ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
মুখের ভেতর হঠাৎ করে ছোট একটি ঘা, তীব্র জ্বালাপোড়া, খাওয়া-দাওয়ার সময় ব্যথা—এই অভিজ্ঞতা আমাদের অনেকেরই আছে। এই ছোট ঘাটির নাম জিভের ঘা বা মুখের ঘা। সাধারণত এসব ঘা খুব একটা বড় হয় না, কিন্তু অস্বস্তির দিক থেকে এটি বড় কোনো অসুস্থতার চেয়ে কম নয়। অনেক সময় দেখা যায়, ঘা সারতে কয়েক দিন বা সপ্তাহও লেগে যায়, মাঝে মাঝে তা আবার ফিরে আসে। প্রশ্ন হলো—জিভে ঘা কেন হয়? এর পেছনে কি শুধু মুখ কামড়ে ফেলার মতো কারণ থাকে, নাকি শরীরের ভেতরের কোনো ঘাটতি এর কারণ?
বিশেষজ্ঞদের মতে, জিভে বা মুখের ভেতরে ঘা হওয়ার অন্যতম বড় কারণ হলো কিছু ভিটামিন ও খনিজের ঘাটতি। বিশেষ করে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স—যার মধ্যে বি২ (রিবোফ্লাভিন), বি১২ (কোবালামিন), ও বি৯ (ফোলেট)—এই তিনটি ভিটামিন মুখের কোষের সুস্থতায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোর ঘাটতি হলে মুখের ভেতরের টিস্যু দুর্বল হয়ে পড়ে, সংক্রমণ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং ঘা তৈরি হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের মায়ো ক্লিনিক-এর গবেষক এবং নিউট্রিশন বিশেষজ্ঞ ড. ক্যাথরিন টাম বলেছেন, “ভিটামিন বি কমপ্লেক্স শুধু রক্ত তৈরিতেই নয়, বরং মুখের কোষের পূর্ণতায়ও ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে বি১২ এবং ফোলেটের ঘাটতিতে মুখে আলসার বা ঘা দেখা যায়, যা অনেক সময় ঘন ঘন ফিরে আসে।”
জিভে ঘা শুধু একটি সাধারণ লক্ষণ মনে হলেও এটি শরীরের ভেতরের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেতও হতে পারে। যদি ঘন ঘন বা দীর্ঘস্থায়ী মুখের ঘা হয়, তবে তা হতে পারে অপুষ্টির লক্ষণ। যেমন—যেসব মানুষ দীর্ঘদিন ঠিকভাবে খাওয়া-দাওয়া করে না, খাদ্যে বৈচিত্র্য নেই, তারা এসব ঘাটতির ঝুঁকিতে পড়ে। অনেক সময় দেখা যায় নিরামিষভোজীরা, যাদের খাদ্যতালিকায় প্রাণিজ উৎস কম, তাদের মধ্যে ভিটামিন বি১২ এর ঘাটতি বেশি দেখা যায়।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ক্লিনিকাল নিউট্রিশন বিভাগের গবেষক ড. লরা ম্যাথার বলেন, “মানুষের শরীর নিজে থেকে ভিটামিন বি১২ তৈরি করতে পারে না, এটি খাদ্য থেকেই নিতে হয়। যারা মাছ, মাংস বা দুধ জাতীয় খাবার খান না, তাদের এই ঘাটতির আশঙ্কা বেশি থাকে, ফলে জিভে ঘা হওয়ার প্রবণতা বাড়ে।”
শুধু ভিটামিনই নয়, জিভে ঘা হওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো আয়রনের ঘাটতি। আয়রনের অভাবে রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যায়, শরীরে অক্সিজেন পরিবহন কম হয় এবং কোষ দুর্বল হয়ে পড়ে। মুখের ভেতরকার টিস্যু অত্যন্ত সংবেদনশীল, তাই সেখানে প্রথমেই প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেক সময় দেখা যায়, যারা রক্তস্বল্পতায় ভোগে বা নারীরা যাদের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়, তাদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।
