
বিবিসি বাংলা

জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী কিংবা জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপির মতো দলগুলো যখন নির্বাচনী মাঠে ব্যস্ত, তখন ভোটে অংশ নেওয়া নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মিত্র জাতীয় পার্টি।
অনিশ্চয়তা থাকলেও এরই মধ্যে ভেতরে ভেতরে প্রার্থী বাছাই ও নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে দলটি। তারা বলছে, শেষ পর্যন্ত যদি ভোটে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে 'গ্রিন সিগন্যাল' মেলে, তাহলে জোরেসোরে মাঠে নামবে তারা।
দলটির ইচ্ছা- এককভাবে নির্বাচনের চাইতে জোটগতভাবে ভোটে অংশ নেওয়া। সেক্ষেত্রে বিএনপি কিংবা জামায়াতে ইসলামী যে কোনো একটি দলের সাথে জোটে যেতেও আগ্রহী দলটি।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী বিবিসি বাংলাকে বলেন, "জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নিলে সেক্ষেত্রে জাতীয় পার্টিরও যেমন আসন সংখ্যা বাড়বে, তেমনি যে দলের সাথে জোট হবে তাদেরও আসন ও ভোট বাড়বে"।
দলটি মনে করছে নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে এখনো যে ধোঁয়াশা রয়ে গেছে সেটি হয়তো তফসিল ঘোষণার পর কেটে যাবে। তখনই জোটের বিষয়ে আলোচনার উদ্যোগ নেবে দলটি।
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ধারাবাহিক সংলাপ করবে নির্বাচন কমিশন। সেক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি সেই সংলাপে আমন্ত্রণ পাবে কি-না সেটি এখনো নিশ্চিত নয়।
জাতীয় পার্টি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। তবে দলটির মধ্যে অন্তর্কোন্দলের জেরে কাউন্সিলের মাধ্যমে আলাদা কমিটি গঠন করে সেই তথ্য নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছে দলটি।
সেই উদাহরণ টেনে নির্বাচন কমিশন বলছে, জাতীয় পার্টি নিজেদের অভ্যন্তরীণ সংকট সমস্যা সমাধান করে যদি ইসির দ্বারস্থ হয় তাহলে দলটির সাথে সংলাপ বা ভোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে তারা।
নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বিবিসি বাংলাকে বলেন, "তাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কিছু সমস্যা আছে। এটা তারা ফয়সালা করলে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে"।
জাতীয় পার্টির নির্বাচনী প্রস্তুতি কী?
ডিসেম্বরেই ঘোষণা করার কথা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল।
এই নির্বাচনকে সামনে রেখে এরই মধ্যে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী বিভিন্ন সংসদীয় আসনে প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে। এই দল দুটির প্রার্থীদের প্রচারণায় জমে উঠেছে মাঠের রাজনীতি।
অন্যদিকে, গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টিও দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছে। শিগগিরই দলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার কথা জানিয়েছে তারা।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের পর দলটির নিবন্ধনও স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। যে কারণে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়টি অনেকটাই স্পষ্ট।
গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের মতো কার্যক্রম নিষিদ্ধ বা নিবন্ধন স্থগিত না হলেও রাজনীতির মাঠে গত ১৪ মাস ধরে অনেকটাই কোণঠাসা জাতীয় পার্টি।
অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে একটি মাত্র বৈঠকে অংশ নিলেও পরে ঐকমত্য কমিশন কিংবা সরকারের সাথে কোনো ধরনের বৈঠকে আমন্ত্রণ পায়নি দলটি।
