লাইফস্টাইল

চোখের নিচে কালো দাগ দূর করার উপায়

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৫, ২১: ৩৬

চোখ মানুষের মুখমণ্ডলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় একটি অংশ। কিন্তু চোখের নিচে যদি কালো দাগ দেখা যায়, তাহলে সেই মুখের সৌন্দর্য অনেকটাই মলিন হয়ে যায়। ক্লান্ত লাগা চেহারা, অসুস্থতা বা বার্ধক্যের লক্ষণ—সবকিছুই যেন এই একটুখানি কালো দাগের মধ্যে ধরা দেয়। অনেকেই মনে করেন, চোখের নিচে কালো দাগ আসলে ঘুম না হওয়া বা অতিরিক্ত চাপের ফল। আংশিকভাবে তা ঠিক হলেও, এই সমস্যার পেছনে আরও নানা কারণ থাকে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, এই দাগগুলো দূর করা যায়। কিছু ঘরোয়া উপায়, বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে চোখের নিচের কালো দাগ অনেকটাই হ্রাস করা সম্ভব।

বিশেষজ্ঞদের মতে, চোখের নিচে কালো দাগ হওয়ার পেছনে অন্যতম বড় কারণ হলো ত্বকের নিচে রক্তনালির প্রদর্শনযোগ্যতা। চোখের আশেপাশের ত্বক শরীরের সবচেয়ে পাতলা ত্বকগুলোর একটি। ফলে এখানে রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা হলে কিংবা ক্লান্তি জমলে তা সহজেই বাইরে থেকে দেখা যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের ডার্মাটোলজিস্ট ড. র‍্যাচেল নাজারিয়ান বলেন, “চোখের নিচের কালো দাগ অনেক সময় বংশগত হয়ে থাকে। আবার বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যখন ত্বক পাতলা হতে থাকে, তখনও এই অংশটি গাঢ় হতে পারে।” তাঁর মতে, আলো কমে যাওয়া, ঘুমের ঘাটতি, ধূমপান বা অতিরিক্ত ক্যাফেইন সেবনও এই সমস্যার জন্য দায়ী।

তবে শুধু অভ্যন্তরীণ কারণই নয়, বাইরের পরিবেশও কালো দাগের জন্য অনেকাংশে দায়ী। ইউভি রশ্মি ত্বকের নিচের রঞ্জক পদার্থ মেলানিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে চোখের নিচে রং গাঢ় হয়ে যায়। অস্ট্রেলিয়ান স্কিন অ্যান্ড ক্যানসার ফাউন্ডেশনের গবেষক ড. হেলেন বুসি বলেন, “সানস্ক্রিন না ব্যবহার করে রোদে বের হলে শুধু চোখের নিচে কালো দাগ নয়, গোটা মুখের ত্বকেই বয়সের ছাপ দ্রুত পড়ে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার আবহাওয়ায় এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।”

তবে আশার কথা হলো, নিয়মিত যত্ন নিলে এবং কিছু ঘরোয়া ও চিকিৎসাসম্মত পদ্ধতি অনুসরণ করলে এই দাগগুলো অনেকটাই হ্রাস করা সম্ভব। সবচেয়ে সহজ উপায় হলো—প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম। প্রাপ্তবয়স্কদের দিনে অন্তত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। ঘুম শরীরকে শুধু বিশ্রাম দেয় না, বরং ত্বকের কোষগুলো পুনর্গঠনেরও সুযোগ দেয়। এছাড়া পানির অভাবও চোখের নিচের ত্বককে রুক্ষ ও ক্লান্ত করে তোলে, ফলে দাগ আরও গাঢ় দেখায়। তাই দিনে ৮ গ্লাস পানি পান করাও জরুরি।

চোখের নিচে ঠান্ডা চামচ, আইস কিউব বা ঠান্ডা টি ব্যাগ ব্যবহার করাও বেশ কার্যকর একটি উপায়। নিউইয়র্কের বিখ্যাত স্কিনকেয়ার বিশেষজ্ঞ ড. হ্যাওয়ার্ড মুরাড বলেন, “ঠান্ডা প্রয়োগ রক্তনালির সঙ্কোচন ঘটায়। ফলে চোখের নিচের ফোলাভাব ও কালচে দাগ সাময়িকভাবে হ্রাস পায়।” তাঁর মতে, ক্যামোমাইল ও গ্রিন টি ব্যাগ চোখের নিচে ব্যবহার করলে এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

