কার্ত্তিক দাস, নড়াইল
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী এস এম সুলতান স্বপ্ন দেখেছিলেন গ্রামীণ শিশুরা শিল্পচর্চা করবে। চারুকলার শিক্ষায় পারদর্শী হয়ে উঠবে। সেই স্বপ্ন অসম্পূর্ণ রেখেই তিনি চলে যান। কিন্তু তার শিষ্য বিমানেষ বিশ্বাস ২০০৪ সাল থেকে সেই গুরুদায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক গ্রামীণ অঞ্চলে ৩৯টিরও বেশি অবৈতনিক আর্ট স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন। বিমানেষ বিশ্বাস চান গুরুর স্বপ্ন পূরণের কাজ করতে করতেই যেন তার জীবন প্রদীপ নেভে, তবেই তার শান্তি।
শিল্পী এস এম সুলতান আজীবন স্বপ্ন দেখেছেন, যেন দেশের গ্রামীণ অঞ্চলের স্কুল পড়ুয়া শিশুরা চারুকলার শিক্ষায় পারদর্শী হয়ে ওঠে। এই মহৎ স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই তিনি তার জীবদ্দশায় গ্রামীণ পরিবেশে একাধিক আর্ট স্কুল বা চারুকলা বিদ্যায়তন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন।
এরই ধারাবাহিকতায়, ১৯৫০-এর দশকে শিল্পী সুলতান তার মাতুলালয় চাচুড়ি-পুরুলিয়া গ্রামে একটি আর্ট স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি জঙ্গল কেটে নিজ হাতে তৈরি করে এর নাম দিয়েছিলেন ‘নন্দনকানন’। এটিই বর্তমানে চাচুড়ি-পুরুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় নামে পরিচিত।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর নড়াইলের জমিদাররা ভারতে চলে গেলে তাদের রেখে যাওয়া দুইটি ভবন পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। এই ভবনগুলো ব্যবহার করে শিল্পী এস এম সুলতান ১৯৬৫ সালে একটি আর্ট স্কুল প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন।
পরবর্তীকালে, ১৯৬৮ সালে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ড. ইনাম আহমেদ চৌধুরী নড়াইল পৌরসভার মাছিমদিয়া গ্রামে একটি পরিত্যক্ত দোতলা ভবনে সেই আর্ট স্কুলের উদ্বোধন করেন। এই ভবনটিতেই শিল্পী এস এম সুলতান নিজে বসবাস করতেন।
১৯৮৩ সালের দিকে শিল্পী এস এম সুলতান তার সুলতান কমপ্লেক্স চত্বরে শিশুদের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন এক অভূতপূর্ব প্রতিষ্ঠান—'শিশুস্বর্গ'। শিশুদের শিল্পকলায় আগ্রহী করে তুলতে এবং তাদের উপযোগিতা বৃদ্ধির জন্য তিনি একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেন। নৌকার আদলে তৈরি করেন একটি 'বজরা'।
সুলতানের স্বপ্ন ছিল এই বিশেষ বজরায় চড়ে শিশুরা চিত্রা নদীর দু'পারের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখবে। তারা প্রকৃতির মাঝে নিজেদের মতো করে ছবি আঁকবে এবং আঁকতে আঁকতে একসময় সুন্দরবনের কাছাকাছি পৌঁছে যাবে। কিন্তু তার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবার আগেই তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন।
শিল্পী এস এম সুলতানের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে তারই হাতে গড়া শিষ্য বিমানেষ বিশ্বাস এক অনন্য ভূমিকা পালন করছেন। ২০০৪ সাল থেকে তিনি তার গুরুর স্বপ্ন সারথি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। সেই লক্ষ্য পূরণে কাজ করছেন।