তাছাড়া জিংক নামের একধরনের খনিজও রয়েছে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জিংকের অভাবে শরীরের ক্ষত সারাতে দেরি হয়, ফলে মুখের ঘা দীর্ঘস্থায়ী হয়।
জার্মানির ইউনিভার্সিটি অব হাইডেলবার্গ-এর ইমিউনোলজি গবেষক ড. টমাস ফ্রাংক বলেন, “জিভের ঘা দীর্ঘস্থায়ী হলে সেটা কেবল বাহ্যিক বিষয় নয়, বরং এটি ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত হতে পারে। জিংক ও আয়রনের ঘাটতি এই দুর্বলতার প্রধান কারণ।”
তবে এসব ঘাটতি কেবল মুখের ঘা তৈরি করে না, এর সঙ্গে থাকতে পারে আরও কিছু লক্ষণ। যেমন—দুর্বলতা, চুল পড়া, ত্বকে ফাটল, মুখের কোণে চিরে যাওয়া বা চোখের নিচে কালি পড়া। এসব লক্ষণ একসঙ্গে দেখা দিলে বুঝতে হবে শরীরে ভিটামিন বা খনিজের ঘাটতি হচ্ছে।
ভিটামিন বি২-এর ঘাটতিতে বিশেষ করে দেখা যায় মুখের কোণে ফাটা, জিভের রং বদলে যাওয়া, লালচে হয়ে যাওয়া বা জ্বালাপোড়া অনুভব হওয়া। আর ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতিতে দেখা যায় জিভে পুড়েপুড়ে যাওয়া বা অসাড় অনুভব। অনেক সময় মুখ শুকনো লাগে, স্বাদ বদলে যায়। এই ঘাটতি বেশি দিন চলতে থাকলে রক্তস্বল্পতা বা নিউরোলজিক্যাল সমস্যাও হতে পারে।
এই ঘাটতি দূর করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন আনা। বেশি করে আঁশযুক্ত সবজি, দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, কলিজা, বাদাম এবং ফলমূল রাখা উচিত। এছাড়া প্রোয়োবায়োটিক জাতীয় খাবার যেমন দই, ইমিউন ফাংশন বাড়ায় এবং মুখের সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
যদি খাবার থেকেই ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ সম্ভব না হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স বা আয়রন-জিংক সাপ্লিমেন্ট নেওয়া যেতে পারে। তবে কখনোই নিজে থেকে ওষুধ শুরু করা ঠিক নয়। ঘন ঘন জিভে ঘা হলে রক্ত পরীক্ষা করে ঘাটতি চিহ্নিত করাই সবচেয়ে ভালো উপায়।
সর্বোপরি, জিভে ঘা কোনো হালকাভাবে নেওয়ার বিষয় নয়। এটি হয়তো সাময়িক অস্বস্তি তৈরি করে, কিন্তু বারবার হলে বা দীর্ঘস্থায়ী হলে সেটি শরীরের গভীর সমস্যার সংকেত হতে পারে। তাই সময়মতো সচেতন হওয়া, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই সুস্থ জীবনের মূল চাবিকাঠি। একটুখানি ঘা হয়তো ছোট মনে হয়, কিন্তু সেটাই শরীরের বড় বার্তা হয়ে উঠতে পারে।
সূত্র: মায়ো ক্লিনিক হেলথ লেটার
মুখের ভেতর হঠাৎ করে ছোট একটি ঘা, তীব্র জ্বালাপোড়া, খাওয়া-দাওয়ার সময় ব্যথা—এই অভিজ্ঞতা আমাদের অনেকেরই আছে। এই ছোট ঘাটির নাম জিভের ঘা বা মুখের ঘা। সাধারণত এসব ঘা খুব একটা বড় হয় না, কিন্তু অস্বস্তির দিক থেকে এটি বড় কোনো অসুস্থতার চেয়ে কম নয়। অনেক সময় দেখা যায়, ঘা সারতে কয়েক দিন বা সপ্তাহও লেগে যায়, মাঝে মাঝে তা আবার ফিরে আসে। প্রশ্ন হলো—জিভে ঘা কেন হয়? এর পেছনে কি শুধু মুখ কামড়ে ফেলার মতো কারণ থাকে, নাকি শরীরের ভেতরের কোনো ঘাটতি এর কারণ?
