নেত্রকোনা প্রতিনিধি
দেশবরেণ্য বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, মার্কসবাদী দার্শনিক, চিন্তক, সাম্যবাদী তাত্বিক, প্রাবন্ধিক বাংলা একাডেমি পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত অধ্যাপক যতীন সরকার স্যারের নাগরিক শোকসভা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে নেত্রকোনা শহরের মোক্তারপাড়া এলাকায় জেলা পাবলিক হলে নাগরিক শোকসভা আয়োজক কমিটি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন কমিটির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রাবন্ধিক হায়দার জাহান চৌধুরী। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে পরিচালনা করেন সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান ও সদস্য মো. আলমগীর।
রাত সাতটায় শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে প্রথমে যতীন সরকারের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ সময় দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন শেষে শোকপত্র পাঠ করেন লেখক ও গবেষক আলী আহাম্মদ খান আইয়ুোব। পরে শোকপত্রটি যতীন সরকারের ছোট ভাই অধ্যাপক মতীন্দ্র সরকারের হাতে তুলে দেয় আয়োজক কমিটি। এরপর যতীন সরকারের পছন্দের কয়েকটি রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী নারায়ণ কর্মকার ও তনুশ্রী সরকার। আলোচনা শুরুর প্রারম্ভে যতীন সরকারের স্মৃতি ও কৃতি নির্ভর ভিডিও প্রদর্শনী করা হয়।
অধ্যাপক যতীন সরকারের সঙ্গে যাপিত সময়ের স্মৃতি তুলে ধরে কবি এনামূল হক বলেন, যতীন সরকারের মতো মানুষের মৃত্যু হয় না। তাঁর প্রয়াণ আমাদের শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে এটা ঠিক কিন্তু তিনি রেখে গেলেন এক বিশাল উত্তরাধিকার—আমাদের মননে, চিন্তায় ও বেড়ে ওঠার প্রতিটি ধাপে তিনি আছেন এবং থাকবেন।
নেত্রকোনা গ্রন্থ আলোচনা পরিষদের সদস্য সচিব সাংবাদিক পল্লব চক্রবর্তী বলেন, যতীন সরকার জীবনকে সহজভাবে দেখেছেন। জীবনে সফলতা লাভ করতে হলে যে শক্তি ও প্রতিভার প্রয়োজন তা সবই যতীন সরকারের ছিল। তিনি মাস্টার হতে চেয়েছিলেন এবং তাই হয়ে জীবনভর মাস্টারি ও মানবমুক্তির জয়গান গেয়ে গেছেন। যতীন সরকারের সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল তাঁর বিদ্যা ও সৎ জীবনযাপন। তাই তিনি যা বিশ্বাস করতেন তা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলে যেতে পেরেছেন। মৃত্যুর আগেও তিনি বলে গিয়েছিলেন-তাঁর জীবনে কোনো ব্যর্থতা নেই, দুঃখও নেই, শুধু আনন্দ এবং আনন্দ।
প্রাবন্ধিক স্বপন কুমার পাল বলেন, যতীন সরকার কালকে ধারণ করে হয়েছিলেন কালের দার্শনিক। তাঁর দর্শনকে উত্তর প্রজন্মের কাছে তুলে ধরাই হবে আমাদের যতীন সরকারের প্রতিশ্রদ্ধা।
প্রাবন্ধিক অধ্যাপক স্বপন ধর বলেন, যতীন সরকার ছিলেন একজন অমিত প্রতিভাবান মনীষী। তিনি সামাজিক, সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, মুক্তমনা ও সাম্যের সমাজ গড়তে একনিষ্ঠভাবে লড়ে গেছেন। তিনি যে সাধনা করে গেছেন, যা রেখে গেছেন, তা আমাদের নানাভাবে স্মরণ করতে হবে।
নেত্রকোণা উদীচীর সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক বাচ্চু বলেন, 'যতীন সরকার শুধু প্রাবন্ধিক নন, ছিলেন এই দেশের মুক্তবুদ্ধির অদম্য আলোর দিগন্ত। যে অসাম্প্রদায়িক চেতনা, জ্ঞান, সাহস আর সত্যনিষ্ঠার আলো তিনি আমাদের মধ্যে জ্বালিয়ে দিয়ে গেছেন, তা কখনো নেভার নয়।'
