অরুণাভ বিশ্বাস
গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের ইতিহাস বলতে গেলে আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে প্রাচীন ভারতের এক উজ্জ্বল অধ্যায়ের অবসান। খ্রিস্টীয় চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ শতক পর্যন্ত গুপ্ত সাম্রাজ্য ছিল ভারতবর্ষের এক রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বর্ণযুগ। বিজ্ঞান, গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, চিকিৎসাশাস্ত্র, সাহিত্য, স্থাপত্য—প্রায় সব ক্ষেত্রেই তখন চূড়ান্ত বিকাশ ঘটেছিল। তবে ইতিহাস বলে, কোনো সাম্রাজ্য চিরস্থায়ী নয়। গুপ্তদের পতনের পেছনে যেমন অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা ছিল, তেমনই বহিরাগত আক্রমণও ছিল বিধ্বংসী। বিশেষ করে যে যুদ্ধকে গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের মূল বাঁকবদল হিসেবে ধরা হয়, তা হল হূণদের (হুন) আক্রমণ—বিশেষত গুপ্ত সেনাপতি ও সম্রাটদের সঙ্গে হূণ নেতা মিহিরকুলের সংঘর্ষ। এই সংঘর্ষই কার্যত গুপ্ত শক্তিকে মেরুদণ্ডহীন করে দিয়েছিল এবং ধীরে ধীরে সাম্রাজ্যের পতন ঘটে।
গুপ্ত সাম্রাজ্যের শক্তি ষষ্ঠ শতকের শুরুতে এসে কিছুটা কমতে শুরু করে। সম্রাট স্কন্দগুপ্ত (প্রায় ৪৫৫–৪৬৭ খ্রিস্টাব্দ) তাঁর শাসনামলে প্রথম হূণ আক্রমণ প্রতিহত করেন। এই হূণরা ছিল মধ্য এশিয়ার যাযাবর জাতি, যারা উত্তর-পশ্চিম ভারতের দিকে ধেয়ে আসে। প্রথম যুদ্ধে স্কন্দগুপ্ত বিজয়ী হলেও এ লড়াই সাম্রাজ্যের আর্থিক ভাণ্ডারে ভয়াবহ চাপ ফেলে। যুদ্ধের খরচ মেটাতে শুল্ক বাড়ানো হয়, ফলে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি বিপর্যস্ত হতে থাকে। ইতিহাসবিদ উইলিয়াম আরভিন তাঁর দ্য আর্লি মিডিভ্যাল ইন্ডিয়া গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন—"গুপ্ত সাম্রাজ্য হূণদের প্রথম আক্রমণ ঠেকালেও এর জন্য যে সম্পদ ব্যয় হয়েছিল, তা সাম্রাজ্যের ভিত নরম করে দেয়।" তাঁর মতে, এই আর্থিক দুর্বলতাই ভবিষ্যতের বড় আঘাত প্রতিরোধে সাম্রাজ্যকে অক্ষম করে তোলে।
প্রথম দফায় প্রতিহত হওয়ার পর হূণরা আবারও আক্রমণ চালায়, তবে এবার তাদের নেতৃত্বে ছিল তোরমাণ ও তার পুত্র মিহিরকুল। স্কন্দগুপ্তের পরবর্তী শাসকদের রাজনৈতিক দক্ষতা ও সামরিক শক্তি আগের মতো ছিল না। হূণদের সঙ্গে যে বড় সংঘর্ষ ঘটে, তা প্রায় ৫১০ খ্রিস্টাব্দের দিকে। ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়, এই যুদ্ধে গুপ্ত সেনারা প্রচণ্ড ক্ষতির মুখে পড়ে। মিহিরকুল ছিলেন অত্যন্ত নির্মম ও শক্তিশালী শাসক, তাঁর সেনাবাহিনী ছিল দুর্দমনীয়। গুপ্তদের সীমান্ত প্রতিরক্ষা ভেঙে পড়ে এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকা হূণদের দখলে চলে যায়।
