মধুমতীর পেটে যাচ্ছে বাড়ি-ঘর, দিশেহারা ৪ গ্রামের মানুষ

নড়াইল প্রতিনিধি
ভাঙনের মুখে স্কুল। যেকোনো সময় বিলীন হয়ে যেতে পারে মধুমতী নদীর গর্ভে। ছবি: রাজনীতি ডটকম

টেকসই বাঁধ নির্মাণ না করা এবং অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলণে আবারো নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার চারটি গ্রামের মধুমতি নদীর পাড় ভাঙতে শুরু করেছে।

গ্রামগুলো হলো, মাকড়াইল, কাশিপুর, রামচন্দ্রপুর ও নওখোলা। এসব গ্রামের বিভিন্ন মসজিদ-মন্দির,কৃষি জমি,আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরসহ গ্রামীণ সড়ক। অসময়ের ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে গ্রামীণ জনপদের মানুষ।দায়িত্বহীন কর্মকাণ্ডের জন্য ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষ পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ স্থানীয় প্রশাসনকে দুষছেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, ১৯৪৫ সালে স্থাপিত উপজেলার মাকড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ভাঙনের কবলে পড়েছে।

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, ১০ বছর আগে থেকেই বিদ্যালয়টির অবকাঠামোসহ জায়গা ভাঙতে শুরু করে। ঐতিহ্য ধরে রাখতে ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান চালিয়ে আসছে। এবারো একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

লোহাগড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবু রিয়াদ বলেন, নদী ভাঙনের কারণে ওই এলাকার বালুমহালের ইজারা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কেউ বালু উত্তোলণ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিগত দিনে কীভাবে বালু মহাল নির্ধারণসহ ইজারা বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে তা জানা নেই ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী অভিজিৎ কুমার সাহা বলেন, নিয়ম না মেনে বালু উত্তোলণ করায় নদী তীরবর্তী প্রতিরক্ষা বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রকল্পের বাইরে আমরা কাজ করতে পারি না। যথাযথ নিয়মেই কাজ করা হয়ে থাকে। তিনি দাবি করেন,নিয়ম বর্হিভূতভাবে বালু উত্তোলণ করায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

Narail Modhumoti River Erosion News Photo 04-05-2025 (2)

বর্ষা আসার আগেই শুরু হয়েছে মধুমতী নদীতে ভাঙন। ছবি: রাজনীতি ডটকম

সরেজমিন দেখা যায়, মধুমতি নদী তীরবর্তী লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর গ্রামের শামসুন্নাহার বেগমের বাড়ির সামনেই ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলণ করা হচ্ছে। সেই বালু স্তুপ করে রাখা হচ্ছে ওই পরিবারের বাড়ির পেছনের ফাঁকা স্থানে। যে কারণে বালুর চাপে বাঁধ প্রতিরক্ষা কাজে ব্যবহৃত বালুর বস্তাসহ শামসুন্নাহারের বাড়ির কিছু অংশ ধ্বসে গেছে নদীর ভেতরে। শুধু কাশিপুর গ্রামই নয়, এমন অবস্থা বিরাজ করছে নদী তীরবর্তী মাকড়াইল, কাশিপুর, রামচন্দ্রপুর ও নওখোলা গ্রাম।

শামসুন্নাহার বলেন, এখন ঝড়-বৃষ্টি নেই, নদীতে স্রোত নেই, ঢেউ নেই, বড় বড় লঞ্চ-স্টিমারও চলে না। শুধু নদী থেকে বালি উত্তোলণের কারণেই আমার বসতভিটা ভাঙতে শুরু করেছে।

তিনি আরো বলেন, আমার স্বামী নেই, জমি-টাকা পয়সাও নেই, যে অন্য জায়গায় গিয়ে ঘর-বাড়ি বানাবো।

মাকড়াইল গ্রামের ফজলুর রহমান বলেন, নদী ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড বেশ কয়েক বছর ভাঙনকবলিত কিছু স্থানে বালুর বস্তা ফেলায় ভাঙন কিছুটা কমেছিল। একটি মহল নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে বালু উত্তোলণ করায় বাঁধের অনেকাংশ ভেঙে পানিতে নেমে গেছে। সেই স্থানের পাশে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু কাটা হচ্ছে। যে কারণে অসময়ে নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, কেউ মনে রাখে না নদীর পাড় বালুর তৈরি। একটু আঘাত আনলে সেখানে আস্তে আস্তে ভাঙন শুরু হয়। বাড়ির পাশের উচ্চ শিক্ষার একমাত্র বাদিঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও ভাঙনের মুখে পড়েছে।

রামচন্দ্রপুর গ্রামের বৃদ্ধা মর্জিনা বেগম বলেন, ‘আমাদের কয়েক বিঘে মাঠাম জমি এই নদী গিলিছে। আগে দুইবার বাড়ি ভাঙিছে। কষ্ট করে নতুন বাড়ি করিছি। নতুন বাড়িও ভাঙার মুখে পড়িছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় বাসিন্দারা লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহীর কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে নির্বাহী কর্মকর্তা আবু রিয়াদ বালু মহালের বন্দোবস্ত বন্ধ করে দেন। নতুন করে কোনো বন্দোবস্ত দেওয়া হবে না এমন সিদ্ধান্তও নিয়েছেন। এতে স্থানীয়রা মহাখুশি । তবে তারা আশা করছেন, এটা যেন স্থায়ী হয়। ভাঙনে যেন আর কারোর কোনো ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য স্থায়ী বন্দোবস্ত চান।

ad
ad

মাঠের রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

সাপের কামড়ে প্রাণ গেল ইজিবাইকের চালকের

১ দিন আগে

হঠাৎ ঝড়ে ঘরবাড়ি-গাছপালা লণ্ডভণ্ড, পান বরজের ব্যাপক ক্ষতি

ঝড়ের কবলে পড়া এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঝড়ের পর গাছে চাপা পড়ে জাটিয়া ইউনিয়নের নিজতুলন্দর গ্রামের সুরুজ আলীর দুটি, নুরুল ইসলামের একটি, আব্দুর রহিমের দুটি, আবু সিদ্দিকের একটি ও ইদ্রিস আলীর দুটি এবং সোহাগী ইউনিয়নের মনোহরপুর গ্রামের রিপনের দুটি, শাহ্ নেওয়াজের একটি ও সিরাজুল ইসলামের একটি বসতঘর ভেঙে গেছে

১ দিন আগে

আলোচিত ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম এখন সিলেটের ডিসি

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের কর্মকর্তা সারোয়ার আলমকে সিলেট জেলার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পদে বদলি ও পদায়ন করা হলো। জনস্বার্থে জারিকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।

১ দিন আগে

৩ দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ৪৩তম নন-ক্যাডারদের

প্রার্থীরা জানান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যুব উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার ও প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে বিপুলসংখ্যক শূন্য পদ রয়েছে। অথচ সরকারি উদাসীনতার কারণে ৪৩তম বিসিএস নন-ক্যাডার সুপারিশপ্রাপ্তরা নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এর ফলে দেশের সামগ্রিক প্রশাসনিক কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একদিকে শূন্যপদ বাড়ছে, অন্যদি

১ দিন আগে