প্রবীণরা দেশের সম্পদ

মো. সিদ্দিকুর রহমান

মাতৃগর্ভই শিশুর স্বর্গ। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর শিশুর যন্ত্রণা কিঞ্চিত বাড়লেও সবার ভালোবাসায় জীবন পরিপূর্ণ থাকে। ক্রমান্বয়ে এ ভালোবাসা হ্রাস পেয়ে একেবারে কম দৃশ্যমান হয় প্রবীণ বয়সে। খানিকটা ভালোবাসা নিয়েই তাদের যেতে হয় পরপারে। পরিবার, সমাজ ও দেশকে সমৃদ্ধ করে রোগে-শোকে-দুঃখে, মরণের চিন্তায় ব্যাকুল হয়ে অধিকাংশ প্রবীণ থাকে অনেকটা মানসিক ভারসাম্যহীন। অনেকের ধারণা, প্রবীণরা শুয়ে-বসে খাচ্ছে, দিব্যি চলাফেরা করছে, চিকিৎসা নিচ্ছে-তারা তো মহাসুখেই আছে। আসলে অতীতকে হারিয়ে তাদের অনেকে থাকেন মানসিক যন্ত্রণায় কাতর।

পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সবার সঙ্গে সম্মিলিত আনন্দ-উৎসবে তারা অসহায়। তাদের এ অসহায়ত্বের চ্যালেঞ্জ যতদূর সম্ভব দূর করা আজকের প্রত্যাশা। পরিবারে তাদের বসবাসের ঘর থাকা উচিত আলো-বাতাসে পরিপূর্ণ। হাই কমোডযুক্ত মলমূত্র ত্যাগের সুব্যবস্থা থাকা দরকার। প্রচণ্ড শীতে গোসল, অজুসহ সব কাজে গরম পানির সুব্যবস্থা রাখা পরিবারের সদস্যদের কর্তব্য। ছোট শিশুর মতো তাদের সার্বক্ষণিক দেখভাল প্রয়োজন, যাতে তারা একাকিত্ববোধ না করেন। পরিবারের বাইরে তাদের দেখভালের দায়িত্ব সমাজকে গ্রহণ করতে হবে। রাস্তাঘাটে চলাফেরা, যানবাহনে যাতায়াত, চিকিৎসাসহ সর্বক্ষেত্রে সুব্যবস্থাসহ তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের উচিত।

আজকের শিশু আগামীর প্রবীণ। আজকের প্রবীণেরা দেশকে গড়ে এ সমৃদ্ধ অবস্থায় আনতে সক্ষম হয়েছেন। তাদের মেধা, মনন, কর্মদক্ষতাকে সমাজের উন্নয়নে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিতে হবে।

অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের ২০১৫ সালের বেতন স্কেলে বরাদ্দ চিকিৎসা ভাতা বর্তমানে অপ্রতুল। ওষুধপত্রসহ চিকিৎসা ব্যয় বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সংকটে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীরা নিদারুণ আর্থিক সংকটে নিমজ্জিত। পাশাপাশি হাসপাতালসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসার জন্য গিয়ে দীর্ঘ লাইনে সবার সঙ্গে দাঁড়িয়ে সিনিয়র সিটিজেন খ্যাত রোগীরা আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। অপরদিকে দেশের অধিকাংশ হাসপাতালে রোগীদের জন্য আলাদা হাই কমোডযুক্ত টয়লেটের ব্যবস্থা দেখা যায় না। প্রবীণদের জন্য সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় এমন বিড়ম্বনা কাম্য নয়। যাতায়াতের ক্ষেত্রে প্রবীণদের আলাদা কোনো আসন বরাদ্দ নেই, নেই আলাদা টিকিট কাটার ব্যবস্থা। প্রবীণরা শারীরিকভাবে অধিকতর দুর্বল। তাদের এ দুর্দশার জন্য পরিবার-সমাজের পাশাপাশি রাষ্ট্রকেও এগিয়ে আসতে হবে। এ বিষয়ে কতিপয় পরামর্শ উপস্থাপন করছি : প্রবীণদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে জেলা পর‌্যায়ে বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপন করা; হাসপাতালে প্রবীণদের জন্য আলাদা চিকিৎসা সুবিধা, লাইনে ও লিফটে অগ্রাধিকার দেওয়া, হাই কমোডবিশিষ্ট টয়লেটের সুব্যবস্থা রাখা; হাসপাতালে জরুরি বিভাগে আলাদা ডাক্তারসহ ‘প্রবীণ জরুরি বিভাগ’ রাখা; সরকারি হাসপাতালগুলোয় প্রবীণদের জন্য সব ওষুধ বিনামূল্যে সরবরাহের সুযোগ নিশ্চিত করা; প্রত্যেক হাসপাতালে শিশু বিভাগের মতো প্রবীণ বিভাগ রাখা; বিমানসহ সব যানবাহনে প্রবীণদের আলাদা আরামদায়ক আসনের ব্যবস্থা করা; অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের বয়সভেদে চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধি করা।

