অরুণাভ বিশ্বাস
প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে “কলিঙ্গ যুদ্ধ” এক রকম পরিপূর্ণ অধ্যায়। এটি শুধু এক যুদ্ধ নয়, বরং একটি মানুষকে, রাজা থেকে মানবতাবাদী নেতা হিসেবে পরিণত হওয়ার গল্প। এই যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং পরবর্তী শান্তির অভিযাত্রা আজও শেষ না হওয়া এক মানবিক রূপান্তর।
কলিঙ্গ ছিল প্রাচীন ভারতের পূর্ব উপকূলবর্তী একটি সমৃদ্ধ, স্বাধীন রাজ্য—বর্তমান ওড়িশা ও দক্ষিণ-পূর্ব আন্দ্রপ্রদেশে। এর মানুষের সাংস্কৃতিক রুচি, সামুদ্রিক বাণিজ্য, শক্তিশালী নৌদল—সকল কিছুই ছিল আত্মনির্ভর, যা মুর্য সিংহাসনে নতুন দ্বারপ্রান্তে বসা অশোককে উদ্বিগ্ন করেছিল। ইতিহাসবিদ ডেভিড লুডেন নিজ বইতে উল্লেখ করেন, অনেক রাজ্যই দ্বৈত ভূমিকা পালন করত—রাষ্ট্র বরাবর নবাব ও পূর্বভাব, আবার ইংরেজদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখত। তবে, কলিঙ্গের স্বাধীন ভাবমূর্তির কারণে মুর্য সাম্রাজ্যের একতা পূর্ণ না হওয়া ভাবতেন অনেকেই।
অশোকের পূর্বপুরুষ—চন্দ্রগুপ্ত মুর্য—কলিঙ্গ জয় করতে পারেননি, কিন্তু অশোক ৮ম রাজ্যবর্ষে এই যুদ্ধ ঘোষণা করেন। ২৬১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে যুদ্ধ শুরু হয়—মূলত কলিঙ্গের শক্তি, বাণিজ্য স্বার্থ, এবং মুর্য সাম্রাজ্যের ভূরাজনৈতিক সম্প্রীতি ইচ্ছা ছিল এর মূল চালিকা শক্তি।
যুদ্ধ ভয়াবহ হয়েছিল, ইতিহাসের এক ভয়ঙ্কর অধ্যায় বলা চলে। অশোক নিজেই তার ‘রক্ এডিক্ট ১৩’-এ লিখেছেন, প্রায় এক লাখ মানুষ মারা গেছে, বিপুল সংখ্যক বন্দি হয়েছে— প্রায় ১.৫ লাখ। অন্য সূত্র বলছে, মৃত্যু ও বন্দিত্ব ছাড়িয়ে আরও অগণিত অসহায় মানুষ এই যন্ত্রণা ভুগেছেন। যুদ্ধের ভয়াবহতা, রক্তপাত, ক্রন্দন—সবাই মিলিয়ে মাঠ যেন মৃত্যুর নিজস্ব রং ধারণ করে নিয়েছিল। গ্রীক পন্ডিত মেগাস্তেনিস বলেছিলেন, ঘোড়া, হাতি আর সৈন্যদের মৃতদেহ চারিপাশে ছড়িয়ে ছিল, রক্তস্ত্রোত যেন আকাশ পর্যন্ত উড়ে আসত।
যুদ্ধ শেষে, কলিঙ্গ সংযুক্ত হয় মুর্য সাম্রাজ্যের রাজনীতির সঙ্গে, টোসালি নামক জায়গা সেখানে প্রশাসনিক কেন্দ্র হয়। তবু সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসে অশোকের হৃদয়ে।
যুদ্ধের ভয়াবহ দৃশ্য দেখে অশোক profoundly moved—হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়ে যায়। তিনি যুদ্ধবাজ নীতি ত্যাগ করেন এবং বুদ্ধের "ধর্ম" বা ধাম্মা—অহিংসা ও সদিচ্ছার পথে হেঁটেই দিকনির্দেশ পান। ধন্যবাদ, বিদ্বেষ নয়, সহযোগিতা; প্রজাদের সুখ, পিচ্ছিল পথ নয়—মানবতা দিয়ে রাজনীতি পরিচালনার পথ খোলে তিনি। এটি ছিল ইতিহাসের বিরল মুহূর্ত, যখন একজন বিজয়ী রাজা নিজ প্রজাতন্ত্রের প্রতি এমন গভীর দুঃখগ্রস্ত হয়।
এই রূপান্তরের পর, তিনি তার রাজনীতিতে মহাসন্ত পুনরুন্মান দেন—শান্তি, অহিংসা, ধর্ম-পন্থা আর মানবকল্যাণ নিয়ে চলছে তাঁর নতুন শাসন। তিনি নিজ রাজ্যে ‘ধাম্মা মহামাত্র’ নিযুক্ত করেন, যারা ধর্মের বার্তা প্রচার এবং জনগণের কল্যাণে কাজ করতো। আর তাঁর রাজত্বের পরবর্তী ৩০–৪০ বছর ছিল শান্তি ও সমৃদ্ধির মিছিল—অহিংসা, মানুষের সুখ, জনসেবা, বৃক্ষরোপণ, প্রাণি ও মানুষদের জন্য হাসপাতাল—এই সবই ছিল রূপায়ণ।