বাজারে পাওয়া নানা ধরনের আই ক্রিমেও উপকার পাওয়া যায়। তবে সব ধরনের ক্রিম যে সমান কার্যকর হবে, তা নয়। লন্ডন ইউনিভার্সিটি কলেজের ডার্মাটোলজি গবেষক ড. ফিওনা উইলিয়ামস বলেন, “যেসব ক্রিমে ভিটামিন সি, রেটিনল, হায়ালুরোনিক অ্যাসিড ও ক্যাফেইন থাকে, সেগুলো চোখের নিচের কালো দাগের বিরুদ্ধে বেশ কার্যকর।” তাঁর মতে, ভিটামিন সি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, রেটিনল ত্বকের কোষ পুনর্গঠনে সাহায্য করে এবং হায়ালুরোনিক অ্যাসিড ত্বককে আর্দ্র রাখে।

চিকিৎসাবিজ্ঞানের আরও কিছু উন্নত পদ্ধতিও রয়েছে এই সমস্যা দূর করার জন্য। যেমন, লেজার থেরাপি, কেমিক্যাল পিল বা ফিলার ইনজেকশন। তবে এসব চিকিৎসা অবশ্যই অভিজ্ঞ ডার্মাটোলজিস্টের তত্ত্বাবধানে করানো উচিত। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের ত্বক বিশেষজ্ঞ ড. এলেনা ফিশার বলেন, “লেজার থেরাপি ত্বকের নিচের অতিরিক্ত রঞ্জকতা দূর করে, তবে এটা সবার জন্য উপযোগী নয়। বিশেষ করে গাঢ় ত্বকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।” তাই এই ধরনের চিকিৎসা নেওয়ার আগে ত্বকের ধরণ, বয়স ও স্বাস্থ্যের অবস্থার কথা বিবেচনা করা প্রয়োজন।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—খাদ্যাভ্যাস। ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে প্রচুর ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে যেসব খাবারে ভিটামিন কে, ভিটামিন সি ও আয়রন রয়েছে, সেগুলো চোখের নিচের দাগ কমাতে সাহায্য করে। যাঁরা রক্তস্বল্পতায় ভোগেন, তাঁদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। তাই রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখাও জরুরি।

এছাড়া, জীবনের ধরনেও কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করা, ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকা এবং মানসিক চাপ কমানো—এই তিনটি কাজ চোখের নিচের ত্বককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। স্ট্রেস বা মানসিক চাপ শরীরের কর্টিসল হরমোন বাড়িয়ে দেয়, যার প্রভাব পড়ে ঘুম ও ত্বকের ওপর।

সবশেষে বলা যায়, চোখের নিচে কালো দাগ কোনো দুরারোগ্য সমস্যা নয়। এটি আমাদের শরীর ও জীবনের কিছু বার্তা বহন করে—কখনো ঘুমের ঘাটতি, কখনো দুশ্চিন্তা, কখনো বয়সের ছাপ বা অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা। তাই একে দূর করতে হলে শুধুমাত্র ক্রিম নয়, দরকার জীবনযাত্রায় সচেতন পরিবর্তন। প্রযুক্তি ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের সহযোগিতা থাকলেও প্রকৃত সমাধান নিহিত আমাদের দৈনন্দিন অভ্যাসে। আর এই অভ্যাস যদি সঠিক হয়, তবে একদিন নিশ্চয়ই আয়নায় নিজেকে দেখলে মনে হবে—চোখের নিচে আর কোনো ক্লান্তি নেই, নেই কোনো দাগ, শুধুই সতেজতা।

ad
ad

রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

অবশেষে সম্পর্কের কথা স্বীকার করলেন জয়া

তবে সেই ব্যক্তির নাম বা কোন পরিচয় প্রকাশ করেননি জয়া। শুধু এটুকু জানিয়েছেন যে, তার সেই বিশেষ মানুষ শোবিজ অঙ্গনের নন। এমনকি তারা দু’জন বহু বছর ধরে একসঙ্গে আছেন বলেও জানান এ অভিনেত্রী।

৭ ঘণ্টা আগে

ফ্লাইটরাডার২৪ অ্যাপ : আকাশের ডিজিটাল জানালা

এই অ্যাপ মূলত একটি ‘লাইভ ফ্লাইট ট্র্যাকিং’ প্ল্যাটফর্ম। পৃথিবীর হাজার হাজার বিমান যখন আকাশে উড়ছে, তখন এই অ্যাপ সেই সব বিমানের রিয়েল-টাইম অবস্থান, গন্তব্য, উচ্চতা, গতি এবং এমনকি কোন ধরনের বিমান সেটি—সব তথ্য সরাসরি দেখায়।

৭ ঘণ্টা আগে

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায়

গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীর প্রায় ৫০ শতাংশ প্রজননক্ষম নারী কোনো না কোনো মাত্রায় পিরিয়ডের ব্যথায় ভোগেন। তবে এই ব্যথা কমানোর কিছু উপায় রয়েছে, যা চিকিৎসা, জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের মাধ্যমে সম্ভব।

১ দিন আগে

গোপাল ভাঁড়কে কেন ফাঁসির আদেশ দিয়েছিলেন নবাব সিরাজউদ্দৌলা

১ দিন আগে