রাকসুতে ভোট পড়েছে ৭০%, জালিয়াতির অভিযোগ ছাত্রদলের

রাজশাহী ব্যুরো
রাকসু নির্বাচনে ভোট দিতে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। ছবি: রাজনীতি ডটকম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও একটি কেন্দ্রে আগেই সই করা ব্যালট পাওয়ায় ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছে ছাত্রদলের প্যানেল। ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগও তুলেছে ছাত্রদল।

এদিকে ভোটারদের অনেকে অভিযোগ করেছেন, ভোট দেওয়ার সময় তাদের আঙুলে অমোচনীয় কালির দাগ দেওয়া হলেও তা ঘষা লাগলেই উঠে যাচ্ছিল। ক্যাম্পাস ঘিরে বিভিন্ন পয়েন্টে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীদের উপস্থিতি দিনভর দেখা গেছে। তবে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল ৯টায় শুরু হয়ে বিকেল সাড়ে ৪টায় ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, সব কেন্দ্র মিলিয়ে ভোট পড়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯টি একাডেমিক ভবনে মোট ১৭টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে বৃহস্পতিবার দিনভর। এরপর ব্যালট বাক্সগুলো নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে, সেখানে চলছে ভোট গণনা। এর পুরো প্রক্রিয়াটি বাইরে বড় পর্দায় লাইভ স্ক্রিনে দেখানো হবে।

এবারের রাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে মোট ৮৬০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধির পাঁচ পদে প্রার্থী ৫৮ জন। রাকসু নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ২৮ হাজার ৯০১ জন। এর মধ্যে সব কেন্দ্র মিলিয়ে ভোট পড়েছে ২০ হাজার ১০৯টি। সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে সৈয়দ আমীর আলী হলে— ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ, সর্বনিম্ন রোকেয়া হলে— ৬৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ।

অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, এটা শিক্ষার্থীদের নির্বাচন। তাদের ভাষ্যমতে একটি অসাধারণ নির্বাচন হয়েছে। এই নির্বাচনে একটি পর্যবেক্ষক কমিটি ছিল। তারা আমাদের জানিয়েছে, এটি ছিল তাদের দেখা শ্রেষ্ঠ নির্বাচন।

এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন চত্বরে শিক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি দেখা গেছে। সার্বিক নিরাপত্তায় তিন স্তরের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন ছিল। এ ছাড়াও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেছেন।

ভোটার আসার আগেই সই শতাধিক ব্যালট

শহীদুল্লাহ অ্যাকাডেমিক ভবনের ১৫০ গ্যালারিতে শহিদ জিয়াউর রহমান হল কেন্দ্রের ভোটার আসার আগেই সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মশিউর রহমান শতাধিক ব্যালট পেপারে সই করেছেন বলে তথ্য পাওয়া যায়। ওই কেন্দ্রের পোলিং এজেন্টরা দাবি করেছেন, ভোটে কারচুপি করার জন্যই সেগুলো সই করে রাখা হয়েছিল।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ভবনের ১৫০ গ্যালারিতে এ ঘটনা ঘটে। ভোটকেন্দ্রটিতে দেখা যায়, কেন্দ্রের দায়িত্বরত সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ভোটার আসার আগেই শতাধিক ব্যালট পেপার সই করে রেখেছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, কেন্দ্রে ভোটারের ভিড় বেশি থাকায় তিনি আগে থেকে সই করে রেখেছেন। কোনো কারচুপির সুযোগ নেই।

ওই কেন্দ্রে দায়িত্বরত পোলিং এজেন্ট মহিউদ্দিন আহমেদ সীমান্ত বলেন, কেন্দ্রে হঠাৎ আমি দেখতে পাই, স্যার তার কাছে গেলেই তিনি পেপার দিয়ে দেন। আমি এগিয়ে গিয়ে দেখি, তিনি ভোটার আসার আগেই শতাধিক পেপার সই করে রেখেছেন। তিনি তার পছন্দের ভোটার এলেই একের অধিক ব্যালট পেপার দেবেন— এই উদ্দেশ্যে তিনি এটি করেছেন।

জানতে চাইলে কেন্দ্রর দায়িত্বরত প্রিজাইডিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান অভিযোগ স্বীকার করেন। তিনি বলেন, কেন্দ্রে এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটেছে। কর্মকর্তার এই কাজটি ঠিক হয়নি।

ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রহমতুন্নেছা ও রোকেয়া হলের কেন্দ্রে ভোট দেওয়ার গোপন কক্ষে ছাত্রশিবিরের প্যানেলের প্রার্থীদের ব্যালট নম্বর সম্বলিত কাগজ রয়েছে বলে অভিযোগ করেন ছাত্রদলের প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শেখ নুর উদ্দিন আবীর।

দিনভর উৎসবমুখর পরিবেশেই অনুষ্ঠিত হয়েছে রাকসুর ভোট গ্রহণ। ছবি: রাজনীতি ডটকম
দিনভর উৎসবমুখর পরিবেশেই অনুষ্ঠিত হয়েছে রাকসুর ভোট গ্রহণ। ছবি: রাজনীতি ডটকম