বিশেষজ্ঞদের মতে, জিভে বা মুখের ভেতরে ঘা হওয়ার অন্যতম বড় কারণ হলো কিছু ভিটামিন ও খনিজের ঘাটতি। বিশেষ করে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স—যার মধ্যে বি২ (রিবোফ্লাভিন), বি১২ (কোবালামিন), ও বি৯ (ফোলেট)—এই তিনটি ভিটামিন মুখের কোষের সুস্থতায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোর ঘাটতি হলে মুখের ভেতরের টিস্যু দুর্বল হয়ে পড়ে, সংক্রমণ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং ঘা তৈরি হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের মায়ো ক্লিনিক-এর গবেষক এবং নিউট্রিশন বিশেষজ্ঞ ড. ক্যাথরিন টাম বলেছেন, “ভিটামিন বি কমপ্লেক্স শুধু রক্ত তৈরিতেই নয়, বরং মুখের কোষের পূর্ণতায়ও ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে বি১২ এবং ফোলেটের ঘাটতিতে মুখে আলসার বা ঘা দেখা যায়, যা অনেক সময় ঘন ঘন ফিরে আসে।”
জিভে ঘা শুধু একটি সাধারণ লক্ষণ মনে হলেও এটি শরীরের ভেতরের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেতও হতে পারে। যদি ঘন ঘন বা দীর্ঘস্থায়ী মুখের ঘা হয়, তবে তা হতে পারে অপুষ্টির লক্ষণ। যেমন—যেসব মানুষ দীর্ঘদিন ঠিকভাবে খাওয়া-দাওয়া করে না, খাদ্যে বৈচিত্র্য নেই, তারা এসব ঘাটতির ঝুঁকিতে পড়ে। অনেক সময় দেখা যায় নিরামিষভোজীরা, যাদের খাদ্যতালিকায় প্রাণিজ উৎস কম, তাদের মধ্যে ভিটামিন বি১২ এর ঘাটতি বেশি দেখা যায়।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ক্লিনিকাল নিউট্রিশন বিভাগের গবেষক ড. লরা ম্যাথার বলেন, “মানুষের শরীর নিজে থেকে ভিটামিন বি১২ তৈরি করতে পারে না, এটি খাদ্য থেকেই নিতে হয়। যারা মাছ, মাংস বা দুধ জাতীয় খাবার খান না, তাদের এই ঘাটতির আশঙ্কা বেশি থাকে, ফলে জিভে ঘা হওয়ার প্রবণতা বাড়ে।”
শুধু ভিটামিনই নয়, জিভে ঘা হওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো আয়রনের ঘাটতি। আয়রনের অভাবে রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যায়, শরীরে অক্সিজেন পরিবহন কম হয় এবং কোষ দুর্বল হয়ে পড়ে। মুখের ভেতরকার টিস্যু অত্যন্ত সংবেদনশীল, তাই সেখানে প্রথমেই প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেক সময় দেখা যায়, যারা রক্তস্বল্পতায় ভোগে বা নারীরা যাদের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়, তাদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।
তাছাড়া জিংক নামের একধরনের খনিজও রয়েছে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জিংকের অভাবে শরীরের ক্ষত সারাতে দেরি হয়, ফলে মুখের ঘা দীর্ঘস্থায়ী হয়।
জার্মানির ইউনিভার্সিটি অব হাইডেলবার্গ-এর ইমিউনোলজি গবেষক ড. টমাস ফ্রাংক বলেন, “জিভের ঘা দীর্ঘস্থায়ী হলে সেটা কেবল বাহ্যিক বিষয় নয়, বরং এটি ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত হতে পারে। জিংক ও আয়রনের ঘাটতি এই দুর্বলতার প্রধান কারণ।”