ব্রিটিশ ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথ তাঁর দ্য অক্সফোর্ড হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়া বইয়ে লিখেছেন—"মিহিরকুলের নেতৃত্বে হূণরা ভারতের উত্তর-পশ্চিমে এমন ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল যে, গুপ্ত সাম্রাজ্যের পুনরুত্থান আর সম্ভব হয়নি।" স্মিথের মতে, এই যুদ্ধে গুপ্ত সেনাদের পরাজয় শুধু সামরিক নয়, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও গভীর ক্ষতি ডেকে আনে। বহু শিক্ষাকেন্দ্র ধ্বংস হয়, বাণিজ্যপথ বিপর্যস্ত হয়, এবং কৃষিজমি লুণ্ঠনের কারণে খাদ্যসংকট দেখা দেয়।
এই যুদ্ধের অন্যতম বড় প্রভাব ছিল রাজনৈতিক বিভাজন। গুপ্তদের অধীনে থাকা রাজ্য ও উপনিবেশগুলো ক্রমে স্বাধীন হয়ে পড়ে। সম্রাটদের ক্ষমতা কার্যত রাজধানী ও আশপাশের কয়েকটি অঞ্চলে সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। মধ্য ভারতের মালওয়া, গুজরাট, এমনকি বাংলার কিছু অংশও গুপ্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে যায়। জার্মান ইতিহাসবিদ জোহানেস বাখম্যান এই প্রসঙ্গে লিখেছেন—"গুপ্তদের বিরুদ্ধে হূণ বিজয় ছিল ভারতের রাজনৈতিক মানচিত্রে এক স্থায়ী পরিবর্তনের সূচনা। কেন্দ্রীভূত সাম্রাজ্যের জায়গায় আঞ্চলিক রাজ্যগুলোর উত্থান ঘটতে থাকে।"
যুদ্ধোত্তর পরিস্থিতিতে গুপ্ত সাম্রাজ্যের ভেতরে বিদ্রোহ ও ক্ষমতার লড়াই শুরু হয়। রাজকোষ ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় সেনাবাহিনীর বেতন দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে, ফলে সৈন্যরা অসন্তুষ্ট হয়। এর পাশাপাশি বাণিজ্যের পতন এবং কৃষি উৎপাদন হ্রাস পাওয়ায় রাজস্ব কমে যায়। হূণদের দখলদারি শুধু ভৌগোলিক এলাকা নয়, বরং মনোবল ও রাজনৈতিক ঐক্যকেও ধ্বংস করে দেয়।
যুদ্ধের প্রভাব সাংস্কৃতিক দিকেও পড়েছিল। গুপ্ত যুগের যেসব মন্দির, বৌদ্ধ বিহার ও বিশ্ববিদ্যালয় ছিল, তার অনেকগুলো হূণদের আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় তখনও সক্রিয় ছিল, কিন্তু উত্তর-পশ্চিম ভারতের শিক্ষাকেন্দ্রগুলোর অনেকটাই হারিয়ে যায়। ভারতীয় শিল্প ও সাহিত্য এই ধাক্কা থেকে কিছুটা সামলে উঠলেও গুপ্তদের সেই ‘সোনালি যুগ’ আর ফিরে আসেনি।
হূণদের আক্রমণ প্রতিহত করার শেষ চেষ্টা করেছিলেন গুপ্ত সাম্রাজ্যের পরবর্তী কিছু শাসক, তবে ততদিনে সাম্রাজ্যের ভৌগোলিক পরিধি অনেকটাই সঙ্কুচিত হয়ে যায়। মধ্য গঙ্গা উপত্যকা ও আশেপাশের কিছু অঞ্চলে তাঁদের নিয়ন্ত্রণ থাকলেও উত্তর-পশ্চিম ও পশ্চিম ভারতের প্রায় সবটাই হারিয়ে যায়। হূনরা তাদের শাসন বিস্তার করে, যদিও পরে স্থানীয় রাজারা ধীরে ধীরে তাদের বিতাড়িত করে। কিন্তু ততদিনে গুপ্তদের শক্তি এতটাই ক্ষয় হয়ে যায় যে তারা আর বড় কোনো রাজনৈতিক শক্তি হয়ে উঠতে পারেনি।
ফরাসি ঐতিহাসিক রেনে গ্রুশে এই পতনের সারমর্ম করতে গিয়ে লিখেছেন—"গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতন এক দিনের ঘটনা ছিল না, বরং এটা এক দীর্ঘ প্রক্রিয়া। তবে হূণদের সঙ্গে সংঘর্ষ ছিল সেই প্রক্রিয়ার সবচেয়ে বড় ও দ্রুতগামী ধাপ।" তাঁর মতে, যুদ্ধ শুধু সামরিক শক্তি ধ্বংস করেনি, বরং অভ্যন্তরীণ প্রশাসন, অর্থনীতি ও সাংস্কৃতিক জীবনকে একসঙ্গে ভেঙে দিয়েছিল।
ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের যুদ্ধ আসলে বহুমুখী সংকটের প্রতীক। যুদ্ধক্ষেত্রে পরাজয় ছিল দৃশ্যমান কারণ, কিন্তু এর পেছনে দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক দুর্বলতা, প্রশাসনিক জটিলতা ও আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতার প্রভাবও ছিল। তবুও হূণদের বিরুদ্ধে সেই যুদ্ধকে না ঘটলে হয়তো গুপ্ত সাম্রাজ্যের আয়ু আরও কয়েক দশক বাড়ত।
এভাবে হূনদের সঙ্গে সংঘর্ষই ছিল গুপ্ত সাম্রাজ্যের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়, যা ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ঐক্যকে চিরতরে ভেঙে দেয়। যে সাম্রাজ্য বিজ্ঞান, শিল্প ও সংস্কৃতিতে এক সময় বিশ্বের অগ্রগণ্য স্থানে ছিল, সেই সাম্রাজ্য এই যুদ্ধে ধীরে ধীরে ইতিহাসের পাতা থেকে মিলিয়ে যায়। হূণদের ধ্বংসযজ্ঞের পর আর কোনো শক্তিই গুপ্তদের পুনরুত্থান ঘটাতে পারেনি, আর ভারত প্রবেশ করে মধ্যযুগীয় রাজনৈতিক বিভাজনের যুগে।
গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের ইতিহাস বলতে গেলে আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে প্রাচীন ভারতের এক উজ্জ্বল অধ্যায়ের অবসান। খ্রিস্টীয় চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ শতক পর্যন্ত গুপ্ত সাম্রাজ্য ছিল ভারতবর্ষের এক রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বর্ণযুগ। বিজ্ঞান, গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, চিকিৎসাশাস্ত্র, সাহিত্য, স্থাপত্য—প্রায় সব ক্ষেত্রেই তখন চূড়ান্ত বিকাশ ঘটেছিল। তবে ইতিহাস বলে, কোনো সাম্রাজ্য চিরস্থায়ী নয়। গুপ্তদের পতনের পেছনে যেমন অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা ছিল, তেমনই বহিরাগত আক্রমণও ছিল বিধ্বংসী। বিশেষ করে যে যুদ্ধকে গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের মূল বাঁকবদল হিসেবে ধরা হয়, তা হল হূণদের (হুন) আক্রমণ—বিশেষত গুপ্ত সেনাপতি ও সম্রাটদের সঙ্গে হূণ নেতা মিহিরকুলের সংঘর্ষ। এই সংঘর্ষই কার্যত গুপ্ত শক্তিকে মেরুদণ্ডহীন করে দিয়েছিল এবং ধীরে ধীরে সাম্রাজ্যের পতন ঘটে।
গুপ্ত সাম্রাজ্যের শক্তি ষষ্ঠ শতকের শুরুতে এসে কিছুটা কমতে শুরু করে। সম্রাট স্কন্দগুপ্ত (প্রায় ৪৫৫–৪৬৭ খ্রিস্টাব্দ) তাঁর শাসনামলে প্রথম হূণ আক্রমণ প্রতিহত করেন। এই হূণরা ছিল মধ্য এশিয়ার যাযাবর জাতি, যারা উত্তর-পশ্চিম ভারতের দিকে ধেয়ে আসে। প্রথম যুদ্ধে স্কন্দগুপ্ত বিজয়ী হলেও এ লড়াই সাম্রাজ্যের আর্থিক ভাণ্ডারে ভয়াবহ চাপ ফেলে। যুদ্ধের খরচ মেটাতে শুল্ক বাড়ানো হয়, ফলে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি বিপর্যস্ত হতে থাকে। ইতিহাসবিদ উইলিয়াম আরভিন তাঁর দ্য আর্লি মিডিভ্যাল ইন্ডিয়া গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন—"গুপ্ত সাম্রাজ্য হূণদের প্রথম আক্রমণ ঠেকালেও এর জন্য যে সম্পদ ব্যয় হয়েছিল, তা সাম্রাজ্যের ভিত নরম করে দেয়।" তাঁর মতে, এই আর্থিক দুর্বলতাই ভবিষ্যতের বড় আঘাত প্রতিরোধে সাম্রাজ্যকে অক্ষম করে তোলে।