নেত্রকোণা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রাবন্ধিক বিধান মিত্র বলেন, 'যতীন সরকার মৃত্যুর দিগন্ত পর্যন্ত বহন করেছেন সমাজতন্ত্রের লাল পতাকার রোদ, ধর্মনিরপেক্ষতার স্বচ্ছ বাতাস, মার্কসীয় বিশ্লেষণের তীক্ষ্ণ আলো। ৫০ বছর বয়সে সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা ছিল তাঁর প্রথম অঙ্কুর, আর পাকিস্তানের জন্মমৃত্যু-দর্শন হয়ে উঠেছিল ইতিহাসের অন্দরমহল উন্মোচনের দর্পণ। তাঁর কলমে পাভলবীয় মনোবিজ্ঞান, ঐতিহাসিক-দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ, আর ইহবাদী দার্শনিক চেতনা এক স্রোতে মিলেমিশে গড়েছে নতুন চিন্তার খাত।
নাগরিক শোকসভায় বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরীর সভাপতিত্বে জেলা উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান খানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন, অধ্যাপক যতীন স্যারের সহোদর ছোট ভাই অধ্যাপক মতীন্দ্র সরকার, প্রফেসর ননী গোপাল সরকার, কবি সরোজ মোস্তফা, সিপিবি জেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক ননিলী সরকার, সিনিয়র সাংবাদিক শ্যামলেন্দু পাল, অধ্যাপক হারাধন, রাজু’র বাজার স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা, নারী প্রগতি সংঘের ব্যবস্থাপক মৃণাল কান্তি চক্রবর্তী, শিকড় উন্নয়ন কর্মসূচির সভাপতি জিয়াউর রহমান খোকন, বিরিশিরি কালচারাল একাডেমির পরিচালক কবি পরাগ রিছিল, প্রত্যাশা সাহিত্য গোষ্ঠীর সভাপতি মনির হোসেন বরুণ, রবীন্দ্র সম্মিলন পরিষদ জেলা শাখার সভাপতি এডভোকেট পূরবী কুন্ড, নেত্রকোণা সাহিত্য সমাজের সাধারণ সম্পাদক কবি তানভীর জাহান চৌধুরী, লেখক পূরবী সম্মানিত, সাংবাদিক আলপনা বেগম, ভাস্কর শিল্পী অখিল পাল, কবি জুয়েল বিশ্বাস প্রমুখ।
এসময় অধ্যাপক যতীন সরকার স্যারের শিক্ষা জীবন, শিক্ষকতা পেশায় বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন এবং যতীন সরকার স্যারের লেখা ও লেখক হওয়া নিয়ে বিস্তর আলোচনার পাশাপাশি মফস্বল এলাকায় বসবাস করে গুণীজন হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া খুবই বিরল বলে জানান বক্তারা।
উল্লেখ্য যে, গত ১৩ আগস্ট বুধবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন অধ্যাপক যতীন সরকার।
যতীন সরকার ১৯৩৬ সালের ১৮ আগস্ট নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার চন্দ্রপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে বেড়ে ওঠা যতীন সরকারের ছোটকাল থেকেই স্বপ্ন ছিল একজন আদর্শ শিক্ষক হওয়ার। ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক এই শিক্ষক সুদীর্ঘকাল ধরে মননশীল সাহিত্য চর্চা, বাম রাজনীতি এবং প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। তিনি দুই মেয়াদে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া কর্মী, সংগঠক ও অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেছেন বহু সংগঠনের। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট ষড়যন্ত্রকারীদের মদদে ঘাতকচক্র যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে এরপর তৎকালীন সরকার আওয়ামী লীগ, কমিউনিস্ট পার্টিসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল রাজনৈতিকদল ও বুদ্ধিজীবীদের আটক করে বিনা বিচারে জেলে রাখা হয়। এসময় যতীন সরকারকেও জেল খাটতে হয়েছে ১৮মাস।
ছাত্রজীবনে লেখালেখি শুরু হলেও যতীন সরকারের প্রথম বই ‘সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা' প্রকাশিত হয় ১৯৮৫ সালে ৫০ বছর বয়সে। এরপর একে একে প্রকাশিত হয় বাংলাদেশের কবি গান, বাঙালির সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য, গল্পে গল্পে ব্যাকরণ, মানব মন মানব ধর্ম ও সমাজ বিপ্লব, পাকিস্তানের জন্ম-মৃত্যু দর্শন, পাকিস্তানের ভূত দর্শন, দ্বিজাতিতত্ত্ব নিয়তিবাদ ও বিজ্ঞান চেতনা, ধর্মতন্ত্রী মৌলবাদের ভূতভবিষ্যৎসহ প্রায় ৫৫টির মতো বই। সেই সঙ্গে সম্পাদনা করেছেন বহু গ্রন্থ। সাম্যবাদী রাজনৈতিক দর্শনে অবিচল এই লেখকের প্রায় প্রতিটি বইয়েই গভীর দার্শনিকতা ও ইতিহাস ছাড়াও সমাজ বিপ্লবের প্রয়োজনীয়তার কথা উঠে এসেছে।