তবে এসব ঘাটতি কেবল মুখের ঘা তৈরি করে না, এর সঙ্গে থাকতে পারে আরও কিছু লক্ষণ। যেমন—দুর্বলতা, চুল পড়া, ত্বকে ফাটল, মুখের কোণে চিরে যাওয়া বা চোখের নিচে কালি পড়া। এসব লক্ষণ একসঙ্গে দেখা দিলে বুঝতে হবে শরীরে ভিটামিন বা খনিজের ঘাটতি হচ্ছে।
ভিটামিন বি২-এর ঘাটতিতে বিশেষ করে দেখা যায় মুখের কোণে ফাটা, জিভের রং বদলে যাওয়া, লালচে হয়ে যাওয়া বা জ্বালাপোড়া অনুভব হওয়া। আর ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতিতে দেখা যায় জিভে পুড়েপুড়ে যাওয়া বা অসাড় অনুভব। অনেক সময় মুখ শুকনো লাগে, স্বাদ বদলে যায়। এই ঘাটতি বেশি দিন চলতে থাকলে রক্তস্বল্পতা বা নিউরোলজিক্যাল সমস্যাও হতে পারে।
এই ঘাটতি দূর করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন আনা। বেশি করে আঁশযুক্ত সবজি, দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, কলিজা, বাদাম এবং ফলমূল রাখা উচিত। এছাড়া প্রোয়োবায়োটিক জাতীয় খাবার যেমন দই, ইমিউন ফাংশন বাড়ায় এবং মুখের সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
যদি খাবার থেকেই ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ সম্ভব না হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স বা আয়রন-জিংক সাপ্লিমেন্ট নেওয়া যেতে পারে। তবে কখনোই নিজে থেকে ওষুধ শুরু করা ঠিক নয়। ঘন ঘন জিভে ঘা হলে রক্ত পরীক্ষা করে ঘাটতি চিহ্নিত করাই সবচেয়ে ভালো উপায়।
সর্বোপরি, জিভে ঘা কোনো হালকাভাবে নেওয়ার বিষয় নয়। এটি হয়তো সাময়িক অস্বস্তি তৈরি করে, কিন্তু বারবার হলে বা দীর্ঘস্থায়ী হলে সেটি শরীরের গভীর সমস্যার সংকেত হতে পারে। তাই সময়মতো সচেতন হওয়া, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই সুস্থ জীবনের মূল চাবিকাঠি। একটুখানি ঘা হয়তো ছোট মনে হয়, কিন্তু সেটাই শরীরের বড় বার্তা হয়ে উঠতে পারে।
সূত্র: মায়ো ক্লিনিক হেলথ লেটার
দেশের আট জেলায় সন্ধ্যার মধ্যে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এমন পরিস্থিতিতে এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
১৬ ঘণ্টা আগেএই সমস্যা প্রতিরোধে প্রথমে বুঝে নিতে হবে কারণটা ঠিক কী। কারণ অনুযায়ী সমাধানও আলাদা হতে পারে। তবে কিছু প্রাকৃতিক ও বিজ্ঞানসম্মত উপায় আছে, যেগুলো মোটামুটি সব অবস্থাতেই কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে।
১ দিন আগেবাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দেখলে বোঝা যায়, আমাদের যাত্রাপথ ছিল ভিন্নতর। আমরা একটি বিশাল জনগোষ্ঠী, জটিল আমলাতান্ত্রিক কাঠামো এবং রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ভেতর দিয়ে অগ্রসর হয়েছি।
১ দিন আগেবিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, যেসব দেশে প্রধান খাদ্য চাল বা পরিশোধিত শস্য, সেখানে থায়ামিন ঘাটতির সমস্যা বেশি দেখা যায়।
১ দিন আগে