প্রথম দফায় প্রতিহত হওয়ার পর হূণরা আবারও আক্রমণ চালায়, তবে এবার তাদের নেতৃত্বে ছিল তোরমাণ ও তার পুত্র মিহিরকুল। স্কন্দগুপ্তের পরবর্তী শাসকদের রাজনৈতিক দক্ষতা ও সামরিক শক্তি আগের মতো ছিল না। হূণদের সঙ্গে যে বড় সংঘর্ষ ঘটে, তা প্রায় ৫১০ খ্রিস্টাব্দের দিকে। ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়, এই যুদ্ধে গুপ্ত সেনারা প্রচণ্ড ক্ষতির মুখে পড়ে। মিহিরকুল ছিলেন অত্যন্ত নির্মম ও শক্তিশালী শাসক, তাঁর সেনাবাহিনী ছিল দুর্দমনীয়। গুপ্তদের সীমান্ত প্রতিরক্ষা ভেঙে পড়ে এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকা হূণদের দখলে চলে যায়।
ব্রিটিশ ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথ তাঁর দ্য অক্সফোর্ড হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়া বইয়ে লিখেছেন—"মিহিরকুলের নেতৃত্বে হূণরা ভারতের উত্তর-পশ্চিমে এমন ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল যে, গুপ্ত সাম্রাজ্যের পুনরুত্থান আর সম্ভব হয়নি।" স্মিথের মতে, এই যুদ্ধে গুপ্ত সেনাদের পরাজয় শুধু সামরিক নয়, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও গভীর ক্ষতি ডেকে আনে। বহু শিক্ষাকেন্দ্র ধ্বংস হয়, বাণিজ্যপথ বিপর্যস্ত হয়, এবং কৃষিজমি লুণ্ঠনের কারণে খাদ্যসংকট দেখা দেয়।
এই যুদ্ধের অন্যতম বড় প্রভাব ছিল রাজনৈতিক বিভাজন। গুপ্তদের অধীনে থাকা রাজ্য ও উপনিবেশগুলো ক্রমে স্বাধীন হয়ে পড়ে। সম্রাটদের ক্ষমতা কার্যত রাজধানী ও আশপাশের কয়েকটি অঞ্চলে সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। মধ্য ভারতের মালওয়া, গুজরাট, এমনকি বাংলার কিছু অংশও গুপ্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে যায়। জার্মান ইতিহাসবিদ জোহানেস বাখম্যান এই প্রসঙ্গে লিখেছেন—"গুপ্তদের বিরুদ্ধে হূণ বিজয় ছিল ভারতের রাজনৈতিক মানচিত্রে এক স্থায়ী পরিবর্তনের সূচনা। কেন্দ্রীভূত সাম্রাজ্যের জায়গায় আঞ্চলিক রাজ্যগুলোর উত্থান ঘটতে থাকে।"
যুদ্ধোত্তর পরিস্থিতিতে গুপ্ত সাম্রাজ্যের ভেতরে বিদ্রোহ ও ক্ষমতার লড়াই শুরু হয়। রাজকোষ ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় সেনাবাহিনীর বেতন দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে, ফলে সৈন্যরা অসন্তুষ্ট হয়। এর পাশাপাশি বাণিজ্যের পতন এবং কৃষি উৎপাদন হ্রাস পাওয়ায় রাজস্ব কমে যায়। হূণদের দখলদারি শুধু ভৌগোলিক এলাকা নয়, বরং মনোবল ও রাজনৈতিক ঐক্যকেও ধ্বংস করে দেয়।
যুদ্ধের প্রভাব সাংস্কৃতিক দিকেও পড়েছিল। গুপ্ত যুগের যেসব মন্দির, বৌদ্ধ বিহার ও বিশ্ববিদ্যালয় ছিল, তার অনেকগুলো হূণদের আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় তখনও সক্রিয় ছিল, কিন্তু উত্তর-পশ্চিম ভারতের শিক্ষাকেন্দ্রগুলোর অনেকটাই হারিয়ে যায়। ভারতীয় শিল্প ও সাহিত্য এই ধাক্কা থেকে কিছুটা সামলে উঠলেও গুপ্তদের সেই ‘সোনালি যুগ’ আর ফিরে আসেনি।
হূণদের আক্রমণ প্রতিহত করার শেষ চেষ্টা করেছিলেন গুপ্ত সাম্রাজ্যের পরবর্তী কিছু শাসক, তবে ততদিনে সাম্রাজ্যের ভৌগোলিক পরিধি অনেকটাই সঙ্কুচিত হয়ে যায়। মধ্য গঙ্গা উপত্যকা ও আশেপাশের কিছু অঞ্চলে তাঁদের নিয়ন্ত্রণ থাকলেও উত্তর-পশ্চিম ও পশ্চিম ভারতের প্রায় সবটাই হারিয়ে যায়। হূনরা তাদের শাসন বিস্তার করে, যদিও পরে স্থানীয় রাজারা ধীরে ধীরে তাদের বিতাড়িত করে। কিন্তু ততদিনে গুপ্তদের শক্তি এতটাই ক্ষয় হয়ে যায় যে তারা আর বড় কোনো রাজনৈতিক শক্তি হয়ে উঠতে পারেনি।