গত এক বছরের দলটি একাধিক সভা সমাবেশ করতে চাইলেও তাতে পুলিশের পক্ষ থেকে বাধা দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। সর্বশেষ গত ১১ই অক্টোবর নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে জাতীয় পার্টি ঢাকায় একটি সমাবেশ ডাকলেও শেষ পর্যন্ত সেটি পুলিশের বাধায় পণ্ড হয়।
অন্যদিকে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে একাধিক বার হামলাও হয়েছে। অগাস্টে জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষও হয়েছে।
সরকার যেহেতু দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেনি কিংবা নির্বাচন কমিশনও দলটির নিবন্ধন বাতিল করেনি সে কারণে এরই মধ্যে নির্বাচন প্রস্তুতি শুরু করেছে।
দলটির নেতারা বলছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে এরই মধ্যে ৩০০ আসনেই প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ চলছে। কোন কোন আসনে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্তও করা হয়েছে। যার নেতৃত্ব দিচ্ছে দলীয় চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী বিবিসি বাংলাকে বলেন, "প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পার্টির চেয়ারম্যান অনেকের সাথে কথা বলেছেন। আমাদের একটা ছক করা আছে কোন আসন থেকে কে ভোট করতে পারেন। এ নিয়ে আমাদের প্রস্তুতি আছে। প্রার্থী ঘোষণা করতে আমাদের খুব বেশি সময় লাগবে না"।
আপাতত ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুত রাখা হলেও শেষ পর্যন্ত ভোটে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেলে সব আসনে প্রার্থী না দেওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছেন দলের নেতারা।
মি. পাটোয়ারী বলছিলেন, "প্রাথমিকভাবে ৩০০ আসনেরই প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় পার্টি। সেটি এটা পর্যায়ে পৌঁছালে তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কতগুলোতে ভোট করবো আমরা"।
টার্গেট জোটবদ্ধ নির্বাচন?
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে ২০২৪ সালের নির্বাচন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাথে কখনো জোটবদ্ধ, কখনো বা আসন সমঝোতা করে নির্বাচনে অংশ নিয়ে আসছিল জাতীয় পার্টি।
এসব ভোটে কখনো বিরোধী দলের ভূমিকায়, আবার কখনো সরকারে থেকেই বিরোধী দল ছিল জাতীয় পার্টি। যে কারণে ২০২৪ সালের পাঁচই অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর জাতীয় পার্টিও দেশের রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়ে।
এমন অবস্থায় আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টিও যে অনিশ্চিত সেটিও মানছেন জাতীয় পার্টির নেতারা।
সম্প্রতি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ কিংবা প্রেস রিলিজে জাতীয় পার্টিকে রাজনীতি ও নির্বাচনে সুযোগ দেওয়ার দাবিও জানাতে দেখা গেছে দলের নেতাদের।
জাতীয় পার্টির নেতারা মনে করছেন, শেষ পর্যন্ত তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে দলটির আগ্রহ একক নির্বাচন না করে জোটগত ভোটে অংশ নেওয়া।
রোববার যখন জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারীর সাথে কথা হচ্ছিল তখন জোটবদ্ধ ভোট করার আগ্রহের কথা জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, "রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই"।
সেটি কেমন? এই প্রশ্নে মি. পাটোয়ারীর উত্তর, "আমরা বুঝতে পারি অনেকে (রাজনৈতিক দল) আমাদের সাথে জোট করতে আগ্রহী। আমরাও অনেকের সাথে জোট করতে আগ্রহী"।
তার ব্যাখ্যা, "এই মুহূর্তে জাতীয় পার্টি মনে করছে তারা যদি একক নির্বাচনের চাইতে জোটগতভাবে করে তাহলে তাদের আসন সংখ্যা যেমন বাড়তে পারে, তেমনি যে দলের সাথে জোট করবে তাদের আসনও বাড়তে পারে"।
তাহলে শেষ পর্যন্ত কোন দলের সাথে জোটে আগ্রহ জাতীয় পার্টির?
