বিজ্ঞান

বুক রিভিউ: হাউ লাইফ ওয়ার্কস

জীবনকে বোঝাতে বিজ্ঞানীরা চোখ রাখেন জীবকোষের অদ্ভুত বিস্ময়ের ভেতর। তাঁরা খুঁজে দেখেন ক্রোমোজোমের নিঃশব্দ কথোপকথন, মাইটোকন্ড্রিয়ার ক্লান্তিহীন কর্মচাঞ্চল্য, ডিএনএ আর আরএনএর লুকিয়ে থাকা সংকেত আর রাইবোজোমের নিরবিচ্ছিন্ন শিল্পকর্ম। প্রতিটি কোষের ভেতর যেন এক অদৃশ্য নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে অবিরাম। কিন্তু সত্যি বলতে, জীবন বলতে আমরা কী বুঝি? শুধু এই অণু-পরমাণুর টুকরো টুকরো গল্প? নাকি তার চেয়েও অনেক গভীর, অনেক রহস্যময় কিছু? জীবন আসলে কীভাবে চলে? এই প্রশ্ন যেন চিরকালীন এক মুগ্ধতা হয়ে আমাদের মনে গেঁথে থাকে।

এই প্রশ্নকে সামনে রেখে, জীবনের রহস্যভরা যাত্রাপথকে অনেক বেশি প্রাণবন্ত ও সহজ ভাষায় আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন বিখ্যাত বিজ্ঞানলেখক ফিলিপ বল তাঁর বই, How Life Works" A User's Guide to the New Biology এ। এটা নিছক কোনও টেক্সটবুকের মতো নয়। বরং জীবনের গভীর বুনোটগুলো কেমন ভাবে তৈরি হয়েছে সেটা নিয়ে বলা এক দারুণ গল্প।

ফিলিপ বল এখানে দেখিয়েছেন, জীবন মানে শুধু জেনেটিক কোড নয়। জীবনের কাজকর্ম চালানোর জন্য ডিএনএ একা দায়ী নয়, বরং জীবন একটা চলমান, দ্বন্দ্বময়, সমন্বিত প্রক্রিয়া। কোষের ভেতরে যেমন বিশৃঙ্খলা আর অগোছালো আচরণ দেখা যায়, ঠিক তেমনি আবার অদ্ভুত শৃঙ্খলাও তৈরি হয়। তিনি বোঝাতে চেষ্টা করেছেন, জীবনের নিয়মগুলো মোটেই মেশিনের মতো কড়াকড়ি ভাবে নিয়ন্ত্রিত নয়। বরং জীবন অনেক বেশি ফ্লেক্সিবল, ডায়নামিক এবং পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর দক্ষতা রাখে।

এই বইয়ের সবচেয়ে বড় মেসেজ হলো, জীবনের প্রকৃতি আসলে প্রবাহের মতো। জীবন কখনোই থেমে থাকে না। জীবন সবসময় চলছে, রূপ বদলাচ্ছে এবং নিজের ভেতরেই নতুন সম্ভাবনার জন্ম দিচ্ছে।

আমরা এতদিন ভাবতাম ডিএনএই হচ্ছে সবকিছুর চাবিকাঠি, কিন্তু ফিলিপ বল দেখিয়েছেন, কোষের আচরণ, পরিবেশের সাথে তার যোগাযোগ, কেমিক্যাল রিয়্যাকশন, সব মিলিয়ে জীবন তৈরি হয়। অর্থাৎ, জীবন একটা সিস্টেমিক ব্যাপার, যেটা অনেকগুলো স্তরে একসঙ্গে কাজ করে।

এই বইটি পড়লে বোঝা যায়, আধুনিক জীববিদ্যা এখন আর কেবল জিন নিয়েই সীমাবদ্ধ নয়। বরং বিজ্ঞানীরা এখন কোষের ভেতরের গতিবিধি, প্রোটিনের ভাঁজ খোলা, সিগনাল ট্রান্সডাকশন ইত্যাদি নানা বিষয়ের সন্ধান করছেন। ফিলিপ বল খুব সহজ ভাষায় বুঝিয়েছেন, একটা জীবন্ত কোষের মধ্যে সবকিছু একসঙ্গে হয়। একেবারে একটি সমন্বিত অর্কেস্ট্রার মতো।

ফিলিপ বলের লেখার ভঙ্গি একেবারেই ক্লাসরুমের মতো কাঠখোট্টা নয়। তিনি গল্পের ঢঙে, জীবনের নানা দিক তুলে ধরে, পাঠককে মনে করিয়ে দেন, জীবন একটা অবিশ্বাস্য শিল্পকর্ম, যেখানে জটিলতা আর সরলতার এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে।

সব মিলিয়ে বলা যায়, "How Life Works" একটি দুর্দান্ত বই। যারা আধুনিক জীববিজ্ঞানের নতুন দিগন্ত সম্পর্কে জানতে চান, অথবা ভাবতে চান জীবন আসলে কতটা চমকপ্রদ ও রহস্যময়, তাদের জন্য এই বই অবশ্যপাঠ্য। বিজ্ঞান যে কতটা প্রাণবন্ত, গল্পময় আর ভাবনার খোরাক হতে পারে, সেটা ফিলিপ বলের এই বই পড়লেই টের পাওয়া যায়।

ad
ad

খবরাখবর থেকে আরও পড়ুন

'বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ভারত'‍‍‌‌

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ভারত। বিশেষ করে শান্তি, গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তি ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে।

১৪ ঘণ্টা আগে

শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় নিয়ে যা বলল ভারত

সোমবার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঘোষিত রায়কে কেন্দ্র করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলছে, নির্বাসনে থাকা হাসিনার রায় ভারত ‘নজরে নিয়েছে’ এবং ‘বাংলাদেশের জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ রয়েছে।

১৪ ঘণ্টা আগে

শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রত্যাখ্যান ১ হাজার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের

তারা বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে রায় ঘোষণা করেছে তা প্রহসনমূলক ও অগ্রহণযোগ্য। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বর্তমানে ক্যাঙারু কোর্টের রূপ পরিগ্রহ করেছে। এখন এই আদালত স্বৈরাচারী, পক্ষপাতদুষ্ট এবং ন্যায়

১৪ ঘণ্টা আগে

হাসিনা-কামালের সম্পদ বাজেয়াপ্তের নির্দেশ

এই মামলায় প্রসিকিউশন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এস এইচ তামিম শুনানি করেন। এছাড়া শুনানিতে প্রসিকিউটর বি এম সুলতান মাহমুদ, শাইখ মাহদি, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্য প্রসিকিউটরা উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে, পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুন

১৪ ঘণ্টা আগে