ফরাসি ঐতিহাসিক রেনে গ্রুশে এই পতনের সারমর্ম করতে গিয়ে লিখেছেন—"গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতন এক দিনের ঘটনা ছিল না, বরং এটা এক দীর্ঘ প্রক্রিয়া। তবে হূণদের সঙ্গে সংঘর্ষ ছিল সেই প্রক্রিয়ার সবচেয়ে বড় ও দ্রুতগামী ধাপ।" তাঁর মতে, যুদ্ধ শুধু সামরিক শক্তি ধ্বংস করেনি, বরং অভ্যন্তরীণ প্রশাসন, অর্থনীতি ও সাংস্কৃতিক জীবনকে একসঙ্গে ভেঙে দিয়েছিল।
ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের যুদ্ধ আসলে বহুমুখী সংকটের প্রতীক। যুদ্ধক্ষেত্রে পরাজয় ছিল দৃশ্যমান কারণ, কিন্তু এর পেছনে দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক দুর্বলতা, প্রশাসনিক জটিলতা ও আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতার প্রভাবও ছিল। তবুও হূণদের বিরুদ্ধে সেই যুদ্ধকে না ঘটলে হয়তো গুপ্ত সাম্রাজ্যের আয়ু আরও কয়েক দশক বাড়ত।
এভাবে হূনদের সঙ্গে সংঘর্ষই ছিল গুপ্ত সাম্রাজ্যের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়, যা ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ঐক্যকে চিরতরে ভেঙে দেয়। যে সাম্রাজ্য বিজ্ঞান, শিল্প ও সংস্কৃতিতে এক সময় বিশ্বের অগ্রগণ্য স্থানে ছিল, সেই সাম্রাজ্য এই যুদ্ধে ধীরে ধীরে ইতিহাসের পাতা থেকে মিলিয়ে যায়। হূণদের ধ্বংসযজ্ঞের পর আর কোনো শক্তিই গুপ্তদের পুনরুত্থান ঘটাতে পারেনি, আর ভারত প্রবেশ করে মধ্যযুগীয় রাজনৈতিক বিভাজনের যুগে।
ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক জসীম উদ্দিন বলেন, সপ্তম দিনে ডাকসুর বিভিন্ন পদে জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছে ৪৪২ জন। এখন পর্যন্ত সাত দিনে ডাকসুতে মোট মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ৫৬৫ জন এবং ১৮টি হল সংসদের জন্য মোট মনোনয়ন সংগ্রহ করেছে এক হাজার ২২৬ জন।
১৭ ঘণ্টা আগেইংল্যান্ডের সিংহাসন তখন ছিল এক জটিল রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কেন্দ্র। ইংরেজ রাজা এডওয়ার্ড দ্য কনফেসর ১০৬৬ সালের জানুয়ারিতে উত্তরাধিকারী ছাড়াই মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াল—কে ইংল্যান্ডের নতুন রাজা হবেন? রাজ্যের প্রধান অভিজাতেরা হ্যারল্ড গডউইনসনকে রাজা ঘোষণা করলেন।
১৭ ঘণ্টা আগেডাকসুকে ভিপি পদে প্রার্থী সাদিক কায়েম শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি। অন্যদিকে জিএস পদে প্রার্থী এস এম ফরহাদ শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বর্তমান সভাপতি।
১৯ ঘণ্টা আগেঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) শিবিরের সাবেক সভাপতি সাদেক কায়েমকে ভিপি ও বর্তমান সভাপতি এস এম ফরহাদকে জিএস করে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের প্যানেল ঘোষণা করেছে সংগঠনটি।
১ দিন আগে