ফিচার

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায়

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২৫, ১৯: ৩৭
প্রতিকী ছবি। ছবি : এআইয়ের তৈরি।

মাসিক বা পিরিয়ড নারীদের জীবনের এক অনিবার্য জৈবিক প্রক্রিয়া। সাধারণত মাসে একবার এই প্রক্রিয়ায় জরায়ুর ভেতরের আস্তরণ ঝরে গিয়ে রক্তক্ষরণ হয়। এই সময়ে অনেক নারীই পেটের নিচে, কোমরে বা উরুর আশেপাশে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানে একে বলা হয় ‘ডিসমেনোরিয়া’। কিছু নারীর ক্ষেত্রে এই ব্যথা হালকা হয়, আবার অনেকের ক্ষেত্রে এতটাই তীব্র হয় যে দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীর প্রায় ৫০ শতাংশ প্রজননক্ষম নারী কোনো না কোনো মাত্রায় পিরিয়ডের ব্যথায় ভোগেন। তবে এই ব্যথা কমানোর কিছু উপায় রয়েছে, যা চিকিৎসা, জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের মাধ্যমে সম্ভব।

পিরিয়ডের ব্যথা মূলত জরায়ুর পেশি সংকোচনের কারণে হয়। এই সংকোচন প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন নামের রাসায়নিকের প্রভাবে বেড়ে যায়। প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিনের মাত্রা যত বেশি হবে, ব্যথা তত তীব্র হবে। এছাড়া হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, মানসিক চাপ, শারীরিক দুর্বলতা বা কিছু রোগ যেমন এন্ডোমেট্রিওসিস, পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম ইত্যাদিও ব্যথার মাত্রা বাড়াতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ড. সুসান হোয়াইট এই প্রসঙ্গে বলেন, “মাসিকের ব্যথা স্বাভাবিক হলেও যদি তা এতটাই তীব্র হয় যে ওষুধ ছাড়া স্বাভাবিক কাজকর্ম চালানো যায় না, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।” তাঁর মতে, অনেক নারী কেবল গরম সেঁক, হালকা ব্যায়াম এবং খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য উপশম পান, আবার কারও ক্ষেত্রে ওষুধ বা বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।

গরম সেঁক পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর একটি কার্যকর উপায়। জরায়ুর চারপাশে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে এটি পেশির টান কমায় এবং আরাম দেয়। লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজের গবেষক ড. অ্যালান সিলভারম্যানের মতে, “গরম সেঁক দেওয়া অনেক সময় ব্যথানাশক ওষুধের মতোই কার্যকর হতে পারে, বিশেষ করে ব্যথা যদি হালকা বা মাঝারি মাত্রার হয়।” তিনি আরও বলেন, গরম সেঁক দেওয়ার মানসিক দিকও রয়েছে—এটি শরীরকে শিথিল করে, যার ফলে ব্যথার অনুভূতি কমে যায়।

এছাড়া হালকা শারীরিক কার্যকলাপ যেমন হাঁটা, যোগব্যায়াম বা স্ট্রেচিং ব্যায়ামও ব্যথা উপশমে সাহায্য করে। যুক্তরাষ্ট্রের মায়ো ক্লিনিকের গবেষণা বলছে, হালকা ব্যায়ামের ফলে শরীরে এন্ডোরফিন নামের ‘প্রাকৃতিক ব্যথানাশক’ হরমোন নিঃসৃত হয়, যা ব্যথা ও মানসিক চাপ দুটোই কমায়। ড. মারিয়া লোপেজ, যিনি স্পেনের বার্সেলোনার একজন নারীস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, উল্লেখ করেন, “অনেক নারী ভাবেন ব্যথার সময় ব্যায়াম করলে কষ্ট বাড়বে, কিন্তু বাস্তবে সঠিক ধরনের হালকা ব্যায়াম ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।”

পিরিয়ডের সময় খাদ্যাভ্যাসেরও বড় ভূমিকা রয়েছে। অতিরিক্ত লবণ, চিনি, তেল-চর্বিযুক্ত ও ক্যাফেইনসমৃদ্ধ খাবার এ সময়ে ব্যথা ও ফোলাভাব বাড়িয়ে দিতে পারে। বরং শাকসবজি, ফলমূল, সম্পূর্ণ শস্য, ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উপকারী। ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির পুষ্টিবিদ ড. হান্না ব্রুক বলেন, “পিরিয়ডের আগে ও সময়ে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার যেমন মাছ, বাদাম ও বীজ ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।” তিনি আরও পরামর্শ দেন, পর্যাপ্ত পানি পান করার মাধ্যমে শরীরে পানিশূন্যতা রোধ করা উচিত, কারণ পানিশূন্যতা পেশির টান বাড়িয়ে ব্যথা তীব্র করতে পারে।