এর একটু ব্যাখ্যা দিয়ে মি. পাটোয়ারী বলেন, ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপি- জামায়াতের সাথে জাতীয় পার্টির এক ধরনের জোট গঠনে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেটি তখন হয়নি।
তবে, এবারের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি বিএনপি বা জামায়াতের সাথে জোট করতে আগ্রহী বলেও জাতীয় পার্টির মহাসচিব বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন।
তিনি এটিও জানিয়েছেন যে, সেটি কতখানি বাস্তব তা নিয়ে ধোঁয়াশা আছে। তবে শেষ পর্যন্ত তা নির্ভর করবে তফসিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক পরিবেশ কেমন থাকে তার ওপর।
কোন্দলের সুযোগ নিচ্ছে ইসি?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি দলটি সবচেয়ে বেশি বার ভাঙা গড়ার মধ্য দিয়ে গেছে। বিভিন্ন নামে জাতীয় পার্টির নতুন নতুন দল তৈরি হলেও মূল অংশ ছিল প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের কাছে।
গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পর চলতি বছরের ৯ই অগাস্ট আরেক দফায় ভাঙে জাতীয় পার্টি। দলীয় চেয়ারম্যান জিএম কাদেরসহ চেয়ারম্যানপন্থিদের বাদ দিয়ে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করেছে জাতীয় পার্টির একটি অংশ।
জিএম কাদের অংশকে বাদ দিয়ে ঢাকায় কাউন্সিল করে ওই অংশ আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে এই অংশের চেয়ারম্যান করা হয়।
দলের শীর্ষ ও সিনিয়র নেতাদের নিয়ে গঠিত ওই অংশ কাউন্সিলের পরই নির্বাচন কমিশনের কাছে নিজেদেরকে মূল জাতীয় পার্টি দাবি করে তাদের অধীনে দলীয় লাঙল প্রতীক দেওয়ার দাবি জানায়। আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণের বিষয়টি সেই প্রশ্নেও আটকে আছে।
এই অংশের নির্বাহী চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চুন্নু বিবিসি বাংলাকে বলেন, "আমরা আইন বিধি-বিধান ফলো করে কাউন্সিল করে ইসির কাছে সব তথ্য জমা দিয়েছি। আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বে আমরাই মূল জাতীয় পার্টি। 'লাঙ্গল' প্রতীকও থাকবে আমাদের কাছে"।
যে কারণে, আগামী নির্বাচনে মি. মাহমুদের এই অংশই চাচ্ছে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে।
একদিকে, মাঠের রাজনীতিতে কোণঠাসা, অন্যদিকে দলীয় এই কোন্দলের বিষয়টিকেই গুরুত্ব দিয়ে দেখছে নির্বাচন কমিশন।
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ধারাবাহিক সংলাপ শুরু হচ্ছে। সেই সংলাপে জাতীয় পার্টিকে আমন্ত্রণ জানানো হবে কি-না সেটি নিয়েও সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না ইসি।
নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বিবিসি বাংলাকে বলেন, "একটা দলের মূল বিষয় নিবন্ধন ও তাদের প্রতীক। জাতীয় পার্টির মধ্যে অভ্যন্তরীণ কিছু সমস্যা আছে। এটা তারা ফয়সালা করলে তখন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে"।
এই নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য হচ্ছে, অভ্যন্তরীণ কোন্দলের এই জটিলতা না কাটলে জাতীয় পার্টি নিয়ে কোনো ফয়সালা করতে পারবে না ইসি।
এটি যে একটি বড় সংকট সেটিও মানছে জিএম কাদের অংশ। এই অংশের মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী বিবিসি বাংলাকে বলেন, "আইন অনুযায়ী বর্তমান দলীয় কোন্দল একটি বড় সংকট। তবে পার্টির নিয়ন্ত্রণ এখনো জিএম কাদেরের কাছেই"।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী কিংবা জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপির মতো দলগুলো যখন নির্বাচনী মাঠে ব্যস্ত, তখন ভোটে অংশ নেওয়া নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মিত্র জাতীয় পার্টি।
অনিশ্চয়তা থাকলেও এরই মধ্যে ভেতরে ভেতরে প্রার্থী বাছাই ও নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে দলটি। তারা বলছে, শেষ পর্যন্ত যদি ভোটে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে 'গ্রিন সিগন্যাল' মেলে, তাহলে জোরেসোরে মাঠে নামবে তারা।
দলটির ইচ্ছা- এককভাবে নির্বাচনের চাইতে জোটগতভাবে ভোটে অংশ নেওয়া। সেক্ষেত্রে বিএনপি কিংবা জামায়াতে ইসলামী যে কোনো একটি দলের সাথে জোটে যেতেও আগ্রহী দলটি।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী বিবিসি বাংলাকে বলেন, "জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নিলে সেক্ষেত্রে জাতীয় পার্টিরও যেমন আসন সংখ্যা বাড়বে, তেমনি যে দলের সাথে জোট হবে তাদেরও আসন ও ভোট বাড়বে"।