লেখক হিসেবে যতীন সরকার ২০১০ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার, ২০০৭ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পদক, নেত্রকোণা সাহিত্য সমাজ কর্তৃক খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পদক, ২০০৫ সালে পাকিস্তানের জন্ম-মৃত্যু দর্শন গ্রন্থের জন্য প্রথম আলো বর্ষসেরা গ্রন্থপুরস্কার, ড. এনামুল হক স্বর্ণ পদক, খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার, মনিরুদ্দীন ইউসুফ সাহিত্য পুরস্কার, বাংলাদেশ মানবাধিকার নাট্য পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মাননা সহ অসংখ্য সম্মাননা ও পদক লাভ করেন। ৪২ বছরের বেশি সময় শিক্ষকতা পেশায় থেকে ২০০২ সালে অবসর গ্রহণের পর স্ত্রী কানন বালা সরকারকে নিয়ে নিজ জেলা নেত্রকোণায় থাকেন। জেলা শহরের সাতপাই এলাকার ‘বানপ্রন্থ’ নামের ওই বাসাটি এখন তাঁর মতাদর্শে বিশ্বাসী সতীর্থ, শিষ্য, ছাত্রদের জ্ঞান চর্চার কেন্দ্র। তিনি এক মেয়ে ও এক ছেলের জনক। ছেলে সুমন সরকার পেশায় চিকিৎসক। বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। মেয়ে সুদিপ্তা সরকার যুগ্ম জেলা জজ হিসেবে কর্মরত।
দেশবরেণ্য বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, মার্কসবাদী দার্শনিক, চিন্তক, সাম্যবাদী তাত্বিক, প্রাবন্ধিক বাংলা একাডেমি পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত অধ্যাপক যতীন সরকার স্যারের নাগরিক শোকসভা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে নেত্রকোনা শহরের মোক্তারপাড়া এলাকায় জেলা পাবলিক হলে নাগরিক শোকসভা আয়োজক কমিটি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন কমিটির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রাবন্ধিক হায়দার জাহান চৌধুরী। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে পরিচালনা করেন সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান ও সদস্য মো. আলমগীর।
রাত সাতটায় শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে প্রথমে যতীন সরকারের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ সময় দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন শেষে শোকপত্র পাঠ করেন লেখক ও গবেষক আলী আহাম্মদ খান আইয়ুোব। পরে শোকপত্রটি যতীন সরকারের ছোট ভাই অধ্যাপক মতীন্দ্র সরকারের হাতে তুলে দেয় আয়োজক কমিটি। এরপর যতীন সরকারের পছন্দের কয়েকটি রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী নারায়ণ কর্মকার ও তনুশ্রী সরকার। আলোচনা শুরুর প্রারম্ভে যতীন সরকারের স্মৃতি ও কৃতি নির্ভর ভিডিও প্রদর্শনী করা হয়।
অধ্যাপক যতীন সরকারের সঙ্গে যাপিত সময়ের স্মৃতি তুলে ধরে কবি এনামূল হক বলেন, যতীন সরকারের মতো মানুষের মৃত্যু হয় না। তাঁর প্রয়াণ আমাদের শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে এটা ঠিক কিন্তু তিনি রেখে গেলেন এক বিশাল উত্তরাধিকার—আমাদের মননে, চিন্তায় ও বেড়ে ওঠার প্রতিটি ধাপে তিনি আছেন এবং থাকবেন।
নেত্রকোনা গ্রন্থ আলোচনা পরিষদের সদস্য সচিব সাংবাদিক পল্লব চক্রবর্তী বলেন, যতীন সরকার জীবনকে সহজভাবে দেখেছেন। জীবনে সফলতা লাভ করতে হলে যে শক্তি ও প্রতিভার প্রয়োজন তা সবই যতীন সরকারের ছিল। তিনি মাস্টার হতে চেয়েছিলেন এবং তাই হয়ে জীবনভর মাস্টারি ও মানবমুক্তির জয়গান গেয়ে গেছেন। যতীন সরকারের সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল তাঁর বিদ্যা ও সৎ জীবনযাপন। তাই তিনি যা বিশ্বাস করতেন তা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলে যেতে পেরেছেন। মৃত্যুর আগেও তিনি বলে গিয়েছিলেন-তাঁর জীবনে কোনো ব্যর্থতা নেই, দুঃখও নেই, শুধু আনন্দ এবং আনন্দ।