কিছু ভেষজ পানীয়ও ব্যথা কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে। আদা, দারচিনি বা ক্যামোমাইল চা প্রদাহ কমায় এবং জরায়ুর পেশি শিথিল করে। ইরানের তেহরান ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় দেখা গেছে, পিরিয়ড চলাকালীন আদা খাওয়া বা আদা চা পান করলে অনেক নারীর ব্যথার তীব্রতা ও সময়কাল কমে আসে। একইভাবে দারচিনিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ব্যথা প্রশমনে সহায়ক।

কিছু ক্ষেত্রে ওষুধ প্রয়োজন হয়। সাধারণত আইবুপ্রোফেন বা ন্যাপ্রোক্সেন জাতীয় ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শে খাওয়া যেতে পারে। তবে দীর্ঘদিন ধরে ওষুধ সেবন না করাই ভালো, কারণ এতে গ্যাস্ট্রিক বা অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল উইমেন্স হেলথ নেটওয়ার্কের বিশেষজ্ঞ ড. জুলিয়া হার্টম্যান বলেন, “ওষুধ একটি সাময়িক সমাধান, তবে যদি ব্যথা নিয়মিত তীব্র হয়, তবে এর পেছনের মূল কারণ খুঁজে বের করাই সবচেয়ে জরুরি।”

বিশ্রাম ও মানসিক স্বস্তিও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীরের ব্যথা অনুভূতির মাত্রা বেড়ে যায়। এছাড়া মানসিক চাপও ব্যথা বাড়াতে পারে। তাই মেডিটেশন, গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস বা পছন্দের কাজের মাধ্যমে মনকে শান্ত রাখা জরুরি।

তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, যদি মাসিকের ব্যথা প্রতিবারই অসহনীয় হয়, রক্তক্ষরণ অস্বাভাবিকভাবে বেশি হয় বা পিরিয়ড অনিয়মিত হয়, তবে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ অনেক সময় এন্ডোমেট্রিওসিস, জরায়ুর ফাইব্রয়েড বা অন্যান্য স্ত্রীরোগের প্রাথমিক লক্ষণও হতে পারে এই ব্যথা। সঠিক সময়ে পরীক্ষা ও চিকিৎসা না করালে সমস্যা জটিল হতে পারে।

সবশেষে বলা যায়, পিরিয়ডের ব্যথা নারীর জীবনে অস্বস্তি আনলেও কিছু অভ্যাস পরিবর্তন, সঠিক খাদ্যগ্রহণ, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, হালকা ব্যায়াম এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে এই ব্যথা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। আর সচেতনতা ও যত্নই পারে মাসিকের সময়টিকে কিছুটা হলেও স্বস্তিদায়ক করে তুলতে।

ad
ad

রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

অবশেষে সম্পর্কের কথা স্বীকার করলেন জয়া

তবে সেই ব্যক্তির নাম বা কোন পরিচয় প্রকাশ করেননি জয়া। শুধু এটুকু জানিয়েছেন যে, তার সেই বিশেষ মানুষ শোবিজ অঙ্গনের নন। এমনকি তারা দু’জন বহু বছর ধরে একসঙ্গে আছেন বলেও জানান এ অভিনেত্রী।

৯ ঘণ্টা আগে

ফ্লাইটরাডার২৪ অ্যাপ : আকাশের ডিজিটাল জানালা

এই অ্যাপ মূলত একটি ‘লাইভ ফ্লাইট ট্র্যাকিং’ প্ল্যাটফর্ম। পৃথিবীর হাজার হাজার বিমান যখন আকাশে উড়ছে, তখন এই অ্যাপ সেই সব বিমানের রিয়েল-টাইম অবস্থান, গন্তব্য, উচ্চতা, গতি এবং এমনকি কোন ধরনের বিমান সেটি—সব তথ্য সরাসরি দেখায়।

১০ ঘণ্টা আগে

গোপাল ভাঁড়কে কেন ফাঁসির আদেশ দিয়েছিলেন নবাব সিরাজউদ্দৌলা

১ দিন আগে

কলিঙ্গের যুদ্ধ: কারণ, ভয়াবহতা ও পরিমাণ

কলিঙ্গ ছিল প্রাচীন ভারতের পূর্ব উপকূলবর্তী একটি সমৃদ্ধ, স্বাধীন রাজ্য—বর্তমান ওড়িশা ও দক্ষিণ-পূর্ব আন্দ্রপ্রদেশে। এর মানুষের সাংস্কৃতিক রুচি, সামুদ্রিক বাণিজ্য, শক্তিশালী নৌদল—সকল কিছুই ছিল আত্মনির্ভর, যা মুর্য সিংহাসনে নতুন দ্বারপ্রান্তে বসা অশোককে উদ্বিগ্ন করেছিল।

১ দিন আগে