দলটি মনে করছে নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে এখনো যে ধোঁয়াশা রয়ে গেছে সেটি হয়তো তফসিল ঘোষণার পর কেটে যাবে। তখনই জোটের বিষয়ে আলোচনার উদ্যোগ নেবে দলটি।
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ধারাবাহিক সংলাপ করবে নির্বাচন কমিশন। সেক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি সেই সংলাপে আমন্ত্রণ পাবে কি-না সেটি এখনো নিশ্চিত নয়।
জাতীয় পার্টি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। তবে দলটির মধ্যে অন্তর্কোন্দলের জেরে কাউন্সিলের মাধ্যমে আলাদা কমিটি গঠন করে সেই তথ্য নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছে দলটি।
সেই উদাহরণ টেনে নির্বাচন কমিশন বলছে, জাতীয় পার্টি নিজেদের অভ্যন্তরীণ সংকট সমস্যা সমাধান করে যদি ইসির দ্বারস্থ হয় তাহলে দলটির সাথে সংলাপ বা ভোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে তারা।
নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বিবিসি বাংলাকে বলেন, "তাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কিছু সমস্যা আছে। এটা তারা ফয়সালা করলে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে"।
জাতীয় পার্টির নির্বাচনী প্রস্তুতি কী?
ডিসেম্বরেই ঘোষণা করার কথা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল।
এই নির্বাচনকে সামনে রেখে এরই মধ্যে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী বিভিন্ন সংসদীয় আসনে প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে। এই দল দুটির প্রার্থীদের প্রচারণায় জমে উঠেছে মাঠের রাজনীতি।
অন্যদিকে, গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টিও দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছে। শিগগিরই দলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার কথা জানিয়েছে তারা।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের পর দলটির নিবন্ধনও স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। যে কারণে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়টি অনেকটাই স্পষ্ট।
গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের মতো কার্যক্রম নিষিদ্ধ বা নিবন্ধন স্থগিত না হলেও রাজনীতির মাঠে গত ১৪ মাস ধরে অনেকটাই কোণঠাসা জাতীয় পার্টি।
অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে একটি মাত্র বৈঠকে অংশ নিলেও পরে ঐকমত্য কমিশন কিংবা সরকারের সাথে কোনো ধরনের বৈঠকে আমন্ত্রণ পায়নি দলটি।
গত এক বছরের দলটি একাধিক সভা সমাবেশ করতে চাইলেও তাতে পুলিশের পক্ষ থেকে বাধা দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। সর্বশেষ গত ১১ই অক্টোবর নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে জাতীয় পার্টি ঢাকায় একটি সমাবেশ ডাকলেও শেষ পর্যন্ত সেটি পুলিশের বাধায় পণ্ড হয়।
অন্যদিকে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে একাধিক বার হামলাও হয়েছে। অগাস্টে জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষও হয়েছে।
সরকার যেহেতু দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেনি কিংবা নির্বাচন কমিশনও দলটির নিবন্ধন বাতিল করেনি সে কারণে এরই মধ্যে নির্বাচন প্রস্তুতি শুরু করেছে।
দলটির নেতারা বলছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে এরই মধ্যে ৩০০ আসনেই প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ চলছে। কোন কোন আসনে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্তও করা হয়েছে। যার নেতৃত্ব দিচ্ছে দলীয় চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী বিবিসি বাংলাকে বলেন, "প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পার্টির চেয়ারম্যান অনেকের সাথে কথা বলেছেন। আমাদের একটা ছক করা আছে কোন আসন থেকে কে ভোট করতে পারেন। এ নিয়ে আমাদের প্রস্তুতি আছে। প্রার্থী ঘোষণা করতে আমাদের খুব বেশি সময় লাগবে না"।
আপাতত ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুত রাখা হলেও শেষ পর্যন্ত ভোটে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেলে সব আসনে প্রার্থী না দেওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছেন দলের নেতারা।
মি. পাটোয়ারী বলছিলেন, "প্রাথমিকভাবে ৩০০ আসনেরই প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় পার্টি। সেটি এটা পর্যায়ে পৌঁছালে তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কতগুলোতে ভোট করবো আমরা"।
টার্গেট জোটবদ্ধ নির্বাচন?