শিল্পী বিমানেষ বিশ্বাস বাল্যকাল থেকেই ছবি আঁকার প্রতি প্রবল ঝোঁক ছিল। তার সৌভাগ্য তাদের বাড়ির খুব কাছেই বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের বাড়ি।
বিমানেষ বিশ্বাসের বাবা মনোহর বিশ্বাস ছিলেন শিল্পী এস এম সুলতানের বাল্যবন্ধু। বাবার এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে, ছোটবেলা থেকেই বিমানেষের পক্ষে লেখাপড়ার পাশাপাশি শিল্পী সুলতানের কাছে সরাসরি ছবি আঁকার শিক্ষা গ্রহণ করা অত্যন্ত সহজ হয়েছিল।
বিমানেষ বিশ্বাস ১৯৭০ সালে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন। এরপর, তার গুরু শিল্পী এস এম সুলতান তার শিল্পপ্রতিভা দেখে মুগ্ধ হয়ে ১৯৭৫ সালে তাকে ঢাকা চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন।
বিমানেষ বিশ্বাস ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৫ বছরের চারুকলা কোর্স সফলভাবে সম্পন্ন করেন।
শিল্পী বিমানেষ বিশ্বাস ছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের (আর্ট অ্যান্ড ড্রইং) অবসরপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান এবং সহকারী অধ্যাপক।
পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি, তিনি গ্রামীণ জনপদে শিল্পকলার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এক মহৎ উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি গ্রামগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ৩৯টির মতো অবৈতনিক আর্ট স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন।
এই স্কুলগুলোতে শিশুদের ছবি আঁকা শেখানোর জন্য তাকে সপ্তাহে পালা করে একদিন প্রতিটি স্কুলে যেতে হয়। এই কাজে তিনি ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত, এমনকি কখনো কখনো রাত অবধি, স্কুলের কাজেই ব্যস্ত থাকেন।
শিল্পী বিমানেষ বিশ্বাসের নিজ বাড়িতে একটি ব্যক্তিগত গ্যালারি রয়েছে। এই গ্যালারিটিতে তার আঁকা কয়েক’শ ছবির পাশাপাশি তার গুরু এস এম সুলতানের একাধিক পোট্রেট (প্রতিকৃতি) সযত্নে রাখা হয়েছে। এই প্রতিটি ছবিই শিষ্য বিমানেষ বিশ্বাসের নিজস্ব তুলির কাজ। এটি গুরুর প্রতি তার গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ।
শিল্পী বিমানেষ বিশ্বাস তার গুরু এস এম সুলতানকে স্মরণ করে বলেন, সুলতান মাঝেমধ্যে শহরের চিত্রা নদীর রূপগঞ্জ বাজারের খেয়াঘাট পার হয়ে যেতেন। নদী সংলগ্ন পঙ্কবিলা গ্রামে অবস্থিত একটি বিশাল বটগাছের নিচে তিনি এসে বসতেন।
বিমানেষ বিশ্বাস স্মৃতিচারণ করে বলেন, শিল্পী সুলতান প্রায়শই এই বটগাছের শেকড়ের ওপর বসে ছবিও এঁকেছেন। চিত্রা নদীর কূলে দাঁড়িয়ে থাকা সেই বটগাছটি আজও কালের সাক্ষী।
এস এম সুলতানের স্মৃতিচারণ করে বিমানেষ বিশ্বাস বলেন, ‘গুরু যখন যেখানে যেতেন, আমাকে সবসময় সঙ্গে নিতেন। গুরু আজ বেঁচে নেই, তবে তার স্বপ্ন এবং আদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই আমি গ্রামাঞ্চলে ৩৯টি অবৈতনিক আর্ট স্কুল খুলেছি।’
তিনি জানান, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তিনি ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন এবং এলাকার মানুষজনও সহযোগিতা করছেন। তিনি বলেন, ‘গুরুর কৃপায় স্কুলগুলো ভালোভাবে চলছে।’
