বোরবন হুইস্কি ও মোটরসাইকেলের ওপর শুল্কও কমিয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এখনো ভারতের সঙ্গে বছরে সাড়ে চার হাজার কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতিতে রয়েছে, যা ট্রাম্প কমাতে চান।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়ার পাশ থেকে সরাটা ভারতের পক্ষে বেশ কঠিন।যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখতে চাইলেও ব্রিকসের বিষয়টি ভারতকে দ্বিধায় ফেলেছে।
ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য শুল্ক নিয়ে আগে একাধিক দরকষাকষি হয়েছে। কিন্তু ট্রাম্প যেভাবে বিষয়টি প্রকাশ্যে এনেছেন, জরিমানা ঘোষণা করেছেন— তাতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব অনিবার্য। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বারবার ‘বন্ধু’ আখ্যা দেওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন ‘শত্রু’র মতোই কথা বলছেন।
এদিকে ভারত ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোনো ভূমিকা নেই বলে দাবি করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। গত সোমবার ভারতের পার্লামেন্টে ‘অপারেশন সিন্দূর’ নিয়ে বিতর্ক চলাকালে তিনি এই দাবি করেন।
এস জয়শঙ্কর বলেন, গত ২২ এপ্রিল পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে ১৭ জুন যুদ্ধবিরতি ঘোষণা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যে কোনো কথা হয়নি।
এর আগে ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তিনিই নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদকে যুদ্ধ থেকে বিরত রেখেছেন। ট্রাম্পের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে আসছে ভারত। একই সঙ্গে কাশ্মীর ইস্যুতে মার্কিন মধ্যস্থতার বিষয়টিও নাকচ করে দিয়েছে নয়াদিল্লি।
তবে ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ঘটনায় কংগ্রেস মোদি সরকারকে তীব্রভাবে আক্রমণ করেছে। এক্স হ্যান্ডলে কংগ্রেস লিখেছে, ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে মোদি ট্রাম্পের পক্ষে প্রচার চালিয়েছিলেন। তাকে ভাইয়ের মতো জড়িয়ে ধরেছিলেন। অথচ এখন ট্রাম্প ভারতকে এমন কঠিন শুল্কে মারলেন। এটা ভারতের পররাষ্ট্রনীতির ভয়াবহ ব্যর্থতা।
আসলে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে ঘনিষ্ঠ। এমনকি ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধের সময়েও ভারত রাশিয়ার পাশে থেকেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল হলো— আমরা না হলে ওরা, দুই দিক রক্ষা করা যাবে না। যুক্তরাষ্ট্রের এই চাপেও ভারত রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে বলে মনে হয় না। বাংলাদেশ-চীনের সম্পর্ক নিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের এমন মাথাব্যথা রয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতের সামনে একাধিক কৌশল খোলা আছে। ট্রাম্পের সঙ্গে পুনরায় দরকষাকষি করা। কাজ না হলে জাপান-ফ্রান্সের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ভারতের চুক্তিগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করাও ভারতের সামনে সম্ভাব্য পথ। সম্ভাব্য পথের মধ্যে আরেকটা হতে পারে যে বাড়তি শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে বাণিজ্য ঘাটতি হবে তা অন্য দেশে পরিচালিত করা, যদিও কাজটি বেশ কঠিন।
বিবিসি বলছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বড় ধাক্কা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদেরা। তবে ঠিক কতটা ক্ষতি হবে, তা এখন পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। কারণ, ট্রাম্প ওই শুল্ক ছাড়াও আরও ‘অনির্দিষ্ট পরিমাণ’ জরিমানার ঘোষণা দিয়েছেন।
বিশ্লেষণ বলছে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত শুধু বাণিজ্য নয়, ভূরাজনীতির দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের এই বাণিজ্যিক ও কৌশলগত অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতেও বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন শুল্কনীতির মোড় ঘুরে গেছে পাকিস্তানের দিকে। ভারতের তুলনায় কম শুল্ক পাচ্ছে ইসলামাবাদ, যার ফলে দেশটির গার্মেন্টস খাতে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা মিলবে।
ইসলামাবাদের পণ্যে আমদানি শুল্ক ২৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৯ শতাংশে নামিয়েছে ওয়াশিংটন। অন্যদিকে ভারতের পণ্যে এখনো বহাল রয়েছে ২৫ শতাংশ শুল্ক।
সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাতে পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আলোচনা চূড়ান্ত হয়েছে। এর ফলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গার্মেন্টস বাজারে পাকিস্তান আগের চেয়ে কম ব্যয়ে প্রবেশ করতে পারবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ভারত, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার যথাক্রমে ২৫, ২০ ও ৪০ শতাংশ শুল্কের আওতায় থাকায় পাকিস্তান এই অঞ্চলে প্রতিযোগিতায় বাড়তি সুবিধা পেল।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “এটি দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা।”
পাকিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, খনিজ, জ্বালানি, আইটি এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির মতো খাতে যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান অংশীদারিত্ব আরও গভীর হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই শুল্ক ছাড়ের পেছনে ইসলামাবাদের কৌশলগত কিছু পদক্ষেপ কাজ করেছে। চলতি মাসের শুরুতে বিদেশি ডিজিটাল সেবার ওপর আরোপিত ৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার করে নেয় পাকিস্তান, যা ওয়াশিংটনের কাছে ইতিবাচক বার্তা হিসেবে গৃহীত হয়।
এদিকে একই সময়ে ভারতীয় পণ্যে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক বহাল রয়েছে। অর্থনীতিবিদদের ভাষ্য, যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক, হোম টেক্সটাইল ও প্রযুক্তিপণ্যের বাজারে ভারত ও পাকিস্তান এখন মুখোমুখি প্রতিযোগিতায়।
শুল্ক আলোচনায় কিছুটা ছাড় পেয়েছে বাংলাদেশও। দফায় দফায় বৈঠকের পর বাংলাদেশের জন্য এই হার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার মনে করছে, এই ‘ট্রাম্প শুল্কে’ রপ্তানিতে বাংলাদেশের আপেক্ষিক প্রতিযোগিতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। তবে ব্যবসায়ী সমাজ থেকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে পাকিস্তানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতিগত নমনীয়তা অনেকটাই স্পষ্ট। এমনকি গত জুনে ইসলামাবাদ ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন দেয়, যা কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা বলে মনে করা হচ্ছে।
সিএনএন বলছে, পাকিস্তানের রপ্তানির ৬০ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এই খাতেই শুল্ক ছাড় তাদের একধাপ এগিয়ে দিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের তুলনায় পাকিস্তানের নতুন ট্যারিফ রেট এখন সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক।
পাকিস্তানের সঙ্গে একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তির কথাও নিশ্চিত করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার সকালে নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লেখেন, “আমরা মাত্রই পাকিস্তানের সঙ্গে একটি চুক্তি সম্পন্ন করেছি। এর মাধ্যমে পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে তাদের বিশাল তেলসম্পদ উন্নয়নে কাজ করবে।”
ভারতকে ইঙ্গিত করে ট্রাম্প আরও লেখেন, “এই অংশীদারত্বে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আমরা তেল কোম্পানি বাছাই করছি। কে জানে, হয়তো একদিন তারা (পাকিস্তান) ভারতেও তেল রপ্তানি করবে!”
সম্প্রতি ভারতের বাণিজ্যনীতি ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়েও একাধিক মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প। ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লেখেন, “ভারত আমাদের বন্ধু হলেও তাদের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে কম ব্যবসা করেছি। কারণ তাদের শুল্ক হার বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ।”
তিনি যোগ করেন, “ভারত সবসময় রাশিয়া থেকে সামরিক সরঞ্জামের বড় অংশ কিনেছে। একই সঙ্গে রাশিয়া ও চীনের এনার্জি সেক্টরের বৃহত্তম ক্রেতাও তারা। এটা এমন সময়, যখন বিশ্ব চায় রাশিয়া ইউক্রেনে হত্যাকাণ্ড বন্ধ করুক। তাই ভারত ২৫ শতাংশ শুল্ক দেবে এবং এই নীতিগত অবস্থানের জন্য জরিমানাও গুণবে— ১ আগস্ট থেকে এটা কার্যকর হবে।”
তবে আলোচনা চলবে বলেও জানিয়েছেন ট্রাম্প। তার ভাষায়, “এই বিষয়টা ব্রিকস-এর সঙ্গেও যুক্ত, যা মূলত যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী দেশগুলোর একটি প্ল্যাটফর্ম এবং ভারতও তার সদস্য। এটা ডলারের ওপর আক্রমণ, আর আমরা কাউকে ডলারের ওপর আক্রমণ করতে দেবো না।”
রাশিয়ার প্রসঙ্গ টেনে ভারতের বিরুদ্ধে তীব্র মন্তব্য করে ট্রাম্প বলেন, “ভারত রাশিয়ার সঙ্গে কী করে, তাতে আমার কিছু যায় আসে না।”
ভারত এরই মধ্যে অভিবাসন, বাণিজ্য শুল্কসহ একাধিক ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড় দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করতে ভারত বোরবন হুইস্কি ও মোটরসাইকেলের ওপর শুল্কও কমিয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এখনো ভারতের সঙ্গে বছরে সাড়ে চার হাজার কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতিতে রয়েছে, যা ট্রাম্প কমাতে চান।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়ার পাশ থেকে সরাটা ভারতের পক্ষে বেশ কঠিন।যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখতে চাইলেও ব্রিকসের বিষয়টি ভারতকে দ্বিধায় ফেলেছে।
ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য শুল্ক নিয়ে আগে একাধিক দরকষাকষি হয়েছে। কিন্তু ট্রাম্প যেভাবে বিষয়টি প্রকাশ্যে এনেছেন, জরিমানা ঘোষণা করেছেন— তাতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব অনিবার্য। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বারবার ‘বন্ধু’ আখ্যা দেওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন ‘শত্রু’র মতোই কথা বলছেন।
এদিকে ভারত ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোনো ভূমিকা নেই বলে দাবি করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। গত সোমবার ভারতের পার্লামেন্টে ‘অপারেশন সিন্দূর’ নিয়ে বিতর্ক চলাকালে তিনি এই দাবি করেন।
এস জয়শঙ্কর বলেন, গত ২২ এপ্রিল পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে ১৭ জুন যুদ্ধবিরতি ঘোষণা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যে কোনো কথা হয়নি।
এর আগে ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তিনিই নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদকে যুদ্ধ থেকে বিরত রেখেছেন। ট্রাম্পের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে আসছে ভারত। একই সঙ্গে কাশ্মীর ইস্যুতে মার্কিন মধ্যস্থতার বিষয়টিও নাকচ করে দিয়েছে নয়াদিল্লি।
তবে ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ঘটনায় কংগ্রেস মোদি সরকারকে তীব্রভাবে আক্রমণ করেছে। এক্স হ্যান্ডলে কংগ্রেস লিখেছে, ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে মোদি ট্রাম্পের পক্ষে প্রচার চালিয়েছিলেন। তাকে ভাইয়ের মতো জড়িয়ে ধরেছিলেন। অথচ এখন ট্রাম্প ভারতকে এমন কঠিন শুল্কে মারলেন। এটা ভারতের পররাষ্ট্রনীতির ভয়াবহ ব্যর্থতা।
আসলে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে ঘনিষ্ঠ। এমনকি ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধের সময়েও ভারত রাশিয়ার পাশে থেকেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল হলো— আমরা না হলে ওরা, দুই দিক রক্ষা করা যাবে না। যুক্তরাষ্ট্রের এই চাপেও ভারত রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে বলে মনে হয় না। বাংলাদেশ-চীনের সম্পর্ক নিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের এমন মাথাব্যথা রয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতের সামনে একাধিক কৌশল খোলা আছে। ট্রাম্পের সঙ্গে পুনরায় দরকষাকষি করা। কাজ না হলে জাপান-ফ্রান্সের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ভারতের চুক্তিগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করাও ভারতের সামনে সম্ভাব্য পথ। সম্ভাব্য পথের মধ্যে আরেকটা হতে পারে যে বাড়তি শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে বাণিজ্য ঘাটতি হবে তা অন্য দেশে পরিচালিত করা, যদিও কাজটি বেশ কঠিন।
বিবিসি বলছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বড় ধাক্কা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদেরা। তবে ঠিক কতটা ক্ষতি হবে, তা এখন পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। কারণ, ট্রাম্প ওই শুল্ক ছাড়াও আরও ‘অনির্দিষ্ট পরিমাণ’ জরিমানার ঘোষণা দিয়েছেন।
বিশ্লেষণ বলছে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত শুধু বাণিজ্য নয়, ভূরাজনীতির দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের এই বাণিজ্যিক ও কৌশলগত অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতেও বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
গণঅভ্যুত্থানের প্রারম্ভে যে গণআকাঙ্ক্ষা প্রকাশিত হয়েছে প্রথমত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে ও পরবর্তীকালে রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী, সুশীল সমাজ ও সর্বস্তরের জনসাধারণের পক্ষ থেকে, তা এক কথায় অভূতপূর্ব। বিগত অর্ধ শতাব্দী ধরে রাজনৈতিক সরকারগুলো যে যথাযথভাবে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে গ্রাহ্য করেনি, এই
৩ দিন আগেবিএনপি, যাদের এক দশকের বেশি সময় ধরে রাজনীতিতে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছিল, তারা চাইছিল ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হোক, যাতে তারা নিজেদের অবস্থান ফের শক্ত করতে পারে। তবে এনসিপি ও জামায়াত মনে করে, আগে সংবিধান সংস্কার ও নির্বাচন ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন দরকার—তারপরেই জাতীয় নির্বাচন দেওয়া যেতে পার
৪ দিন আগেদিনটি এখন ইতিহাসে খোদাই হয়ে আছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়— এটা কি কেবল রোমাঞ্চকর এক স্মৃতি, নাকি বদলে দিয়েছে দেশের ভবিষ্যৎগতি? যে আগুন জ্বলে উঠেছিল সেদিন, তা কি এখনও দীপ্ত? নাকি ঢেকে যাচ্ছে নতুন হতাশার ছায়ায়?
৬ দিন আগেতবে বহু বছর পর ব্যাংক ও বীমা খাত একসঙ্গে ধনাত্মক ধারায় প্রবেশ করেছে। এর কৃতিত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর দাবি করতেই পারেন। তিনি ধারাবাহিকভাবে ব্যাংক খাতে নীতি ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে গেছেন এবং আমানতকারীদের আস্থা ধরে রেখেছেন।
৭ দিন আগে