রাজ্যের বাইরে, বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারে অশোক ছিলেন অগ্রদূত—পুত্র মণ্ডিত এবং কন্যা সংঘমিত্রাকে শ্রীলঙ্কায় পাঠান, দূর গ্রীস, মাসিডোনিয়া, মিশর প্রভৃতি দেশের সাথে শান্তি দূত নিয়ে বৌদ্ধ বার্তা ছড়িয়ে দেন। এ যেন যুদ্ধের ধ্বংস থেকে শান্তিপূর্ণ সংসারের বেণুতি।
বিদেশি গবেষকদের পর্যালোচনায় এই রূপান্তর বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ঐতিহাসিক রোমিলা থাপার অশোক অ্যাণ্ড দ্য ডিকলাইন অফ দ্য মুর্যাস বইয়ে লিখেছেন, অশোকের ধর্মান্তর যুদ্ধপরবর্তী পরবর্তী রাজনৈতিক দৃশ্যপটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাঁক ছিল। অন্যদিকে, স্বদেশ সেংগুপ্তা, ডেভিড লুডেন, থোমস ডালরিম্পল—এদের মতে, কলিঙ্গ যুদ্ধ একটি যুগান্তকারী মোড়, যেখানে রাজা নীতিজীবী হয়ে প্রতারণার চূড়ান্ত প্রতীক হয়ে দাঁড়ালেন।
কলিঙ্গের যুদ্ধ একদিকে ছিল হিংসার চরম বিনাশস্তরে, অন্যদিকে আনারিলো অশোকের হৃৎকান্ড, যা তাকে ইতিহাসের একজন সত্যিকারের মানবতাবাদী শাসক হিসেবে পরিণত করেছিল। এই যুদ্ধ যতই দানবীয় হোক, তার পরেই উঠে আসে শান্তি, দয়া, সর্বভূতের কল্যাণে নিবেদিত রাজত্ব—সেই পরিণামই আজও আমাদের শিক্ষা দেয়।
প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে “কলিঙ্গ যুদ্ধ” এক রকম পরিপূর্ণ অধ্যায়। এটি শুধু এক যুদ্ধ নয়, বরং একটি মানুষকে, রাজা থেকে মানবতাবাদী নেতা হিসেবে পরিণত হওয়ার গল্প। এই যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং পরবর্তী শান্তির অভিযাত্রা আজও শেষ না হওয়া এক মানবিক রূপান্তর।
কলিঙ্গ ছিল প্রাচীন ভারতের পূর্ব উপকূলবর্তী একটি সমৃদ্ধ, স্বাধীন রাজ্য—বর্তমান ওড়িশা ও দক্ষিণ-পূর্ব আন্দ্রপ্রদেশে। এর মানুষের সাংস্কৃতিক রুচি, সামুদ্রিক বাণিজ্য, শক্তিশালী নৌদল—সকল কিছুই ছিল আত্মনির্ভর, যা মুর্য সিংহাসনে নতুন দ্বারপ্রান্তে বসা অশোককে উদ্বিগ্ন করেছিল। ইতিহাসবিদ ডেভিড লুডেন নিজ বইতে উল্লেখ করেন, অনেক রাজ্যই দ্বৈত ভূমিকা পালন করত—রাষ্ট্র বরাবর নবাব ও পূর্বভাব, আবার ইংরেজদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখত। তবে, কলিঙ্গের স্বাধীন ভাবমূর্তির কারণে মুর্য সাম্রাজ্যের একতা পূর্ণ না হওয়া ভাবতেন অনেকেই।
অশোকের পূর্বপুরুষ—চন্দ্রগুপ্ত মুর্য—কলিঙ্গ জয় করতে পারেননি, কিন্তু অশোক ৮ম রাজ্যবর্ষে এই যুদ্ধ ঘোষণা করেন। ২৬১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে যুদ্ধ শুরু হয়—মূলত কলিঙ্গের শক্তি, বাণিজ্য স্বার্থ, এবং মুর্য সাম্রাজ্যের ভূরাজনৈতিক সম্প্রীতি ইচ্ছা ছিল এর মূল চালিকা শক্তি।
যুদ্ধ ভয়াবহ হয়েছিল, ইতিহাসের এক ভয়ঙ্কর অধ্যায় বলা চলে। অশোক নিজেই তার ‘রক্ এডিক্ট ১৩’-এ লিখেছেন, প্রায় এক লাখ মানুষ মারা গেছে, বিপুল সংখ্যক বন্দি হয়েছে— প্রায় ১.৫ লাখ। অন্য সূত্র বলছে, মৃত্যু ও বন্দিত্ব ছাড়িয়ে আরও অগণিত অসহায় মানুষ এই যন্ত্রণা ভুগেছেন। যুদ্ধের ভয়াবহতা, রক্তপাত, ক্রন্দন—সবাই মিলিয়ে মাঠ যেন মৃত্যুর নিজস্ব রং ধারণ করে নিয়েছিল। গ্রীক পন্ডিত মেগাস্তেনিস বলেছিলেন, ঘোড়া, হাতি আর সৈন্যদের মৃতদেহ চারিপাশে ছড়িয়ে ছিল, রক্তস্ত্রোত যেন আকাশ পর্যন্ত উড়ে আসত।
যুদ্ধ শেষে, কলিঙ্গ সংযুক্ত হয় মুর্য সাম্রাজ্যের রাজনীতির সঙ্গে, টোসালি নামক জায়গা সেখানে প্রশাসনিক কেন্দ্র হয়। তবু সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসে অশোকের হৃদয়ে।