তিনি বলেন, আমার কাছে ভিডিও ফুটেজ এসেছে একটু আগে। রহমাতুন্নেছা ও রোকেয়া হলের ভোটারদের ভোট দেওয়ার যে গোপন কক্ষ, সেখানে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের নাম সম্বলিত টোকেন পাওয়া যাচ্ছে। এটি আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। যদি গোপন কক্ষে কেউ তাদের ব্যালট নম্বর লেখা টোকেন রেখে যায়, তাহলে আচরণবিধি অনুযায়ী তাদের যে শাস্তি দেওয়া উচিত, নির্বাচন কমিশনের উচিত সেই ব্যবস্থা নেওয়া।

ক্যাম্পাসের চারপাশে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের অবস্থান

রাকসু নির্বাচন ঘিরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসংলগ্ন একাধিক জায়গায় দিনভর অবস্থান নিতে দেখা গেছে স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামের নেতাকর্মীদের। এ দিন দুপুর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর, চারুকলা, মেহেরচন্ডী, কাজলা, রুয়েট বাইপাস মোড়সহ একাধিক এলাকায় তাদের দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখ যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর ফটকের বাম পাশে ক্যাম্পাসের প্রাচীরের পাশে সামিয়ানা টাঙিয়ে অবস্থান নিয়েছেন স্থানীয় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকমীরা। এ ছাড়াও বিএনপি ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের নেতারা ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনের মতি শাহ’র মাজারের পাশে ছিলেন।

অন্যদিকে স্থানীয় জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন বিনোদপুর বাজারের ইসলামী ব্যাংকের সামনে। তাদের আরেকটি দলকে দেখা গেছে কাজলা ফটকের বিপরীত পাশে। এ ছাড়াও তারা ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে বরই বাগানে রান্নার আয়োজনও করেন। সকাল থেকেই উভয় দলের নেতাদেরই ক্যাম্পাসের আশেপাশের সড়কে মোটরসাইকেল মহড়া দিতে দেখা গেছে।

জানতে চাইলে মহানগর শিবিরের সাধারণ সম্পাদক ইমরান নাজির বলেন, ‘দীর্ঘ ৩৫ বছর পরে রাকসু নির্বাচন হচ্ছে। জনতা উৎসুক। আগ্রহ থেকে তারা এখানে এসেছেন। আমাদের এর বাইরে কোনো উদ্দেশ্য নেই।’

বিনোদপুরে অবস্থান নেওয়া মহানগর যুবদল নেতা আরিফুজ্জামান বলেন, ‘এত বছর পরে রাকসু নির্বাচন হচ্ছে। নির্বাচনের আগ্রহ থেকেই আমরা এখানে এসেছি। ওই পাশে খেয়াল করলেই দেখবেন জামায়াত ও শিবিরের নেতারা অবস্থান নিয়েছেন।’

সার্বিক বিষয়ে রাকসুর ১০ সদস্যের পর্যবেক্ষক কমিটির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এম রফিকুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, আমরা দিনভর সব কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছি। প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা সারা দিনে কোনো অনিয়ম বা জালিয়াতির অভিযোগ পাইনি। সার্বিকভাবে আমাদের কাছে নির্বাচন শতভাগ গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক মনে হয়েছে।

ad
ad

রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

পিআর বাদ দিয়ে আসেন সঠিকভাবে নির্বাচনটা করি: মির্জা ফখরুল

তিনি বলেন, 'আমরা চাই আগামী নির্বাচনটা হোক, জনগণের ভোটে হোক। সবাই মিলে নির্বাচন করি, যারাই জিতবে তারা সরকার গঠন করুক। এরপর আলোচনা হোক দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে। আমরা আর মারামারি চাই না, আর প্রাণ দিতে চাই না। বাচ্চাদেরও যেন প্রাণ দিতে না হয়।'

১৪ ঘণ্টা আগে

এনসিপির ২ শর্ত, না মানলে জুলাই সনদে সই নয়: নাহিদ

জুলাই জাতীয় সনদকে আইনি ভিত্তি ও এ সনদ বাস্তবায়নে আদেশ জারি— জুলাই জাতীয় সনদে সইয়ের জন্য এ দুই শর্ত দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, এ দুই শর্ত না মানলে তারা জুলাই সনদে সই করবেন না।

১৭ ঘণ্টা আগে

রাকসুর ভোটগ্রহণ শুরু

ভোটগ্রহণ হবে ৯টি একাডেমিক ভবনে স্থাপিত ১৭টি কেন্দ্রে। ভোট পরিচালনায় থাকবেন ২১২ জন শিক্ষক। এর মধ্যে ১৭ জন প্রিসাইডিং অফিসার এবং বাকিরা সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া ৯১ জন পোলিং অফিসার দায়িত্বে আছেন।

২০ ঘণ্টা আগে

চাকসুতেও জয়রথ অব্যাহত, ২৬ পদের ২৪টিই শিবিরের

এ নির্বাচনে ভিপি ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন শিবির সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের ইব্রাহিম হোসেন রনি, জিএস হয়েছেন একই প্যানেলের সাঈদ বিন হাবিব৷ শীর্ষ তিন পদের তৃতীয়টি গেছে ছাত্রদলের ঘরে, জয় পেয়েছেন আইয়ুবুর রহমান তৌফিক।

২১ ঘণ্টা আগে