স্বাস্থ্য

নাশপাতি কেন খাবেন?

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৮: ৩২
চ্যাটজিপিটির চোখে নাশপাতি

নাশপাতি এমন এক ধরনের ফল, যেটা একবার খেলে তার মিষ্টি-নরম স্বাদ মুখে লেগে থাকে। সহজে হজম হয়, পেট ঠান্ডা রাখে, এবং শরীরকে ভেতর থেকে পরিষ্কার করে। কিন্তু শুধু স্বাদের জন্য নয়, পুষ্টিগুণের দিক থেকেও নাশপাতি একেবারে দুর্দান্ত। নানা দেশি-বিদেশি গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত নাশপাতি খাওয়ার অভ্যাস থাকলে শরীরের অনেক রোগের ঝুঁকি কমে যায়। সহজ ভাষায় যদি বলি—নাশপাতি খাওয়া মানেই হচ্ছে শরীরের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা।

নাশপাতির মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যেগুলো শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে ঠিকঠাকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। এই ফলটিতে রয়েছে উচ্চমাত্রার ফাইবার, ভিটামিন সি , পটাশিয়াম , এবং নানা ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। নাশপাতিতে ফ্যাট বা চর্বি একেবারেই নেই বললেই চলে, আর ক্যালোরিও কম, তাই যাঁরা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান তাঁদের জন্য এটি খুবই উপযোগী।

নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টিবিদ মারিয়ানা জ্যাকারসন বলেন, “নাশপাতি এমন এক ফল, যেটার মধ্যে সলিউবল এবং ইনসলিউবল ফাইবার দুটোই রয়েছে। এর মানে হলো, এটি একদিকে হজমে সহায়তা করে, অন্যদিকে কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়।” তিনি আরও বলেন, “নাশপাতির মধ্যে থাকা ফাইবার অন্ত্রকে পরিষ্কার রাখে, ফলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমে।”

আমাদের শরীরে ফাইবার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি শুধু হজমেই নয়, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে। বিশেষত ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নাশপাতি এক অসাধারণ প্রাকৃতিক পথ্য। আমেরিকার হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল-এর গবেষক ড. লরেন স্মিথ বলেন, “নাশপাতিতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স খুবই কম। অর্থাৎ এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা হঠাৎ বাড়িয়ে দেয় না। তাই যাঁদের টাইপ ২ ডায়াবেটিস আছে, তাঁরা নিশ্চিন্তে নাশপাতি খেতে পারেন।”

শুধু তাই নয়, নাশপাতি হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধেও কার্যকর। এই ফলটিতে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। পটাশিয়াম এক ধরনের খনিজ, যা রক্তনালিকে প্রসারিত করে, ফলে উচ্চ রক্তচাপ কমে আসে এবং হৃদ্‌যন্ত্রের ওপর চাপ পড়ে না। ২০১৯ সালে “জার্নাল অব নিউট্রিশন অ্যান্ড হেলথ” (Journal of Nutrition and Health)-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, যারা সপ্তাহে অন্তত তিন থেকে চারটি নাশপাতি খায়, তাদের হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ১৫% পর্যন্ত কমে।

নাশপাতির আরেকটি চমৎকার দিক হলো এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষমতা। এই ফলে রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড (flavonoid), কিউয়ারসেটিন এবং ভিটামিন সি, যেগুলো শরীরের কোষকে রক্ষা করে। বিশেষত বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই উপাদানগুলো বয়সজনিত কোষ ক্ষয় বা আলঝেইমাররোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে-এর স্নায়ুবিজ্ঞানী ড. এলেন পার্ক বলেন, “নাশপাতির মধ্যে থাকা কিউয়ারসেটিন নামের উপাদানটি ব্রেইনের কোষে প্রদাহ কমায় এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়। এটা দীর্ঘমেয়াদে স্মৃতিশক্তি রক্ষা করতে পারে।”

আরও একটি দারুণ গুণ হলো, নাশপাতি ত্বকের জন্যও ভালো। এই ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকার কারণে এটি কোলাজেন তৈরি করতে সাহায্য করে, যা ত্বককে টানটান ও উজ্জ্বল রাখে। সেই সঙ্গে এটি ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন অ্যালার্জি বা র‌্যাশ কমাতেও ভূমিকা রাখে।

গর্ভবতী নারীদের জন্যও নাশপাতি অত্যন্ত উপকারী। এতে থাকা ফলেট (folate) শিশুর স্নায়ুতন্ত্র গঠনে সাহায্য করে এবং জন্মগত সমস্যার ঝুঁকি কমায়। আমেরিকার অবস্টেট্রিকস অ্যান্ড গাইনোকোলজি অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ড. ক্রিস্টিনা হুয়াং বলেন, “প্রেগন্যান্সির সময় নাশপাতি খাওয়া নিরাপদ ও উপকারী। এতে থাকা প্রাকৃতিক চিনি ও পুষ্টি নারীর শরীরকে শক্তি জোগায় এবং গ্যাস, অ্যাসিডিটির সমস্যা কমায়।”