প্রবীণরা দেশের অভিজ্ঞ জনসম্পদ। তাদের যতœ নেওয়া জরুরী। এ জনসম্পদ আগামী প্রজন্মের বাতিঘর। তাদের কল্যাণে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

মো. সিদ্দিকুর রহমান

সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি

ad
ad

মতামত থেকে আরও পড়ুন

প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির দোলাচলে অর্থনীতি

ব্যাংক খাতের কিছুটা উন্নতি হলেও দুর্দশা কাটেনি। বিগত দিনগুলোতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সরকারের ইচ্ছানুযায়ী পরিচালিত হয়েছে, যা ব্যাংক ব্যবস্থাকে দুর্বল করে তুলেছে। এ খাতে সুশাসন ফেরাতে সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা বাস্তবায়ন করা গেলে ব্যাংক খাত আরও ভালো করবে।

৬ দিন আগে

অপারেশন মাউন্টেন ঈগল: মুক্তিযুদ্ধে তিব্বতী গেরিলা

কর্ণফুলীর স্রোতধারার সঙ্গে যুক্ত হয় বঙ্গোপসাগরের আছড়ে পড়া উত্তাল ঢেউ। সেই আনন্দের মাঝেই হঠাৎ যোগ দেয় একদল সশস্ত্র তিব্বতীয় গেরিলা। বঙ্গোপসাগরের ঢেউ আর কর্ণফুলীর স্রোত যেন স্তব্ধ হয়ে যায়। আনন্দে উদ্বেলিত জনতা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তিব্বতীয়দের দিকে।

১৩ দিন আগে

সব সংকট-শঙ্কার মধ‍্যেও বিজয়ের আশা ছাড়িনি

তখন আমাদের চিহ্নিত শত্রু ছিল হানাদার বাহিনী। তাদের সঙ্গে আরও চিহ্নিত হয়েছিল তাদের এ দেশীয় ‘কোলাবোরেটর’ বা সহযোগীরা, যারা ছিল মূলত রাজাকার, আলবদর বা আল শামস বাহিনীর। এরাও চিহ্নিত ছিল। এদের বিরুদ্ধে দেশের মানুষ একাট্টা হয়ে সংগ্রাম করেছে। সেই সংগ্রাম রক্তক্ষয়ী ছিল, বহু মানুষ অকাতরে শহিদ হয়েছে।

১৩ দিন আগে

সহিংসতার রাজনীতি আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?

রাজনৈতিক সহিংসতার চক্র যত বড় হয়, ততই সংকুচিত হয় নাগরিকদের নিরাপত্তা, গণতান্ত্রিক অধিকার, ভিন্নমতের পরিসর এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা। সামাজিক আস্থাও ক্ষয়ে যায়। আজ একজন হাদি আক্রান্ত,আগামীকাল কে বা কারা টার্গেট হবেন তা কেউ জানে না। সহিংসতা যখন ধীরে ধীরে রাজনৈতিক কৌশলে পরিণত হয়, ‘ব্যবহারযোগ্য হাতিয়ার’ হ

১৪ দিন আগে