বিমানেষ বিশ্বাসের এই মহৎ উদ্যোগের জন্য এলাকার মানুষ তাকে নানা বিশেষণে ভূষিত করেন। কেউ তাকে 'শিশুশিল্পী গড়ার কৃষক' বলে ডাকেন, আবার অনেকে তাকে শিল্পের 'ফেরিওয়ালা' বলেও সম্মান জানান।
সরেজমিন নড়াইল সদর উপজেলার মুলিয়া ইউনিয়নের সীতারামপুর গ্রামে গিয়ে এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখা গেল। গ্রামের মন্দির চত্বরে ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী প্রায় ২৫ থেকে ২৬ জন শিশু মাদুর বিছানো মেঝেতে উপুড় হয়ে মনোযোগ সহকারে ছবি আঁকছে।
তাদের পাশে বসে আছেন ৭৫ বছর বয়সী এক প্রবীণ শিল্পী—নিঃসন্দেহে ইনিই বিমানেষ বিশ্বাস। অত্যন্ত আগ্রহ ভরে তিনি শিশুদের ছবি আঁকার কৌশল ও কায়দা-কানুন শেখাচ্ছেন।
টিনের ঘরের প্রখর দাবদাহে ঘেমে একাকার হয়েও তিনি ঘাম মুছতে মুছতে নিজের হাতেই তুলে নিচ্ছেন পেন্সিল আর কাগজ—এভাবেই চলছে তার নিরলস শিক্ষাদান।
শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি নানা পরিচয়ে পরিচিত- কেউ তাকে 'বিমানেষ স্যার' বলে সম্মোধন করে, কেউবা 'বিমানেষ দাদু', আবার কারো কারো কাছে তিনি পরিচিত 'বিমানেষ কাকু' হিসেবে। এই গুণী শিল্পীর বাড়ি নড়াইল পৌরসভার কুড়িগ্রাম গ্রামে।
কথাপ্রসঙ্গে শিল্পী বিমানেষ বিশ্বাস জানান, তার এই স্কুলের মতো এমন আরও ৩৮টি স্কুলে সপ্তাহে একদিন করে শিশুদের অবৈতনিকভাবে ছবি আঁকা শেখানো হয়। তিনি বলেন, এই স্কুলগুলোর শিশুরা খুব মন দিয়ে ছবি আঁকা শেখে।
তার এই নিরলস প্রচেষ্টার মূল কারণ হলো গুরুর স্বপ্ন পূরণ এবং আদেশ পালন। মনের টানেই তিনি এখনও এই গ্রামীণ শিশুদের ছবি আঁকা শিখিয়ে চলেছেন, যাতে এস এম সুলতানের শিল্প-দর্শন বেঁচে থাকে।
শিল্পী বিমানেষ বিশ্বাস জানান, তার নিজ বাড়িতেও 'শিল্পাঞ্জলী' নামে একটি অবৈতনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সপ্তাহে একদিন সেখানেও সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় শতাধিক শিশু ছবি আঁকা শিখতে আসে। এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে আদিবাসী সম্প্রদায়ের শিশুদের সংখ্যাই বেশি। বিমানেষ বিশ্বাসের তত্ত্বাবধানে এই শিল্পাঞ্জলী একাডেমি থেকে ছবি আঁকা শিখে শিশুরা জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে নিজেদের কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছে, যা প্রতিষ্ঠানটির সাফল্যের প্রমাণ।
জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা জানতে চাইলে শিল্পী বিমানেষ বিশ্বাস বলেন, তার জীবনের একমাত্র চাওয়া হলো—‘গুরুর স্বপ্ন পূরণের কাজ করতে করতে যদি এই জীবন প্রদীপ নিভে যায়, তবে সেখানেই শান্তি।’
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী এস এম সুলতান স্বপ্ন দেখেছিলেন গ্রামীণ শিশুরা শিল্পচর্চা করবে। চারুকলার শিক্ষায় পারদর্শী হয়ে উঠবে। সেই স্বপ্ন অসম্পূর্ণ রেখেই তিনি চলে যান। কিন্তু তার শিষ্য বিমানেষ বিশ্বাস ২০০৪ সাল থেকে সেই গুরুদায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক গ্রামীণ অঞ্চলে ৩৯টিরও বেশি অবৈতনিক আর্ট স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন। বিমানেষ বিশ্বাস চান গুরুর স্বপ্ন পূরণের কাজ করতে করতেই যেন তার জীবন প্রদীপ নেভে, তবেই তার শান্তি।