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে ২০২৪ সালের নির্বাচন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাথে কখনো জোটবদ্ধ, কখনো বা আসন সমঝোতা করে নির্বাচনে অংশ নিয়ে আসছিল জাতীয় পার্টি।
এসব ভোটে কখনো বিরোধী দলের ভূমিকায়, আবার কখনো সরকারে থেকেই বিরোধী দল ছিল জাতীয় পার্টি। যে কারণে ২০২৪ সালের পাঁচই অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর জাতীয় পার্টিও দেশের রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়ে।
এমন অবস্থায় আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টিও যে অনিশ্চিত সেটিও মানছেন জাতীয় পার্টির নেতারা।
সম্প্রতি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ কিংবা প্রেস রিলিজে জাতীয় পার্টিকে রাজনীতি ও নির্বাচনে সুযোগ দেওয়ার দাবিও জানাতে দেখা গেছে দলের নেতাদের।
জাতীয় পার্টির নেতারা মনে করছেন, শেষ পর্যন্ত তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে দলটির আগ্রহ একক নির্বাচন না করে জোটগত ভোটে অংশ নেওয়া।
রোববার যখন জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারীর সাথে কথা হচ্ছিল তখন জোটবদ্ধ ভোট করার আগ্রহের কথা জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, "রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই"।
সেটি কেমন? এই প্রশ্নে মি. পাটোয়ারীর উত্তর, "আমরা বুঝতে পারি অনেকে (রাজনৈতিক দল) আমাদের সাথে জোট করতে আগ্রহী। আমরাও অনেকের সাথে জোট করতে আগ্রহী"।
তার ব্যাখ্যা, "এই মুহূর্তে জাতীয় পার্টি মনে করছে তারা যদি একক নির্বাচনের চাইতে জোটগতভাবে করে তাহলে তাদের আসন সংখ্যা যেমন বাড়তে পারে, তেমনি যে দলের সাথে জোট করবে তাদের আসনও বাড়তে পারে"।
তাহলে শেষ পর্যন্ত কোন দলের সাথে জোটে আগ্রহ জাতীয় পার্টির?
এর একটু ব্যাখ্যা দিয়ে মি. পাটোয়ারী বলেন, ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপি- জামায়াতের সাথে জাতীয় পার্টির এক ধরনের জোট গঠনে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেটি তখন হয়নি।
তবে, এবারের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি বিএনপি বা জামায়াতের সাথে জোট করতে আগ্রহী বলেও জাতীয় পার্টির মহাসচিব বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন।
তিনি এটিও জানিয়েছেন যে, সেটি কতখানি বাস্তব তা নিয়ে ধোঁয়াশা আছে। তবে শেষ পর্যন্ত তা নির্ভর করবে তফসিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক পরিবেশ কেমন থাকে তার ওপর।
কোন্দলের সুযোগ নিচ্ছে ইসি?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি দলটি সবচেয়ে বেশি বার ভাঙা গড়ার মধ্য দিয়ে গেছে। বিভিন্ন নামে জাতীয় পার্টির নতুন নতুন দল তৈরি হলেও মূল অংশ ছিল প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের কাছে।
গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পর চলতি বছরের ৯ই অগাস্ট আরেক দফায় ভাঙে জাতীয় পার্টি। দলীয় চেয়ারম্যান জিএম কাদেরসহ চেয়ারম্যানপন্থিদের বাদ দিয়ে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করেছে জাতীয় পার্টির একটি অংশ।
জিএম কাদের অংশকে বাদ দিয়ে ঢাকায় কাউন্সিল করে ওই অংশ আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে এই অংশের চেয়ারম্যান করা হয়।