প্রাবন্ধিক স্বপন কুমার পাল বলেন, যতীন সরকার কালকে ধারণ করে হয়েছিলেন কালের দার্শনিক। তাঁর দর্শনকে উত্তর প্রজন্মের কাছে তুলে ধরাই হবে আমাদের যতীন সরকারের প্রতিশ্রদ্ধা।
প্রাবন্ধিক অধ্যাপক স্বপন ধর বলেন, যতীন সরকার ছিলেন একজন অমিত প্রতিভাবান মনীষী। তিনি সামাজিক, সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, মুক্তমনা ও সাম্যের সমাজ গড়তে একনিষ্ঠভাবে লড়ে গেছেন। তিনি যে সাধনা করে গেছেন, যা রেখে গেছেন, তা আমাদের নানাভাবে স্মরণ করতে হবে।
নেত্রকোণা উদীচীর সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক বাচ্চু বলেন, 'যতীন সরকার শুধু প্রাবন্ধিক নন, ছিলেন এই দেশের মুক্তবুদ্ধির অদম্য আলোর দিগন্ত। যে অসাম্প্রদায়িক চেতনা, জ্ঞান, সাহস আর সত্যনিষ্ঠার আলো তিনি আমাদের মধ্যে জ্বালিয়ে দিয়ে গেছেন, তা কখনো নেভার নয়।'
নেত্রকোণা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রাবন্ধিক বিধান মিত্র বলেন, 'যতীন সরকার মৃত্যুর দিগন্ত পর্যন্ত বহন করেছেন সমাজতন্ত্রের লাল পতাকার রোদ, ধর্মনিরপেক্ষতার স্বচ্ছ বাতাস, মার্কসীয় বিশ্লেষণের তীক্ষ্ণ আলো। ৫০ বছর বয়সে সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা ছিল তাঁর প্রথম অঙ্কুর, আর পাকিস্তানের জন্মমৃত্যু-দর্শন হয়ে উঠেছিল ইতিহাসের অন্দরমহল উন্মোচনের দর্পণ। তাঁর কলমে পাভলবীয় মনোবিজ্ঞান, ঐতিহাসিক-দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ, আর ইহবাদী দার্শনিক চেতনা এক স্রোতে মিলেমিশে গড়েছে নতুন চিন্তার খাত।
নাগরিক শোকসভায় বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরীর সভাপতিত্বে জেলা উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান খানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন, অধ্যাপক যতীন স্যারের সহোদর ছোট ভাই অধ্যাপক মতীন্দ্র সরকার, প্রফেসর ননী গোপাল সরকার, কবি সরোজ মোস্তফা, সিপিবি জেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক ননিলী সরকার, সিনিয়র সাংবাদিক শ্যামলেন্দু পাল, অধ্যাপক হারাধন, রাজু’র বাজার স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা, নারী প্রগতি সংঘের ব্যবস্থাপক মৃণাল কান্তি চক্রবর্তী, শিকড় উন্নয়ন কর্মসূচির সভাপতি জিয়াউর রহমান খোকন, বিরিশিরি কালচারাল একাডেমির পরিচালক কবি পরাগ রিছিল, প্রত্যাশা সাহিত্য গোষ্ঠীর সভাপতি মনির হোসেন বরুণ, রবীন্দ্র সম্মিলন পরিষদ জেলা শাখার সভাপতি এডভোকেট পূরবী কুন্ড, নেত্রকোণা সাহিত্য সমাজের সাধারণ সম্পাদক কবি তানভীর জাহান চৌধুরী, লেখক পূরবী সম্মানিত, সাংবাদিক আলপনা বেগম, ভাস্কর শিল্পী অখিল পাল, কবি জুয়েল বিশ্বাস প্রমুখ।
এসময় অধ্যাপক যতীন সরকার স্যারের শিক্ষা জীবন, শিক্ষকতা পেশায় বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন এবং যতীন সরকার স্যারের লেখা ও লেখক হওয়া নিয়ে বিস্তর আলোচনার পাশাপাশি মফস্বল এলাকায় বসবাস করে গুণীজন হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া খুবই বিরল বলে জানান বক্তারা।
উল্লেখ্য যে, গত ১৩ আগস্ট বুধবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন অধ্যাপক যতীন সরকার।