শিল্পী এস এম সুলতান আজীবন স্বপ্ন দেখেছেন, যেন দেশের গ্রামীণ অঞ্চলের স্কুল পড়ুয়া শিশুরা চারুকলার শিক্ষায় পারদর্শী হয়ে ওঠে। এই মহৎ স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই তিনি তার জীবদ্দশায় গ্রামীণ পরিবেশে একাধিক আর্ট স্কুল বা চারুকলা বিদ্যায়তন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন।
এরই ধারাবাহিকতায়, ১৯৫০-এর দশকে শিল্পী সুলতান তার মাতুলালয় চাচুড়ি-পুরুলিয়া গ্রামে একটি আর্ট স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি জঙ্গল কেটে নিজ হাতে তৈরি করে এর নাম দিয়েছিলেন ‘নন্দনকানন’। এটিই বর্তমানে চাচুড়ি-পুরুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় নামে পরিচিত।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর নড়াইলের জমিদাররা ভারতে চলে গেলে তাদের রেখে যাওয়া দুইটি ভবন পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। এই ভবনগুলো ব্যবহার করে শিল্পী এস এম সুলতান ১৯৬৫ সালে একটি আর্ট স্কুল প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন।
পরবর্তীকালে, ১৯৬৮ সালে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ড. ইনাম আহমেদ চৌধুরী নড়াইল পৌরসভার মাছিমদিয়া গ্রামে একটি পরিত্যক্ত দোতলা ভবনে সেই আর্ট স্কুলের উদ্বোধন করেন। এই ভবনটিতেই শিল্পী এস এম সুলতান নিজে বসবাস করতেন।
১৯৮৩ সালের দিকে শিল্পী এস এম সুলতান তার সুলতান কমপ্লেক্স চত্বরে শিশুদের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন এক অভূতপূর্ব প্রতিষ্ঠান—'শিশুস্বর্গ'। শিশুদের শিল্পকলায় আগ্রহী করে তুলতে এবং তাদের উপযোগিতা বৃদ্ধির জন্য তিনি একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেন। নৌকার আদলে তৈরি করেন একটি 'বজরা'।
সুলতানের স্বপ্ন ছিল এই বিশেষ বজরায় চড়ে শিশুরা চিত্রা নদীর দু'পারের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখবে। তারা প্রকৃতির মাঝে নিজেদের মতো করে ছবি আঁকবে এবং আঁকতে আঁকতে একসময় সুন্দরবনের কাছাকাছি পৌঁছে যাবে। কিন্তু তার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবার আগেই তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন।
শিল্পী এস এম সুলতানের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে তারই হাতে গড়া শিষ্য বিমানেষ বিশ্বাস এক অনন্য ভূমিকা পালন করছেন। ২০০৪ সাল থেকে তিনি তার গুরুর স্বপ্ন সারথি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। সেই লক্ষ্য পূরণে কাজ করছেন।
শিল্পী বিমানেষ বিশ্বাস বাল্যকাল থেকেই ছবি আঁকার প্রতি প্রবল ঝোঁক ছিল। তার সৌভাগ্য তাদের বাড়ির খুব কাছেই বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের বাড়ি।
বিমানেষ বিশ্বাসের বাবা মনোহর বিশ্বাস ছিলেন শিল্পী এস এম সুলতানের বাল্যবন্ধু। বাবার এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে, ছোটবেলা থেকেই বিমানেষের পক্ষে লেখাপড়ার পাশাপাশি শিল্পী সুলতানের কাছে সরাসরি ছবি আঁকার শিক্ষা গ্রহণ করা অত্যন্ত সহজ হয়েছিল।
বিমানেষ বিশ্বাস ১৯৭০ সালে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন। এরপর, তার গুরু শিল্পী এস এম সুলতান তার শিল্পপ্রতিভা দেখে মুগ্ধ হয়ে ১৯৭৫ সালে তাকে ঢাকা চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন।