দলের শীর্ষ ও সিনিয়র নেতাদের নিয়ে গঠিত ওই অংশ কাউন্সিলের পরই নির্বাচন কমিশনের কাছে নিজেদেরকে মূল জাতীয় পার্টি দাবি করে তাদের অধীনে দলীয় লাঙল প্রতীক দেওয়ার দাবি জানায়। আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণের বিষয়টি সেই প্রশ্নেও আটকে আছে।
এই অংশের নির্বাহী চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চুন্নু বিবিসি বাংলাকে বলেন, "আমরা আইন বিধি-বিধান ফলো করে কাউন্সিল করে ইসির কাছে সব তথ্য জমা দিয়েছি। আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বে আমরাই মূল জাতীয় পার্টি। 'লাঙ্গল' প্রতীকও থাকবে আমাদের কাছে"।
যে কারণে, আগামী নির্বাচনে মি. মাহমুদের এই অংশই চাচ্ছে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে।
একদিকে, মাঠের রাজনীতিতে কোণঠাসা, অন্যদিকে দলীয় এই কোন্দলের বিষয়টিকেই গুরুত্ব দিয়ে দেখছে নির্বাচন কমিশন।
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ধারাবাহিক সংলাপ শুরু হচ্ছে। সেই সংলাপে জাতীয় পার্টিকে আমন্ত্রণ জানানো হবে কি-না সেটি নিয়েও সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না ইসি।
নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বিবিসি বাংলাকে বলেন, "একটা দলের মূল বিষয় নিবন্ধন ও তাদের প্রতীক। জাতীয় পার্টির মধ্যে অভ্যন্তরীণ কিছু সমস্যা আছে। এটা তারা ফয়সালা করলে তখন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে"।
এই নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য হচ্ছে, অভ্যন্তরীণ কোন্দলের এই জটিলতা না কাটলে জাতীয় পার্টি নিয়ে কোনো ফয়সালা করতে পারবে না ইসি।
এটি যে একটি বড় সংকট সেটিও মানছে জিএম কাদের অংশ। এই অংশের মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী বিবিসি বাংলাকে বলেন, "আইন অনুযায়ী বর্তমান দলীয় কোন্দল একটি বড় সংকট। তবে পার্টির নিয়ন্ত্রণ এখনো জিএম কাদেরের কাছেই"।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বৈঠকটি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তবে কোনো নির্দিষ্ট এজেন্ডা থাকছে না। নানা বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা হবে।
২০ ঘণ্টা আগে
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটি চক্র, একটি মহল যারা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে যোগসাজশে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছিল, তাদের পরিবারদের হত্যা করেছিল, তাদের মেয়েদের তুলে দিয়েছিল খান বাহিনীর হাতে। তাদের সঙ্গে কি এদেশের মানুষ আপস করতে পারে?’
১ দিন আগে
আমরা আজ কলি, একদিন ফুটবই: নাহিদ ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে নতুন রাজনৈতিক পরিচয়, সংগঠনের স্বতন্ত্র ভাবমূর্তি ও ভোটযুদ্ধে সহজে চেনার মতো প্রতীক পাওয়ার চেষ্টা চলছিল এনসিপি। অবশেষে নির্বাচন কমিশনের যাচাই–বাছাই শেষে শাপলাকলি প্রতীক হিসেবে বরাদ্দ করা হয় এনসিপিকে। এই প্রতিক নিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে সম্প্রতি মন্তব
১ দিন আগে
জুলাই সনদের গণভোট জাতীয় নির্বাচনের আগেই আয়োজনসহ পাঁচ দাবিতে রাজপথের আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামীসহ আট দল। এ দাবি না মানলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি। অন্যদিকে বিএনপিসহ সমমনারাও জাতীয় নির্বাচনের দিনেই গণভোট আয়োজনের বিষয়ে অনড়। এ অবস্থায় জুলাই সনদের ভবিষ্যৎ কী, জুলাই সনদ ঘিরে অনিশ্চয়তা তৈরি হলে কি জাতীয় নির্
১ দিন আগে