রাজশাহীর আদালত

শিক্ষার্থী হত্যা মামলার আসামিদের আইনজীবীরাই হলেন জিপি-পিপি!

রাজশাহী ব্যুরো

রাজশাহীর আদালতে নতুন সরকারি কৌঁসুলি (জিপি), অতিরিক্ত জিপি, পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি), অতিরিক্ত পিপি ও সহকারী পিপি নিয়োগ দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। নিয়োগ পাওয়া ১২৪ নতুন আইন কর্মকর্তার প্রায় সবাই বিএনপিপন্থী। এমনকি গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের আন্দোলনে রাজশাহীতে গুলিতে নিহত দুই শিক্ষার্থী হত্যাকাণ্ডের মামলায় আসামিপক্ষের হয়ে লড়া আইনজীবীরাও বিভিন্ন আদালতের সরকারি কৌঁসুলী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। এ নিয়ে রাজশাহীজুড়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।

জানা যায়, গত ৩ নভেম্বর জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আইন মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো ওই পত্রে জেলা জজ, জেলা জজ ও দায়রা, দ্রুত বিচার, বিভাগীয় বিশেষ জজ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ১ ও ২, সাইবার, জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন, সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইবুনাল, মানব পাচার অপরাধ দমন, শিশু আদালত ১ ও ২ এবং মহানগর দায়রা জজ আদালতে মোট ১২৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

অভিযোগ উঠেছে, পক্ষপাতিত্বের মাধ্যমে ওই ১২৪ নতুন আইন কর্মকর্তার প্রায় সব পদেই বিএনপিপন্থীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ফলে সাধারণ আইনজীবীদের মূল্যায়ন করা হয়নি।

জানা গেছে, মূল পিপি, স্পেশাল পিপি ও বিশেষ পিপি পদে মোট আট পদে জায়গা না পেলেও ২৫টি অতিরিক্ত পিপি ও ৭টি অতিরিক্ত জিপির পদে একজন করে জামায়াতপন্থী আইনজীবী নিয়োগ পেয়েছেন।

এ বিষয়ে জামায়াতপন্থী আইনজীবী ও বার অ্যাসোসিয়েশনের নেতা হাসানুল বান্না সোহাগ বলেন, এই পদগুলোর সংখ্যা প্রয়োজন অনুযায়ী বাড়ানো বা কমানো যায়। এ তালিকা দেখে আমরা চরমভাবে অসন্তুষ্ট ও মর্মাহত।

অভিযোগ রয়েছে, গত ৫ আগস্ট রাজশাহীতে শহীদ আলী রায়হান ও শহীদ আনজুম সাকিব হত্যা মামলার আসামিপক্ষের হয়ে মামলা পরিচালনা করা আইনজীবীরাও নিয়োগ পেয়েছেন এসব জনগুরুত্বপূর্ণ পদে। তারা আওয়ামী লীগের আসামিদের পক্ষে ছিলেন, শুনানিও করেছেন। তবু তারা সরকারি আইন কর্মকর্তা নিয়োগ পাওয়ার ঘটনায় আইনজীবীদের মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের নেতা এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নবনিযুক্ত পিপি রাইসুল ইসলাম নিজেই ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের আসামিদের পক্ষে মামলা লড়েছেন। শহীদ আলী রায়হান ও শহীদ সাকিব আনজুম হত্যা মামলার আসামিদের জামিনের জন্য তার স্বাক্ষরিত একটি ওকালতনামার কপি প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। সেখানে রাইসুল সিল দেওয়ার পর নামটা ক্রস চিহ্ন দিয়ে কেটে দিয়েছেন। তিনি নিজেই আদালতে হাজির থেকে মামলা পরিচালনা করেছেন। তার জুনিয়র এডভোকেট শহিদ উদ্দিন চান্দাও সাথে ছিলেন। ওই আদালতের অতিরিক্ত পিপি এডভোকেট আজিমুস সান উজ্জ্বলও জুলাই বিপ্লবে ছাত্রদের বিপক্ষে দাঁড়ানো আওয়ামী লীগের আসামিদের হয়ে আদালতে মামলা লড়েছেন। তারও স্বাক্ষর করা ওকালতনামার কপি পাওয়া গেছে। এছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর নতুন পিপি এডভোকেট ইমতিয়ার মাসরুর আল আমীনও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হয়ে মামলা পরিচালনা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিএনপিপন্থী আইনজীবী পারভেজ তৌফিক জাহেদীর নামও রয়েছে ওই তালিকায়।

এ বিষয়ে নগর জামায়াতের নায়েবে আমির ও রাজশাহী বারের সাবেক সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু মোহাম্মদ সেলিম বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করে আমরা বৈষম্যের শিকার। আন্দোলন সংগ্রামে যারা মিছিল মিটিং করেছে, তাদের নাম নাই। এ নিয়োগের প্রতিবাদ জানাই আমরা। বৈষম্যহীন ও স্বচ্ছভাবে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

এ ব্যাপারে অ্যাডভোকেট রাইসুল ইসলাম বলেন, তালিকা থেকে বিএনপিরও কিছু বাদ গেছে, জামায়াতেরও কিছু বাদ গেছে। এটা কারেকশনের জন্য চেষ্টা করছি দ্রুতভাবে। ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের আসামিদের পক্ষে মামলা লড়ার প্রশ্নে তিনি বলেন, হত্যা মামলায় আমরা নিজেরাই বাদির লোক। কাজেই এই তথ্য সঠিক নয়।

রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহবায়ক এডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা বলেন, এ নিয়োগে কারা কীভাবে এসেছে, নিয়োগ কীভাবে হয়েছে, কতজন হয়েছে- এগুলো কিছুই আমার নলেজে নাই।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক জিকেএম মেশকাত চৌধুরী মিশু বলেন, শহীদ আলী রায়হান ও শহীদ সাকিব আঞ্জুমের হত্যাকারীদের আইনী সহায়তা দেওয়া আইনজীবীদেরই গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে নিয়োগের তীব্র প্রতিবাদ জানাই। ফ্যাসিস্টদের দোসরদের পুনর্বাসনকারীদের ছাত্র সমাজ মেনে নিবে না। আমরা দ্রুত এই নিয়োগ সংশোধনের দাবি জানাই। অন্যথায় ছাত্ররা আবারও রাজপথে নামতে বাধ্য হবে।

ad
ad

মাঠের রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

ইউনিয়ন বিএনপির সম্পাদক হলেন তথ্য উপদেষ্টার বাবা

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার ইছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের বাবা আজিজুর রহমান বাচ্চু।

১৩ ঘণ্টা আগে

আউশ আবাদ: কম খরচে ভালো ফলনে নান্দাইলের কৃষক খুশি

এ বছর নান্দাইলে আউশ ধানের আবাদ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হয়েছে। এবার ১ হাজার ২৫০ হেক্টর জমির লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আবাদ হয়েছে মাত্র ৮৫০ হেক্টর জমিতে। তবে ফলন ভালো হয়েছে, প্রতি হেক্টরে গড় ফলন ২.৮২ মেট্রিক টন।

১৫ ঘণ্টা আগে

এক মোটরসাইকেলে ৪ জন, প্রাইভেটকারের ধাক্কায় নিহত ৩

১৮ ঘণ্টা আগে

বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় কিশোরীকে কুপিয়ে জখম, গ্রেফতার ৩

১ দিন আগে