বিমানেষ বিশ্বাস ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৫ বছরের চারুকলা কোর্স সফলভাবে সম্পন্ন করেন।
শিল্পী বিমানেষ বিশ্বাস ছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের (আর্ট অ্যান্ড ড্রইং) অবসরপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান এবং সহকারী অধ্যাপক।
পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি, তিনি গ্রামীণ জনপদে শিল্পকলার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এক মহৎ উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি গ্রামগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ৩৯টির মতো অবৈতনিক আর্ট স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন।
এই স্কুলগুলোতে শিশুদের ছবি আঁকা শেখানোর জন্য তাকে সপ্তাহে পালা করে একদিন প্রতিটি স্কুলে যেতে হয়। এই কাজে তিনি ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত, এমনকি কখনো কখনো রাত অবধি, স্কুলের কাজেই ব্যস্ত থাকেন।
শিল্পী বিমানেষ বিশ্বাসের নিজ বাড়িতে একটি ব্যক্তিগত গ্যালারি রয়েছে। এই গ্যালারিটিতে তার আঁকা কয়েক’শ ছবির পাশাপাশি তার গুরু এস এম সুলতানের একাধিক পোট্রেট (প্রতিকৃতি) সযত্নে রাখা হয়েছে। এই প্রতিটি ছবিই শিষ্য বিমানেষ বিশ্বাসের নিজস্ব তুলির কাজ। এটি গুরুর প্রতি তার গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ।
শিল্পী বিমানেষ বিশ্বাস তার গুরু এস এম সুলতানকে স্মরণ করে বলেন, সুলতান মাঝেমধ্যে শহরের চিত্রা নদীর রূপগঞ্জ বাজারের খেয়াঘাট পার হয়ে যেতেন। নদী সংলগ্ন পঙ্কবিলা গ্রামে অবস্থিত একটি বিশাল বটগাছের নিচে তিনি এসে বসতেন।
বিমানেষ বিশ্বাস স্মৃতিচারণ করে বলেন, শিল্পী সুলতান প্রায়শই এই বটগাছের শেকড়ের ওপর বসে ছবিও এঁকেছেন। চিত্রা নদীর কূলে দাঁড়িয়ে থাকা সেই বটগাছটি আজও কালের সাক্ষী।
এস এম সুলতানের স্মৃতিচারণ করে বিমানেষ বিশ্বাস বলেন, ‘গুরু যখন যেখানে যেতেন, আমাকে সবসময় সঙ্গে নিতেন। গুরু আজ বেঁচে নেই, তবে তার স্বপ্ন এবং আদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই আমি গ্রামাঞ্চলে ৩৯টি অবৈতনিক আর্ট স্কুল খুলেছি।’
তিনি জানান, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তিনি ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন এবং এলাকার মানুষজনও সহযোগিতা করছেন। তিনি বলেন, ‘গুরুর কৃপায় স্কুলগুলো ভালোভাবে চলছে।’
বিমানেষ বিশ্বাসের এই মহৎ উদ্যোগের জন্য এলাকার মানুষ তাকে নানা বিশেষণে ভূষিত করেন। কেউ তাকে 'শিশুশিল্পী গড়ার কৃষক' বলে ডাকেন, আবার অনেকে তাকে শিল্পের 'ফেরিওয়ালা' বলেও সম্মান জানান।
সরেজমিন নড়াইল সদর উপজেলার মুলিয়া ইউনিয়নের সীতারামপুর গ্রামে গিয়ে এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখা গেল। গ্রামের মন্দির চত্বরে ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী প্রায় ২৫ থেকে ২৬ জন শিশু মাদুর বিছানো মেঝেতে উপুড় হয়ে মনোযোগ সহকারে ছবি আঁকছে।
তাদের পাশে বসে আছেন ৭৫ বছর বয়সী এক প্রবীণ শিল্পী—নিঃসন্দেহে ইনিই বিমানেষ বিশ্বাস। অত্যন্ত আগ্রহ ভরে তিনি শিশুদের ছবি আঁকার কৌশল ও কায়দা-কানুন শেখাচ্ছেন।