যতীন সরকার ১৯৩৬ সালের ১৮ আগস্ট নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার চন্দ্রপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে বেড়ে ওঠা যতীন সরকারের ছোটকাল থেকেই স্বপ্ন ছিল একজন আদর্শ শিক্ষক হওয়ার। ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক এই শিক্ষক সুদীর্ঘকাল ধরে মননশীল সাহিত্য চর্চা, বাম রাজনীতি এবং প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। তিনি দুই মেয়াদে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া কর্মী, সংগঠক ও অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেছেন বহু সংগঠনের। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট ষড়যন্ত্রকারীদের মদদে ঘাতকচক্র যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে এরপর তৎকালীন সরকার আওয়ামী লীগ, কমিউনিস্ট পার্টিসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল রাজনৈতিকদল ও বুদ্ধিজীবীদের আটক করে বিনা বিচারে জেলে রাখা হয়। এসময় যতীন সরকারকেও জেল খাটতে হয়েছে ১৮মাস।
ছাত্রজীবনে লেখালেখি শুরু হলেও যতীন সরকারের প্রথম বই ‘সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা' প্রকাশিত হয় ১৯৮৫ সালে ৫০ বছর বয়সে। এরপর একে একে প্রকাশিত হয় বাংলাদেশের কবি গান, বাঙালির সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য, গল্পে গল্পে ব্যাকরণ, মানব মন মানব ধর্ম ও সমাজ বিপ্লব, পাকিস্তানের জন্ম-মৃত্যু দর্শন, পাকিস্তানের ভূত দর্শন, দ্বিজাতিতত্ত্ব নিয়তিবাদ ও বিজ্ঞান চেতনা, ধর্মতন্ত্রী মৌলবাদের ভূতভবিষ্যৎসহ প্রায় ৫৫টির মতো বই। সেই সঙ্গে সম্পাদনা করেছেন বহু গ্রন্থ। সাম্যবাদী রাজনৈতিক দর্শনে অবিচল এই লেখকের প্রায় প্রতিটি বইয়েই গভীর দার্শনিকতা ও ইতিহাস ছাড়াও সমাজ বিপ্লবের প্রয়োজনীয়তার কথা উঠে এসেছে।
লেখক হিসেবে যতীন সরকার ২০১০ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার, ২০০৭ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পদক, নেত্রকোণা সাহিত্য সমাজ কর্তৃক খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পদক, ২০০৫ সালে পাকিস্তানের জন্ম-মৃত্যু দর্শন গ্রন্থের জন্য প্রথম আলো বর্ষসেরা গ্রন্থপুরস্কার, ড. এনামুল হক স্বর্ণ পদক, খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার, মনিরুদ্দীন ইউসুফ সাহিত্য পুরস্কার, বাংলাদেশ মানবাধিকার নাট্য পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মাননা সহ অসংখ্য সম্মাননা ও পদক লাভ করেন। ৪২ বছরের বেশি সময় শিক্ষকতা পেশায় থেকে ২০০২ সালে অবসর গ্রহণের পর স্ত্রী কানন বালা সরকারকে নিয়ে নিজ জেলা নেত্রকোণায় থাকেন। জেলা শহরের সাতপাই এলাকার ‘বানপ্রন্থ’ নামের ওই বাসাটি এখন তাঁর মতাদর্শে বিশ্বাসী সতীর্থ, শিষ্য, ছাত্রদের জ্ঞান চর্চার কেন্দ্র। তিনি এক মেয়ে ও এক ছেলের জনক। ছেলে সুমন সরকার পেশায় চিকিৎসক। বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। মেয়ে সুদিপ্তা সরকার যুগ্ম জেলা জজ হিসেবে কর্মরত।
পটুয়াখালী সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের পঁচাকোড়ালিয়া গ্রামে দেশের নবম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) স্থাপনের কাজ চলছে। এই প্রকল্পের জন্য মোট ৪১০.৭৮ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।
১২ ঘণ্টা আগেহোমনার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ক্ষেমালিকা চাকমা সাংবাদিকদের বলেন, বুধবার ধর্ম অবমাননার কারণে জনতার মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বিক্ষুব্ধ জনতা মাজারে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে।
২০ ঘণ্টা আগেএদিকে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় উপাচার্যের বাসভবনের সামনে তারা এ কর্মসূচি পালন করেন।
১ দিন আগে