বেনাপোলে নেই চিরচেনা কোলাহল, রাজস্বে ভাটা

বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি

যশোরের বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট এলাকা এখন কোলাহলমুক্ত। সেখানে চিরচেনা যাত্রীদের সেই ভিড় আর নেই। প্রতিদিন অলস সময় কাটাচ্ছেন দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা কর্মচারীরা। স্থলবন্দরটি কর্মব্যস্ততা হারানোয় সরকারের রাজস্ব আদায়ও কমেছে ব্যাপকভাবে।

জুলাই অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে ভারত সরকার বিধিনিষেধ আরোপ করায় দু'দেশের মধ্যে যাত্রী পারাপার হ্রাস পায়। আগে প্রতিদিন যেখানে ৭০০০ থেকে ৯০০০ যাত্রীর চাপ সামাল দিতে হতো, এখন সেখানে পারাপার হচ্ছে ১৫০০ থেকে ২০০০ যাত্রী। নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে চিকিৎসা ছাড়া বাংলাদেশিদের সব ভিসা বন্ধ রেখেছে ভারত।

বেনাপোলে যাত্রীদের আনাগোনা কমায় এই রুটের পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরাও বেকায়দায় পড়েছেন। অল্প কয়েকজন যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে তাদের। এতে গাড়ির তেল খরচও উঠছে না বলে জানিয়েছেন তারা। পরিবহন শ্রমিকরা বেতন-ভাতা না পেয়ে কাজ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। যাত্রীর অভাবে দেশ ট্রাভেলসসহ বেশ কয়েকটি পরিবহন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন মালিকরা।

বেনাপোল বন্দর থেকে ভারতের কলকাতা শহরের দূরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। ভ্রমণ, ব্যবসা চিকিৎসা বা অন্যান্য কাজে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াতকারীদের বড় অংশ ব্যবহার করেন বেনাপোল-পেট্রাপোল রুট। সংশ্লিষ্টদের মতে, ভিসা বন্ধ থাকায় দুই দেশের ব্যবসা-ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করেন।

ইমিগ্রেশন সূত্র জানায়, গত মে মাসে বাংলাদেশ থেকে ভারতে গেছেন ২৩,৭২৪ জন আর ভারত থেকে এসেছে ২১,৫৫৬ জন। এক মাসে পারাপার হয়েছে মোট ৪৫,২৮০ জন যাত্রী। এদের মধ্যে ভারত থেকে বিজনেস ভিসা নিয়ে আসা লাগেজ পার্টি যাত্রীর সংখ্যা বেশি।

কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, যাত্রী পারাপার কমে যাওয়ায় ‘ভ্রমণকর’ বাবদ রাজস্ব আদায়ও কমেছে। আগে এ বন্দর থেকে ভ্রমণ কর হিসেবে বছরে রাজস্ব আদায় হতো ১৮২ কোটি টাকা। গত বছরের ৫ আগস্টের আগে প্রতি মাসে গড় আয় ছিল ১৫ কোটি টাকা। বর্তমানে রাজস্ব আদায় হচ্ছে মাসে মাত্র তিন কোটি টাকা।

বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইব্রাহিম আহম্মেদ বলেন, বাংলাদেশ থেকে যারা ভারতে যান তাদের প্রত্যেকেই ‘ভ্রমন কর’ বাবদ ১০০০ টাকা এবং ‘প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল’ ফি বাবদ ৫৫ টাকা দিয়ে থাকেন। ফেরত আসা যাত্রীরা এই করের আওতামুক্ত।

তিনি আরও বলেন, স্বাভাবিক সময়ে বেনাপোল দিয়ে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৫৫০০ থেকে ৬০০০ যাত্রী ভারতে যেত। এখন সেটা কমে গড়ে ১৫০০ এর নিচে এসে দাঁড়িয়েছে।

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি মো. রফিউজ্জামান বলেন, বাংলাদেশিদের বিদেশ ভ্রমণ কমে গেছে মূলত ভিসা প্রাপ্তি জটিল হওয়ার কারণে। বর্তমানে ভারত ভিসা দিচ্ছে না। গত কয়েক মাসে যারা ভারত ভ্রমণ করেছেন, তাদের বেশির ভাগের ভিসাই আগে ইস্যু করা ছিল। ভারতের ভিসা সীমিত থাকায় সামনের দিনগুলোয় বাংলাদেশি পর্যটকের বিদেশযাত্রা আরও কমবে। সরকারের রাজস্ব আদায়ে এর প্রভাব পড়েছে। একইভাবে ভারতের ব্যবসা-বাণিজ্যেও এর প্রভাব পড়েছে।

ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রবিউল ইসলাম বলেন, 'বর্তমানে ভিসার খুব সমস্যা। আবেদনের দীর্ঘদিন পর কোনোরকমে চিকিৎসার জন্য মেডিকেল ভিসা পেলেও ভ্রমন ভিসা একদমই নেই। আগামী দিনে আর ভিসা পাব কিনা সন্দেহ আছে।'

ভারতগামী যাত্রী কমলা রানী বলেন, 'আগে জানতাম ইমিগ্রেশনে অনেক লম্বা লাইন আর যাত্রীর অনেক ভিড় থাকতো। কিন্তু আজ এসে দেখলাম মানুষজন একেবারে নেই বললেই চলে। আমরা খুব নিরিবিলি যাচ্ছি। এখন তো ভারত সরকার ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের ভিসা শেষ পর্যায়ে। পরবর্তীতে আর ভিসা পাব কিনা জানিনা।'

ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় যশোরের মনোতোষ সাহা, ঢাকার আনন্দ সরকার সোমবার সকালে ভারত থেকে ফিরেছেন। তারা জানান, ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় তড়িঘড়ি করে ভারতে থাকা স্বজনদের সাথে দেখা করে এসেছেন।

বেনাপোলের ফাইভ স্টার পরিবহনের ম্যানেজার আশাদুজ্জামান আশা বলেন, ভিসা বন্ধ থাকায় তাদের পরিবহন ব্যবসায় লোকশান গুণতে হচ্ছে।

বেনাপোল গ্রিন লাইন পরিবহনের ম্যানেজার রবীন্দ্রনাথ বলেন, তাদের এসি গাড়ি। সামান্য কয়েকজন যাত্রী নিয়ে রাজধানী ঢাকার উদ্দেশ্যে যেতে হয়। এতে তাদের গাড়ির তেল খরচও উঠে না।

একই কথা জানান আলম মানিচেঞ্জারের স্বত্বাধিকারী মশিয়ার রহমান। তিনি বলেন, আগে চিকিৎসা, ব্যবসা ও পড়াশোনাসহ বিভিন্ন কাজে বেনাপোল দিয়ে ১০ হাজারেরও বেশি লোক যাতায়াত করতো। কিন্তু এখন যাত্রী পারাপার ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ায় অফিস চালানো দুস্কর হয়ে পড়েছে।

বেনাপোল আমদানি-রপ্তানি সমিতির সহ-সভাপতি ও যমুনা ট্রেডিং কর্পোরেশনের স্বত্বাধিকারী আমিনুল হক আনু বলেন, ভারত ভিসা বন্ধ রাখায় তাদের ব্যবসায়িক কাজেও সংকট দেখা দিয়েছে। আমদানি-রপ্তানির কাজে পণ্যর গুনগত মান যাচাইয়ের জন্য ব্যবসায়ীদের ভারত যাতায়াত করা লাগে। বর্তমানে ভিসা না থাকায় তারা ভারত গমন করতে পারছে না। এলসিও খুলতে পারছেন না।

বাংলাদেশ-ভারত চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক (ল্যান্ডপোর্ট) মতিয়ার রহমান বলেন, ভিসাকেন্দ্রগুলো এখন কেবল জরুরি মেডিকেল ও স্টুডেন্ট ভিসার জন্য সীমিত পরিসরে স্লট দিচ্ছে। ব্যবসা ও ভ্রমন ভিসার যাত্রীদের সংখ্যা নেই বললেই চলে। ভারত ভিসা সেবা বন্ধ রাখায় ভ্রমণ, চিকিৎসা, শিক্ষা কিংবা অন্যান্য কাজে বাংলাদেশিরা যেমন যেতে পারছেন না, তেমনি ক্ষতির মুখে পড়ছেন ভারতীয়রাও।

বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার বলেন, ভিসা জটিলতা না কাটলে আগামীতে যাত্রী পারাপার শুন্যের কোটায় এসে দাঁড়াবে। এখন যারা যাতায়াত করছে এদের অধিকাংশই মেডিকেল ভিসায়। যাত্রী না থাকায় বন্দরের রাজস্ব আয় অনেকটা কমে গেছে।

ad
ad

অর্থের রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত

সভায় এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ খুরশীদ ওয়াহাব, অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মোঃ আবদুস সালাম, এফসিএ, এফসিএস, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এম মাসুদ রহমান ও স্বতন্ত্র পরিচালক মোঃ আবদুল জলিল, ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মোঃ ওমর ফারুক খান, শরী’আহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্য সচিব প্রফেসর

২ দিন আগে

আগস্টের ২৩ দিনে এলো ১৭৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স

২০২৪-২৫ অর্থবছরের মার্চ মাসে সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল, যা ছিল বছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্সের রেকর্ড। আর পুরো অর্থবছর (২০২৪-২৫) জুড়ে প্রবাসী আয় এসেছে ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।

৪ দিন আগে

বিচারককে ঘুষ, পিপির আইনজীবী সমিতির পদ স্থগিত

পরে গৃহকর্মী প্যাকেট দুটি বিচারকের হাতে দিলে তাৎক্ষণিক বিচারক দরজা খুলে ওই আইনজীবীকে দেখতে পাননি। পরে তিনি আদালতে এসে পিপির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। এ ছাড়া বিচারক পিপির বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনে নিহত পটুয়াখালর দুমকি উপজেলার শহীদ জসিমের কন্যা আলোচিত লামিয়া গণধর্ষণ মামলাসহ বিভিন্ন মামলায় আসামির পক্ষে

৭ দিন আগে

পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে কমিশন করা হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, আমরা উভয় পক্ষ খুব খোলামেলা আলোচনা করেছি। আমরা দুই দেশের বাণিজ্য বাড়াতে একমত হয়েছি। খাদ্য ও কৃষি উন্নয়নে আমরা কাজ করতে চাই। কিছু কিছু মধ্যবর্তী পণ্য যৌথভাবে উৎপাদনে যেতে পারলে উভয় দেশ উপকৃত হবে। খাদ্য ও কৃষি পণ্যে জোর দেওয়া হয়েছে। আমাদের ফল আমদানি ও রপ্তানি নিয়ে কথা হয়েছে। আমরা

৭ দিন আগে