যুদ্ধের ভয়াবহ দৃশ্য দেখে অশোক profoundly moved—হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়ে যায়। তিনি যুদ্ধবাজ নীতি ত্যাগ করেন এবং বুদ্ধের "ধর্ম" বা ধাম্মা—অহিংসা ও সদিচ্ছার পথে হেঁটেই দিকনির্দেশ পান। ধন্যবাদ, বিদ্বেষ নয়, সহযোগিতা; প্রজাদের সুখ, পিচ্ছিল পথ নয়—মানবতা দিয়ে রাজনীতি পরিচালনার পথ খোলে তিনি। এটি ছিল ইতিহাসের বিরল মুহূর্ত, যখন একজন বিজয়ী রাজা নিজ প্রজাতন্ত্রের প্রতি এমন গভীর দুঃখগ্রস্ত হয়।
এই রূপান্তরের পর, তিনি তার রাজনীতিতে মহাসন্ত পুনরুন্মান দেন—শান্তি, অহিংসা, ধর্ম-পন্থা আর মানবকল্যাণ নিয়ে চলছে তাঁর নতুন শাসন। তিনি নিজ রাজ্যে ‘ধাম্মা মহামাত্র’ নিযুক্ত করেন, যারা ধর্মের বার্তা প্রচার এবং জনগণের কল্যাণে কাজ করতো। আর তাঁর রাজত্বের পরবর্তী ৩০–৪০ বছর ছিল শান্তি ও সমৃদ্ধির মিছিল—অহিংসা, মানুষের সুখ, জনসেবা, বৃক্ষরোপণ, প্রাণি ও মানুষদের জন্য হাসপাতাল—এই সবই ছিল রূপায়ণ।
রাজ্যের বাইরে, বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারে অশোক ছিলেন অগ্রদূত—পুত্র মণ্ডিত এবং কন্যা সংঘমিত্রাকে শ্রীলঙ্কায় পাঠান, দূর গ্রীস, মাসিডোনিয়া, মিশর প্রভৃতি দেশের সাথে শান্তি দূত নিয়ে বৌদ্ধ বার্তা ছড়িয়ে দেন। এ যেন যুদ্ধের ধ্বংস থেকে শান্তিপূর্ণ সংসারের বেণুতি।
বিদেশি গবেষকদের পর্যালোচনায় এই রূপান্তর বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ঐতিহাসিক রোমিলা থাপার অশোক অ্যাণ্ড দ্য ডিকলাইন অফ দ্য মুর্যাস বইয়ে লিখেছেন, অশোকের ধর্মান্তর যুদ্ধপরবর্তী পরবর্তী রাজনৈতিক দৃশ্যপটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাঁক ছিল। অন্যদিকে, স্বদেশ সেংগুপ্তা, ডেভিড লুডেন, থোমস ডালরিম্পল—এদের মতে, কলিঙ্গ যুদ্ধ একটি যুগান্তকারী মোড়, যেখানে রাজা নীতিজীবী হয়ে প্রতারণার চূড়ান্ত প্রতীক হয়ে দাঁড়ালেন।
কলিঙ্গের যুদ্ধ একদিকে ছিল হিংসার চরম বিনাশস্তরে, অন্যদিকে আনারিলো অশোকের হৃৎকান্ড, যা তাকে ইতিহাসের একজন সত্যিকারের মানবতাবাদী শাসক হিসেবে পরিণত করেছিল। এই যুদ্ধ যতই দানবীয় হোক, তার পরেই উঠে আসে শান্তি, দয়া, সর্বভূতের কল্যাণে নিবেদিত রাজত্ব—সেই পরিণামই আজও আমাদের শিক্ষা দেয়।
ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন থাকায় প্রশ্ন উঠেছিল, জামায়াতে ইসলামী বর্তমান নেতৃত্ব নিয়েই সে নির্বাচনে অংশ নেবে কি না। তবে দলের নীতিনির্ধারণী সংস্থাগুলো আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দলের গঠনতন্ত্রকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ডিসেম্বরের মধ্যেই নতুন নেতৃত্ব উঠে আসবে। সে নেতৃত্বের অধীনেই জ
২০ ঘণ্টা আগেজাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) যদি তাদের পছন্দের প্রতীক ‘শাপলা’ না পায়, তাহলে কঠোর আন্দোলনে যাবে এবং প্রয়োজন হলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘেরাও করার মতো কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে—হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলের বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন।
২ দিন আগে