যাঁরা নিয়মিত ব্যায়াম করেন বা শরীরচর্চায় আগ্রহী, তাঁদের জন্যও নাশপাতি হতে পারে আদর্শ স্ন্যাকস। এতে থাকা প্রাকৃতিক শর্করা দ্রুত শক্তি দেয়, কিন্তু রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা হঠাৎ বাড়িয়ে দেয় না। অর্থাৎ শরীরে ইনফ্ল্যামেশনও বাড়ে না। স্পোর্টস নিউট্রিশনিস্ট লিন্ডা ও'ডোনেল বলেন, “ওয়ার্কআউটের আগে বা পরে একটা নাশপাতি খাওয়া হলে সেটা দেহকে প্রাকৃতিকভাবে পুনর্জীবিত করে তোলে।”

তবে নাশপাতি খাওয়ার সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হয়। যেমন, একেবারে পাকা নাশপাতি খেতে হয়, কাঁচা নাশপাতি হজমে সমস্যা করতে পারে। আর যারা ফলমূল খেলে এলার্জিতে ভোগেন, তাঁদের একবার চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

সবশেষে বলা যায়, নাশপাতি এমন একটি ফল, যেটা আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় জায়গা পাওয়ার যোগ্য। এটি শুধু পুষ্টিকর নয়, বরং এক ধরনের প্রাকৃতিক ওষুধ বললেও ভুল হবে না। আমরা প্রতিদিন নানা ধরনের ফল খাই, কিন্তু নাশপাতির উপকারিতা যদি একবার ভালোভাবে বুঝি, তাহলে নিয়মিত এটিকে খাদ্যতালিকায় রাখতে উৎসাহ পাব।

একটা নরম, মিষ্টি, রসালো নাশপাতি খেলে শুধু জিভই না, শরীরও খুশি হয়। তাই আজ থেকেই শুরু হোক ‘নাশপাতি খাওয়া’ অভ্যাস। খাবারের তালিকায় এই অনন্য ফলটি রাখুন আর উপকার করুন নিজের শরীর ও মনের।

ad
ad

খবরাখবর থেকে আরও পড়ুন

রবীন্দ্রনাথের গানে বরষা

তাঁর বর্ষার গানগুলোতে প্রকৃতি নিজেই যেন একটি জীবন্ত চরিত্র হয়ে ওঠে। শ্রাবণ-ভাদ্র মাসের আকাশ, মাঠে জমে থাকা জল, ছায়া মাখানো পথঘাট, ঝরঝর বৃষ্টি, পলিফাটা মেঘ—সবই যেন তাঁর গানের অনুষঙ্গ। কিন্তু এসব কেবল চিত্রায়ন নয়, বরং এগুলোর মধ্যে রবীন্দ্রনাথ খুঁজে পান মানুষের গভীর অনুভব, ভালোবাসা, নির্জনতা ও চিরপ্রত্

১ দিন আগে

কাঁচা কলার স্বাস্থ্যগত উপকারিতা কী কী?

কাঁচা কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ। এই আঁশ হজমে সাহায্য করে এবং পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। অনেক সময় দেখা যায়, কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগা মানুষ দিনের পর দিন ওষুধ খাচ্ছেন। অথচ নিয়মিত কাঁচা কলা খেলে তারা অনেকটা স্বস্তি পেতে পারেন। কারণ, কাঁচা কলা প্রাকৃতিকভাবে হজম শক্তি বাড়ায়।

২ দিন আগে

বাংলা ও দিল্লি সালতানাতের যুদ্ধ: ইতিহাসের এক অস্থির অধ্যায়

দিল্লি সালতানাতের শাসকরা—বিশেষত গিয়াসউদ্দিন বলবন, জালালউদ্দিন খিলজি, এবং পরবর্তী কালে ফিরোজ শাহ তুঘলক—বাংলার উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়েছেন। বাংলা থেকে বিদ্রোহ ও স্বাধিকার দাবি দিল্লির কর্তৃত্বকে একাধিকবার চ্যালেঞ্জ করেছে। এই সমস্ত রাজনৈতিক ঘটনার পেছনে শুধু ক্ষমতার প্রশ্ন ছিল না, বরং বাংলা

২ দিন আগে

হার্ট সুস্থ রাখতে কী করবেন?

হার্ট ভালো রাখার মূল মন্ত্র হলো—নিয়মিত রক্তচাপ ও রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা। কারণ উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার এবং বেশি এলডিএল কোলেস্টেরল ধমনীর ভেতরে প্লাক জমিয়ে রাখে, যার ফলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হতে পারে। এ ছাড়া ব্লাড সুগার লেভেল বেশি থাকলে বা ডায়াবেটিস হলে হার্টের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

২ দিন আগে