টিনের ঘরের প্রখর দাবদাহে ঘেমে একাকার হয়েও তিনি ঘাম মুছতে মুছতে নিজের হাতেই তুলে নিচ্ছেন পেন্সিল আর কাগজ—এভাবেই চলছে তার নিরলস শিক্ষাদান।
শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি নানা পরিচয়ে পরিচিত- কেউ তাকে 'বিমানেষ স্যার' বলে সম্মোধন করে, কেউবা 'বিমানেষ দাদু', আবার কারো কারো কাছে তিনি পরিচিত 'বিমানেষ কাকু' হিসেবে। এই গুণী শিল্পীর বাড়ি নড়াইল পৌরসভার কুড়িগ্রাম গ্রামে।
কথাপ্রসঙ্গে শিল্পী বিমানেষ বিশ্বাস জানান, তার এই স্কুলের মতো এমন আরও ৩৮টি স্কুলে সপ্তাহে একদিন করে শিশুদের অবৈতনিকভাবে ছবি আঁকা শেখানো হয়। তিনি বলেন, এই স্কুলগুলোর শিশুরা খুব মন দিয়ে ছবি আঁকা শেখে।
তার এই নিরলস প্রচেষ্টার মূল কারণ হলো গুরুর স্বপ্ন পূরণ এবং আদেশ পালন। মনের টানেই তিনি এখনও এই গ্রামীণ শিশুদের ছবি আঁকা শিখিয়ে চলেছেন, যাতে এস এম সুলতানের শিল্প-দর্শন বেঁচে থাকে।
শিল্পী বিমানেষ বিশ্বাস জানান, তার নিজ বাড়িতেও 'শিল্পাঞ্জলী' নামে একটি অবৈতনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সপ্তাহে একদিন সেখানেও সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় শতাধিক শিশু ছবি আঁকা শিখতে আসে। এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে আদিবাসী সম্প্রদায়ের শিশুদের সংখ্যাই বেশি। বিমানেষ বিশ্বাসের তত্ত্বাবধানে এই শিল্পাঞ্জলী একাডেমি থেকে ছবি আঁকা শিখে শিশুরা জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে নিজেদের কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছে, যা প্রতিষ্ঠানটির সাফল্যের প্রমাণ।
জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা জানতে চাইলে শিল্পী বিমানেষ বিশ্বাস বলেন, তার জীবনের একমাত্র চাওয়া হলো—‘গুরুর স্বপ্ন পূরণের কাজ করতে করতে যদি এই জীবন প্রদীপ নিভে যায়, তবে সেখানেই শান্তি।’
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সাংবাদিকদের ওপর হামলা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। চট্টগ্রামে এখন টেলিভিশনের সাংবাদিকদের ওপর হামলায় জড়িত সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। বক্তারা সাংবাদিক সাগর-রুনি দম্পতিসহ দেশে খুন হওয়া সকল সাংবাদিক হত্যার দ্রুত বিচারও দাবি করেন।
১৮ ঘণ্টা আগেপাঁচ দিনব্যাপী এই প্রশিক্ষণে শিক্ষকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য, গবেষণায় নৈতিক মানদণ্ড, পেশাগত আচরণবিধি, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক, পাঠদানের আধুনিক পদ্ধতি, মূল্যায়ন প্রক্রিয়া, কারিকুলাম উন্নয়ন ও এক্রিডিটেশন অর্জনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকরা এসব বিষয়ে
১৮ ঘণ্টা আগেযানজটে অতিষ্ঠ মানুষজন জানিয়েছেন বিরক্তির কথা। জুনায়েদ আহমেদ নামের এক যাত্রী বলেন, দুই ঘণ্টা ধরে গাড়িতে বসে আছি। কুমিল্লা শহরে ডাক্তার দেখাতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু মহাসড়কেই সময় চলে যাচ্ছে। দীর্ঘ এই যানজট নিরসনে প্রশাসনের কোনো ভূমিকা দেখছি না।
২০ ঘণ্টা আগেনেত্রকোনার মোহনগঞ্জ পৌর শহরে নারায়ণ পাল (৪০) নামে এক মুদি দোকানিকে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
১ দিন আগে